বোতলজাত পানির বাণিজ্য বছরে হাজার কোটি । খবরের কাগজ
ঢাকা ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, রোববার, ১২ মে ২০২৪

বোতলজাত পানির বাণিজ্য বছরে হাজার কোটি

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২০ পিএম
বোতলজাত পানির বাণিজ্য বছরে হাজার কোটি
খবরের কাগজ গ্রাফিক্স

প্রায় বছর পাঁচেক ধরে দেশের বাজারে পানি নিয়ে বাণিজ্য বাড়ছে। খোলা ও বোতলজাত দুই ধরনের পানি বিক্রি হচ্ছে। এ দেশে আমদানি করা পানির চাহিদাও আছে। বছরে লাখ ডলার ব্যয় হচ্ছে বোতলজাত পানি আমদানিতে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পানি রপ্তানিও হচ্ছে। তবে আমদানির তুলনায় রপ্তানি এখনো কম।

কয়েক দিন ধরে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে পানির চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রাকৃতিক ও বিশুদ্ধ দুই ধরনের পানির চাহিদা বেশি। এসব পানির দামও বেড়েছে।

আগে এক গ্লাস পানি পাঁচ টাকা থেকে সাত টাকায় বিক্রি করা হলেও এখন ১০ থেকে ১৫ টাকায়ও বিক্রি করছেন অনেকে। খোলা পানি বেশি দামে বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অনেকে।

খোলা পানি বিক্রেতারা বলেছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে পাত্রে করে বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক সময় কিনেও আনতে হয়। রোদে পানির চাহিদা বেড়েছে। এ পানি বিক্রি করেই জীবন চালাতে হয়। সব কিছুর দাম বেশি।

অন্যদিকে বোতলজাত পানির চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, এক সময়ে ধনী পরিবারের সচ্ছল মানুষরাই বোতলজাত পানি খেতেন। এখন সাধারণ মানুষও শারীরিক সুস্থতার কথা ভেবে বোতলজাত পানি খাচ্ছেন। গরমে রাস্তাঘাটে বোতলজাত পানি কিনে খাচ্ছেন অনেকে। খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা এ অভিযোগের জবাবে বলেছেন, চাহিদা বাড়ায় অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিয়েও বোতলজাত পানি মিলছে না। ক্ষেত্রবিশেষে বেশি দিয়েই সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া গত কয়েক মাসেই বোতলজাত পানির দাম কোম্পানিগুলোই বাড়িয়েছে।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে বোতলজাত পানি বিক্রিতে। প্লাস্টিকের বোতল, লেবেল, জ্বালানি, পরিবহনসহ পানি বিশুদ্ধকরণের খরচ বেশি। ন্যূনতম লাভে বিক্রি করলেও দাম বেশি পড়ছে।

এফবিসিসিআই থেকে জানা যায়, দেশে পানির বাজার এখন হাজার কোটি টাকার। প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ কোটি লিটার বোতলজাত পানি বিক্রি হয়। গ্রাম হোক বা শহর- বিশুদ্ধ পানির চাহিদা এখন সবখানেই। আমাদের দেশে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় বিশুদ্ধ পানি। এক সময় বিশুদ্ধ পানির বড় উৎস ছিল ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক পানি। এখনো গ্রামাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানিই বিশুদ্ধ পানির বড় উৎস। তবে শহর এলাকায় এ জায়গা দখল করে নিচ্ছে বোতলজাত পানি। আবার পানি বিশুদ্ধকরণের ফিল্টারও এখন ঘরে ঘরে।

বোতলজাত মাম পানি ৫০০ মিলি লিটারের দাম ২০ টাকা, এক লিটার ৩০ টাকা, দুই লিটার ৫০ টাকা বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বোতলজাত কিনলে পানির ৫০০ মিলি লিটারের দাম ২০ টাকা, দুই লিটার ৪০ টাকায় বিক্রির জন্য কোম্পানির বেঁধে দেওয়া দাম। বোতলজাত ফ্রেশ পানি ৫০০ মিলি লিটারের দাম ২০ টাকা, ৫ লিটার ৯০ টাকা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরেও স্থানীয়ভাবে বোতলজাত পানি বিক্রি হয়। এসব পানির দামও গড়ে একই।

চেইনশপে কোম্পানির বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করা হলেও ভ্যাটের কারণে দাম বেশি পড়ছে। বাইরের বড় দোকানে, পাড়ামহল্লা ও উপজেলার দোকানে বোতলজাত বিশুদ্ধ পানি নির্ধারিত দামের চেয়ে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখা হচ্ছে। বাজার নজরদারিতে ব্যবস্থা না থাকায় বিক্রেতারা যার কাছ থেকে যা পারছেন নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।

খুলনার বাগমারা এলাকার মদিনা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দুই লিটার মহুয়া পানির বোতল ৭০ টাকায় কিনেছেন বলে খবরের কাগজকে বলেন ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি রাজধানীতে থাকি। ব্যবসায়ের কাজে খুলনা এলে বোতলের পানি খাই। এবারে গরম বাড়ার পর মাম, ফ্রেশ এখানে পাড়ার দোকানে পাওয়া যায়নি। বিক্রেতা বলেছেন মাল নেই। বাধ্য হয়েই স্থানীয়ভাবে তৈরি পানির বোতল কিনেছি। একেক দোকানে এক এক দাম। শেষ পর্যন্ত দাম বেশি দিয়েই কিনতে হলো।

প্রাকৃতিক খনিজ পানি সাধারণত পাত্রে রেখে গ্লাসে ঢেলে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানি সুপারশপ ও অভিজাত স্টোরে পাওয়া যায়। আবার আমদানি করা পানিরও চাহিদা আছে আমাদের দেশে। বিশেষভাবে বড় হোটেল, দূতাবাস ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানে আমদানি করা পানি সরবরাহ করা হয়। এ দেশের অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী উচ্চবিত্ত শ্রেণির বেশির ভাগ মানুষই আমদানি করা পানি পান করেন। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আসা মানুষদের অনেকে এই পানির বড় গ্রাহক।

পানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ করে দাম কমানোর দাবি জানিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) থেকে মানববন্ধন করা হয়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বোতলজাত পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী বড় বড় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেরই এখন পানির ব্যবসা রয়েছে। গরম সামনে রেখে বোতলজাত সব ধরনের পানির হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি অন্যায়, অযৌক্তিক ও ভোক্তা স্বার্থবিরোধী ।

ক্যাবের দাবি, অবিলম্বে সব ধরনের বোতলজাত পানির অযৌক্তিক, অন্যায় ও অন্যায্য মূল্যবৃদ্ধি বাতিল করতে হবে; ভোক্তাদের সাশ্রয়ীমূল্যে নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বোতলজাত পানির মূল্য স্বাভাবিক করতে প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জোটবদ্ধভাবে হঠাৎ বোতলজাত পানির দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে ভোক্তা সাধারণকে কষ্টে ফেলেছে তাদের আইনানুগ বিচার ও শাস্তি দিতে হবে।

ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, গরমে পানির চাহিদা বেড়েছে। বিশেষভাবে শারীরিক সুস্থতার জন্য বোতলজাত পানি এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। জরুরি খাবার। বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রতি বোতল পানির দাম বাড়িয়েছে। আধা লিটার পানির বোতল এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। বাজারে যেসব বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে পরিচিত ব্র্যান্ডের ৫০০ মি.লি. পানির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য এখন ২০ টাকা। কয়েক দিন আগেও এসব ব্র্যান্ডের ৫০০ মি.লি. পানির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১৫ টাকা। এ ছাড়া প্রতি ৫০০ মি. লি. বোতলজাত খাবার পানির পাইকারি মূল্য ১১-১২ টাকা। অর্থাৎ ৫০০ মি.লি. পরিমাণের প্রতি বোতল পানি খুচরা পর্যায়ে ৮-৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে বোতলজাত পানির দাম কমানো এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন থেকে বোতলজাত পানির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানা যায়।

বিজিএপিএমইএর সভাপতি হচ্ছেন মো. শাহরিয়ার

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ০৪:৫৩ পিএম
বিজিএপিএমইএর সভাপতি হচ্ছেন মো. শাহরিয়ার
ছবি: সংগৃহীত

আদজি ট্রিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঐক্য পরিষদের প্যানেল নেতা মো. শাহরিয়ার ২০২৪-২৬ মেয়াদে বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি হতে যাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সংগঠনটির ৩৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত সভাপতি হবেন।

গত শনিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঐক্য পরিষদ প্যানেল ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ১৪টি পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাক্টিভ মেম্বারস ইউনিয়ন প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছে ৭ জন পরিচালক।

ঐক্য পরিষদ প্যানেল নেতা শাহরিয়ার ২৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এটি ছিল এবারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট। একই প্যানেলের প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা পেয়েছেন এবারের সর্বোচ্চ ২৮৬ ভোট।

নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, এখন নবনির্বাচিত পরিচালকরা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, প্রথম সহসভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও অন্যান্য পদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। ঐক্য পরিষদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হওয়ায় এর প্যানেল নেতা শাহরিয়ার বিজিএপিএমইএর সভাপতি হতে যাচ্ছেন।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রাজ্জাকুল ইসলাম।

নির্বাচন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, মোট ৪৬০ জন ভোটারের মধ্যে ৪২৫ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

নির্বাচনে বিজেয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ার বলেন, ‘প্যানেলের প্রতি আস্থা রাখার জন্য সব ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এখন সময় আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য কাজ করার, যা আমাদের ঘোষণাপত্রে করা হয়েছিল।’

মো. শাহরিয়ার বলেন, নির্বাচনে যারাই জিতুক বা পরাজিত হোক না কেন, আগামী দুই বছর সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এ খাতের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করব। আমরা বিশ্বাস করি, একসঙ্গে কাজ করলে আমরা একটি স্মার্ট বিজিএপিএমইএ গড়ে তুলতে পারব। তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে আমি ঐক্য পরিষদের প্যানেল নেতা নই, আমি সব সদস্যের নেতা হিসেবে কাজ করতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’

উল্লেখ্য, তৈরি পোশাক খাতের সংযোজন শিল্প হিসেবে দেশের রপ্তানিতে বার্ষিক প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অবদান রাখে গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প।

ইসমাঈল/

পেঁয়াজ সংরক্ষণে ‘মডেল ঘর’

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১১:৫১ এএম
পেঁয়াজ সংরক্ষণে ‘মডেল ঘর’
ছবি: খবরের কাগজ

পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের মধ্যে প্রসিদ্ধ জেলা রাজবাড়ী। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ রাজবাড়ীতে উৎপাদিত হয়। তবে সঠিক সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। কৃষকদের এই সমস্যা সমাধানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ‘মডেল ঘর’ নির্মাণ করে দিচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজবাড়ী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কালুখালী উপজেলায় ২০টি মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়। চলতি অর্থবছরে বালিয়াকান্দি উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের আরও ৩০টি মডেল ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩০টি ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘরে কৃষকরা পেঁয়াজ রাখা শুরু করেছেন। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট গবেষণা করে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘরের নকশা ডিজাইন করেছে। কৃষকদের বাড়ির উঠানে ১ শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা, কংক্রিটের সমন্বয়ে বানানো এই ঘরে তিন স্তরের মাচা রয়েছে। ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ছয়টি ফ্যান দেওয়া হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা হয়েছে ত্রিপল। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এসব ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে পাঁচজন কৃষক তাদের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন।

বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের করমচাঁদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক লুৎফর রহমানের বাড়ির উঠানের একপাশে মডেল ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরে তিন স্তরে পেঁয়াজ রাখা হয়েছে।

কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি এ বছরও ৬০০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছি। সব পেঁয়াজ একসঙ্গে বিক্রি করা সম্ভব না। এজন্য নিজেদের মতো করে সংরক্ষণ করি। কিন্তু এক দেড় মাস পর থেকেই পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়। আমরা টিনের ঘরে মাচা করে রাখি। টিনের গরমে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই মডেল ঘরও টিনের। এই ঘরে পেঁয়াজ রেখেছি। ঘরে আলো বাতাস প্রবেশ করে। আবার ফ্যানের ব্যবস্থা আছে। এজন্য এখনই বোঝা যাচ্ছে পেঁয়াজ পচবে না।

একই গ্রামের কৃষক আলিমুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের প্রধান অর্থকরি ফসলই পেঁয়াজ। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা নিয়েই চিন্তা। নিজেদের মতো করে রাখি। দেখা যায় ছয় মাস পর ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এই মডেল ঘর দেখতে এসেছি। ইচ্ছা আছে আগামী বছর আমি নিজেই পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘর নির্মাণ করব। আমি কালুখালী উপজেলাতেও খবর নিয়েছি। যারা গত বছর এই ঘরে পেঁয়াজ রেখেছিল তাদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়নি। সাত থেকে আট মাস পেঁয়াজ ভালো ছিল। তবে সরকার যদি  গ্রামে গ্রামে আরও বেশি মডেল ঘর তৈরি করে দেয় তাহলে আমাদের বাইরের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হতো না।’

রাজবাড়ী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা রাজীব খান বলেন, ‘একটি মডেল ঘরে ৩০০ মণ পেঁয়াজ রাখা যাবে। পাঁচজন কৃষকের জন্য একটি ঘর করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য এই ঘর দেখে চাষিরা নিজেরা মডেল ঘর নির্মাণ করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবেন। তাহলে তাদের পেঁয়াজ নষ্ট হবে না। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩০টি ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেখানে কৃষকরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন। বাকি ১৫টি ঘরের কাজ কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হবে। আগামী অর্থবছরে আমরা পাংশা উপজেলায় ৩০টি মডেল ঘর নির্মাণ করব।’

ফরিদপুরে ভুট্টা চাষে ভাগ্য পরিবর্তনের হাতছানি

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
ফরিদপুরে ভুট্টা চাষে ভাগ্য পরিবর্তনের হাতছানি
ফরিদপুরের পদ্মা নদীর চরে ভুট্টা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

ফরিদপুরের সদর, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। আর এই পদ্মা নদীর ওপারে রয়েছে বিস্তীর্ণ চর। এক সময় চরাঞ্চলকে অভিশপ্ত এলাকা ভাবা হতো। এসব চরাঞ্চলে তেমন কোনো ফসল হতো না। শত শত একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। সারা বছর এসব চরাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত থাকত। 

তবে এখন বদলে গেছে চরের মানুষের জীবনযাপনসহ চাষাবাদ পদ্ধতি। বছরজুড়েই এখানে এখন চাষ হয় ভুট্টা, কলাসহ বিভিন্ন ফসল। আর এ ফসল আবাদ করে চাষিরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। 

এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরের মানুষের জীবিকা হলো গরু, ছাগল ও ভেড়া পালন। গো-খাদ্য হিসেবে আগাছা আর ঘাসের ওপর নির্ভর করতেন তারা। তবে পশুর খাবারের চাহিদা মেটাতেই কেউ কেউ ভুট্টার চাষাবাদ শুরু করেন। দেড় যুগ আগেও ভুট্টাগাছকে গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। প্রায় এক দশক ধরে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে এই চিত্র। 

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে জেলায় ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। গত রবি মৌসুমে ৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়। যা থেকে প্রায় ৬৫ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এই আবাদ বেশির ভাগ পদ্মা নদীর চরাঞ্চলকেন্দ্রিক। আর খরিপ-১ মৌসুমে ৪৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও  হয়েছে ২ হাজার হেক্টর জমিতে। 

জেলার চরগুলো এখন বছরের ৩ থেকে ৪ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। তাই বছরের অন্য সময়ে জমি ভেদে এখন দুই থেকে তিনবার ভুট্টার আবাদ হয়ে থাকে। 

সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের কৃষক ছত্তার শেখ জানান, চরে প্রতি হেক্টরে ১০ টনের অধিক ভুট্টা উৎপাদিত হয়। এতে তারা লাভবান হচ্ছেন। কয়েক বছর আগেও প্রতি মণ ভুট্টা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হেক্টর প্রতি খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা হলেও গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার ভুট্টা উৎপাদন হয়ে থাকে। এতে অন্য ফসলের তুলনায় কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। 

একই এলাকার কৃষক সামাদ শেখ বলেন, ‘গত কয়েক বছরে চরের কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা এসব এলাকায় এখন ভুট্টাসহ নানা ফসল আবাদ করে লাভবান হচ্ছি। বছরের বেশির ভাগ সময়ই এসব চরে উঁচু জমিগুলোতে এখন আর পানি জমে থাকে না। যে কারণে আমরা সারা বছর ধরেই ফসল ফলাতে পারি। তবে বেশি লাভবান হচ্ছি ভুট্টা চাষ করে। আগে তেমন দাম না পেলেও এখন ভুট্টা বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছি।’ 

চরের আরেক কৃষক জামাল বলেন, ‘আমরা এক সময় ভুট্টাচাষকে গুরুত্ব দিতাম না, তবে সম্প্রতি ভুট্টার ব্যবহার ও চাহিদার সঙ্গে মূল্য বাড়ায় অনেকেই ভুট্টাচাষ করছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়ছে।’ 

এসব এলাকায় দায়িত্বে থাকা মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক বছরে ভুট্টার নানাবিধ ব্যবহার বেড়েছে। উচ্চ মূল্যের কর্নফ্লেক্স, শিশুখাদ্য, পশুখাদ্য, আটার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া, উন্নত মানের বিস্কুট, ছাতুও তৈরি হচ্ছে। গম বা চাল থেকে অধিক পুষ্টিগুণ-সম্পন্ন উল্লেখ করে তারা জানান, ভুট্টার মধ্যে ১২ শতাংশ প্রোটিন, ৫ শতাংশ তেল, ভিটামিন এ রয়েছে। এ ছাড়া চিনির উপস্থিতি কম থাকার পাশাপাশি এই খাদ্যে আঁশ থাকায় মানব দেহের জন্য উপযোগী। 

এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভুট্টা এমন একটি ফসল যার কোনো অংশই ফেলনা নয়। ভুট্টার গোড়ার অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে, ওপরের সবুজ অংশ গো-খাদ্য আর ভুট্টা মানুষের খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখির খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মা নদীবেষ্টিত ডিক্রিরচর, নর্থচ্যানেল ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। একদিকে রবি মৌসুমের ভুট্টা ঘরে তুলছেন এসব চরের চাষি, আবার অনেকে খরিপ মৌসুমের ফসল আবাদে ব্যস্ত রয়েছেন। 

তিনি আরও জানান, চরে বিপুল পরিমাণ জমি এখনো অনাবাদি রয়েছে। এসব চরের কৃষকদের ভুট্টা আবাদে আগ্রহী করে তুলতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। চরের অনাবাদি জমির একটি বড় অংশকে ভুট্টা চাষের আওতায় আনা গেলে বারোমাসি এই ফসলটি থেকে চরবাসী যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন, তেমনি খাদ্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। 

তবে ভুট্টাচাষিদের দাবি, কিছু ব্যবসায়ী চরে গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে ভুট্টা কিনলেও সেই সংখ্যা কম, তাই বাজারজাত করতে এখনো তাদের সদরে নিয়ে আসতে হয়। এতে তাদের অনেক সময় ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই চরেই ভুট্টার বাজার সৃষ্টি করা গেলে চরের মানুষের মধ্যে ভুট্টা আবাদের আগ্রহ আরও বাড়বে। তাতে চরের মানুষের জীবনমান ঘুরে দাঁড়াবে।

আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি আয়ের নতুন উৎস বর্জ্যতুলা

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১১:৪৫ এএম
আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি আয়ের নতুন উৎস বর্জ্যতুলা
আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে বর্জ্যতুলা। ছবি: খবরের কাগজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বর্জ্যতুলার রপ্তানি বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় বন্দর দিয়ে প্রতিদিনই উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি পাহাড়ি রাজ্যে বর্জ্যতুলা রপ্তানি হচ্ছে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ৩০৭ দশমিক ৬৮টন বর্জ্যতুলা রপ্তানি করা হয়েছে। যা থেকে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৯৩ টাকা রপ্তানি আয় হয়।

স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশন সূত্র জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জানুয়ারিতে ৮৬ দশমিক ৭০ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৮৭ দশমিক ৫৮ টন, মার্চে ৪০ দশমিক ২০ টন ও এপ্রিলে ৯৩ দশমিক ৩৮ টন বর্জ্যতুলা রপ্তানি করা হয়েছে।

প্রায় শতভাগ রপ্তানিমুখী আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ছোট-বড় মাছ, শুঁটকি, প্রক্রিয়াজাত পাথর, প্লাস্টিকসামগ্রী, ভোজ্যতেল, সিমেন্ট, বর্জ্যতুলাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এক সময় রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ পণ্যই ছিল পাথর ও মাছ। সম্প্রতি ত্রিপুরার সঙ্গে ভারতের অন্য রাজ্যগুলোর রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় তারা সহজেই এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারছে। ফলে এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৯০ ভাগ পাথর রপ্তানি কমে গেছে। এতে অনেকটা বেকার হয়ে পড়েন অনেক আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীসহ বন্দরের শ্রমিকরা। বর্জ্যতুলাসহ নতুন কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ায় এখন আশার আলো দেখছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী রাজীব ভূঁইয়া জানান, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন পোশাক শিল্পকারখানা থেকে বর্জ্য তুলা এনে এ বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি করা হয়। মূলত বন্দরের চার-পাঁচজন ব্যবসায়ী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বর্জ্যতুলা দিয়ে সেখানে লেপ-তোশকসহ বিভিন্ন যানবাহনের গদি তৈরি করা হয়। দাম কম হওয়ায় দিন দিন এ তুলার চাহিদা বাড়ছে।

বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতের ত্রিপুরাসহ পাহাড়ি রাজ্যগুলোতে কাঁচা তুলার চেয়ে বর্জ্যতুলার ব্যবহার বেড়েছে। সেখানে লেপ, তোশক বানানোসহ বিভিন্ন কাপড় তৈরির কারখানায় এই বর্জ্য তুলা ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া বর্জ্যতুলার সঙ্গে নতুন তুলা মিশিয়ে সুতাও তৈরি করা হয়। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বর্জ্যতুলা ভাগাড়ে না ফেলে সেগুলো পুনর্ব্যবহার বা রপ্তানি করলে অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো।

স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব বলেন, টেক্সটাইল শিল্পের বর্জ্যকে প্রথমে সংগ্রহ করা হয়। পরে রি-সাইক্লিংয়ের মাধ্যমে এই বর্জ্যকে তুলায় রূপান্তর করা হয়। ঢাকা নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানা থেকে বর্জ্যতুলা কিনে এনে এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি করা হয়। দাম ও চাহিদা থাকায় গড়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় গাড়ি বর্জ্যতুলা এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হচ্ছে। 

আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও কাস্টমসের পরিদর্শক আবদুল কাইয়ুম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বন্দরে রপ্তানি আয়ের নতুন উৎস এ বর্জ্যতুলা। অন্য রাজ্যের তুলনায় ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি রাজ্যগুলোর মানুষ কিছুটা পিছিয়ে থাকায় সেখানে শিমুল তুলার পরিবর্তে বর্জ্যতুলা বেশি ব্যবহার করা হয়। চাহিদা থাকায় অন্য পণ্যের সঙ্গে বর্জ্যতুলাও এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হচ্ছে।

সমুদ্রপথে জীবন্ত ভেড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করছে অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১১:৩২ এএম
সমুদ্রপথে জীবন্ত ভেড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করছে অস্ট্রেলিয়া
প্রাণী কল্যাণ আইনজীবীদের বিরোধিতার মুখে সমুদ্রপথে ভেড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করবে অস্ট্রেলিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রপথে ভেড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। শনিবার (১১ মে) অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলেছে, দেশটি ২০২৮ সালের মে থেকে সমুদ্রপথে জীবিত ভেড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করবে। প্রাণী কল্যাণ আইনজীবীদের বিরোধিতার মুখে দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ভেড়া রপ্তানির চর্চার ইতি টানার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চাইছে দেশটি। খবর রয়টার্স ও ওয়ান নিউজের।

গতকাল এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার কৃষিমন্ত্রী মারে ওয়াট বলেন, ‘আমরা তারিখটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ভেড়া উৎপাদক ও সরবরাহ চেইনকে নিশ্চিত করে জানিয়ে দিয়েছি।’

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ঘোষণাটিকে অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে বিতর্কিত অনুশীলনকে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের একটি ভালো প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। যদিও খামারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গোষ্ঠীগুলো বলছে, এই পদক্ষেপটি লোকেদের কর্মহীন করবে এবং কৃষি সম্প্রদায়কে ধ্বংস করবে।

তবে জীবন্ত ভেড়া রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রণোদনা দেবে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। দেশটির কৃষিমন্ত্রী ওয়াট বলেন, শিল্পের বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভেড়া চাষিসহ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল লোকদের সহায়তার জন্য একটি ট্রানজিশন প্যাকেজ হিসেবে পাঁচ বছরের মধ্যে ১০ কোটি ৭০ লাখ (১০৭ মিলিয়ন) অস্ট্রেলীয় ডলার দেওয়া হবে।

কৃষিমন্ত্রী ওয়াট আরও বলেন, ‘মানুষ যেন এখনই পরিকল্পনা করতে এবং পদক্ষেপ নিতে শুরু করতে পারে সে জন্য আমরা এখনই তাদের সহায়তা দিচ্ছি।’ ওয়াট বলেন, ফেডারেল পার্লামেন্টের বর্তমান মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হবে।

খবরে বলা হয়, ‘ফেজ আউট’ কর্মসূচি অন্যান্য গবাদিপশু রপ্তানি শিল্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ জীবিত গবাদিপশু রপ্তানি কিংবা আকাশপথে জীবিত ভেড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। প্রসঙ্গত, ‘ফেজ আউট’ বলতে কোনো কাজ ‘ক্রমেই বন্ধ করা’ বা ‘ধাপে ধাপে বন্ধ করা’ বোঝায়।

কৃষকদের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল ফারমার্স ফেডারেশন (এনএফএফ) বলেছে, সংগঠনের সদস্যরা ফেজ-আউট কর্মসূচি কার্যকরের সময়সীমা দেখে হতবাক হয়েছেন।

এনএফএফের বরাত দিয়ে নিউজিল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়ান নিউজের খবরে বলা হয়, সমুদ্রপথে জীবন্ত ভেড়া রপ্তানির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করবে এনএফএফ এবং সরকারকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানাবে। কারণ এনএফএফ মনে করে, এই সিদ্ধান্ত অস্ট্রেলিয়ার কৃষিশিল্পের জন্য বিধ্বংসী হবে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ঝুঁকি তৈরি করবে। 

সংগঠনটির যুক্তি হলো, এই সিদ্ধান্ত পশু কল্যাণের পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি করবে না, বরং এই আইন কার্যকর হলে অস্ট্রেলিয়ার বাইরে অন্য দেশগুলোতে আরও নিম্নমানের পশু পালন করা একটা প্রথায় পরিণত হবে। এসব কারণে এনএফএফ সরকারকে সমুদ্রপথে ভেড়া রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার এবং এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য কৃষকদের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

এনএফএফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টনি মাহার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কৃষিমন্ত্রী মারে ওয়াট আমাদের দুর্যোগের জন্য ভেড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে এক্সপ্রেস ট্রেন বুক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

খবরে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার জীবন্ত ভেড়ার ব্যবসা দেশটির বিশাল পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজ্যগুলোতে কেন্দ্রীভূত। অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৯০-এর দশক ও ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ ভেড়া রপ্তানি করত দেশটি। কিন্তু সেই সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে এসেছে। গত বছর অস্ট্রেলিয়া ৬ লাখ ৮৪ হাজার ভেড়া রপ্তানি করেছে, যার মূল্য প্রায় ৫ কোটি মার্কিন ডলার।

বেশির ভাগ ভেড়া মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয়। কারণ এটি অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় দুই সপ্তাহের গন্তব্য। তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান রপ্তানি গন্তব্য কুয়েত, ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

রয়টার্স জানায়, প্রাণী অধিকার গোষ্ঠীগুলো বছরের পর বছর অস্ট্রেলিয়া থেকে জীবন্ত ভেড়ার এই চালানগুলো বন্ধ করার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে প্রচণ্ড গরমে ২ হাজার ৪০০টি ভেড়া মারা যাওয়ার ঘটনায় জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে সরকার। এ সময় তারা আরও কঠোর পশু কল্যাণ মানদণ্ডের দাবি জানায়।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রায় ১৪ হাজার ভেড়া এবং ২ হাজার গবাদিপশু বহনকারী একটি জাহাজ ইসরায়েলের উদ্দেশে যাত্রা করে প্রচণ্ড গরমের কারণে অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে আটকা পড়েছিল। তখন লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে তারা সে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল, যার ফলে প্রাণী কল্যাণের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের মাঝে নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।