এরই তো নাম স্বাধীনতা
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
ভোর হলে দোর খোলে
আলো ওঠে হেসে,
সবুজ ঘাসে ঘাসে মেশে।
হাওয়া লেগে দোল খায়
বটঝুরি লতা,
এরই তো নাম স্বাধীনতা।
তরতর ঢেউ স্রোতে
কল কল নদী,
ছুটে ছুটে চলে নিরবধি।
পাখি গায় সুরে গান
কী যে আকুলতা!
এরই তো নাম স্বাধীনতা।
সাহসের আলো পথে
ভয়হীন বুক,
প্রাণ ভরা মন ভরা সুখ।
হাসি-খুশি খেলাধুলা
ভেঙে নীরবতা,
এরই তো নাম স্বাধীনতা।
বিজয় আসে
সুশান্ত কুমার দে
বিজয় আসে কোন বেশে
লক্ষ লাশে ভেলায় ভেসে,
বিজয় এল সবুজ পাতায়
রক্তরাঙা মনের খাতায়।
বিজয় আসে নদীর ঘাটে
লাশের সারি শ্মশান ঘাটে,
বিজয় আসে লড়াই করে
লক্ষ মায়ের সজল ভরে?
বিজয় আসে বীরের মত
নির্ভীক সৈনিক অবিরত?
বর্ণমালার ছুটল মিছিল
লাশের গন্ধে শকুনি, চিল।
বিজয় আসে গানে গানে
বাংলা বধূদের নির্যাতনে,
নীল আকাশে তারা হাসে
রক্তে রঞ্জিত ভেজা ঘাসে।
বিজয় আসে মাটির গন্ধে
অনেক রক্ত অনেক দ্বন্দ্বে,
বীরের বেশে সোনার দেশ
এ বিশ্ব মাঝেই হয় না শেষ?
স্বাধীনতার সৌরভ
সুব্রত চৌধুরী
স্বাধীনতা ! কী আনন্দ ! দেশের সবাই খুশি আজ
রোদের সে কি ঝিকিমিকি আকাশ নীলে কারুকাজ।
স্বাধীনতা ! কী আনন্দ ! হাওয়ায় ওড়ে খুশির রেণু
‘সোনার বাংলা’ গানের সুরে মনে বাজে খুশির বেণু।
স্বাধীনতা ! কী আনন্দ ! বীরের গলায় ফুলের মালা
হরেক রকম আয়োজনে সাজায় সবাই খুশির ডালা।
স্বাধীনতা ! কী আনন্দ ! দিকে দিকে রঙিন সাজ
লাল-সবুজের নিশান হাতে দাদুর মাথায় বীরের তাজ।
স্বাধীনতা ! কী আনন্দ ! বাবার হাতে রেখে হাত
পাড়ার মাঠে শোভাযাত্রায় খোকা হাঁটে সবার সাথ।
স্বাধীনতা! কী আনন্দ! তিরিশ লক্ষ বীরের গাঁথা
নিপুণ হাতে দাদি আঁকে সুঁই সুতোতে নকশিকাঁথা।
স্বাধীনতা ! কী আনন্দ ! আকাশ নীলে রঙের মেলা
খুশির ভেলায় খোকা খুকুর যায় কেটে যায় সারা বেলা।
স্বাধীনতা ! কী আনন্দ ! বায়োস্কোপে মাতে সই
স্বাধীনতার সৌরভ মাখার এমন গৌরব পাবে কই?
স্বাধীনতার কবি
কাজল নিশি
দুচোখ ভরে দেখছে দাদি
শেখ মুজিবের ছবি
বলছে ডেকে দেখরে সবাই
স্বাধীনতার কবি।
মুজিব মানে আকাশ সমান
উচ্চতর শির
সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশে
শান্তি সুখের নীড়।
শেখ মুজিবের একটি ডাকে
দেশটা হলো স্বাধীন
হাসিমুখে আজকে সবাই
নাচে তাধিন তাধিন।
স্বাধীনতার কথা
মাহমুদা জিয়াসমিন
মাতৃভূমি বাংলা আমার
ক্যামনে স্বাধীন হলো?
করল কারা এ দেশ স্বাধীন
জানলে তোমরা বলো!
আচ্ছা, শুনো— বলছি আমি
স্বাধীনতার কথা
বিষাদমাখা গল্প শুনে—
নামল নীরবতা।
কান্নাচাপা কণ্ঠে সবাই
বলল মনে মনে—
করল যারা এ দেশ স্বাধীন
শেষ হবে না গোনে।
শিক্ষার্থী: দ্বাদশ শ্রেণি
ইব্রাহিম খাঁ সরকারি কলেজ
ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল।
স্বাধীনতার মুখ
নীহার মোশারফ
রাত্রি কেন হয় না রে শেষ
খোলে না আকাশ
ও মন রে তুই দাপুসদুপুস
কোনদিকে তাকাস?
নদীর ধারে এদিক-সেদিক
পাখি মেলে বুক
তার ভেতরে স্বপ্ন হাজার
স্বাধীনতার মুখ।
চলতে গেলে কেউ আমারে
দেয় না বাধা যেই
চোখের থেকে হারাই দূরে
হারাই মনের খেই।
স্বপ্ন ছাড়া মানুষ কী আর
বাঁচে কোনোদিন
পরের অধীন বাঁচলে জীবন
হয় শুধু মলিন।
জাতির পিতা
শাহীন খান
একটি মানুষ কথার পাখি স্বাধীন স্বাধীন সুর
সেই পাখিটি জাতির পিতা বন্ধু মুজিবুর।
নিজের চেয়ে বাসতো ভালো দেশের মা ও মাটি
তিনি ছিলেন বীর বাঙালি এক্কেবারে খাঁটি!
তিনি না থাকলে এ দেশ স্বাধীন কি আর হতো
সারা জীবন বইতে হতো পরাধীনের ক্ষত!
হঠাৎ করে সেই মানুষের বুকে বিঁধে তীর
ভাঙল সকল আশার স্বপন ভাঙল সুখের নীড়
স্বজন শহীদ ছেলে শহীদ শহীদ জাতির মাতা
বাঙালিদের মাথা থেকে সরে গেল ছাতা।
সেদিন থেকে আকাশ কেঁদে বৃষ্টি নামায় কি যে
মনের দুচোখ খুব সহসা যায় রে সবার ভিজে।
ভিজে ভিজে হয় একাকার জীবন নামের মাটি
কাঁদতে কাঁদতে অন্ধপ্রায় হিজলতলির গাঁ-টি।
আলোক তারা
আহসানুল হক
পাহাড় অটল সাহস ছিল
সাগর গভীর দৃষ্টি
হৃদয়জুড়ে দেশ মমতা
বাঙালিবোধ কৃষ্টি !
স্বাধীনতা আনবে কিনে
এই প্রতিজ্ঞা মনে
এমন পণে বাড়ে ‘খোকা’
নানান আন্দোলনে !
‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু ‘
ভালোবাসার জলে...
ফুল-পাখি-চাঁদ, তারারাও
সেই কথাই বলে !
এই আমাদের গর্ব অনেক
পিতার পরিচয়ে
মুজিব আছেন ইতিহাসে
আলোক তারা হয়ে !
পঁচিশের কালরাত
শচীন্দ্র নাথ গাইন
গান ভুলেছে সুরের পাখি
চাঁদ ঢেকেছে মেঘে
গুলির বিকট শব্দে তখন
উঠল সবাই জেগে।
বারুদ পোড়া গন্ধ ভাসে
সারা বাতাসজুড়ে
আঁধারভেদী শকুনগুলো
আসতে থাকে উড়ে।
সারি সারি লাশ পড়েছে
রক্তে গড়ায় নদী
ছেলেহারা মায়ের মাতম
চলছে নিরবধি।
সে কালরাতে পশুগুলো
সর্বনাশে মাতে
ঘুমিয়ে থাকা মানুষ মেরে
খুন মেখে নেয় হাতে।
বিভীষিকার রাত পেরিয়ে
সকাল যখন আসে
স্বজন খুঁজে পায় না লোকে
রক্ত শুধুই ঘাসে।
একটি পাখি
পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী
একটি পাখি বন্দি ছিল
খাঁচার মাঝে
শপথ নিল খাঁচায় সে আর
থাকবে না যে।
২৬ মার্চ বিদ্রোহ তার
হলো শুরু
আকাশজুড়ে কৃষ্ণ-মেঘের
গুরু গুরু।
খাঁচার মালিক সবার সাথে
বড়াই করে
দীর্ঘ ন’মাস সেই পাখিটা
লড়াই করে।
ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ
নীল আকাশে
উড়াল দিল, মেলে দিয়ে
দুই পাখা সে।
স্বাধীনতার মান
সফিউল্লাহ লিটন
একাত্তরের পঁচিশে মার্চ
ভয়াল কালরাত
হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে
ফোটায় বিষের দাঁত।
গর্জে উঠে বীর বাঙালি
যুদ্ধ হলো শুরু
অকাতরে জীবন দিলাে
কিশোর-যুবক-বুড়াে।
নয়টি মাসের যুদ্ধ শেষে
স্বাধীন হলাে দেশ
লাল সবুজের পতাকা তাই
উড়ছে দেখাে বেশ।
দোয়েল-শ্যামা গান গেয়ে যায়
সবুজ বনের ধারে
বিজয় বীণা প্রাণের মাঝে
বাজে বারেবারে।
দেশের জন্য কতাে জনের
ঝরলাে তাজা প্রাণ
রাখবো তাই তো জীবন দিয়েও
স্বাধীনতার মান।
প্রিয় মাতৃভূমি
শাহজালাল সুজন
এই দেশেতে জন্ম আমার
ধন্য মায়ের কোল,
আদর করে শেখায় মায়ে
মাতৃভাষার বোল।
মা মাটি দেশ নিখাদ খাঁটি
কাঁচা মাটির ঘর,
সবুজ ঘেরা বনবাদাড়ে
শুনি পাখির স্বর।
মাঠে ভরা সোনালি ধান
দেখতে লাগে বেশ,
রাখাল ছেলে মাঠের ধারে
চড়ায় গরু মেষ।
পাকা ধানের গন্ধ ভাসে
জুড়ায় কৃষক মন,
গানের সুরে নদীর স্রোতে
মাঝির কাটে ক্ষণ।
কলসি কাঁখে গাঁয়ের বধূ
ভরে নদীর জল,
ল্যাংটি এঁটে গোসল করে
গ্রামের কিশোর দল।
রক্ত ঝরা জয়
এম এ জিন্নাহ
আঁধার কালো রাত্রি শেষে
দুয়ার ভাঙা মিছিল এসে
কাঁপ ধরাল রাস্তা;
ভাষা জয়ের স্লোগান দিল
সঙ্গে ছিল আস্তা।
ভয় কিসে রয়, জয় এতে জয়
রক্ত গেল ভেসে;
ফেব্রুয়ারির একুশ শেষে
জয় এসেছে হেসে।
শোষণনীতির শাসন ছেড়ে
বীর সেনারা উঠল তেড়ে
মাতৃভাষার তরে;
মরণ বরণ যুক্তি নিল
মুক্তি শপথ ধরে।
প্রাণ দিল প্রাণ , যায়নি-গো মান
জয় নিয়েছে কেড়ে;
বীর সেনারা জয় এনেছে
শোষণনীতি ছেড়ে।
জাহ্নবী