কুমিল্লা রেলস্টেশনটির পাশেই বরাইপুর গ্রাম। মাঝখানে ছোটখাটো একটা জঙ্গল। বরাইপুর গ্রাম থেকে মেঠোপথ দিয়ে জঙ্গল পেরিয়ে কুমিল্লা শহরে যাতায়াত করত এক বেলুনওয়ালা। সে ঘুরে ঘুরে বাচ্চাদের কাছে বেলুন ফেরি করে বেচত। তার কাঁধে সবসময় বসে থাকত একটা বানর।
বেলুনওয়ালা অনেক দিন আগে বনের পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বানরটিকে বাচ্চা অবস্থায় কুড়িয়ে পেয়েছিল। সেই থেকে বানরের বাচ্চাটি তার সঙ্গে থেকে থেকেই বড় হয়েছে। বেলুনওয়ালা এক সময় বেলুন বিক্রি করে প্রচুর আয় করত। সে বানরটিকে ভালোমানের বিভিন্ন ধরনের কলাসহ আরও নানারকম সুস্বাদু খাবার খাওয়াত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার দিন বদলাল। এখন বাজারে বাচ্চাদের জন্য নানা ধরনের মজার মজার অত্যাধুনিক খেলনা বেরিয়েছে। ফলে বাচ্চাদের কাছে বেলুনের চাহিদা আর আগের মতো নেই। বেলুনওয়ালার আয় কমে গেছে। সে ঠিকমতো নিজের ও পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করতে পারছিল না। আর তাই বানরের খাবারেও ঘাটতি পড়ল। বানরটি সবসময় ক্ষুধার্ত থাকত। একদিন এক কলা বিক্রেতার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল বেলুনওয়ালা। বানরটি বেলুনওয়ালার কাঁধ থেকে লাফ দিয়ে নেমে কলা বিক্রেতার এক ফানা কলা নিয়ে দিল দৌড়। কলা বিক্রেতা, বেলুনওয়ালা এবং উপস্থিত লোকজন সবাই বানরটির পেছন পেছন দৌড়াতে লাগল। বানরটি দৌড়ে একটা উঁচু তালগাছে উঠে পড়ল। লোকজন বানরটিকে বড় বড় মাটির ঢেলা দিয়ে ঢিল মারতে শুরু করল। বানরটি সার্কাসের মতো নানা কৌশলে এদিক ওদিক সড়ে গিয়ে সেগুলো থেকে নিজেকে বাঁচাল। মাঝে মাঝে দু-একটা ঢিল ধরতে পারলে, সে ঢিলগুলো গাছের নিচে জড়ো হওয়া লোকজনের দিকে ছুড়ে মারতে লাগল। তখন জ্যৈষ্ঠ মাস। গাছে ছোট ছোট কচি তাল। বানরটির মাথায় এক বুদ্ধি এল। সে সেই তালগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিচের লোকজনের দিকে ছুড়ে মারতে লাগল। ফলে বানরে আর মানুষে ঢিলাঢিলি জমে উঠল। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেল। ফলে বানরটি আর পেরে উঠছিল না। সে লাফ দিয়ে পাশের ছাতিম গাছে উঠল। এভাবে এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে লাফিয়ে চড়ে সে পালিয়ে যেতে লাগল। মানুষজন ছুটল তার পিছু পিছু। তারা বানরটিকে ক্রমাগত ঢিল ছুড়ছিল। শেষে আর কিছু না থাকায় হাতে থাকা কলার ফানা থেকে বড় বড় কলা ছিঁড়ে সে মানুষের দিকে ছুড়ে মারতে লাগল। এভাবে সবাই রেললাইনের সামনে চলে এল। এমন সময় একটি মালবাহী ট্রেন এসে পড়ল। বানরটি গাছ থেকে লাফ দিয়ে মালবাহী ট্রেনে উঠে পড়ল। অবশেষে হাতের শেষ কলাটি খেতে খেতে মানুষজনকে অনেকটা কলা দেখিয়ে দুষ্ট বানরটি সেই মালবাহী ট্রেনে চড়ে পালিয়ে গেল। এতক্ষণ পণ্ডশ্রম করে বানরটিকে ধরতে না পেরে, মানুষগুলো সেখানে বোকার মতো হা করে দাঁড়িয়ে রইল।
জাহ্নবী