![টিনএজে প্রেম](uploads/2024/02/09/1707461291.a2.jpg)
টিনএজে কি প্রেম করা ঠিক? হ্যাঁ কিংবা না। জবাবটা জানার আগে এ বিষয়ে কিছু জেনে নেওয়া যাক।
প্রেম খুবই জটিল একটি বিষয়। কারণ একেক জনের প্রেমের ধরণ একেক রকম। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষ তার নিজের মতো করেই প্রেম বা ভালোবাসা অনুভব করে।
কানাডার টরন্টোর ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সাত বছর ধরে প্রায় সাতশ প্রিটিন এবং টিনএজারদের পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। সেই গবেষণায় প্রেম বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বয়স অনুসারে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছিলেন। তাঁদের সেই গবেষণার সারমর্ম হলো এমন- প্রেমের কোনো সঠিক বয়স নেই। যে কেউ যে কোনো বয়সেই প্রেম-ভালোবাসায় আসক্ত হতে পারে।
তবে কথা আছে। মানবমস্তিষ্কের কার্যকলাপ বিষয়ক গবেষকরা জানান, প্রেমের জন্য পরিপক্ক হতে মানব মস্তিষ্কের পঁচিশ বছর সময় লেগে যায়। আর সে কারণে কিশোর-কিশোরীরা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে আলাদা উপায়ে প্রেমের আবেগ অনুভব করে। কিশোর বয়সে প্রেমের কারণে ডোপামিন হরমোন মস্তিষ্কে ঝিলিক মারে। কোকেনের মতো ভয়াবহ নেশায় আসক্ত হলেও মস্তিষ্কের ঠিক একই অংশে একইভাবে ডোপামিন হরমোনের ঝিলিক অনুভূত হয়। আর এই ঝিলিকের আসক্তির কারণে টিনএজাররা সর্বগ্রাসী আবেগী হয়ে ওঠে। অর্থাৎ ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত কাটানোর ইচ্ছা জেগে ওঠে। আর এই ইচ্ছাটাই তাদের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে। তারা হয়ে ওঠে দুর্দমনীয় ও বেপরোয়া। সাধারণ বিবেচনা বোধ, সাধারণ জ্ঞানটুকুও তাদের লোপ পায়। এবং একসময় ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার এই দুর্দমনীয় ইচ্ছা একে অপরকে হারানোর ভয়ে রূপান্তরিত হয়। তৈরি হয় উদ্বেগ এবং তাদের নিজেকে খুব অসহায় লাগে। তখন তাদের মনে হয় পৃথিবীতে তাদের বুঝি প্রিয়জন কিংবা আপনজন বলতে কেউ নেই।
এটা আসলে কুপিবাতির শিখার মতো। যত তাড়াতাড়ি জ্বলে ওঠে, তত দ্রুতই নিভে যেতে পারে।
অভিজ্ঞতা, বাস্তবতা, মস্তিষ্কের অপরিপক্কতা এবং কমবয়সের কারণে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে টিনএজাররা। ফলে তারা চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এবং যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। আর এই দুর্ঘটনা তার জীবনকে তো অবশ্যই, তার প্রিয়জনদের জীবনকেও নষ্ট করে ফেলতে পারে।
এর পরেও, বুঝে হোক কিংবা না বুঝে হোক টিনএজে অনেকেই প্রেমে পড়ে। যদিও টিনএজে প্রেমে পড়াটাই স্বাভাবিক। তবে বুদ্ধিমতী কিংবা বুদ্ধিমান টিনএজার কাউকে ভালোলাগার বিষয়টা গোপন রাখে।
আমরা আমাদের ভালো লাগার মানুষকে কোথায় পাই? আমাদের আশপাশ থেকেই। আমাদের আশপাশটা যত বড় হবে, ভালো লাগার মানুষকে খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রটাও তত বড়ই হবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু টিনএজ এমন একটা সময়, যখন খুব বেশি মানুষের সঙ্গে চেনা-জানা থাকে না। কাজেই পছন্দের মানুষকে খুঁজে পাওয়ার জায়গাটাও তখন ছোট থাকে। এই ছোট জায়গা থেকে ভুল মানুষকে পছন্দ করার খেসারত বয়ে বেড়াতে হয় সারাজীবন।
অন্যদিকে টিনএজ প্রেম মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা যৌক্তিকভাবেই আমাদের বেশিরভাগ পরিবারের থাকে না। অল্পবয়সী সম্পর্ক মেনে না নেওয়ার কারণে টিনএজাররা নিজেদের গুটিয়ে রাখে-পরিবার, সমাজ এমনকি বাইরের দুনিয়া থেকেও। নিজের জগতটাকে আরো ছোট করে ফেলে তারা। দুঃশ্চিন্তা, একাকীত্বসহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যা তৈরি হয় তাদের মধ্যে।
টিনএজ বয়স হচ্ছে নিজেকে গড়ে তোলার মোক্ষম সময়। এ সময় কেউ যদি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তাহলে নিজেকে গড়ে তোলার, কিংবা পছন্দের মানুষের জন্য নিজেকে উপযুক্ত করে তোলার শক্তি সে হারিয়ে ফেলে।
আবার অনেক সময় দেখা যায়, টিনএজ বয়সে যাকে খুব ভালো লাগত, আরো কিছু সময় পরে আর তাকে ভালো লাগছে না। উল্টো একসময়কার প্রিয় মানুষটি তখন এতটাই অপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, দেখলেই বিরক্তি চলে আসে।
আসলে আমাদের মস্তিষ্ক যত পরিপক্ক হতে থাকে, পছন্দের রুচিও তত বদলাতে থাকে। গবেষকদের মতে, মস্তিষ্ক পরিপক্ক হলেই রুচি ও ব্যক্তিত্বে পরিপূর্ণতা আসে। তাই অপরিপক্ক বয়সে প্রেম-ভালোবাসার স্রোতে নিজেকে না ভাসিয়ে, বাস্তবতা অনুভব করো। এবং পরিপক্ক হয়েই এমন কাউকে বেছে নাও, সারাজীবন যে তোমার পাশে থাকবে। তখন জীবনটাকেও উপভোগ করতে পারবে। কারণ জীবনকে দীর্ঘ সময়ের জন্য চমৎকার উপভোগ্য করতে নিজেকে তৈরি করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে টিনএজ।
জাহ্নবী