ঢাকা ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪

একদল হেল্পিং হ্যান্ড তরুণ

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ পিএম
একদল হেল্পিং হ্যান্ড তরুণ
অফিস কক্ষে হেল্পিং হ্যান্ড দশঘরিয়ার সদস্যরা

দশম শ্রেণিতে পড়া ওরা আটজন উদীয়মান তরুণ। নোয়াখালীর চাটখিলের দশঘরিয়ার- নিশান, নাফিজ, মানিক, জিদান, সুজন, ওয়াসিম, আজগর ও সুজন। এক প্রতিবেশীর ইমার্জেন্সি রক্তের প্রয়োজনে ফেসবুকে একটা গ্রুপ তৈরি করে রক্ত সংগ্রহের পরিকল্পনা করে। পাশাপাশি সেবার পরিসর বাড়াতে ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘দশঘরিয়া হেল্পিং হ্যান্ড’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করে। উদ্বোধনী দিনে চার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে তারা। মূলত বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া হাত খরচের টাকায় এই তরুণরা রক্তদাতা এবং গ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ করেই চলেছে প্রতিনিয়ত। ফেসবুক প্রোফাইলে, গ্রুপে নিয়মিত আপডেট, ফোনে কল পাওয়া মাত্রই হাসপাতালে ছুটে যায় ওরা। 

অনলাইন যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সামাজিক কার্যক্রমগুলো তাদের অনুপ্রাণিত করে।

মানবতার এমন আগ্রহ দেখে স্থানীয় দশঘরিয়া বাজারের ব্যবসায়ী রাব্বানী ভুঁইয়া তার প্রতিষ্ঠানের দোতলার একটি কক্ষ সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই তরুণদের বিনা ভাড়ায় ছেড়ে দেন। বর্তমানে তারা ৩নং পরকোট ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় পরিষদের ভেতরে একটি কক্ষ বরাদ্দ পেয়ে সেখান থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক দিনের প্রশিক্ষণ

গত ২৫ জানুয়ারি তাদের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের রক্তদানে উৎসাহিতকরণ, সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োজিত হতে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিগুলো সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নজরে এসেছে এবং প্রশংসাও কুড়িয়েছে।

উদীয়মান এই তরুণদের সাংগঠনিক সেবাদানের বয়স প্রায় এক বছর হলেও কার্যক্রমগুলো সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ৩০ জন সক্রিয় সদস্যের আন্তরিকতা ও স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব এ পর্যন্ত ১১১ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে রোগী পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছে। তাছাড়া গরিব-অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, নগদ অর্থ প্রদান, ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ঈদ সামগ্রী ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ উল্লেখযোগ্য। তাদের নিজেদের জমানো সামান্য টাকার সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিত্তবানদের দেওয়া অর্থের সমন্বয়ে চলে তাদের নিয়মিত সেবা কার্যক্রম।

আলাপচারিতার একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নিশান ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানান, ‘একবার একজনের ফোনকল পেয়ে ডোনার নিয়ে হাসপাতালে রক্ত দিতে যাই, কেউ ডোনারকে একটা স্যালাইন তৈরি করে খাওয়াবে এমন সৌজন্যতা বোধটুকুও দেখাননি। পরে নিজের টাকায় পানি ও স্যালাইন কিনে খাইয়েছি।’ এমন তিক্ত ঘটনার মধ্য দিয়েই তাদের কখনো কখনো যেতে হয়। তবু নেতিবাচক সব বিষয় দুমড়ে-মুচড়ে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে এই তরুণরা।

উদীয়মান এই তরুণদের স্বপ্ন, আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই স্বেচ্ছাসেবী মানুষ তৈরি হবে প্রতিটি পরিবারে, সমাজের নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে, রক্তের প্রয়োজনে যে কেউ সহজে ও হয়রানিমুক্তভাবে রক্ত নিতে ও দিতে পারবে। এমন চেতনার বাস্তবায়নে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আত্মনিয়োগের আহ্বানের পাশাপাশি ব্লাড গ্রুপিং ব্লাড কালেকশন বিষয়ে এই তরুণরা এক দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে। যাতে করে আগামী প্রজন্ম একটা সুন্দর সুশৃঙ্খল জীবন ধারণ করতে পারে।

জাহ্নবী

তারুণ্যের সংকেত

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
তারুণ্যের সংকেত

টিনএজারদের নিজস্ব কিছু ভাষা আছে। এসব ভাষা আবার হাতের ইশারায়, নানান ভঙ্গিতে প্রকাশ পায়। তেমনি কিছু হাতের ভাষা

আলাপ হবে মোবাইলে
এই সংকেতের অর্থ কল দিও, কিংবা মোবাইলে যোগাযোগ করো। যদিও একসময় ল্যান্ডফোনে কল দেওয়ার বেলায় এই সংকেত ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন স্মার্টফোনে কল দেওয়াই বোঝায়।


আমি তোমাকে ভালোবাসি
ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য যদিও হৃদয় সংকেত প্রচলিত ও জনপ্রিয়, তবু এ সংকেতের মাধ্যমেও কারো প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়।


একসাথে দুই আঙুল
দুই আঙ্গুল একসাথে থাকলে সাধারণত লজ্জা বোঝায়। অর্থাৎ কেউ যা ভাবছে তা বলতে লজ্জা পাচ্ছে।

জাহ্নবী

সাইকেল যার ধ্যান-জ্ঞান

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম
সাইকেল যার ধ্যান-জ্ঞান
তাম্মাত ও তার সাইকেল

তাম্মাত বিল খয়ের। সাইকেল নিয়ে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এর মধ্যেই সাইকেল নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন হাজার হাজার মাইল পথ।

তাম্মাতের জন্ম চট্টগ্রামে। বাবা চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনস মসজিদের ইমাম, মা গৃহিণী। সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তাম্মাত। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনসে। পড়াশোনা করছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তাম্মাত প্রথমে সাইকেল চালানো শেখেন ভাইয়ের কাছে। বাবা-মা চাইতেন না তাম্মাত সাইকেল চালানো শিখুক। কারণ পুলিশ লাইনসের পাশেই রয়েছে মেইন রোড। সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাম্মাতকে সাইকেল কিনে দিতে চাননি বাবা-মা। ছোটবেলায় তাম্মাত বিটিভিতে দেখতে পান একজন লোক সাইকেল চালিয়ে পুরো বাংলাদেশ ঘুরছেন। এটা তাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করে। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন বড় হয়ে সাইকেলে বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ছোটবেলা থেকেই গণিতে ভালো ছিলেন। অষ্টম শেণিতে পড়ার সময়ই সহপাঠীদের পড়িয়ে অর্থ উপার্জন করতেন। সেই টাকা দিয়ে কলেজে পড়ার সময় একটি সাইকেল কেনেন। এরপর একদিন সাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। সেটা তার জীবনের অন্যতম খারাপ একটি দিন ছিল। সাইকেল হারানোর কষ্টে সেই রাতে বেশ কান্নাকাটি করেছিলেন তাম্মাত।

তাম্মামের অর্জন

 

কলেজজীবন শেষে আরেকটি সাইকেল কেনেন। ঢাকা থেকে লুকিয়ে সাইকেলটা কিনে আনেন। ২০১৬ সালে কমিউনিটি সাইকেলের সঙ্গে যুক্ত হন। চট্টগ্রামের সাইকিলিং গ্রুপগুলো চট্টগ্রামে রাইড দেয়। তাদের সঙ্গে থেকে নানা বিষয় শেখেন। আর তখন থেকেই বুঝতে পারেন, এমনি সাইকেল চালানো আর সাইকেল নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য সাইকেল চালানো আলাদা বিষয়।

কমিউনিটির সবাই ততদিনে জেনে যায় যে, তাম্মাতের লক্ষ্য সাইকেলে ঘুরবেন সারা বাংলাদেশ। এরপর গ্রুপের নোমান ও বাবুলের সঙ্গে পরিচয় হয় তাম্মাতের। যারা কয়েক বছর আগেই সারা বাংলাদেশ ঘুরেছেন ২৯ দিনে। নোমান ভাইয়ের কাছ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ নেন। এরপর এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা পাড়ি দেওয়ার জন্য বের হন। যদিও পরিবারকে জানান যে, সঙ্গে আরও ২০-২৫ জন আছে। মিথ্যা ধরা পড়ার ভয়ে এক রাতে সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। সে রাত তাম্মাতের জীবনের অন্যতম আনন্দ ও আতঙ্কের রাত।

পরিবার ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের বাইরে কখনো না যাওয়ার করণে তাম্মাত বেশ ভয় পেতে থাকেন। এরপর চট্টগ্রাম শহর পার হওয়ার পর দুর্ঘটনায় পড়েন। তখনই মত বদলে বাড়ির পথ ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন পূরণের পথেই এগোলেন। সেই রাতকে তাম্মাত তার জীবন পাল্টনো রাত বলেন।

সাইকেলসহ ভারতে

ঝুঁকি এড়াতে তাম্মাত সঙ্গে রাখতেন সাইকেলের সাধারণ সমস্যা ঠিক করার যন্ত্রপাতি এবং দুই সেট কাপড়। শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম দিয়ে। ধীরে ধীরে ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা যান। মাত্র ২৫ দিনে ৬৪ জেলা ঘোরা শেষ করেন।

এই যাত্রা শেষ করার পর সব ভয় কেটে যায় তার। ভ্রমণের বিষয়ে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালের পর সিদ্ধান্ত নেন প্রতি বছর কোনো না কোনো অ্যাডভেঞ্চার করবেন।

এলাকার বড় ভাইদের সঙ্গে বান্দরবান যেতেন সাইকেল নিয়ে। তাঁবু গেড়ে থাকতেন এবং নিজেরাই রান্না করে খেতেন। চার-পাঁচ দিন তাদের সঙ্গে পাহাড়ে হাঁটতেন এবং বিভিন্ন জায়গায় যেতেন। পাহাড় থেকে মজার আম খেয়ে ২০ কেজি ব্যাগে করে নিয়েও আসেন দুই দিন পাহাড়ে ট্র্যাকিং করে। এরপর কমিউনিটির সবাই পাগল বলতে থাকে তাম্মাতকে।

চট্টগ্রামের এক স্থানীয় ম্যারাথনে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ১ হাজার কিলোমিটার হাঁটবেন। ২০১৮ সালে হেঁটে পাড়ি দেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ফোসকা পড়ে যায়। ডাক্তারের বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শও কানে তোলেননি। আবারও শুরু করেন হাঁটা। তাম্মাতের এই গল্প ছড়িয়ে পড়লে তেঁতুলিয়া থেকে বাংলাবান্ধা তার সঙ্গে হাঁটেন অনেক তরুণ; যা তাকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। পাশাপাশি নানা ম্যারাথনে অংশ নিতেন। বন্ধুদের থেকে টাকা ধার করে নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন এবং প্রথম থেকে তৃতীয় হতেন, সেখান থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে ধার শোধ করতেন। একবার তো এক বন্ধুর হানিমুনের টাকা নিয়ে এক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

ভারত, নেপালসহ কয়েকটি দেশের ম্যারাথনেও অংশ নেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আয়োজনে বগা থেকে কেওক্রাডংয়ের ম্যারাথনে অংশ নিয়ে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হন।

এরপর তাম্মাত ভাবলেন ২৫ দিনে নয়, আরও কম সময়ে বাংলাদেশ সাইকেলে পাড়ি দেওয়া সম্ভব। এরপর ঢাকায় আসেন স্পন্সর খুঁজতে। তবে সাড়া পাননি। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা তুলতে সক্ষম হন তাম্মাতরা। সে সময় অনেকেই সন্দেহ করেছিল, এই ছেলে বাস-ট্রাকে করেও সাইকেল নিয়ে সারা দেশ ঘুরতে পারে। এরপর তিনি ঠিক করলেন সঙ্গে রাখবেন একজন ক্যামেরাম্যান, যিনি লাইভে সব কার্যক্রম দেখাবেন। বাইকসহ আরও দুজন তাম্মাতের সঙ্গী হন। হিসাব করে দেখলেন টাকা প্রয়োজন ১ লাখ ২০ হাজার কিন্তু টাকা আছে ৩০ হাজার। জমানো ৪০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু হয় যাত্রা। সেই যাত্রায় সাহস জোগান নাজিউর ও মণি নামে তাম্মাতের দুই সহযোদ্ধা। মণি ভাই বাকি অর্থ জুগিয়ে সহযোগিতা করেন। এরপর শুরু হয় যাত্রা।

নানা রকম বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ১৫ দিনে রাইড শেষ করেন। এটাই এখনো রেকর্ড হয়ে আছে।

তাম্মাতের ভাই তাকে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিতে থাকেন। করোনার আগে অনূর্ধ্ব ২৩ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য তিনি নির্বাচিত হন। কিন্তু করোনার কারণে আর অংশ নেওয়া হয়নি। এরপর বিভিন্ন বাহিনী থেকে আমন্ত্রণ পেতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত দুবার দুটো দলের হয়ে দুটো পদকও অর্জন করেন।

ছোটবেলা থেকেই তাম্মাত আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ভক্ত। বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখার সময় করে বসেন অদ্ভুত এক কাণ্ড। মেসির জীবনের ১০০৩তম মেস থাকায় ঘোষণা দেন, আর্জেন্টিনা ট্রফি জিতলে সাইকেলে ১০০৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবেন। আর সেটা উৎসর্গ করা হবে মেসিকে। বিশ্ব কাপের পর তার এই ১০০৩ কিমি. পাড়ি দেওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের সময় তাম্মাত শুরু করেন ব্লগিং। সাইকেল চালানোর সঙ্গে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরতে থাকেন চারপাশের পরিবেশ। যেখানেই যান সেখানকার প্রকৃতি ও চারপাশ উঠে আসে তাম্মাতের ভিডিওতে। ভিডিওতে মাঝে মাঝে সচেতনতামূলক অনুরোধ করেন তাম্মাত।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের ইস্টওয়েস্ট হাইওয়ে ১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়িও দেন।

নেপাল থেকে ফিরে তাম্মাত সিদ্ধান্ত নেন প্রতিদিন ঘুরবেন একটি করে জেলা অর্থাৎ ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা। ৬৪ জেলা ভ্রমণের উদ্দেশ্য- প্রত্যেক জেলার কমিউনিটির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আগ্রহী ছেলেমেয়েদের অ্যাডভেঞ্চারের জন্য অনুপ্রেরণা দেন।

এর মধ্যেই ভারতের দীর্ঘতম সড়ক কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়িও দেন তিনি। তাম্মাত বিশ্বাস করেন, তারুণ্যের শক্তিই পারে দেশকে বদলে দিতে। আর বিশ্বাস নিয়েই তিনি এগিয়ে চলছেন নতুন কিছু করতে।

জাহ্নবী

তারুণ্যের সফলতা

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
তারুণ্যের সফলতা

মানুষের জীবনে তারুণ্য এমন একটা সময়, যেখান থেকে সফলতার পথচলাটা মূলত শুরু হয়। তরুণ বয়সটা তাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সব তরুণই কি সফল? অবশ্যই না। তারুণ্যের সফলতা আসলে কোথায়? বিস্তারিত টিনএজপ্লাস ডেস্ক থেকে

উদ্যোক্তা কিংবা চাকরিজীবী অথবা সৃজনশীল যেকোনো কাজে সফল হওয়ার কিছু সূত্র রয়েছে। যদিও এই সূত্র কেউ তৈরি করেনি কিংবা এই সূত্র কেউ কারও ওপর চাপিয়েও দেয়নি। তবে তারুণ্যের সফলতা থেকেই সূত্রগুলো তৈরি। আর সেই সূত্রগুলো মেনে সফলতার দিকে হেঁটেছেন অনেক তরুণ।

তরুণদের জন্য থাকে কিছু আদর্শ। বিশ্বে যেমন তারুণ্যের অন্যতম আদর্শ হিসেবে আছেন বিল গেটস, স্টিভ জবস, মার্ক জাকারবার্গ, টমাস আলভা এডিসনসহ অসংখ্য মানুষ। সামান্য উদ্যোক্তা থেকে তারা হয়ে উঠেছেন মহীরুহ। হয়েছেন তরুণদের আইকন। যেমন বিল গেটস তার সফলতার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরাও তরুণ ছিলাম। তবে আমাদের সঙ্গে ছিল সঠিক দিকনির্দেশনা, উত্তম আইডিয়া আর দারুণ উদ্দীপনা।’

যদিও তারুণ্যের সফলতার সূত্র খুঁজতে গেলে অনেক কিছুরই হদিস মিলবে। তবে মূলত চারটি কথাতেই সবকিছু বলে দিয়েছেন বিল গেটস। ১. তারুণ্য, ২. সঠিক দিকনির্দেশনা, ৩. উত্তম আইডিয়া এবং ৪. দারুণ উদ্দীপনা
এর বাইরেও আরও কিছু বিষয় রয়েছে সফলতা অর্জনের পথে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
তুমুল মানসিক শক্তি: কাজ করার, পরিশ্রম করার মানসিক শক্তি থাকতে হবে। এই মানসিক শক্তিই শারীরিক শক্তির জোগান দেবে।
নিয়ন্ত্রিত আবেগ: নিজের কাজের প্রতি আবেগ থাকা খুবই জরুরি। যে কাজটা করতে হবে, সে কাজকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে না পারলে সফলতার পথও তৈরি হবে না। মানসিক দৃঢ়তা যেকোনো কঠিনকে সহজ করে তুলতে পারে। তবে আবেগ হতে হবে নিয়ন্ত্রিত।
দায়িত্বজ্ঞান: সফল উদ্যোক্তাদের দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন হতেই হয়। কঠোর দায়িত্বজ্ঞান ছাড়া কখনোই সফলতা আশা করা যায় না।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা: সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতে হবে। আর কখনো কোনো সিদ্ধান্ত ভুল হলে অন্যের ওপর সে ভুলের দায় না চাপিয়ে, ভুল মেনে নিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে স্টিভ জবসের একটি উক্তি হলো, ‘কখনো নতুন কাজ শুরু করেছ, ভুল হতেই পারে। সবচেয়ে ভালো, ভুল কাটিয়ে উঠতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া।’
নিজের প্রতি বিশ্বাস: আমি পারব, আমাকে দিয়ে হবে- এই বিশ্বাস থাকতেই হবে। এই বিশ্বাসের জোরেই সব বাধা উড়ে যাবে। বিশ্বাসের অভাব হলে কোনো কিছুই সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
অধ্যবসায়: কাজের প্রতি অটল থাকা, ধারাবাহিকভাবে কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়া, কাজে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করাই একজন সফল উদ্যোক্তার লক্ষ্য। সফল হতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।
নিয়মানুবর্তিতা: নিয়ম মেনে কাজ করা সফলতার অন্যতম শর্ত। 
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য: কাজ শুরুর আগে লক্ষ্য স্থির করতে হবে। তারপর সেই লক্ষ্যের প্রতি স্থির থাকতে হবে এবং লক্ষ্য মাথায় রেখে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। লক্ষ্যবিহীন কোনো কাজেই সফলতা আসে না।

ধৈর্য: কাজে নানান প্রতিকূলতা আসতে পারে। সেই প্রতিকূল সময়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে সঠিক সময়ের জন্য।

ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা: ব্যবসা করতে চাইলে অথবা যেকোনো উদ্যোগ নিতে চাইলে, বিশেষ করে ব্যতিক্রম কিছু করতে চাইলে ঝুঁকি কিন্তু নিতেই হয়। ঝুঁকি নেওয়ার সাহস ও সক্ষমতা থাকা দরকার।

কৌশলী: প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায় ভালো করতে হলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কোন সময় কীভাবে ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে হয়, কখন কী পণ্য বাজারে চাহিদা তৈরি করে, অন্য কোম্পানি থেকে কীভাবে আলাদা হওয়া যায়-এসব বিষয়ে কৌশলী হতে হয়।
চাপ নেওয়ার মানসিকতা: কাজে ঝামেলা থাকবেই। সেই ঝামেলাকে মেনে নিয়ে, অর্থাৎ চাপ সামলে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকা খুবই জরুরি। কাজ ও অন্যান্য চাপের মধ্যে ধীরস্থির হয়ে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে সফলতার সুযোগ তৈরি হয়।

ব্যক্তিত্ব: উদ্যোক্তাকে তার ব্যক্তিগত অবস্থানের প্রতি অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। এ বিষয়ে ওয়ারেন বাফেটের উক্তি- ‘সুনাম অর্জন করতে হয়তো ২০ বছর লাগে, কিন্তু মাত্র পাঁচ মিনিটেই তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’ কাজেই নিজের ব্যক্তিত্বকে সে পর্যায়ে রাখতে হবে।

একই ভুল বারবার না করা: একই রকম ভুল বারবার করা কোনোভাবেই সফলতার পথ সৃষ্টি করতে পারে না। বরং একটি ভুল থেকে আরও দশটি ভুল না করার জ্ঞান থাকা জরুরি।

তৃপ্ত থাকা: নিজের কাজের প্রতি তৃপ্ত থাকাও সফলতার পথ তৈরি করে এবং কাজের ফলাফলের তৃপ্তিও অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করে। কিন্তু অতিরিক্ত তৃপ্তি আবার সফলতার পথে বাধা হয়েও দাঁড়াতে পারে।

নিজের প্রতি বিশ্বাস: নিজের প্রতি বিশ্বাস বা আত্মবিশ্বাসও থাকা দরকার।

ঘটনাগুলো নজরুল-জীবনের

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
ঘটনাগুলো নজরুল-জীবনের
গান শেখাচ্ছেন নজরুল। ১৭ বছর বয়সে নজরুল

একবার এক ইংরেজ পরিবারকে ইংরেজিতে ঠিকানা বুঝিয়ে বলতে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল নজরুলের। সঙ্গে ছিলেন বাল্যবন্ধু শৈলজানন্দ। তখনই প্রতিজ্ঞা করলেন ইংরেজিতে কথা বলা শিখতে হবে। দুই বন্ধু মিলে শুরু করলেন ইংরেজি খবরের কাগজ পড়া। লাইব্রেরি থেকে ইংরেজি গল্পের বই এনে পড়া। সঙ্গে নিয়ে বসলেন ডিকশনারি। কয়েক দিন খুব চেষ্টা-টেষ্টা চলল। ডিকশনারি খুঁজে খুঁজে অর্থ বের করতে করতেই হাঁপিয়ে গেলেন তারা। এটা নয় ওটা। ওটা নয় সেটা। এমনি করে করে লাইব্রেরি থেকে মোটা মোটা ইংরেজি বই এনে লাইব্রেরি প্রায় ফাঁকা করে ফেললেন দুই বন্ধু। বন্ধু শৈল তো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এদিকে নজরুল কিন্তু লাইব্রেরি থেকে বই এনে পাতা উল্টিয়েও দেখলেন না। মোটা বইগুলো তার ডুগিতবলা বাজানোর জন্যই বেশি কাজে লাগতে থাকল। শেষে বই পড়ে ইংরেজি শেখার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেন। তাই বলে ইংরেজিতে কথা বলা শেখার ভূত কিন্তু মাথা থেকে গেল না। নতুন বুদ্ধি আঁটলেন। ইংরেজিতে কথা বলতে হলে তাদের চাই একজন ইংরেজ। ইংরেজের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তারাও ইংরেজের মতো ঝরঝরে ইংরেজি বলবেন। খুঁজতে খুঁজতে মিস্টার শেকার নামে এক ইংরেজকে পেয়েও গেলেন। এত সহজে ইংরেজি শেখার সুযোগ থাকতে বই পড়ার কষ্ট করতে যাবেনই বা কেন? ব্যাস, ইংরেজ তো পাওয়া গেল। এবার শুধু খাতির করার পালা। খাতির করতে গিয়ে দুই বন্ধু ইংরেজিতে কথা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ইংরেজ কিন্তু সমানে বাংলায় কথা বলে চললেন। বাংলায় কথা বলতে পেরে ইংরেজ মোটেও ইংরেজি বলছেন না। মহা মুশকিলে পড়লেন দুই বন্ধু। ইংরেজ যখন, ইংরেজি তো বলবেই। এই ভেবে দুজনে তার সঙ্গে খাতির করে বেশ ক’দিন খুব ঘন ঘন তাদের বাড়ি গেলেন। সাহেবের পরিবারের মানুষগুলোর সঙ্গে আলাপ-সালাপও হলো অনেক। আলাপ পরিচয় খাতির সবই হলো, কিন্তু তারা যে সব কথাই বাংলায় বলে! ইংরেজিতে কথাই বলে না। নজরুল বললেন, এরা নিশ্চয় অন্য জাত। আর তা না হলে এরা বাংলাদেশে থেকে বাংলা শিখে ইংরেজি ভুলে গেছে।

নজরুল আর মুজফফর আহমেদ এক সময় বাড়ি ভাড়া নিলেন ৮/এ, টার্নার স্ট্রিটে। এটি ছিল নবযুগ অফিসের খুব কাছে। মাত্র দু-মিনিটের পথ। বাড়ির মাসিক ভাড়া ছিল দশ টাকার কিছু কম। মুসলমানদের বস্তি এলাকার মধ্যে তাদের বাড়িটিই ছিল একতলা পাকা বাড়ি। সেখানে নজরুল এলাকার বয়স্কা মহিলাদের সঙ্গে খাতির জমিয়ে ফেললেন। নানান রকমের খালা জুটে গেল নজরুলের। যাদের গায়ের রং ফর্সা, তারা আবার তার রাঙা খালা হয়ে উঠল। এই খালারা কিন্তু তাকে বেশ ভালোবাসত। প্রায়ই তারা রান্না করা তরকারি দিয়ে যেত।

কাজী নজরুলের অনেক গানই তখন আব্বাসউদ্দীনের গলায় রেকর্ড করা হয়েছিল। তিনি নজরুলকে ইসলামি গান লেখার জন্য রাজি করাতে চেষ্টা করলেন এভাবে- “একদিন কাজিদাকে বললাম, ‘কাজিদা, একটা কথা মনে হয়। এই যে পিয়ারু কাওয়াল, কাল্লু কাওয়াল এরা উর্দু কাওয়ালি গায়, এদের গানও শুনি অসম্ভব বিক্রি হয়, এই ধরনের বাংলায় ইসলামি গান দিলে হয় না? তারপর আপনি তো জানেন কীভাবে কাফের কুফর ইত্যাদি বলে বাংলায় মুসলমান সমাজের কাছে আপনাকে আপাঙক্তেয় করে রাখবার জন্য আদা-জল খেয়ে লেগেছে একদল ধর্মান্ধ! আপনি যদি ইসলামি গান লেখেন তা হলে মুসলমানের ঘরে ঘরে আবার উঠবে আপনার জয়গান।’ কথাটা তার মনে লাগল।” নজরুল সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলেও রাজি হলেন না গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সাল ইন-চার্জ ভগবতী বাবু। তাকে রাজি করাতে অবশ্য ছয় মাস সময় লেগেছিল। ভগবতী বাবু রাজি হতেই শিল্পী আব্বাসউদ্দীন গান লেখানোর ব্যবস্থা করে ফেললেন। পাশের ঘরে কাজিদা আছেন- শুনেই আব্বাসউদ্দীন গিয়ে বললেন, ‘ভগবতী বাবু রাজি হয়েছেন।’ তখন সেখানে ইন্দুবালা গান শিখছিলেন নজরুলের কাছে। নজরুল বলে উঠলেন, ‘ইন্দু তুমি বাড়ি যাও, আব্বাসের সঙ্গে কাজ আছে।’ ইন্দুবালা চলে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গেই আব্বাসউদ্দীন এক ঠোংগা পান আর চা আনতে পাঠালেন। পান আর চা নিয়ে দরজা বন্ধ করে আধঘণ্টার ভেতরই নজরুল লিখে ফেললেন, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ সঙ্গে সঙ্গেই সুরসংযোগ করে আব্বাসউদ্দীনকে শিখিয়েও দিলেন গানটি। পরের দিন ঠিক একই সময় আব্বাসউদ্দীনকে আসতে বললেন। পরের দিন লিখলেন, ‘ইসলামের ওই সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর।’ তারপর থেকেই নজরুল একের পর এক ইসলামি গান লিখে চলেছেন। গান শুনলে যারা কানে আঙুল দিয়ে রাখত, তাদের কানেও গেল ‘নাম মোহাম্মদ বোল রে মন নাম আহমেদ বোল,’ ‘আল্লাহ আমার প্রভু আমার নাহি নাহি ভয়,’ ‘আল্লা নামের বীজ বুনেছি,’ ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়।’ এ রকম আরও অনেক ইসলামি গান মুগ্ধ হয়ে শুনতে শুরু করল কান থেকে হাত নামিয়ে বাংলার মুসলমানরা। বাংলার মুসলমানের ঘরে ঘরে জেগে উঠল নতুন এক উন্মাদনা।    
 
একদিন স্টুডিওতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন শিল্পী ও কবি। আড্ডার বিষয় ছিল, টাকা থাকলে প্রিয়ার জন্য কে কী করতেন? কেমন উপহার দিতেন? কত দামি অলংকার কিনতেন? আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। এমন সময় কাজী নজরুল এলেন। আড্ডার গল্পসল্প শুনলেন কিছুক্ষণ। কিন্তু কিছুই বললেন না। হঠাৎ হারমোনিয়ামটা টেনে নিলেন। আর বাজাতে বাজাতে সুর তুলে নতুন এক গান গাইতে শুরু করলেন-
মোর প্রিয়া হবে এসো রানী
দেব খোঁপায় তারার ফুল।
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির
চৈতী চাঁদের দুল।
কণ্ঠে তোমার পরাবো বালিকা,
হংস-সারির দুলানো মালিকা।
বিজলী জরির ফিতায় বাঁধিব
 মেঘ-রং এলা চুল।
 জোছনার সাথে চন্দন দিয়ে
মাখাব তোমার গায়,
রামধনু হতে লাল রং ছানি 
আলতা পরাব পায়।
আমার গানের সাত-সুর দিয়া,
তোমার বাসর রচিব প্রিয়া।
 তোমারে ঘেরিয়া গাহিব আমার
কবিতার বুলবুল।।
গান শেষে নজরুল সবার উদ্দেশে বললেন, কী? কয় টাকা লাগল বধূকে সাজাতে। 

জাহ্নবী

 

কাঠুরে ক্রিকেটার

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
কাঠুরে ক্রিকেটার
শামার জোসেফ

গায়ানার কানজি নদী ধরে নৌকায় ২২৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হয় খুবই দুর্গম এক ক্যারিবিয়ান গ্রামে। দুই দিনের দুর্গম পথ পেরিয়ে যাওয়া সেই গ্রামের নাম বারাকারা। প্রশ্ন আসতে পারে, কেন সে গ্রামে যেতে হবে? সে গ্রামে যেতে হবে, কারণ বারাকারা থেকে এবার টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে সুযোগ পেয়েছেন এক তরুণ। নাম তার শামার জোসেফ। এই শামার জোসেফকে নিয়ে নিশ্চয়ই আরও অনেক কাহিনি লিখতে হতে পারে! অথচ বারাকারার কেউ কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি তাদের গ্রামেরই কেউ কখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের হয়ে খেলবে। আরও অবাক করা কথা, ২০১৮ সালের আগে বারাকারায় ছিল না কোনো টেলিফোন কিংবা ইন্টারনেট সংযোগ।

বারাকারা গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০। তবে জোসেফরা পাঁচ ভাই আর তিন বোন। একবার কার্টলি অ্যাম্ব্রোস আর কার্টেনি ওয়ালশ-এর ফাস্ট বোলিং সে দেখেছিল ভিডিও ক্লিপসে। আর সেই দেখাই তার মধ্যে জাগিয়ে তুলল ফাস্ট বোলার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আর সেই আকঙ্ক্ষা থেকেই দুর্গম বারাকারার শামার জোসেফ আজ ওয়েস্টইন্ডিজের জাতীয় দলের খেলোয়াড়। শুধু তাই নয়, এ বছরের জানুয়ারিতে শামার জোসেফের একক কৃতিত্বে ভর দিয়ে সুদীর্ঘ ২৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচটি উইকেট নেন শামার। আর দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১১.৫ ওভারে ৬৮ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন সাত উইকেট। চতুর্থ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এক ইনিংসে সাত উইকেট নেওয়া খেলোয়াড় তিনি। কিন্তু শামারের জীবনের শুরুটা ছিল অন্যরকম। তিনি ছিলেন কাঠুরে। বাবা ও ভাইদের সঙ্গে জঙ্গলে গিয়ে গাছ কেটে কাঠ জোগাড় করতেন। বিশাল বিশাল গাছের গুঁড়িও ঘাড়ে করে নৌকায় তুলতেন আবার নৌকা থেকে নামাতেন। জঙ্গল থেকে কাঠ আনতেন কাঞ্জের নদীর তীরে নিউ আমস্টারডামে। যে কারণে অসম্ভব শারীরিক শক্তি অর্জন করতে পেরেছিলেন। আর সেই গায়ের জোরটা এখন টের পাওয়া যায় মাঠে। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করেন শামার। কিন্তু এক সময় পেয়ারা, লেবু ও মাল্টা দিয়ে বোলিং চর্চা করতেন। এরপর চর্চা করতেন টেপটেনিস বলে।

এই জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়ে একবার ভয়ংকর এক বিপদের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন শামার। একটি বিশাল গাছ তার মাথার ওপর পড়েই গিয়েছিল প্রায়। দ্রুত সরে না গেলে সেদিন গাছচাপায় মারাই পড়তেন হয়তো। ওই দুর্ঘটনার পর বারাকারা ছেড়ে কাজের খোঁজে নিউ আমস্টারডামে চলে আসেন শামার। পরিবারকে সহায়তা করার জন্য একটা কাজ তার খুবই দরকার ছিল।

নিউ আমস্টারডামে কাজ পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি কিশোর শামারকে। একটি নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর নিউ আমস্টারডামের স্কটিয়াব্যাংকের নিরাপত্তা শাখায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি শুরু করলেন। টানা ১২ ঘণ্টা পাহারা দেওয়ার কাজ করার পর ক্রিকেট খেলার শারীরিক শক্তি খুব একটা থাকত না। তখনই তার ভালোবাসার মানুষের অনুপ্রেরণা ও সাহস পেয়ে নিরাপত্তাকর্মীর কাজে ইস্তফা দিয়ে ক্রিকেটে মনোযোগ দিলেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ক্রিকেটেই নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন।

শামারের বয়স তখন ছিল ১৪ বছর। এই সময় একদিন প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং পরবর্তীতে ব্যবসায়ী ড্যামিয়ন ভ্যানটাল বারাকারায় এলেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরেক প্রাক্তন ক্রিকেটার রয়স্টন ক্র্যান্ডন। বারাকারায় তারা একটা প্রীতি ম্যাচ খেলবেন। ওই প্রীতি ম্যাচ খেলতে এসেই শামারের প্রতি নজর পড়ে গেল তাদের। তাদের দুই জোড়া অভিজ্ঞ চোখ ঠিকই শামারের মেধা দেখতে পেয়েছে। শামারের সঙ্গে কথা বললেন ড্যামিয়ন ভ্যানটাল। তাকে আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে তুলে নিয়ে এলেন। মুসলিম ইয়থ অর্গানাইজেশন স্পোর্টস ক্লাবের নেটে অনুশীলন করার সুযোগ করে দিলেন।

এরপর তিনি জর্জটাউনে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে শুরু করলেন মুসলিম ইয়থ অর্গানাজাইশনের পক্ষে। এই ক্লাব ক্রিকেট খেলতে খেলতেই গায়ানার জাতীয় দলে জায়গা করে নিলেন শামার। এই সময় তিনি ওয়েস্টইন্ডিজের কিংবদন্তি অ্যাম্ব্রোসের ফাস্ট-বোলিং ক্লিনিকে যুক্ত হন এবং অ্যাম্ব্রোসের নজর কাড়েন। এরপর একটি অনুশীলন ম্যাচে আট উইকেট নেন শামার। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

এরমধ্যেই ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের জন্য আইসিসি ম্যানস প্লেয়ার অব দ্য মান্থ পুরস্কার পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি থেকে। শুধু তাই নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আইসিসির ওই পুরস্কার জেতেন শামার জোসেফ।

কে জানে, শামার জোসেফের হাত ধরেই হয়তো ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছে!

জাহ্নবী