![ডার্ক এনার্জি](uploads/2024/04/19/1713509293.a12.jpg)
কলমের নিপের চেয়েও অনেক ক্ষুদ্র কণা থেকে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টি হয় আমাদের এই মহাবিশ্বের। এই মহাবিস্ফোরণকে আমরা বিখ্যাত বিগ ব্যাং থিওরি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারি।
সাধারণত যেকোনো বিস্ফোরণের পরে তা থেকে উৎপন্ন কণাগুলোর ছড়িয়ে পড়ার গতি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। একইভাবে বিগ ব্যাং বিস্ফোরণের পর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্র্যাভিটেশন বলের কারণে মহাবিশ্বের প্রসারণের গতি কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ১৯৯৮ সালে যখন দুই দল বিজ্ঞানী মহাবিশ্বের প্রসারণের গতি হ্রাসের পরিমাপ করার জন্য হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে (Type 1A supernova) বিস্ফোরণের ওপর পর্যবেক্ষণ করেন। তখন তারা দেখতে পান যে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের গতি কমা বা স্থিতিশীল থাকার পরিবর্তে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর শক্তি যা মধ্যাকর্ষণ এর বিপরীতে ক্রিয়া করবে। কিন্তু তৎকালীন বিজ্ঞানীদের কাছে এটি ছিল অসম্ভব ঘটনা। কারণ তখন বিজ্ঞানীদের কাছে এই প্রসারণের পেছনে ক্রিয়াশীল বল সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। তাই তারা এই অদৃশ্য শক্তির নাম দেন ডার্ক এনার্জি বা তমোশক্তি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, আমাদের মহাবিশ্ব ৬৮ শতাংশ ডার্ক এনার্জি দিয়ে তৈরি।
তবে আইনস্টাইন আগেই ডার্ক এনার্জির অনুমান করতে পেরেছিলেন। এক ধরনের মহাজাগতিক বিকর্ষণকারী শক্তি প্রথম ১৯১৭ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন দ্বারা উন্মোচন করা হয়েছিল এবং এটি একটি শব্দ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছিল, ‘মহাজাগতিক ধ্রুবক’, যা আইনস্টাইন অনিচ্ছাকৃতভাবে তার সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বে প্রবর্তন করেছিলেন, যাতে মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে প্রতিহত করা যায় এবং এমন একটি মহাবিশ্বের জন্য অ্যাকাউন্ট করা যায়, যা স্থির বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল (প্রসারিত বা সংকোচনকারী নয়)। ১৯২০-এর দশকে মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল আবিষ্কার করেন যে, মহাবিশ্ব স্থির নয় বরং প্রকৃতপক্ষে প্রসারিত হচ্ছে। পরবর্তীতে আমরা বুঝতে পারি, আইনস্টাইনের এই ধ্রুবকই ডার্ক এনার্জি বা অদৃশ্য শক্তি।
ডার্ক এনার্জি নিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সব থেকে গ্রহণযোগ্য মত অনুসারে, ডার্ক এনার্জি এক ধরনের অ্যান্টি গ্র্যাভিটি, যা স্থান বা স্পেস থেকে উৎপত্তি হয় এবং এর পজিটিভ ফিডব্যাকের কারণে এটি গ্র্যাভিটির বিপরীতে কাজ করে মহাবিশ্বকে সম্প্রসারণ হতে সাহায্য করে। এই প্রসারণের গতি নিয়মিত বৃদ্ধি পাচ্ছে বা ত্বরণ হচ্ছে। ডার্ক এনার্জির উদাহরণ হিসেবে আমরা কৃষ্ণগহ্বরের কথা চিন্তা করতে পারি, যা প্রতি সেকেন্ডে বড় হচ্ছে এবং এতে মানদণ্ডের অবকাশ থাকে না যে, এর বড় হওয়ার পেছনে অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে।
আমাদের জীবনে ডার্ক এনার্জির সরাসরি কোনো প্রভাব নেই। আমরা এটি দেখতে বা অনুভব করতে পারি না, শুধু ধারণা নিতে পারি। কিন্তু কয়েক ট্রিলিয়ন বছর পর এই অদৃশ্য শক্তির কারণে স্পেস এক্সপ্যান্ট হবে খুবই দ্রুত গতিতে যা মহাবিশ্বের গ্র্যাভিটিকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। ফলে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিসহ অন্যান্য সবল গ্যালাক্সি ভেঙে পড়বে। এমনকি মহাবিশ্বের সব পার্টিকেল ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হবে একটি নতুন ও শীতল মহাবিশ্ব যা সৃষ্টির শুরুতে ছিল।
জাহ্নবী