![বাংলা সাহিত্যকে বিভিন্ন ভাষায় ছড়িয়ে দিতে চান শীর্ষেন্দুকন্যা দেবলীনা](uploads/2024/03/18/1710749447.Hafiz-vai.jpg)
বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যকে পৃথিবীর নানা দেশে নানা ভাষায় ছড়িয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে চান প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে দেবলীনা মুখোপাধ্যায়। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের কথাসাহিত্য নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নানা কনটেন্ট নির্মাণে কপিরাইট ইস্যুর সমাধানে কাজ করতে চান তিনি।
রবিবার (১৭ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আবিষ্কার প্রকাশনীর উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচিত কবিদের কবিতা পাঠের আয়োজনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
সমরেশ মজুমদার মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘সমরেশ মজুমদার সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।
শীর্ষেন্দুতনয়া দেবলীনা মুখোপাধ্যায় একসময় ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তারপর তিনি বিজ্ঞাপনী সংস্থা শুরু করেন। এখন ‘বেঙ্গলিটজ’ নামে একটি এজেন্সির কাজ শুরু করেছেন।
এই এজেন্সি প্রসঙ্গে দেবলীনা বলেন, ‘এর কাজ সংস্কৃতি বিনিময়। প্রথমটা শুরু করতে চাই ওপার বাংলা থেকে। কারণ এপার বাংলার সাহিত্যিক, কবিদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ সেভাবে তৈরি হয়নি। ওপার বাংলার সাহিত্যিকদের মধ্যে যারা এপার বাংলার সাহিত্য নিয়ে বিভিন্নভাবে কাজ করতে চান, সেই কাজটিকে ত্বরান্বিত করতে এই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা।’
‘বেঙ্গলিটজ’ কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে (বাংলাদেশে) এসে সাহিত্যিকদের খুঁজে বার করে তাদের অনুমতি ও কপিরাইট নিয়ে কাজ করা বেশ দুরূহ। সিনেমা, অডিও বুক বা টেলিভিশন সিরিয়াল করতে চান- এমন অনেকে আমাদের কাছে যান, তাদের অসুবিধা হয় কপিরাইট পেতে। আবার ওপার বাংলার সাহিত্য নিয়ে এপার বাংলায়ও অডিও-ভিজ্যুয়াল ও প্রিন্টেড কাজ হতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এপার বাংলার কনটেন্ট নিয়ে শুধু ওপার বাংলাই না; আমার কাজ হচ্ছে সব ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেওয়া।’
ভারতবর্ষে সিনেমা বা ওটিটি কনটেন্ট নির্মাণে এখন বিষয়বস্তুর বড় অভাব রয়েছে উল্লেখ করে দেবলীনা বলেন, ‘এমন কিছু সাহিত্য আছে যা লোকের কাছে একটা বিনোদনের জায়গা; যেখানে মানুষ খুশি হয়, আনন্দিত হয় দেখে। সেগুলো নিয়ে সিনেমা বা ওটিটি কনটেন্ট হতে পারে। আমার মতে সাহিত্যের একটি ব্যবসায়িক দিক থাকা উচিত, যেটা এত বছর আমরা কেউ ভাবিনি। সাহিত্য তো শুধু সৃষ্টির জন্য নয়, সাহিত্য তো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও। বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন ভাষায় কেন এই সাহিত্য ছড়িয়ে পড়বে না? আমি কাজ করতে চাই সেসব নিয়ে।’
১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহে জন্ম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। দেবলীনা মুখোপাধ্যায় জানান, জন্মভূমির প্রতি তার মোহ চিরন্তন। তবে ২০২১ সালে স্ত্রী সোনামন মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে তিনি আর কলকাতা শহরের বাইরে কোথাও যেতে চান না। বাংলাদেশের কবি, সাহিত্যিক ও অগণিত পাঠক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাহিত্য পাঠে যে অনুরক্তি দেখিয়েছেন, তাতে বিমুগ্ধ হয়েছেন দেবলীনা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি কবি হাসান হাফিজের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানের শুরুতে কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারকন্যা দোয়েল মজুমদার কিছু সময়ের জন্য উপস্থিত ছিলেন। পরে অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন দিলারা হাফিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা হালিম আজাদ, কবি-সাংবাদিক সোহরাব হাসান, আব্দুল মান্নান, জান্নাতুল বাকেয়া কেকা, শামীমা চৌধুরী। কবি হাসান হাফিজ সবশেষে শোনান ‘বিসর্জন আহত নির্জন’ কবিতাটি।