অ্যাম্বুলেন্স তো থাকে মানুষের জন্য। বড়জোর পোষা প্রাণীদের জন্যও পৃথিবীর কোনো কোনো এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স আছে। এমনকি বুনো প্রাণীদের সেবার জন্যও অ্যাম্বুলেন্স থাকতে পারে। তাই বলে গাছেদের জন্যও অ্যাম্বুলেন্স!
গাছেরেও তো প্রাণ আছে। আর প্রাণ যার আছে সে-ই তো প্রাণী। তাছাড়া গাছ আমাদের যে কী উপকার করে, সেটা তো বলে বোঝানো যাবে না। এই যে তীব্র গরম পড়ছে, তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে কিছু দিন পর পর, প্রবল ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে- এতসব কিছু থেকে আমাদের কিছুটা হলেও রক্ষা করে কে? অবশ্যই গাছ। গাছ না থাকলে পৃথিবী স্থবির হয়ে যেত। পৃথিবীর কোনো প্রাণী বেঁচে থাকত না। তো সেই গাছের জন্য অ্যাম্বুলেন্স থাকতেই পারে। বরং না থাকাটাই অস্বাভাবিক।
পরিবেশবিদরা তো পৃথিবী নিয়ে ভীষণ শঙ্কার মধ্যে আছেন। সেই আশঙ্কা আমাদেরও আছে। পৃথিবী থেকে যে হারে গাছ উচ্ছেদ হচ্ছে, তাতে পৃথিবীতে মানুষের বসবাস বেশ কঠিনই হয়ে উঠেছে। তবে এই কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কিন্তু গাছ লাগানো। এই যে এখন বর্ষাকাল, এটাই বাংলাদেশের আবহাওয়ায় গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে শুধু গাছ লাগালেই হবে না, গাছেদের যত্নআত্তিও তো দরকার। আর গাছেদের যত্নআত্তির কথা যখন এলই, তখন গাছেদের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের কথাও চলে এসেছে। আর গাছেদের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা দেশটির নাম ভারত। ভারতে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে চালু হয়েছে গাছেদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা!
আসলে নানা সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অনেক গাছ উপড়ে যায়। আবার কখনো বাড়ি, রাস্তা কিংবা কোনো স্থাপনা নির্মাণের সময় নির্বিচারে গাছ কেটেও ফেলা হয়। তখন এই অসহায় ও নির্যাতিত গাছদের ওই স্থান থেকে তুলে নিয়ে সুবিধাজনক কোনো জায়গায় রোপণ করতে পারলে গাছও প্রাণে বেঁচে যায়, আবার আমাদের পরিবেশও সুন্দর ও শীতল থাকে। গাছদের তুলে নেওয়ার কাজটা করবে অ্যাম্বুলেন্স।
গাছেদের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনীয়তা প্রথম অনুভব করেছিলেন এক পরিবেশ আন্দোলনকারী। নাম তার আবদুল ঘানি। ভারতের সবুজ মানুষ বা ‘গ্রিন ম্যান অব ইন্ডিয়া’ হিসেবে পরিচিত আবদুল ঘানি ৪০ লাখ গাছ রোপণ করেছেন।
গাছেদের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের কাজটা হবে উপড়ে যাওয়া গাছকে নিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় লাগানোর পাশাপাশি এই অ্যাম্বুলেন্স বিভিন্ন জায়গায় বয়ে নিয়ে বেড়াবে নানা গাছের বীজও। শহরের মানুষদের মধ্যে গাছ লাগানো বিষয়ে নানান সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সাহায্যও করবে এই অ্যাম্বুলেন্স। কোনো গাছ মারা গেলে তার অংশগুলো ঠিক জায়গায় পৌঁছেও দেবে।
অ্যাম্বুলেন্সেই থাকবেন দক্ষ মালি ও গাছকর্মী। তাদের সঙ্গে থাকবে বাগান করার নানা জিনিসপত্র, সার, পানি, ঝুড়ি, খুরপি ইত্যাদি।
পৃথিবীতে দূষণ বেড়েই চলেছে। দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে গাছের সংখ্যা। কোনো গাছ যাতে প্রাকৃতিক বা মানুষের কারণে মরে না যায়, সেগুলোকে রক্ষা করার উদ্যোগেরই একটা অংশ গাছেদের অ্যাম্বুলেন্স। গাছের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা ওষুধপত্র সবই অ্যাম্বুলেন্সে রাখা আছে। আর কোথাও থেকে গাছ তুলে এনে অন্য জায়গায় লাগানোর জন্যও অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
গাছের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের প্রবক্তা আবদুল ঘানি, ‘কত গাছ ঝড়ে উপড়ে যায়। পড়ে পড়ে মারা যায় সেগুলো। নতুন করে লাগানোর ব্যবস্থা করাই হয় না। এই অ্যাম্বুলেন্স আর তা হতে দেবে না। হেল্পলাইনে ফোন করা মাত্র আমরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পৌঁছে যাব, বিনামূল্যে গাছটিকে সরিয়ে আনব।’
অনেক সময় দেখা যায় ঝড়ের তাণ্ডবে গাছ পড়ে গেছে, কিংবা গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। সেই ভাঙা ডালের কারণে কিংবা গাছ পড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ আহত কিংবা নিহতও হচ্ছেন। তখন সেই গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। কিন্তু ঘানি জানান, ‘শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপড়ে যাওয়াই নয়। অনেক সময়েই দেখা যায়, গাছের কারণে সমস্যায় পড়ছেন পথচারী বা শহরবাসী। সেগুলো কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আমাদের জানালে আর এভাবে মরতে হবে না গাছগুলোকে। যত্ন করে তাদের সরিয়ে অন্যত্র বসাব আমরা।’
ভারতের চেন্নাই, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে গাছেদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু হয়েছে।
বাংলাদেশের গাছেরাও বড় বিপদে আছে। বাড়ি, বড় বড় স্থাপনা, কিংবা মহাসড়ক করার জন্য অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য গাছ। প্রাণ হারানো এসব গাছের হাহাকার কি আমরা কেউ শুনতে পাই? যেমনটা শুনতে পেয়েছিলেন ভারতের আবদুল ঘানি।
জাহ্নবী