![একদল হেল্পিং হ্যান্ড তরুণ](uploads/2024/03/22/1711087960.a2.jpg)
দশম শ্রেণিতে পড়া ওরা আটজন উদীয়মান তরুণ। নোয়াখালীর চাটখিলের দশঘরিয়ার- নিশান, নাফিজ, মানিক, জিদান, সুজন, ওয়াসিম, আজগর ও সুজন। এক প্রতিবেশীর ইমার্জেন্সি রক্তের প্রয়োজনে ফেসবুকে একটা গ্রুপ তৈরি করে রক্ত সংগ্রহের পরিকল্পনা করে। পাশাপাশি সেবার পরিসর বাড়াতে ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘দশঘরিয়া হেল্পিং হ্যান্ড’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করে। উদ্বোধনী দিনে চার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে তারা। মূলত বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া হাত খরচের টাকায় এই তরুণরা রক্তদাতা এবং গ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ করেই চলেছে প্রতিনিয়ত। ফেসবুক প্রোফাইলে, গ্রুপে নিয়মিত আপডেট, ফোনে কল পাওয়া মাত্রই হাসপাতালে ছুটে যায় ওরা।
অনলাইন যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সামাজিক কার্যক্রমগুলো তাদের অনুপ্রাণিত করে।
মানবতার এমন আগ্রহ দেখে স্থানীয় দশঘরিয়া বাজারের ব্যবসায়ী রাব্বানী ভুঁইয়া তার প্রতিষ্ঠানের দোতলার একটি কক্ষ সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই তরুণদের বিনা ভাড়ায় ছেড়ে দেন। বর্তমানে তারা ৩নং পরকোট ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় পরিষদের ভেতরে একটি কক্ষ বরাদ্দ পেয়ে সেখান থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
![](https://www.khaborerkagoj.com/public/image/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9A/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9A%20%E0%A7%A7%E0%A7%A8/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9A%20%E0%A7%A7%E0%A7%AF/a3%20(1).jpg)
গত ২৫ জানুয়ারি তাদের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের রক্তদানে উৎসাহিতকরণ, সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োজিত হতে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিগুলো সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নজরে এসেছে এবং প্রশংসাও কুড়িয়েছে।
উদীয়মান এই তরুণদের সাংগঠনিক সেবাদানের বয়স প্রায় এক বছর হলেও কার্যক্রমগুলো সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ৩০ জন সক্রিয় সদস্যের আন্তরিকতা ও স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব এ পর্যন্ত ১১১ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে রোগী পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছে। তাছাড়া গরিব-অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, নগদ অর্থ প্রদান, ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ঈদ সামগ্রী ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ উল্লেখযোগ্য। তাদের নিজেদের জমানো সামান্য টাকার সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিত্তবানদের দেওয়া অর্থের সমন্বয়ে চলে তাদের নিয়মিত সেবা কার্যক্রম।
আলাপচারিতার একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নিশান ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানান, ‘একবার একজনের ফোনকল পেয়ে ডোনার নিয়ে হাসপাতালে রক্ত দিতে যাই, কেউ ডোনারকে একটা স্যালাইন তৈরি করে খাওয়াবে এমন সৌজন্যতা বোধটুকুও দেখাননি। পরে নিজের টাকায় পানি ও স্যালাইন কিনে খাইয়েছি।’ এমন তিক্ত ঘটনার মধ্য দিয়েই তাদের কখনো কখনো যেতে হয়। তবু নেতিবাচক সব বিষয় দুমড়ে-মুচড়ে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে এই তরুণরা।
উদীয়মান এই তরুণদের স্বপ্ন, আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই স্বেচ্ছাসেবী মানুষ তৈরি হবে প্রতিটি পরিবারে, সমাজের নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে, রক্তের প্রয়োজনে যে কেউ সহজে ও হয়রানিমুক্তভাবে রক্ত নিতে ও দিতে পারবে। এমন চেতনার বাস্তবায়নে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আত্মনিয়োগের আহ্বানের পাশাপাশি ব্লাড গ্রুপিং ব্লাড কালেকশন বিষয়ে এই তরুণরা এক দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে। যাতে করে আগামী প্রজন্ম একটা সুন্দর সুশৃঙ্খল জীবন ধারণ করতে পারে।
জাহ্নবী