![বিমাশিল্পে আস্থা বাড়াতে উদ্যোগ নিন](uploads/2024/03/19/1710824980.Editorial.gif)
কদিন আগে বেশ ঘটা করে সম্পন্ন হলো বিমা খাতের জাতীয় দিবস। এটা অবশ্যই সম্মানের; সেই সঙ্গে মর্যাদারও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহেলিত বিমাশিল্পকে এই মর্যাদার পালক পরিয়েছেন। এতে বিমা খাতে সাধারণ মানুষের আস্থা তৈরি হবে আশা করা যায়। এই দিবসকে কেন্দ্র করে বিমা কোম্পানিগুলো নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে; যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য সুরক্ষায় বিমা খাত কাজ করছে অতন্দ্র প্রহরির মতো। লাইফ ও নন-লাইফ খাতের বিমার মাধ্যমে প্রিমিয়াম দেশের অর্থনীতিতে মূলধন জোগান দিচ্ছে। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমানে দেশে জীবন এবং সাধারণ মিলে ৭৯টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বিমাশিল্পের অবস্থান অনেক নিচে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ জীবন বিমার সুফল ভোগ করতে পারছে না এর আওতায় না আসার কারণে। ফলে প্রিমিয়াম আয় কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি। জিডিপিতে এই খাতের অবদান দশমিক ৫০ শতাংশও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে জিডিপিতে বিমার প্রিমিয়াম হার ৫ শতাংশের বেশি। উন্নত দেশের নাগরিকরা উন্নত বিমাসেবা ভোগ করতে পারে, যা আমাদের দেশে এখনো চালু হয়নি। অভিযোগ আছে, আমাদের বিমাশিল্পের বিশেষ করে নন-লাইফে বড় সমস্যা হলো অর্থনৈতিকভাবে প্রিমিয়াম আয় থেকে বাড়তি কমিশন নেওয়া। মধ্যস্বত্বভোগীরা এ কমিশন নেয়।
কমিশন ব্যবসার অতি লোভ একটি বড় অনৈতিক চর্চা। আমাদের দেশে বিমা কোম্পানিগুলো নিজেদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও অর্থ লোপাটের কারণে সময়মতো গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে না পারায় বিমা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকাসুরেন্স এ সময়ের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিমা কোম্পানির ওপর আস্থার সংকট থাকলেও ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা নেই। ব্যাংক গ্রাহকদের একটি বড় অংশ বিমার বাইরে রয়েছে। এদের কাছে বিমা এজেন্টরা পৌঁছাতে পারে না। সুতরাং প্রতিটি ব্যাংক কর্মকর্তা তার গ্রাহককে বিমা পলিসি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে। এখানে প্রিমিয়াম আয় বকেয়া পড়ার সম্ভাবনা নেই। বিমা খাতে সম্ভাবনা অনেক। বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক নীতিমালা ও সরকারের সহযোগিতা পেলে বিমাশিল্পের সম্মিলিতভাবে অর্জিত ১৫ হাজার কোটি টাকায় প্রিমিয়াম আয় তিন গুণ হতে পারে।
পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, জীবনের গতি যত বৃদ্ধি হচ্ছে দুর্ঘটনা তত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকিও। অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির হাত থেকে মানুষকে আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিমার প্রসার জরুরি। এই খাত যত উন্নত হবে দেশের অর্থনীতি তত মজবুত হবে।
বাংলাদেশের জীবন বিমায় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন। এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য ও কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে হলে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির ব্যবস্থা নিতে হবে। বিমা কোম্পানি ও ব্যাংকের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ জরুরি। বিমা কোম্পানিকে নিয়মিত তদারকির আওতায় আনতে হবে। ভালো কাজের পুরস্কার এবং মন্দ কাজের তিরস্কারের ব্যবস্থা থাকলে এই শিল্পের যথার্থ বিকাশ সম্ভব হবে। অনৈতিক চর্চা নিরসনে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে একটি কার্যকর নীতিমালা তৈরি করে তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।