ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
English

গুলুর ঝালমুড়ি

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম
গুলুর ঝালমুড়ি

গুলু সকাল হলেই দু-মুঠো পান্তাভাত আর কাঁচামরিচ মেখে খায়। তারপর থলে হাতে গাঁয়ের বটতলা দিয়ে হাঁটা ধরে নিশিপুর স্কুলের দিকে। স্কুলের গেটের সামনে চট বিছিয়ে বসে বিক্রি করে ঝালমুড়ি আর ভাঁজা বাদাম।

বেচাবিক্রির ফাঁকে ফাঁকে ঠিক পাখির মতো গলা উঁচিয়ে হাঁক দেয় রাস্তার মানুষদেরও। এই ঝালমুড়ি, ভাঁজা বাদাম, যে খাবেন নিয়া যান, নিয়া যান…
একেবারে সস্তা দাম! নিয়া যান…

একবার খাইলেই ফের মন চাইব, এই সেই ঝালমুড়ি, ভাঁজা বাদাম।

এভাবে হাঁক পাড়তে পাড়তে বিক্রি করতে থাকে ঝালমুড়ি আর বাদাম। স্কুলের ছেলেমেয়েসহ গ্রামের প্রায় সব মানুষই গুলুর কাছেই ঝালমুড়ি কিনে খায়। ছেলে-বুড়ো সবাই গুলুকে এক নামে চেনে! গুলু ঝালমুড়িওয়ালা! সেদিন স্কুলের টুকুন, রাকিব, তনয় গুলুকে ডেকে বলে- গুলু ভাই, তোমার হাতের ঝালমুড়ির যা মজা! তার কোনো তুলনা নেই। আর বাদাম ভাঁজাও অনেক ভালো, একদম মুচমুচে!  

আজকাল এত যত্ন করে কজনই-বা বেচাকেনা করে বলো! সবাই কেবল ভেজাল বিক্রি করে।

সারা দুনিয়াটাই ভেজালময় হয়ে গেছে গো গুলু ভাই।

মৃদু হেসে জবাব দেয় গুলু, তা আপনারা ঠিক কথাই কইছেন। তবে এগুলো তো সবই আমার মায়ের হাতের তৈরি। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই মায়ের সব জোগাড় সারা হয়ে যায়। মা আগের যুগের মানুষ, ভেজাল কিছু দু-চোখে দেখতে পারেন না।

যাই বল গুলু ভাই, তোমার এই ঝালমুড়ি খেয়ে আমাদের হেডস্যারও তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

তাই নাকি ভাইজানেরা! এ তো আমার ভারি সৌভাগ্যির ব্যাপার!

কথার মাঝেই টুকুন বলে ওঠে, এই যে গুলু ভাই, তোমরা যে গল্পেই ডুবে গেলে, কই আমাদের ঝালমুড়ি দাও! সঙ্গে বাদামও দিও।  

গুলু বলল, জি ভাইজান দিতাছি।

এই নেন।

এভাবেই সকাল ও দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বেঁজে ওঠে টুংটাং, টুংটাং করে।

ছেলেমেয়েরাও বই-খাতা গুছিয়ে বাড়ির দিকে ছুট দেয়। সেই সঙ্গে গুলুরও ছুটি হয়। থলেটা মাথায় তুলে বাড়ির দিকে রওনা হয় গুলু।

রোজ ঝালমুড়ি আর বাদাম বিক্রি করে কোনোমতে দিন পার হয় গুলুর। ভিটেমাটি বলতে তেমন কিছুই নেই। শুধু এক টুকরো জমিতে একটি কুঁড়েঘর।

সেখানেই বৃদ্ধ মাকে নিয়ে থাকে গুলু।

আজ শুক্রবার স্কুল ছুটির দিন। তাই গুলু ঝালমুড়ি বেচতে যায়নি।

এদিকে গুলুর মা ডাকে- বাবা গুলু, নেও বাপু এই তোমার জন্যি একটু চালের গুঁড়ো দিয়ে হালুয়া করেছি, খেয়ে নেও।

গুলু হালুয়া খায়।

একবার এক সপ্তাহ ধরে গুলুর কোনো খবর নেই। ঝালমুড়ি, বাদাম বেচতে যায়নি। গুলুর যে ভীষণ জ্বর!

ঘরে যা পয়সাকড়ি ছিল তা ডাক্তার দেখাতেই শেষ হয়ে গেছে। এক টাকাও পুঁজি নেই! যা দিয়ে ব্যবসাটা আবার শুরু করবে। চিন্তায় গুলুর মাথায় হাত।

এদিকে স্কুলের ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন গুলুর মজাদার ঝালমুড়ি খাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু তার নাগাল পায় না কেউ।

রাকিব আর টুকুন ভাবে- কী হলো গুলু ভাইয়ের, এতদিন হয়ে গেল দেখা মেলে না। ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে।

টুকুন বলে, চল আজ গুলু ভাইয়ের বাড়ি গিয়ে দেখি সমস্যা কোথায়?

যেই ভাবা সেই কাজ! গুলুর বাড়ি গিয়ে তার মুখে সব কথা শুনে টুকুন ভাবে- আসলে কী করা যায়!

টুকুন আর রাকিব পরামর্শ করে।

পরের দিন সকালে স্কুলে তারা হেডস্যারের কাছে গিয়ে গুলুর ব্যাপারে সব কথা খুলে বলে।

সব শুনে স্যার বললেন, তাহলে কী করতে চাও তোমরা?

টুকুন বলে, আপনি অনুমতি দিলে আর কিছু আর্থিক সহযোগিতা করলে ভালো হবে। স্কুলের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে গুলু ভাইয়ের জন্য স্কুলের গেটের বাইরে ছোট একটি দোকান করে দিতে চাই। সেখানে বসে গুলু ভাই ঝালমুড়ি, বাদাম, চা-বিস্কুটসহ সবই বেচতে পারবে। তাতে আমাদেরও সুবিধা হবে এবং গুলু ভাইয়েরও উপকার হবে।

সব শুনে হেডস্যার জবাব দিলেন, বাহ! ভালোই বলেছ। আচ্ছা, অনুমতি দিলাম।

পরদিনই টুকুন ও রাকিব স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। ছোট্ট একটা দোকান বানিয়ে দেয়। দোকানে মুড়ি, বাদামসহ নানান কিছু সাজিয়ে দেয়।

পরের দিন গুলুকে ডেকে নিয়ে আসে টুকুন। হেডস্যারকে দিয়ে গুলুর দোকান উদ্বোধন করায়। হেডস্যার বলেন, আজ থেকে এখানে বসেই ঝালমুড়ি বেচবে, বুঝলে গুলু। তোমাকে আর পাড়ায় পাড়ায় হাঁক দিয়ে বিক্রি করতে হবে না। সবাই এখান থেকেই কিনবে।

গুলু তো অবাক! খুশিতে ওর দু-চোখ পানিতে ভরে যায়।

কাঁপা গলায় বলে, কী বলে যে ধন্যবাদ দেব মাস্টার মশাই।

না না গুলু, আমায় ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই, সবই করেছে রাকিব, টুকুন ওরা মিলে। আমি তো শুধু সহযোগিতা করেছি।

জাহ্নবী

মাটিতে হাঁটে যেসব মাছ

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০৭:১০ পিএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
মাটিতে হাঁটে যেসব মাছ
মাডস্কিপার পশ্চিম আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে থাকে।

কখনো কি ভেবেছো মাছ হাঁটতে পারে? আমাদের যেমন পা আছে, তাই আমরা হেঁটে বেড়াতে পারি। কিন্তু মাছের তো পা নেই! তাহলে?
আমরা জানি, মাছ পানিতে সাঁতার কেটে চলে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীতে কিছু মাছ আছে যারা মাটির ওপর হাঁটতে পারে! হাঁটতে না পারলেও হামাগুড়ি দিয়ে চলতে পারে। আজ তোমাদের তেমন কিছু আশ্চর্য মাছের গল্প শোনাব।

স্নেকহেড – সাপমুখো মাছ!

‘স্নেকহেড’ নাম শুনে ভয় পেও না! এটা আসলে আমাদের পরিচিত শোল মাছ। মাথাটা দেখতে অনেকটা সাপের মতো বলে এটাকে বাইরের দেশে সাপমুখো মাছ বলে। এই মাছ দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি দেখা যায়। তবে আমেরিকাতেও এর দেখা মেলে।
স্নেকহেড মাটি দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলে, এমনকি পানির বাইরে ডাঙায়ও আসতে পারে। আর মজার কথা, ডাঙায় এসেও সে চার দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে! তার গায়ে বাদামি রঙের আঁশ আর গাঢ় দাগ থাকে। এই মাছ কিন্তু বেশ ভয়ংকর- সে নিজের চেয়ে বড় মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড় সব খেয়ে ফেলে। তাই একে কাছ থেকে দেখলে সাবধান থাকতে হয়!

মাডস্কিপার- লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটে

মাডস্কিপার পশ্চিম আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে থাকে। সুন্দর বনেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। মাডস্কিপার লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটে, আবার কাদার ওপর দিয়ে হামাগুড়িও দেয়। ওরা মাটির ওপর বসে পোকা, কৃমি খুঁজে খায়। সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার, মাডস্কিপার শুধু পানিতে নয়, ডাঙায়ও থাকতে ভালোবাসে। তারা পানি আর বাতাস, দুই দিক থেকেই অক্সিজেন নিতে পারে!

 

আমাদের চেনা কই মাছ

বাংলাদেশের খাল-বিলেই কই মাছের দেখা মেলে। কই মাছের পাখনা খুব শক্তিশালী। পাখনা দিয়ে সে ডাঙায়ও চলাফেরা করতে পারে। মাটির ওপরেও ছয় দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে! এদের শরীরে এমন একটা অঙ্গ আছে, যেটা দিয়ে বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন নিতে পারে। তাই কই মাছ সহজেই জল-স্থল দুই জায়গায় থাকতে পারে।
দেখলে তো! মাছ মানেই শুধু পানির বাসিন্দা না। কিছু মাছ কিন্তু আমাদের মতোই ডাঙায় হাঁটতে জানে। প্রকৃতির কী মজার সব চমক, তাই না? 

দুরন্ত ছড়া: বৃষ্টি

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ০২:০৭ পিএম
দুরন্ত ছড়া: বৃষ্টি
ছবিটি এঁকেছে মহুয়া

খুকুর ছড়া বনের ছড়া
রথিন্দ্রজিৎ হিরু

নাচে হাতি নাচে ঘোড়া
নাচে বনের পাখি,
নাচে খুকুর কাজল মাখা
নাচে দুটো আঁখি।

নাচে বানর নাচে হালুম
নাচে হরিণ ছানা,
নাচে খুকুর পুকুর জলে
নাচে বগি কানা।

নাচে জেব্রা নাচে জিরাফ
নাচে ঝুপুরঝুপুর,
নাচে খুকুর কুকুর ছানা
নাচে ঝুমুর নূপুর।

নাচে ভালুক নাচে খরগোশ
নাচে সিংহ মামা,
নাচে খুকুর বন্দি খাঁচায়
নাচে ময়না শ্যামা।

নাচে আলো নাচে ছায়া
নাচে পাহাড় ঝর্ণা,
নাচে খুকুর দুপুর গড়া
নাচে সাগর কন্যা।

 

 


কত্ত রকম ফল
বেণীমাধব সরকার 

জ্যেষ্ঠ মাসে বাগান ভরে 
নানান রকম ফলে,
ছেলে বুড়ো সবার চোখে
সুখের বাতি জ্বলে।

এক বাগানে আম্রপালি
ল্যাংড়া আরেক বাগে,
রং মাখানো সিন্দুরে আম 
দেখতে ভালো লাগে।

হিমসাগর ও গোপালভোগে
দৃষ্টি যদি পড়ে
খাওয়ার আগেই জিভের পানি 
উথাল পাথাল করে।

লিচু গাছে থোকায় থোকায় 
ঝুলছে কত লিচু
ফলের ভারে ন্যুব্জ হয়ে 
ডালগুলো হয় নিচু।

কাণ্ড ধরে গলাগলি 
করছে কাঁঠালগুলি
মধুর মতো মিষ্টি লাগে
মুখে নিলে তুলি।

কালো জামের মধুর রসে
রঙিন করি মুখ
জ্যেষ্ঠ মাসের ফলের বাহার
দেখলে নাচে বুক।

 

 


জ‍্যৈষ্ঠ মাসে 
মো. দিদারুল ইসলাম 

জ‍্যৈষ্ঠ মাসে গাছে গাছে
কাঁচা-পাকা আম,
খোকাখুকি ডালে বসে
খাচ্ছে রঙিন জাম।

আম-কাঁঠালের গন্ধে ভাসে
ওই অদূরের গাঁ,
দাদা ডাকে, কই রে নাতি?
লিচু পেড়ে খা।

ক্লান্ত দুপুর, গাছের ডালে
নানা পাখির ঝাঁক,
পাড়ায় পাড়ায় কোক্কুরুৎ কু
দিচ্ছে মোরগ ডাক।

আনারসের বাগান জুড়ে 
মৌমাছি গায় গান,
জামরুল চিবায় কাঠবিড়ালী
মাচায় নতুন পান।

গাঁয়ের পাশেই নদীর বাঁকে
জমজমাট এক হাট,
নানান ফলের বেচাকেনায়
ব‍্যস্ত নদীর ঘাট।

 

 


তোতলা ভূত
হাফিজুর রহমান

খপ করে খায় খাবার 
গিলে এক ঢোক,
মাথার থেকে মুখ বড়
লাল দুটো চোখ।

কালো পুরো দাঁতগুলো
ধারালো যেন ছুরি, 
ছোট-বড় সব মিলে
অন্তত এক কুড়ি।

হোক না চিকনা দেহের 
উদ্দেশ্যে নেই খুঁত,
ক্ষতি করে না মানুষের 
তোতলা এই ভূত।

 

 

 

বৃষ্টি 
মোহাম্মদ শামীম মিয়া 

মেঘের মেয়ের আঁচল ছেঁকে,
বৃষ্টি পড়ে আকাশ থেকে।

বৃষ্টি পড়ে টিনের চালে,
সবুজ বনের গাছের ডালে।

বৃষ্টি পড়ে নদীর ঘাটে,
খোলা সবুজ মাঠে মাঠে।

বৃষ্টি পড়ে দিন ও রাতে,
স্নিগ্ধ মায়া জড়ায় তাতে।

বৃষ্টি পড়ে খাল ও বিলে,
ব্যাঙে ডাকে পুকুর-ঝিলে।

বৃষ্টি পড়ে চোখের পাতায়,
দৃশ্য আঁকা মনের খাতায়।

রিয়ানা ও রঙিন পরী

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ০২:০২ পিএম
রিয়ানা ও রঙিন পরী
এঁকেছেন মাসুম

রিয়ানা ওর বড় মামাকে ডাকে বুড়ো মামা। বুড়ো মামা ওকে একটি ড্রয়িং খাতা কিনে দিয়েছেন, আর দিয়েছেন রং পেন্সিল। আজ রিয়ানা মহাখুশি!
কিন্তু ড্রয়িং খাতায় তো কিছু আঁকতে হবে! কী আঁকা যায়? কী আঁকা যায়? রিয়ানা ছুটে যায় বুড়ো মামার কাছে।
বারান্দায় চেয়ারে বসে আছেন বুড়ো মামা। চোখে চশমা, মাথায় কোঁকড়া চুল আর হাতে বই। মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন তিনি।
রিয়ানা বলল, ‘বুড়ো মামা, ড্রয়িং খাতায় আমি কী আঁকব?’
মামা চেয়ারে বসে ভাবলেন। বইটা রেখে দাঁড়িয়ে ভাবলেন। মাথায় হাত দিয়ে ভাবলেন। ভ্রু কুঁচকে ভাবলেন। চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে ঘোরালেন কয়েকবার। তারপর মামা বললেন, ‘একটা পরী আঁকো, তোমার মতো একটা পরী।’
রিয়ানা দৌড়ে ঘরের ভেতরে গেল আবার। পড়ার টেবিলে বসল। পেন্সিল নিল হাতে। তারপর পরী আঁকতে শুরু করল।
রিয়ানা ড্রয়িং খাতায় একটি পরী এঁকেছে। রং করেছে রং পেন্সিল দিয়ে। কিন্তু পরীকে ঠিক পরী মনে হচ্ছে না! মনে হচ্ছে পরীটার কিছু একটা নেই! কিন্তু কী নেই?
খাতার পরীটা তখনই বলল, ‘ও মা, তুমি আমার ডানা আঁকোনি কেন? ডানা ছাড়া কি পরী হয়?’
হ্যাঁ, তাইতো! পরীর ডানা আঁকা হয়নি! এত ভারি অন্যায়! রিয়ানা পরীর দুটো ডানা এঁকে দিল।
কিন্তু তারপর কি হলো জানো? শুনলে তোমরাও অবাক হবে!
তারপর রঙিন পরীটা আর খাতায় থাকল না! উড়ে এসে রিয়ানার পাশে বসল! রিয়ানা অবাক! ড্রয়িং খাতার পরী কীভাবে ওর পাশে এসে বসল!
রিয়ানাকে আরও অবাক করে দিয়ে পরীটা বলল, ‘আমাদের দেশে যাবে তুমি?’
রিয়ানা বলল, ‘সে হয় নাকি? আমার তো ডানা নেই! আমি কীভাবে তোমাদের দেশে যাব?’
পরীটা আরও কাছে এসে বসল। তারপর রিয়ানার পিঠে হাত বুলিয়ে দিল একবার। সঙ্গে সঙ্গে দুটি ডানা গজাল! রিয়ানা আরও অবাক হয়ে গেল, চোখ দুটি বড় হয়ে গেল তার।
আয়নার সামনে দাঁড়াল রিয়ানা। বুড়ো মামা তো ঠিকই বলেছিলেন-ওকে সত্যিই পরী পরী লাগছে!
পরীটা কিছুটা তাড়া দিয়ে বলল, ‘তাহলে আর দেরি কেন? চলো, পরীর দেশ ঘুরে আসি।’
পরীর কথায় মাথা নাড়াল রিয়ানা।
রিয়ানা উড়ছে। রঙিন পরীটাও উড়ছে। ওরা মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কয়েকটি মেঘ এসে ওর ডানা ভিজিয়ে দিল।
উড়তে উড়তে পরীর দেশে চলে এল ওরা। পরীর দেশের চারদিকে রঙিন পাতার গাছ। রঙিন রঙিন ফুল। সেখানে খেলা করছে ছোট্ট ছোট্ট পরী। রিয়ানাও খেলতে শুরু করল তাদের সঙ্গে।
তখন সেখানে এলেন একজন পরী। চোখে চশমা তার। বয়স কিছুটা বেশি। এসেই বললেন, ‘অনেক খেলা হয়েছে, এবার সবাই পড়তে যাও।’
চশমা পরা পরীর কথা শুনে সবাই খেলা বন্ধ করল। তারপর চলে গেল পড়তে।
রঙিন পরীটা এসে রিয়ানার কানে কানে বলল, ‘দেখলে তো, এখানে সবাই পড়ার সময় পড়ে, খেলার সময় খেলে। আর বড়দের কথা মেনে চলে।’

দুরন্ত ছড়া: ধানের ঘ্রাণ

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম
আপডেট: ২২ মে ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম
দুরন্ত ছড়া: ধানের ঘ্রাণ
এঁকেছে তুবা

ধানের ঘ্রাণ

হাফিজুর রহমান

শিষ হেলেছে ধান পেকে
সোনালি রং গায় মেখে
দুলছে মৃদু হাওয়ায়, 
হাসছে কৃষান খুশি মনে 
গাইছে পাখিরা গান বনে
দারুণ ঘ্রাণ পাওয়ায়।

ফসল উঠবে গোলা-ঘরে
স্তূপ করানো ধানের খড়ে
সূর্যের ছড়ানো রোদে,
ক্লান্তি আসে না কৃষকের
ঘাম ঝরান তা বৈশাখের 
অন্যরকম সুখ বোধে।

 

 

গ্রীষ্মকালের ফল

জহিরুল হক বিদ্যুৎ

গ্রীষ্মকালে নানান রকম
ফলের বাহার দেখি,
বৃক্ষ ডালে আম ও জামে
মুগ্ধ করে আঁখি।
কাঁঠাল, লিচু, বেল ও কলা
ঝুলে আছে গাছে,
তরমুজ, বাঙ্গি, আনারসেও
খেত যে ভরা আছে।
লাল ও সাদা জামরুল খেলে
মুখ ভরে যায় রসে,
পেয়ারাও বেশ দারুণ স্বাদের
রস ভরা টসটসে।
আরো দেখি বনবাদাড়ে
লেবু, বৈঁচি, চুকুর,
পেকে আছে গোছা গোছা
হলুদ রঙের ডুমুর।
পাকা পেঁপে তালের শাসও
খেতে দারুণ লাগে,
গ্রীষ্মকালে ফল খেলে তাই
শরীর ভালো থাকে।

 


মজার দেশ

শারমিন নাহার ঝর্ণা

এক যে ছিল মজার দেশ
জাদুর বাতি জ্বলে,
গাছের পাতা হেসে হেসে
মিষ্টি কথা বলে।

ফুলে ফুলে প্রজাপতি
খলখলিয়ে হাসে,
জলের উপর পাখির বাসা
কী যে সুখে ভাসে।

কুমির ছানা ডাঙ্গায় বসে
খেলে জাদুর খেলা,
মাছেরা সব ডাঙ্গায় বসে
সাজায় মজার মেলা।

মজার দেশে জাদুর খেলা
দিনে রাতে চলে,
মজার দেশে জাদুর রাজা
মজার কথা বলে।

 

মাছে মজা

হাফিয রেদওয়ান

মাথা বড় কাতলা
ঝোল মজা, পাতলা।

পেটি বড় চিতল  
খেয়ে মন শীতল।

ইলিশ ভাজা সরষে
মুখে পুরি হরষে।

শিং টেংরা কৈ
আহা! স্বাদ, হই হই।

 

 

মায়ের মতো

কাব্য কবির

মাগো তোমার আঁচল তলে
শান্তি খুঁজে পাই,
এমন পরশ স্বর্গ ছাড়া
আর কোথাও নাই।

কোথায় আছি, কেমন আছি
নাও যে তুমি খোঁজ,
দুধ, কলা, ভাত আদর করে
মেখে খাওয়াও রোজ।

কাঁদো তুমি রবের কাছে
আমার অসুখ হলে,
কেঁদে কেঁদে ভাসো তুমি
দুই নয়নের জলে।

 

মুক্ত পাখি 

আব্দুস সাত্তার সুমন 

মুক্ত পাখি মুক্ত হয়ে
দূর আকাশের বুকে,
সাদা সাদা মেঘের ভেলায় 
থাকবে মহাসুখে।

প্রাণ পাখিটি বলবে গিয়ে 
মুক্ত হতে চাই,
সবুজ ঘেরা ওই বনেতে 
দেবে আমায় ঠাঁই?

স্বাধীন পাখি স্বাধীন হয়ে 
সুখী হবে নীড়ে,
সুখে-দুঃখে থেকো তুমি
শত পাখির ভিড়ে।

উড়ে উড়ে রঙিন ডানায়
যাবে গহিন বনে,
যেথায় থেকো সুস্থ থেকো 
রাখবে আমায় মনে?

সাক্ষী শিয়াল

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম
সাক্ষী শিয়াল
এঁকেছেন মাসুম

একজন সওদাগর একটি ঘোড়া নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে তার বড্ড ঘুম পেল। তখন তিনি ঘোড়াটিকে এক গাছে বেঁধে, সেই গাছের তলায় ঘুমিয়ে রইলেন।
এমন সময় এক চোর এসে সওদাগরের ঘোড়াটিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। সওদাগর ঘোড়ার পায়ের শব্দে জেগে উঠে বললেন, ‘কী ভাই, তুমি আমার ঘোড়াটিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?’
চোর তাতে ভারি রাগ করে বলে, ‘তোমার ঘোড়া আবার কোনটা হলো?’
শুনে সওদাগর আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘সে কী কথা! তুমি আমার ঘোড়া নিয়ে চলে যাচ্ছ, আবার বলছ কোনটা আমার ঘোড়া?’
দুষ্টু চোর তখন মুখ ভার করে বলে, ‘খবরদার! তুমি আমার ঘোড়াকে তোমার ঘোড়া বলবে না!’
সওদাগর বললেন, কী? আমি আমার ঘর থেকে ঘোড়াটাকে নিয়ে এলুম, আর তুমি বলছ সেটা তোমার?’
চোর বলে, ‘বটে। এটা তো আমার ওই গাছের ছানা। এক্ষুনি হলো। তুমি বুঝে শুনে কথা কও, নইলে বড় মুশকিল হবে।’
তখন সওদাগর গিয়ে রাজার কাছে নালিশ করলেন, ‘মহারাজ, আমি গাছে আমার ঘোড়াটি বেঁধে ঘুমুচ্ছিলুম, আর ওই বেটা এসে তাকে নিয়ে যাচ্ছে।’
রাজামশাই চোরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হে, তুমি ওর ঘোড়া নিয়ে যাচ্ছ কেন?’
চোর হাত জোড় করে বলে, ‘দোহাই মহারাজ। এটি কখনোই ওর ঘোড়া নয়। এটি আমার গাছের ছানা। ছানাটি হতেই আমি তাকে নিয়ে যাচ্ছিলুম, আর ওই বেটা উঠে বলছে কিনা ওটা ওর ঘোড়া, সব মিথ্যে কথা!’
তখন রাজামশাই বললেন, ‘এ তো ভারি অন্যায়। গাছের ছানা হলো, আর তুমি বলছ সেটা তোমার ঘোড়া। তুমি দেখছি বড় দুষ্টু লোক। পালাও এখান থেকে!’ বলে তিনি ঘোড়াটা চোরকেই দিয়ে দিলেন।
সওদাগর বেচারা তখন মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে চললেন। খানিক দূরে গিয়ে এক শিয়ালের সঙ্গে তার দেখা হলো।
শিয়াল তাকে কাঁদতে দেখে বললেন, ‘কী ভাই? তোমার মুখ এমন ভার দেখছি যে! কী হয়েছে?’
সওদাগর বললেন, ‘আর ভাই, সে কথা বলে কী হবে? আমার ঘোড়াটি চোরে নিয়ে গেছে। রাজার কাছে নালিশ করতে গেলুম, সেখানে চোর বললে কিনা ওটা তার গাছের ছানা! রাজামশাই তাই শুনে ঘোড়াটি চোরকেই দিয়ে দিয়েছেন।’
এ কথা শুনে শিয়াল বললেন, ‘আচ্ছা, এক কাজ করতে পারো?’
সওদাগর বললেন, ‘কী কাজ?’
শিয়াল বললেন, ‘তুমি আবার রাজামশাইয়ের কাছে গিয়ে বলবে, মহারাজ, আমার একটি সাক্ষী আছে। আপনার বাড়িতে কুকুরদের ভয়ে সে আসতে পারছে না। অনুগ্রহ করে যদি কুকুর তাড়িয়ে দেওয়ার হুকুম দেন, তবে আমার সাক্ষীকে নিয়ে আসতে পারি।’
তা শুনে রাজামশাই তক্ষুনি সব কুকুর তাড়িয়ে দেওয়ার হুকুম দিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, এখন তোমার সাক্ষী আসুক।’
এসব কথা সওদাগর শিয়ালকে এসে বলতেই শিয়াল চোখ বুজে টলতে-টলতে রাজার সভায় এল। সেখানে এসেই সে দেয়ালে হেলান দিয়ে ঝিমুতে লাগল। রাজামশাই তো দেখে হাসতে হাসতে বললেন, ‘কী শিয়াল পণ্ডিত? ঘুমচ্ছ যে?’
শিয়াল আধ চোখে মিট মিট করে তাকিয়ে বললে, ‘মহারাজ, কাল সারা রাত জেগে মাছ খেয়েছিলুম, তাই আজ বড্ড ঘুম পাচ্ছে।’
রাজা বললেন, ‘এত মাছ কোথায় পেলে?’
শিয়াল বলল, ‘কাল নদীর জলে আগুন লেগে সব মাছ এসে ডাঙায় উঠল। আমরা সবাই মিলে সারা রাত খেলুম, খেয়ে কি শেষ করতে পারি!’
এ শুনে রাজামশাই এমনি ভয়ানক হাসলেন যে, আর একটু হলেই তিনি ফেটে যেতেন। শেষে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললেন, ‘এমন কথা তো কখনো শুনিনি! জলে আগুন লাগে, এও কি কখনো হয়। এ সব পাগলের কথা!’
তখন শিয়াল বললেন, ‘মহারাজ ঘোড়া গাছের ছানা হয় এমন কথাও কি কখনো শুনেছেন? সে কথা যদি পাগলের কথা না হয়, তবে আমার এই কথাটার কি দোষ হলো?’
শিয়ালের কথায় রাজামশাই ভারি ভাবনায় পড়লেন। ভেবে-চিন্তে শেষে তিনি বললেন, ‘তাই তো! ঠিক বলেছ। গাছের আবার কী করে ছানা হবে? সে বেটা তবে নিশ্চয় চোর।’
তখনই হুকুম হলো, ‘আন তো রে সেই চোর বেটাকে বেঁধে!’
অমনি দশ পেয়াদা গিয়ে চোরকে বেঁধে আনলেন। আনতেই রাজামশাই বললেন, ‘মার বেটাকে পঞ্চাশ জুতো।’
বলতে বলতেই পেয়াদারা তাদের নাগরা জুতো খুলে চটাস-চটাস চোরের পিঠে মারতে লাগলেন। সে বেটা পঁচিশ জুতো খেয়ে চেঁচিয়ে বললে, ‘গেলুম গেলুম। আমি ঘোড়া এনে দিচ্ছি। আর এমন কাজ কখনো করব না।’
কিন্তু তার কথা আর তখন কে শোনে। পঞ্চাশ জুতো মারা হলে রাজা বললেন, ‘শিগগির ঘোড়া এনে দে, নইলে আরও পঞ্চাশ জুতো!’
চোর তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে ঘোড়া এনে দিল। তারপর তার নিজ হাতে তার নাক-কান মলিয়ে মাথা চেঁছে, তাতে ঘোল ঢেলে হতভাগাকে দেশ থেকে দূর করে দেওয়া হলো। সওদাগর তার ঘোড়া পেয়ে শিয়ালকে আশীর্বাদ করতে লাগল।