![ভুয়া এনআইডি দিয়ে ব্যাংকঋণ জালিয়াতি চক্রের চার হোতা গ্রেপ্তার](uploads/2024/04/06/1712413157.jkj5656kk.jpg)
বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি করে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তারা ভুয়া দলিল ও এনআইডি ব্যবহার করে এসব করত। টার্গেট ছিল আরও ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে চলে গিয়ে গা ঢাকা দেবেন প্রতারক জয়নাল। তার আগেই তাকেসহ চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস (৪২), নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী পল্লব দাস (৩৬), রফিকুল ইসলাম খাঁন (৩৮) ও আলিফ হোসেন (২০)।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) মিরপুর ডিওএইচএসস্থ ১৩ নম্বর রোডের ৯৪০/৪১ বাসার নিচ তলায় থাকা জয়নালের অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার দুপুরে ডিবির নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ডিবির হারুন বলেন, এই প্রতারক জয়নালের একসময় কিছুই ছিল না। তিনি ইমিটেশন পণ্যের দোকান করতেন। কিন্তু সেই ব্যবসায় লস করে ব্যবসা ছাড়েন। এরপর জড়িয়ে পড়েন প্রতারণায়।
জয়নাল তার প্রতারণার জন্য একটি কোম্পানি খুলে সেখান থেকে আরও সাতটি কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিল। পরে সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের দিয়ে সে ঋণ নিতো। আমরা তাকেসহ পল্লব দাসকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করব পল্লব দাস জয়নালের মতো আর কতজনকে সার্ভার ব্যবহারে এমন কার্যকর এনআইডি তৈরি করে দিয়েছে। এছাড়া তারা আর কতটি ব্যাংক থেকে এমন ঋণ নিয়েছেন সেটা আমরা খতিয়ে দেখবো।
'পল্লব প্রতি এনআইডি বাবদ জয়নালের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ করে টাকা নিতেন। তবে এই পল্লব এনআইডি বানিয়ে দিয়ে কত টাকা কামিয়েছেন এবং তার অর্থ সম্পদ করেছেন কী না তা খতিয়ে দেখবে ডিবি।'
ডিবি বলছে, জয়নালের কার্যকর ১০টি এনআইডি ছিল। এসব এনআইডি দিয়ে সে বিভিন্ন ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতো। এনআইডির নাম ও ঠিকানা ঠিক থাকতো শুধুমাত্র সে সেটির নম্বর পরিবর্তন করে আরেকটি তৈরি করতো। পল্লব দাস যে অফিসে চাকরি করতেন সেই অফিসারের ব্যবহৃত সার্ভারের পাসওয়ার্ড তার কাছ থাকতো এই সুবাধে তিনি এসব ভুয়া কার্যকর এনআইডি করতেন।
ডিবির হারুন বলেন, জয়নাল তার এনআইডির একই দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে শুধুমাত্র নম্বরগুলো পরিবর্তন করে আরেকটা এনআইডি বানাতো। এজন্য কোনটাতে সে দাড়িসহ ছবি দিতো। আবার কোনটাতে গোফ, কোনটা দাড়ি গোফ ছাড়া থাকতো। কোনটা দুই বছর আগের আবার কোনটা পরের। একই জমি, একই ফ্লাট ও একই অফিস দেখিয়ে ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন জয়নাল। কিছু ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন আবার কিছু ব্যাংক থেকে তার ঋণ প্যান্ডিং অবস্থায় ছিল। এমন ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটির টাকার কম নয়। একই এনআইডি ও ভুয়া দলিল দিয়ে জয়নাল একই নামে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ তুলেছে। যে তার এনআইডিগুলো তৈরি করে দিতেন পল্লব দাস আমরা তাকেও গ্রেপ্তার করেছি।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, জয়নাল ডিওএইচএসে ইআর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নিয়েছিল। মূলত একটি অফিসকে সাত ভাগে সাত নামে একই ঠিকানায় বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন। এ যাবৎ জয়নাল বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু তা ফেরত দেননি। আর এসব টাকায় তিনি তার বসুন্ধরা এলাকায় একটি সাত তলা বাড়ি, উত্তরায়,আশকোনাসহ আট থেকে নয়টি ফ্লাট ও মাদারীপুরে বাড়ি করেছে।
ডিবি জানায়, তার অফিস থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূয়া ৫০টি সিল উদ্ধার করা হয়েছে। যা তিনি প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন। ইনকাম ট্রাক্সের বিভিন্ন ভুয়া ফাইল তৈরি করতেন তিনি। ভূমি অফিসের সহযোগিতায় বিভিন্ন মালিকের ভুয়া দলিলও তৈরি করতেন জয়নাল। তার বাসা থেকে প্রায় কয়েক বস্তা দলিল উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কাগজপত্র ও ভাউচার তৈরি করতেন তিনি ও তার চক্র।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিবির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল এবং অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাবেদ ইকবাল।
খাজা/এমএ/