![শাওয়ালের ছয় রোজা](uploads/2024/04/18/1713431014.sawal.jpg)
শাওয়াল হিজরি বর্ষের দশম মাস। পবিত্র ঈদুল ফিতরের মধ্য দিয়ে এই মাসের সূচনা হয়। এ মাসে ছয়টি রোজা পালনের কথা হাদিসে এসেছে। নির্দিষ্ট কোনো দিন কিংবা তারিখের বাধ্যবাধকতা ছাড়া রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসজুড়ে ছয়টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জিত হয়।
শাওয়ালের ছয় রোজা প্রসঙ্গে হাদিসে সুসংবাদ বর্ণিত হয়েছে। সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের সব রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল, সে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করল।’ (মুসলিম, ১১৬৪; তিরমিজি, ৭৫৯; আবু দাউদ, ২৪৩৩)
হাদিসের বর্ণনামতে, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা যথাযথ আদায়ের পর শাওয়াল মাসে ধারাবাহিক বা বিচ্ছিন্নভাবে ছয়টি রোজা রাখে, সে সারা বছর রোজা পালনের সওয়াব পাবে। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বান্দাকে অল্পের বিনিময়ে বিপুলসংখ্যক সওয়াব অর্জনের এটি নিশ্চয়ই সুবর্ণ সুযোগ।
কোরআনের সুরা আনয়ামে আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদান দশগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।’ (আয়াত, ১৬০)। এ ছাড়াও হাদিস থেকে জানা যায়, প্রতিটি রোজার বিনিময় দশগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
অতএব পুরো রমজানে ৩০টি রোজার সওয়াব দশগুণ বেড়ে ১০ মাস বা ৩০০ দিনের সমান হয়। এরপর শাওয়ালের ছয় রোজার দশগুণ ৬০টি রোজা—যা দুই মাসের সমান সওয়াব অর্জিত হয়। এভাবে রমজানে সবগুলো রোজা পূর্ণ করার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখলে খুব সহজে সারা বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এ ছয় রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদেরও নির্দেশ দিতেন। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকেও এ ধরনের হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (আবু দাউদ, ২৪৩৩) অন্য সাহাবিদের মধ্যে জাবের (রা.), সাওবান (রা.) এবং ইবনে উমর (রা.) থেকেও এ বিষয়ে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
সাধারণত রমজান মাসজুড়ে রোজা রাখার সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাদের কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়। কিয়ামতের মাঠে এসব ভুলের কারণে যেন রোজার সওয়াবে কোনো অপূর্ণতা না থাকে, সেজন্য শাওয়ালের ছয় রোজা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস থেকে জানা যায়, বিচারের দিন ওজনের পাল্লায় ফরজ ইবাদত যদি অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে, তখন মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির নফল ইবাদত থাকলে সেখান থেকে নিয়ে তা পূর্ণ করার জন্য ফেরেশতাদের আদেশ দেবেন।
বিখ্যাত হাদিসবিশারদ ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজার মধ্যে বিশেষ রহস্য রয়েছে। এই ছয়টি রোজা রমজানের রোজার পরিপূরক। রমজানের রোজায় যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকে, শাওয়ালের এই ছয় রোজা সেগুলো দূর করে। ব্যাপারটি যেন ফরজ নামাজের পর সুন্নত ও নফল নামাজের মতো এবং নামাজে ভুল হলে সাজদায়ে সাহু দেওয়ার মতো।’
উল্লেখ্য, শাওয়াল মাসের এ ছয় রোজা পুরুষ ও নারীর জন্য সুন্নত। পুরো শাওয়াল মাসের যে কোনো ছয় দিনে এসব রোজা রাখা যায়। কেউ চাইলে মাসের শুরুতে রাখতে পারে, আবার মাসের মধ্যভাগে বা শেষভাগেও রাখতে পারে। এমনকি একাধারে ছয় দিন অথবা মাঝে বিরতি দিয়ে মোট ছয়টি রোজা রাখা যেতে পারে।
হাদিস শাস্ত্রের বিখ্যাত ইমাম ইবনুল মুবারক (রহ.) বলেন, ‘প্রতি মাসে তিন দিন রোজা পালনের মতো শাওয়াল মাসের ছয় রোজাও মুস্তাহাব। কোনো কোনো হাদিসে এই রোজা রমজানের পরপরই রাখার কথা এসেছে।’ এ জন্য তিনি এই ছয়টি রোজা শাওয়াল মাসের শুরুর দিকে পালন করা বেশি পছন্দনীয় মনে করতেন।
সাধারণত পার্থিব কেনাকাটার বেলায় আমরা যেভাবে বিশেষ অফারের প্রতি আকর্ষণ বোধ করি এবং এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, একইভাবে আখেরাতের অপার্থিব পুণ্যের বেলায়ও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য যেসব বিশেষ সুযোগ রয়েছে এবং যেগুলোর
মাধ্যমে আমরা সীমিত কয়েক দিনের বিনিময়ে সারা বছরের জন্য পুণ্যবান হতে পারি—সেগুলোর প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত। শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করার প্রতি বিশেষভাবে সচেতন থাকার মাধ্যমে একজন প্রকৃত ঈমানদার নিজের সর্বময় সাফল্য সুনিশ্চিত করতে পারেন।
লেখক : অনুবাদক ও গবেষক