ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

সুরা ইখলাস পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৪ এএম
আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৬ এএম
সুরা ইখলাস পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
সুরা ইখলাস। ইন্টারনেট

ইসলাম কল্যাণের ধর্ম। ইসলাম মানুষের জন্য সবকিছু সহজ করে দিয়েছে, কঠিন কিছু রাখেনি। অল্প আমলে রেখেছে অধিক সওয়াব। সহজ আমলের সওয়াব বড় করে দিয়েছে। কোরআনের ছোট্ট সুরা ইখলাস। খুব বেশি আয়ান এতে নেই। কিন্তু এর ফজিলত অনেক বেশি। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, “রাসুল (সা.) তাঁর সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের কেউ কি এক রাতে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করা দুঃসাধ্য মনে করো?’ এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। তারা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে এমনটি করার?’ তিনি বললেন, ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’, অর্থাৎ সুরা ইখলাস কোরআনুল কারিমের এক-তৃতীয়াংশ।” (বুখারি, হাদিস: ৪৭২৭) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা কোরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। এর পর ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’-কে করেছেন কোরআনের ভাগসমূহের একটি।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮১১) 

কত সহজ একটি আমল! ছোট্ট একটি সুরা। তেলাওয়াত করতে এক মিনিটও লাগে না। ছোট্ট এই সুরা কোরআনের তিন ভাগের এক ভাগ, কথাটি শুনে সাহাবিরা বিস্মিত হবেন; তা জানতেন রাসুল (সা.)। তিনি একবার বলেছেন, “তোমরা জমায়েত হও, আমি তোমাদের সামনে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করব। ফলে যাদের পক্ষে সম্ভব তারা জমায়েত হলো। এরপর রাসুল (সা.) বের হয়ে এলেন এবং তেলাওয়াত করে আবার ঘরে গেলেন।’ তখন আমাদের একজন অন্যজনকে বলতে লাগল, ‘মনে হয় আসমান থেকে (এখনই) কোনো সংবাদ এসেছে আর সে জন্যই তিনি ঘরে প্রবেশ করেছেন।’ পরে রাসুল (সা.) বের হয়ে এসে বললেন, আমি তোমাদের বলেছিলাম যে, ‘তোমাদের সামনে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করব। শোনো, সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।” (মুসলিম, হাদিস: ৮১২) 

সাহাবিরা সুরা ইখলাসের গুরুত্ব বুঝলেন। তারা এটি বেশি করে পাঠ করতেন। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, “এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তে শুনলেন। সে বারবার তা মুখে উচ্চারণ করছিল। (তিনি মনে করলেন এভাবে বারবার পাঠ করা যথেষ্ট নয়) পরদিন সকালে তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বিষয়টি খুলে বললেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘সে সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন। এ সুরা হচ্ছে সমগ্র কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।” (বুখারি, হাদিস: ৪৭২৬) 

সুরাটি অসামান্য মূল্যবান হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এই সুরায় আল্লাহর গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, “রাসুল (সা.) এক সাহাবিকে একটি মুজাহিদ দলের প্রধান করে জিহাদে পাঠালেন। নামাজে তিনি যখন তার সাথিদের ইমামতি করতেন, তখন সুরা ইখলাস দিয়ে নামাজ শেষ করতেন। মুজাহিদরা সেই অভিযান থেকে ফিরে রাসুল (সা.)-এর খেদমতে বিষয়টি আলোচনা করলে তিনি বললেন, ‘তাকেই জিজ্ঞাসা করো কেন সে এই কাজ করেছে।’ এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দিলেন, এ সুরায় আল্লাহতায়ালার গুণাবলি রয়েছে। আর তাই এ সুরা তেলাওয়াত আমার বড় পছন্দ।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহতায়ালাও তাকে পছন্দ করেন।” (বুখারি, হাদিস: ৪৭২৬)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

হাদিস গ্রহণে সতর্কতা ও যাচাই-বাছাই জরুরি

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৬ এএম
হাদিস গ্রহণে সতর্কতা ও যাচাই-বাছাই জরুরি
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত গবেষণারত গবেষকের ছবি

যুগে যুগে হাদিসের মুহাদ্দিস ও ইমামরা হাদিস গ্রহণের কিছু নীতিমালা তৈরি করেছেন। রচনা করেছেন রাবি তথা হাদিস বর্ণনাকারীদের জীবনীগ্রন্থ। যাতে আলোচিত হয়েছে বর্ণনাকারীর জীবনের নানা দিক। এর মধ্যে রয়েছে রাবিদের আমল-আখলাক, আকিদা ও আদর্শের বিবরণ। শিক্ষা–দীক্ষা, দুনিয়া ত্যাগ ও আল্লাহভীতির বর্ণনা। এমনকি তাদের মেধা ও স্মরণশক্তির ভিত্তি এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের সম্ভার। এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি বিবেচনা করেই হাদিসের ইমামরা হাদিস সংকলন ও সংরক্ষণে মনোনিবেশ করেছেন। লিখেছেন শত হাদিসগ্রন্থ। যেগুলোর মধ্যে আমাদের কাছে বেশি প্রসিদ্ধ হচ্ছে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম। এ ছাড়া কুতুবে সিত্তা তথা ছয় কিতাবের পরিচিতিও আছে বেশ। 


বর্তমানে ইসলামি জ্ঞানার্জনের চাহিদা বাড়ছে। বাড়ছে হাদিস, কোরআন, ফিকহ, তাফসির, উলুমুল হাদিস প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চতর ও গবেষণামূলক শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ। বিশেষ করে এখন হাদিসের মান তথা সনদ, মতন, রিজাল ইত্যাদি পরিভাষাবিষয়ক জ্ঞানার্জন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাদিসের সঠিক মান, শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় হচ্ছে। সোনালি যুগ থেকে এই হাদিস নির্ণয়, নির্বাচন ও সংকলনের কাজ হয়ে আসছে। 


অনেক আগে থেকেই উম্মাহর মানিত, বরেণ্য হাদিসবিশারদ ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের এই স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ ও ব্যবহার করে একশ্রেণির ধূর্ত পশ্চিমা গবেষক হাদিসের নামে বিভিন্ন বানোয়াট বক্তব্য ও বর্ণনা তুলে ধরার মাধ্যমে ইসলাম বিকৃতির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। কোরআন ও হাদিসের অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। কখনো বিখ্যাত কোনো একজন রাবির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সমালোচিত করার ঘৃণ্য প্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের ইসলাম বিদ্বেষমূলক অপব্যাখ্যা ও বিকৃতিকেই গবেষণার নামে নিজেদের মত ও আদর্শ বাস্তবায়নে কাজে লাগাচ্ছে। তারা মুসতাশরিকিন বা ওরিয়েন্টালিস্ট নামে পরিচিত। যাদের গবেষণা ইসলামের বিরুদ্ধে। বাংলায় যারা প্রাচ্যবিদ হিসেবে আলোচনায় এসেছে। 


বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়েখ সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদবি (রহ.) বলেন, ‘প্রাচ্যবিদদের মিশনই হলো, মুসলমানদেরকে তাদের অতীত সম্পর্কে সন্দিহান বা ভীতশ্রদ্ধ করে ভবিষ্যতের ব্যাপারে হতাশ ও বর্তমান বিষয়ে নির্লিপ্ত করে দেওয়া।’ (মাসিক আলকাউসার, এপ্রিল ৫, পৃ. ১১)
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এমন কিছু হাদিস বা আয়াত সম্পর্কে তারা অতি সূক্ষ্মভাবে সন্দেহ তৈরি করে দিচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে, যার ফলে অতীতের যাবতীয় দীনি খেদমত ও মেহনত সম্পর্কেও অনেক মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, হাদিস মানা যাবে না। অনেকে দাবি করছেন, একমাত্র কোরআনই মানতে হবে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য ও মতভিন্নতা তৈরি হচ্ছে। মুসলমানরা দলাদলি বৃদ্ধি করছে। বিভিন্ন মতাদর্শ গড়ে উঠছে। দল মত গোত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, কোনো পাপাচারী যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে। তবে তোমরা তার সত্যতা যাচাই করো। তা না হলে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে বসবে। এরপর তোমরা যা করেছ সে জন্য তোমাদেরকেই অনুতপ্ত হতে হবে। (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ৬)


যাচাই-বাছাই না করে সংবাদ গ্রহণ করা যাবে না। সংবাদের সত্যতা যাচাই ও পরীক্ষা করে প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে। অন্যথায় মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। মনে রাখতে হবে পাপাচারী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী লোকদের অনুসরণ করা হারাম। এখন আমাদের মধ্যে এমন লোকও কোরআন-হাদিসের বক্তব্য তুলে ধরছেন, যাদের ইসলাম বিষয়ে কোনো একাডেমিক শিক্ষা নেই। যিনি আলেম নন। এ জাতীয় লোকদের কথা কী আদৌ কোরআন-হাদিসনির্ভর এবং সঠিক হতে পারে? এ জন্যই আলোচক ও বক্তার সম্পর্কে জেনে-বুঝে তারপর তার বক্তব্যের ওপর আমল করা উচিত। বুখারি ও মুসলিমসহ একাধিক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামে কিছু বলার পরিণাম কত ভয়াবহ, তা আলোচনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করল, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করল।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৩)


রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামে হাদিস বানানোর পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম। এখন জেনে-বুঝে কেউ যদি হাদিস বানিয়ে বলেন, তার কী উপায় হবে? এ জাতীয় গর্হিত পন্থা অনুসরণ করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। যেকোনো হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে হাদিস শাস্ত্রজ্ঞ প্রাজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। 

লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর 

ইবাদত কবুলের ৫ শর্ত

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৬ এএম
ইবাদত কবুলের ৫ শর্ত
ইন্টারনেট তেকে সংগৃহীত নামাজরত মুসল্লির ছবি

আল্লাহতায়ালা জিন ও মানবজাতিকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত বলতে শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত—এই কয়েকটি বিষয়কে বুঝায় না; বরং ইবাদত হলো, যাপিত জীবনে প্রতিটি কাজকর্মে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা। ইবাদত কবুলের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। ইবাদত কবুলের ৫টি শর্ত এখানে তুলে ধরা হলো—

ইবাদত আল্লাহর জন্য হওয়া: ইবাদত আল্লাহর জন্য হতে হবে। আল্লাহকে ভালোবেসে তাঁর কথা হৃদয়ে ধারণ করে ইবাদত করতে হবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহর ইবাদত করো ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬)। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। অন্য কারও ইবাদত বা উপাসনা করা তাঁর অবাধ্যতার প্রমাণ। যারা আল্লাহর অবাধ্য, তাদের আমল-ইবাদত কবুল হয় না।  

ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করা: একনিষ্ঠতার সঙ্গে কাজ করে সফলতা লাভ করা যায়। একনিষ্ঠতা না থাকলে মানুষ গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। একনিষ্ঠতা মুমিনের গুণ। আল্লাহ এমন মানুষকে ভালোবাসেন। তার ইবাদত কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘বলে দাও, আমাকে তো আদেশ করা হয়েছে, যেন আল্লাহর ইবাদত করি তাঁর জন্য আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ১১)। হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মুয়াজ (রা.)-কে বললেন, ‘ইখলাসের (একনিষ্ঠ) সঙ্গে ইবাদত করো, অল্প আমলই যথেষ্ট হবে।’ (শুআবুল ঈমান, ৬৮৫৯)

হালাল খাওয়া: ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল খাবার গ্রহণ। হারাম খাদ্যের ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল, উৎকৃষ্ট বস্তু খাও এবং যেই আল্লাহর প্রতি তোমরা ঈমান রাখো তাকে ভয় করে চলো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৮৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে দেহের মাংস হারাম সম্পদে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম সম্পদে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন।’ (মিশকাত, ২৭৭২)

রিয়ামুক্ত হওয়া: আল্লাহকে পেতে হলে শুধু তাঁর জন্যই মনের মধ্যে ভালোবাসা পুষতে হবে। তাঁকে খুশি করার জন্য জীবনের প্রতিটি কাজ করতে হবে। লোকদেখানো কিংবা অন্যকে খুশি করার জন্য ইবাদত করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, খোটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের সদকা সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হুব্বুল হুজন’ থেকে তোমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, হুব্বুল হুজন কী? তিনি বললেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। এ থেকে খোদ জাহান্নামও প্রতিদিন একশবার আশ্রয় চায়। জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কার তাতে প্রবেশ হবে? তিনি বললেন, ওইসব কারি (তেলাওয়াতকারী) যারা লোকদের দেখানোর জন্য আমল করে।’ (তিরমিজ, ২৩৮৩)

সঠিক পদ্ধতিতে ইবাদত: মানুষের জীবনে উত্তম আদর্শের বাতিঘর রাসুলুল্লাহ (সা.)। তাঁকে অনুসরণ করে চলতে হবে। তাঁর আদর্শ মানতে হবে। তাঁর অনুসরণ ছাড়া ইবাদত করলে কবুল হবে না।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখছ, সেভাবে নামাজ পড়ো।’ (বুখারি, ৬৩১)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদরাসা মধুপুর, টাঙ্গাইল

জোহরের নামাজ কয় রাকাত, শুরু ও শেষ সময় কখন?

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ এএম
জোহরের নামাজ কয় রাকাত, শুরু ও শেষ সময় কখন?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত নামাজরত ব্যক্তির ছবি।

আল্লাহতায়ালা মানুষের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথা—

  • আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা।
  • নামাজ কায়েম করা।
  • জাকাত আদায় করা।
  • রমজানের রোজা পালন করা।
  • হজ করা।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সব নামাজের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। তোমরা যদি (শত্রুর) ভয় করো, তবে দাঁড়িয়ে বা আরোহী অবস্থায় (নামাজ পড়ে নাও)। এরপর তোমরা যখন নিরাপদ অবস্থা লাভ করো, তখন আল্লাহর জিকির সেভাবে করো, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা সম্পর্কে তোমরা অনবগত ছিলে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৮-২৩৯)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে জোহরের নামাজ অন্যতম। আল্লাহর রাসুল মিরাজ থেকে ফিরে এসে প্রথম জোহরের নামাজ আদায় করেছেন। জোহরের নামাজ মোট ১০ রাকাত। প্রথমে চার রাকাত সুন্নত। তারপর চার রাকাত ফরজ। তারপরে দুই রাকাত সুন্নত। এ ছাড়া আরও সুন্নত নামাজও পড়া যায়।  

জোহরের ওয়াক্তের শুরু ও শেষ
দ্বিপ্রহর থেকে সূর্য যখন একটু পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। প্রতিটি জিনিসের আসল ছায়া ছাড়া তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের সময় থাকে। জুমা আর জোহরের নামাজের ওয়াক্তও এক। (বাহরুর রায়েক, ১/৪২৩)

শীতকালে জোহরের নামাজ তাড়াতাড়ি পড়া ভালো। গরমের দিন একটু দেরি করে পড়া ভালো। তবে জুমার নামাজ সব মৌসুমে শুরুর সময়ে পড়া উত্তম। (বাহরুর রায়েক, ১/৪২৯)

আবু বারজা আসলামি (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জোহরের নামাজ সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন।’ (বুখারি, ৫৪৭)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

দেনমোহর সর্বনিম্ন কত টাকা?

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৫১ এএম
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৪ এএম
দেনমোহর সর্বনিম্ন কত টাকা?
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

নারী-পুরুষের পারস্পরিক ভালোবাসা, প্রশান্তির জীবনযাপন এবং পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আল্লাহতায়ালা বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা বিয়ে করো তোমাদের পছন্দের নারীদের থেকে, দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজন; কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে তোমরা ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না, তা হলে মাত্র একজন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩) 

বিয়ে নবিজি (সা.)-এর সুন্নত
বিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিয়ে আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়। তোমরা বিয়ে করো। কেননা আমি উম্মতের সংখ্যা নিয়ে হাশরের মাঠে গর্ব করব।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৪৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘চারটি জিনিস নবিদের চিরাচরিত সুন্নাত— ১. লজ্জা-শরম ২. সুগন্ধি ব্যবহার ৩. মেসওয়াক করা ও ৪. বিবাহ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১০১৮) ‍

দেনমোহর নারীর অধিকার
বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারণ করা অপরিহার্য। দেনমোহর নারীর অধিকার ও সম্মান। কোনোভাবেই নারীকে মোহর থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো। যদি তোমরা তাদের দেনমোহর প্রদান করো বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৫)

দেনমোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ
দেনমোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত নেই। স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে দেনমোহর দিতে হবে। তবে এমন মোহর নির্ধারণ করা যাবে না, যা স্বামীর পক্ষে আদায় করতে কষ্টকর হয় বা স্ত্রীর জন্য লজ্জাজনক হয়। ইসলামি শরিয়তে নারীর প্রকৃত অধিকার হলো ‘মোহরে মিছাল’। ওই নারীর বংশে তার মতো অন্য নারীদের সাধারণত যে মোহর নির্ধারণ করা হয়, সেটা তার মোহরে মিছাল। তার বংশে এমন নারী না থাকলে অন্য বংশে তার সমপর্যায়ের নারীদেরটা দেখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবন-জীবিকা সীমিত, আল্লাহ যা দান করেছেন সে তা থেকে ব্যয় করবে...।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৭)

দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ 
মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো ১০ দিরহাম। এর কমে মোহর দেওয়া যাবে না। ১০ দিরহামের পরিমাণ বর্তমান হিসাবে পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপা।  পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপার বাজারমূল্য ধরে মোহর দিতে হবে। সর্বনিম্ন মোহর দিতে গিয়ে নারীকে ঠকানো যাবে না। সামর্থ্য অনুযায়ী মোহর দিতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীদের মোহর দাও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কোরআন পাঠের গুরুত্ব ও উপকারিতা

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
কোরআন পাঠের গুরুত্ব ও উপকারিতা
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত কোরআনের ডিজাইন করা ছবি

কোরআন আল্লাহর কালাম (কথা)। আল্লাহর সঙ্গে একান্তে নিভৃতে কথোপকথনের মাধ্যম। নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত না করলে তা হৃদয় থেকে হারিয়ে যায়। হৃদয়ে কোরআন সংরক্ষণের উপায় হলো, নিয়মিত পাঠ ও তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। হাদিসে কোরআন পাঠের ব্যাপারে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

কোরআনের প্রতি যত্নবান
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই কোরআনের প্রতি যত্ন নাও (নিয়মিত পড়ো ও চর্চা করো), সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, উট যেমন তার রশি থেকে অতর্কিতে বের হয়ে যায়, তার চেয়ে অধিক অতর্কিতে কোরআন (স্মৃতি থেকে) বের হয়ে যায়।’ (রিয়াজুস সালেহিন, ১০০৯)

কোরআনশূন্য অন্তরের উপমা
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনের কোনো অংশই যে ব্যক্তির পেটে নেই, সে পেট বিরান ঘরের মতো।’ (রিয়াজুস সালেহিন, ১০০৭)

কোরআন পাঠের উপকারিতা
১. কোরআন পাঠে ঈমান বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ২)
২. কিয়ামতের দিনে পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে। আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কেননা কিয়ামত দিবসে কোরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসেবে আগমন করবে।’ (রিয়াজুস সালেহিন, ৯৯৮)
৩. কোরআন মর্যাদাপূর্ণ। যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়, সেও সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়। উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে, যে কোরআন শিখে ও অপরকে শেখায়।’ (রিয়াজুস সালেহিন, ১০০০)
৪. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘(কিয়ামতের দিন) কোরআনের বাহককে বলা হবে, পাঠ করতে থাক ও ওপরে আরোহণ করতে থাক এবং দুনিয়াতে যেভাবে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে ঠিক সেভাবে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে থাক। যে আয়াতে তোমার পাঠ সমাপ্ত হবে, সেখানেই তোমার জায়গায়।’ (তিরমিজি, ২৯১৪)

লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ঈমাম আবু হানিফা (রহ.), ঢাকা