ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

অরণ্য চিরানের স্বাধীনতা পুরস্কারের ঘোষণায় সমালোচনার ঝড়!

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
অরণ্য চিরানের স্বাধীনতা পুরস্কারের ঘোষণায় সমালোচনার ঝড়!
অরণ্য চিরান। ছবি : সংগৃহীত

সরকার প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা-সাহিত্য, চিকিৎসা, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দিয়ে থাকে। চলতি বছরের জন্য ১০ জনকে মনোনীত করা হয়। গত ১৫ মার্চ প্রকাশিত ওই তালিকায় ময়মনসিংহ থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ, ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুন ও সমাজসেবায় অরণ্য চিরান মনোনীত হন। কিন্তু তিনজনের মধ্যে সমাজসেবায় অবদানের জন্য মনোনীত হওয়া অরণ্য চিরানকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে লাগাতার পোস্ট করে তার নাম পদক থেকে বাতিলের দাবি জানানোসহ মানববন্ধনও করা হয়েছে। তারা মনে করেন, স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য অরণ্য চিরান কখনোই যোগ্য নন।

গতকাল বুধবার ময়মনসিংহের সচেতন সমাজের ব্যানারে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানে নাগরিক নেতা, শিক্ষক ও আদিবাসী নেতারা উপস্থিত হন। এ সময় বক্তারা তালিকা থেকে অরণ্যের নাম বাতিলের দাবি জানান। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে আরও বেশি অবদান রাখা অনেকে এই রাষ্ট্রীয় পুরস্কার না পেলেও এনজিওকর্মী অরণ্য চিরান সমাজসেবায় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়ে যাওয়ায় বিব্রত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতারা। ফলে গত শনিবার সমতল আদিবাসীদের জাতীয় সংগঠন ট্র্যাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের একাংশের চেয়ারম্যান সুবাস চন্দ্র বর্মণ অরণ্য চিরানের কর্মকাণ্ড ও তার স্বাধীনতা পদক বাতিলের দাবি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দাবি সংবলিত আবেদনটি জমা দেন আদিবাসী নেতারা।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়- রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক এই পুরস্কার পাওয়ার মতো গারো সম্প্রদায় বা সাধারণ বাঙালি সমাজে অরণ্য চিরানের এমন কোনো অবদান নেই। বরং তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ থেকে জমি আছে, কিন্তু বাড়ি নেই প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দিয়েছেন তিনি। অরণ্য চিরান ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দুজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং একজন বিসিএস কর্মকর্তাকে ওই ঘরগুলো দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অরণ্য চিরানের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের দিঘলবাগ গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের প্রয়াত ক্ষিতীশ মানখিনের ছয় ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড়। ১৯৮০ সালের ২৯ নভেম্বর জন্ম নেওয়া অরণ্য চিরান ‘সারা’ নামে একটি এনজিওতে ময়মনসিংহ শহরে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেন ২০১১ সাল থেকে। এর আগে টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধোবাউড়ায় দুটি স্কুলে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন।

ক্ষুব্ধ নাগরিকরা জানান, সাধারণত সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের জীবনব্যাপী অবদানের জন্য যেখানে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে, সেখানে অরণ্য চিরান কোথাও কোনো অবদান রাখেনি। সমাজসেবার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা কিংবা মানুষের কল্যাণকর কিছু করেছেন উল্লেখ করার মতো এমন কোনো কাজ তিনি করেননি। তবুও তাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন কালাম বলেন, অনেক যোগ্য লোক থাকার পরেও সমাজসেবায় যে অপরিচিত মানুষটিকে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি। সমাজসেবায় মানুষটির ভূমিকার কথা কেউ জানে না। তার নাম শুনে সবাই বিস্মিত হয়েছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ইতিপূর্বে যারা স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের নামের পাশে যদি অরণ্য চিরানের নাম থাকে তাহলে তাদের অমর্যাদা করা হবে। আমরা মনে করছি, এটি একটি ভুল হয়েছে। এর আগে ২০২০ ও ২০২২ সালেও এরকম ভুল হয়েছিল, পরে সংশোধন করা হয়। এ বছরও অরণ্য চিরানের নামটি বাতিল করে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হোক। কীভাবে অরণ্য চিরান পদকের জন্য মনোনীত হলেন এবং তিনি তালিকাভুক্ত হলেন, সেটা তদন্ত করে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সম্পাদক স্বাধীন চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা পুরস্কার এমন একজন ব্যক্তিকে দেওয়া হবে, তার এমন কোনো অর্জন নেই যা ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না। প্রশ্নহীনভাবে বলতে পারি, এটি ভুল সিদ্ধান্ত। এমন হতে পারে কোনোভাবে প্ররোচিত হয়ে পদক কমিটির লোকজন অন্যায় সিদ্ধান্তে তার নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।

সমতল আদিবাসীদের সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ময়মনসিংহ সদর শাখার সভাপতি বিপুল হাজং বলেন, একজন আদিবাসী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছেন, এতে আমাদের আনন্দিত হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা বিব্রত। আদিবাসীদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা জীবনব্যাপী অবদান রেখেছেন। অথচ স্বাধীনতা পুরস্কার পাননি। অরণ্য চিরান এনজিওকর্মী ব্যতীত কিছু নন। তিনি এলাকাতেও এমন কোনো প্রতিষ্ঠান গড়েননি যা সমাজসেবায় অবদান রেখেছে। বরং তার বিরুদ্ধে আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে। স্বাধীনতা পুরস্কারে মহান ব্যক্তিদের নাম থাকলেও আমরা চাই না দুর্নীতিবাজ অরণ্যের নাম থাকুক। পুরস্কারের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে পুরস্কার থেকে তার নাম বাতিল করা হোক।

তবে অরণ্য চিরান বলেন, আমাকে সবাই চিনবে বিষয়টি এমন নয়। আমি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। তৃণমূল মানুষ ও আদিবাসীদের সেতুবন্ধন করে তাদের কল্যাণে কাজ করছি। আমার এলাকার রোগীরা হাসপাতালে এলে তাদের পাশে থেকেছি, রক্ত জোগাড় করে দিয়েছি। আদিবাসীদের ভূমি ও পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সালিশ করে সমাধান করেছি। সুবিধাবঞ্চিত অনেক শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছি। আমার কাজের প্রতিদানস্বরূপ আমি স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছি।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ট্র্যাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কিছু লোক ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়ে অযথা সমালোচনা করছেন। মূলত সাংগঠনিক ঝামেলা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বদনাম রটাচ্ছেন তারা। আমার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা রাষ্ট্রীয়ভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি অভিযোগের একটি কপি পেয়েছি। এখন আবারও কোনো সিদ্ধান্ত নিলে রাষ্ট্রীয়ভাবেই সিদ্ধান্ত হবে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪০ এএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪০ এএম
একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন
ড. মাহবুবুল হক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত, ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে শৈশব থেকে বেড়ে ওঠেছেন চট্টগ্রামে। 

তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে।

শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রায়োগিক বাংলা ও ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ ও পাঠ্যবই রচনা করে পরিচিতি লাভ রয়েছে ড. মাহবুবুল হকের।

প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। গবেষণায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেন।

অমিয়/

কথায় গানে বাতিঘরের ২০ বছর

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
কথায় গানে বাতিঘরের ২০ বছর
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ছবি: খবরের কাগজ

গল্প, কবিতা, উপন্যাস, অনুবাদ- সাহিত্যের সব শাখার বরেণ্য লেখকরা জড়ো হলেন বিকেলে। এসেছিলেন এ প্রজন্মের সব নন্দিত কবি, গল্পকার, অনুবাদকরা। শুভেচ্ছা আশীর্বাদ জানাতে এসেছিলেন অগ্রজ প্রকাশকরা। লেখক, প্রকাশকের অভূতপূর্ব মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল চেইন বুক শপ বাতিঘরের ২০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান।

ঢাকার বাংলামোটরে চেইন বুক শপ বাতিঘরের ‘মুক্ত আলাপ ও গান’ আয়োজনে মুখর ছিল শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে। 

আয়োজনের মধ্যমণি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা ভয়ংকর জায়গা। এখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে তাকে পালিশ করতে অনেক লোক দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে লাইব্রেরি করা তো খুবই কঠিন।’

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে লাইব্রেরি থাকলেও সেগুলো কেন চলে না, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘শহরে শহরে লাইব্রেরিগুলো চলছে না। কারণ পাঠক হেঁটে গিয়ে বই পড়তে চায় না। আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে যখন বই পড়া কর্মসূচি শুরু করেছিলাম, তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মানুষের হাতে বই ধরাব। ইতোমধ্যে দুই কোটি পাঠকের হাতে বই ধরিয়েছি। কিন্তু এর পেছনেও অনেক লোক লেগে গেছে। মানুষ এত ক্ষুদ্রমনা!’

সারা দেশে ২০০টি বইমেলার আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে একটি বড় বইমেলা হয়, সেটি ঢাকায়। কিন্তু সারা দেশকে বঞ্চিত রেখে শুধু রাজধানীকে বৈভবপূর্ণ করে জাতি সম্পূর্ণ হতে পারে না। এই বইমেলা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

প্রকাশকদের উদ্দেশে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘যারা বইয়ের দোকান করে, তাদের প্রকাশক হওয়ার দরকার নেই। আবার যারা প্রকাশক, তাদের বইয়ের দোকান করার দরকার নেই। চেইন বুক শপকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলেই তারা যেন প্রকাশনায় যুক্ত হয়।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বইয়ের দোকান পরিচালনা করা বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ। সেখানে ২০ বছর ধরে বুক শপ পরিচালনা ও প্রকাশনার মাধ্যমে বইপ্রেমীদের আকৃষ্ট করার জন্য বাতিঘরকে অভিনন্দন জানাতে হয়। তবে বাতিঘরকে শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। বাতিঘর একটি সামাজিক উদ্যোগ, এটিকে সামাজিক ব্যবসা হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। এটি জ্ঞানপিপাসু মানুষের আকর্ষণের জায়গা হয়ে থাকুক।’ 

লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, বাতিঘর বই বিক্রেতা, নাকি প্রকাশনা এ নিয়ে দ্বিধা রয়েছে। কখনো মনে হয়, বাতিঘরে প্রকাশনা কম গুরুত্ব পাচ্ছে। আসলে প্রকাশক হিসেবে টিকে থাকা খুব চ্যালেঞ্জের। সে চ্যালেঞ্জ বাতিঘর একা মোকাবিলা করবে, নাকি আরও সব প্রকাশনার সঙ্গে মিলে করবে, তাও দেখার বিষয়। কথা হলো, পাঠক যদি থাকে তাহলে লেখকও থাকবে, প্রকাশকও থাকবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই কংক্রিটের শহরে বাতিঘর হলো মরূদ্যান। ওয়াটারস্টোনের মতো একটি চেইন বুক শপ হবে এই ঢাকায়, সেখানে বই পড়ার অভ্যাস ফিরে আসবে, বইয়ের জন্য এত টাকা বিনিয়োগ হবে, এটিই তো ছিল অবিশ্বাস্য।

কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান, আলতাফ পারভেজ, কবি ও প্রাবন্ধিক এজাজ ইউসুফী, ইফতেখারুল ইসলাম, মোহিত কামাল, লেখক কিযী তাহনিন, কবি-সাংবাদিক সোহরাব হাসান, লেখক-অনুবাদক মোজাফফর হোসেন, লেখক অরুণ বিশ্বাস শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ, অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিলন কান্তি নাথ, ভাষাচিত্র প্রকাশক খন্দকার সোহেল এই মিলনমেলায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। 

‘নানা প্রভাববলয়ে আত্মসমর্পণ করছে সাহিত্য’, অভিমত সাহিত্যিক-প্রকাশকদের

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১১:১৯ পিএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
‘নানা প্রভাববলয়ে আত্মসমর্পণ করছে সাহিত্য’, অভিমত সাহিত্যিক-প্রকাশকদের
ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে সাহিত্য নানাভাবে প্রভাববলয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী ও প্রকাশকরা। প্রভাবাচ্ছন্ন প্রক্রিয়া-সৃষ্ট সাহিত্যকে তারা উল্লেখ করছেন হলুদ সাহিত্য নামে। এমন সাহিত্যকে তারা সমাজ ধ্বংসের অন্যতম উপকরণ হিসেবেও চিহ্নিত করেন।

শুক্রবার (১২ জুলাই) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সময় প্রকাশন আয়োজিত হুমায়ূন কবিরের প্রবন্ধ ‘হলুদ সাহিত্যের ছলচাতুরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমদের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় আলোচক ছিলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অনুষ্ঠানে লেখক হুমায়ূন কবিরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক আলম খোরশেদ, দীপু মাহমুদ, মোহিত কামালসহ আরও অনেকে।  

হুমায়ূন কবিরের  ‘হলুদ সাহিত্যের ছলচাতুরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ প্রবন্ধগ্রন্থে ৮০ পৃষ্ঠায় ৪টি বিষয়ে ৮টি নিবন্ধ সংকলিত হয়েছে। 

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘হলুদ সাহিত্য বলতে আমি বুঝি, যেখানে উদ্দেশ্যমূলক প্রচার আছে। যার মধ্যে সত্য নেই কিন্তু সত্যের ভান আছে। সেখানে আলোচ্য বিষয় হলো সাহিত্য ও সত্যের মধ্যে সম্পর্ক কী? চিন্তার মধ্যে যে দুর্বলতা রয়েছে, সে প্রশ্নও রয়েছে হলুদ সাহিত্যে। আমরা বিশেষ করে বিশ্বসাহিত্য উচ্চারণ করছি। এই বিশ্বসাহিত্যের কত আনা সবুজ, কত আনা হলুদ, কত আনা কালো? এসব আলোচনা করলে অনেক সমস্যা বেরিয়ে আসবে।’

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘বইটিতে ৮টি প্রবন্ধ রয়েছে। প্রবন্ধগুলোর মধ্যে বর্তমানময়তা রয়েছে। প্রতিটি প্রবন্ধ যাপিতজীবন ও স্থান-কালের সঙ্গে নিজের অবস্থান বাস্তবতার কাঠামোতে বর্ণনা করেছেন প্রাবন্ধিক।

প্রাবন্ধিক হুমায়ূন কবির পেশায় চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে বিপ্লবোত্তর ইরানে কাটিয়েছেন দুই বছর। ওই সময়ে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘পারস্য পরবাসে’ ইতোমধ্যেই বিপুলভাবে আলোচিত।

জয়ন্ত/এমএ/

প্রবর্তিত হচ্ছে ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার’

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম
প্রবর্তিত হচ্ছে ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার’
ছবি: সংগৃহীত

বহুমাত্রিক লেখক প্রয়াত শান্তনু কায়সারের স্মৃতিতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য’ এবং ‘শান্তনু কায়সার স্মৃতি পাঠাগার ও চর্চা কেন্দ্র, সাজনমেঘ’-এর যৌথ উদ্যোগে প্রবর্তিত হতে যাচ্ছে ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার’। শান্তনু কায়সারের সাহিত্যচর্চার পাঁচটি ক্ষেত্র- কবিতা, কথাসাহিত্য (গল্প/ উপন্যাস), প্রবন্ধ-গবেষণা, নাটক এবং অনুবাদ বিষয়ে উদ্ভাবনাময়, মৌলিকতামণ্ডিত এবং প্রতিশ্রুতিবান বাংলা ভাষায় রচিত পাণ্ডুলিপির জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।

গত ২৮ মে ২০২৪ তারিখ পুরানা পল্টনস্থ ঐতিহ্য কার্যালয়ে ঐতিহ্য’র প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম এবং শান্তনু কায়সারের পরিবারের পক্ষে তার কনিষ্ঠ পুত্র রাসেল রায়হানের মধ্যে এ সংক্রান্ত যৌথ আলোচনায় ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

ঐতিহ্য’র কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাকিবুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রতি বছর পাঁচটি বিষয়ে জমাকৃত পাণ্ডুলিপির মধ্যে পুরস্কারের জন্য গঠিত বিচারকদের বাছাই করা সেরা তিনটি পাণ্ডুলিপির (পাঁচটি ক্ষেত্রের যে কোনও ক্ষেত্রের তিনটি সেরা পাণ্ডুলিপি) লেখককে প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা অর্থমূল্যের এ পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হবে। সেরা তিনটি পাণ্ডুলিপি পরবর্তী বছর অমর একুশে বইমেলায় ‘ঐতিহ্য’ থেকে বই আকারে প্রকাশিত হবে।

রাকিবুজ্জামান জানান, প্রতি বছর অধ্যাপক শান্তনু কায়সারের জন্মদিন ৩০ ডিসেম্বর একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পুরস্কার ঘোষণা ও প্রদান করা হবে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট নবীন বা প্রবীণ লেখক ‘শান্তনু কায়সার স্মারক বক্তৃতা’ প্রদান করবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর তারিখে সর্বোচ্চ ত্রিশ বছর অথবা এর নিম্নে যে কোনও বয়সী জন্মসূত্রে বাংলাদেশি কবি-লেখককরা এ পুরস্কারে জন্য আবেদন করতে পারবেন। ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এর জন্য ১৫ জুলাই থেকে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করেছেন আয়োজকরা। পাণ্ডুলিপি জমাদানের শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর। পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা বা শব্দসংখ্যার কোনো সীমারেখা নেই। [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর জন্য পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়া যাবে। পাণ্ডুলিপি ওয়ার্ড ফাইল বা ও পিডিএফ ফরমেটে মেইল করতে হবে অথবা ডাকযোগে হার্ডকপি পাঠাতে হবে ঐতিহ্য শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪, ঐতিহ্য, ৩/১-এইচ পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০)। 

ইতোমধ্যে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে এমন রচনা পাণ্ডুলিপি আকারে জমা দেওয়া যাবে না। কোনো ধরণের চৌর্যবৃত্তি বা প্ল্যাজারিজম আশ্রয় নিলে পুরস্কার ঘোষিত হলেও অভিযোগ পাওয়া মাত্র বাতিল হবে। পুরস্কারের জন্য যেকোনো ধরনের সুপারিশ বা অনুরোধ পুরস্কারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

জয়ন্ত/এমএ/

কবি মাকিদ হায়দার মারা গেছেন

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
কবি মাকিদ হায়দার মারা গেছেন
কবি মাকিদ হায়দার

কবি মাকিদ হায়দার মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

বুধবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে আটটায় উত্তরার নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন সত্তর দশকের অন্যতম এই কবি।

তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
 
মাকিদ হায়দারের ছেলে আসিফ হায়দার সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, কবি দীর্ঘদিন নানা রোগে ভুগছিলেন। তাকে বিকেলে পাবনায় পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হবে।

মাকিদ হায়দার ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার দোহারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাকিমউদ্দিন শেখ ও মা রহিমা খাতুন। তারা সাত ভাই ও সাত বোন। তিনি ছেলেদের মধ্যে ষষ্ঠ। তার ভাই রশীদ হায়দার, জিয়া হায়দার, দাউদ হায়দার, জাহিদ হায়দার, আবিদ হায়দার ও আরিফ হায়দার সবাই দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত।

তার উল্লেখযোগ্য লেখার মধ্যে রয়েছে, ‘রোদে ভিজে বাড়ি ফেরা’ ‘আপন আঁধারে একদিন’ ‘রবীন্দ্রনাথ: নদীগুলা’ ‘বাংলাদেশের প্রেমের কবিতা’ ‘যে আমাকে দুঃখ দিলো সে যেনো আজ সুখে থাকে’ ‘কফিনের লোকটা’ ‘ও প্রার্থ ও প্রতিম’ ‘প্রিয় রোকানালী’ ‘মমুর সাথে সারা দুপুর’।

মাকিদ হায়দার ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তাছাড়া বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি।

অমিয়/