বাংলা কবিতায় সার্বিক অবদানের জন্য কবি রফিক আজাদ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন কবি ও অধ্যাপক ড. মো. বায়তুল্লাহ্ কাদেরী। বায়তুল্লাহ্ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে কবি রফিক আজাদের ৮২তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পর্ষদের সভাপতি, ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এখানে বলা হচ্ছে রফিক আজাদ পূর্ববঙ্গের প্রেম ও পরিবেশ প্রিয় কবি। আমার মনে হয় এর মাধ্যমে তাকে সংকীর্ণ করা হয়েছে; কেননা প্রেম-ভালোবাসার কোনো সীমা থাকতে পারে না। রফিক আজাদও ঠিক তেমনি, একজন উদার ও দেশপ্রেমী কবি। তিনি দেশের প্রতি ভালোবাসা ও স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। তার দেশপ্রেমে আমি মুগ্ধ হই, যখনই তার সঙ্গে দেখা হতো তিনি দেশের অবস্থার কথা বলতেন। আজ রফিক আজাদ নেই, কিন্তু তারপরেও তিনি তার পঙ্ক্তির কারণে যুগের পর যুগ ধরে বেঁচে থাকবে।’
কবি ও খবরের কাগজের কপি এডিটর হাসান হাফিজ বলেন, ‘রফিক আজাদ কবিদের কবি। তার ছন্দসিদ্ধি কবিদের জন্য খুব ঈর্ষণীয়। দেশের বর্তমান অনেক কবি-সাহিত্যিককে তিনি তৈরি করেছেন। সেলিম আল দীন প্রথম দিকে কবিতার লড়াই করছিলেন কিন্তু রফিক আজাদ তাকে নাটক লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যে তুমি নাটক লিখো। সেই থেকে সেলিম আল দীন নাটক লেখা শুরু করেন। শুধু সেলিম আল দীনই নন, তরুণ ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে বাংলা একাডেমির পত্রিকা উত্তরাধিকারে সাহসিকতায় ছেপেছেন। অনেক বিষয়েই তিনি আমাদের পরামর্শ দিতেন। এখনো তার সেই পরামর্শ মোতাবেক চলছি। তার শিষ্য হতে পেরে আমি গর্বিত।’
এর আগে রফিক আজাদের সহধর্মিণী কবি দিলারা হাফিজ বলেন, “বাংলা কাব্য সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদের প্রয়াণের প্রায় আট বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তিনি নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তার কালজয়ী সৃষ্টি সম্ভার। কবির জন্মদিনের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল কবি বায়তুল্লাহ্ কাদেরীর হাতে ‘কবি রফিক আজাদ স্মৃতি পুরস্কার’ তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। ইতিপূর্বে ২০২১ সালে সত্তর দশকের বিশিষ্ট কবি ফারুক মাহমুদ, ২০২২ সালে আশির দশকের প্রতিশ্রুতিশীল কবি ফেরদৌস নাহার এবং ২০২৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও কবি বুলবুল খান মাহবুব ‘কবি রফিক আজাদ স্মৃতি পুরস্কার’ এ ভূষিত হয়েছেন।”
পুরস্কার পেয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ কবি ও অধ্যাপক ড. মো. বায়তুল্লাহ্ কাদেরী। তিনি বলেন, ‘একজন কবি বা লেখক পুরস্কার-প্রত্যাশী হয়ে লেখালেখি করেন না। সাহিত্যে মৌলিক চিহ্ন এবং মাত্রা যোগ করার ক্ষেত্রে তাকে অবদান রেখে যেতে হয়। একপর্যায়ে সেই প্রচেষ্টার স্বীকৃতি মেলে পাঠকের নানা প্রতিক্রিয়া ও গ্রহণযোগ্যতায়। এ প্রতিক্রিয়ারই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি হলো পুরস্কার। ফলে পুরস্কার একই সঙ্গে লেখকের কর্ম-স্বীকৃতি আবার ভবিষ্যৎ দায়। এখন লেখকরা পুরস্কারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় তদবির করেন। তদবির ছাড়া পুরস্কার মেলে না এখন; আমি বিনা তদবিরে পুরস্কার পেয়েছি। সে জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি।’
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কীপার আসমা ফেরদৌসির সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও প্রাবন্ধিক খান মাহবুব এবং কবিতা আবৃত্তি করেন লিজা চৌধুরী।
পরে ২০২৪-২০২৭ তিন বছরের জন্য ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট কবি রফিক আজাদ স্মৃতি পর্ষদ ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্বে এসেছেন কবি ফারুক মাহমুদ ও কবি আবদুর রব।