ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

প্রলোভনে পড়ে অথবা ভাগ্য বদলের জন্য নানা উপায়ে বিদেশে যান দেশের হাজারও তরুণ। ধারদেনা করে জোগাড় করেন টাকা। অনেকে বিক্রি করেছেন নিজের ভিটেমাটি। বিদেশে গিয়ে অনেকে নির্যাতন ও প্রতারণা শিকার হচ্ছেন। এরই মধ্যে নিঃস্ব  হয়ে ফিরেছেন ৩ হাজার নারী। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানব পাচার একটি পুরোনো বিষয় হলেও সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়। ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়া, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে সেই ভিডিও ও ছবি পরিবারকে পাঠিয়ে বিপুল টাকা আদায় করছে মানব পাচার সিন্ডিকেট। বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব না হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি। 

প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মানব পাচারের হালচাল নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের প্রতিবেদনেও মানব পাচার নির্মূল প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অগ্রগতি নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, বাংলাদেশের আদালত বেশির ভাগ পাচারকারীর কারাদণ্ডের পরিবর্তে জরিমানা করেন। এটি মানব পাচার প্রতিরোধকে দুর্বল করে এবং পাচারের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নিরাপত্তার উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

গত দুই বছরে বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড  হলেও নির্যাতন ও প্রতারণার কারণে কমেছে নারীর কর্মসংস্থান। ২০২৩ সালে বিদেশে মোট কর্মী গেছেন ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে নারীকর্মী গেছেন ৭৭ হাজার ২৬৩। সচেতনতার অভাব, দালালের মিথ্যা প্রলোভন ও দক্ষতার অভাবে নারীরা নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সৌদিতে নারীকর্মী পাঠানোর আগে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সেই নিয়ম। ফলে প্রতিবছর অনেক নারী দেশে ফিরে নির্যাতন-নিপীড়নসহ নানা অভিযোগ করছেন।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক বলছে, সরকারি চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগান ও ইরানিরা। বহুদিন ধরে তারা মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে তুলেছে একটি চক্র। তারা শুরুতে কাউকে টাকা ছাড়াই, কাউকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আবার কাউকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। যারা কম টাকা দিতে চায় তাদের আকর্ষণীয় শর্ত দিয়ে বলা হয়, গন্তব্যে পৌঁছে বার্ষিক ২ থেকে ৩ লাখ টাকা কাজ করে পরিশোধ করতে হবে। এই চক্রের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। লিবিয়া, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের জঙ্গলে এবং শহর ও গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় তাদের ভাড়া বাসা আছে, যেগুলো টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখান থেকে ছাড়া পেতে আটক ব্যক্তির স্বজনদের দেশে দিতে হয় লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ। মুক্তিপণের টাকা না দিলে হত্যা করে লাশ পুঁতে ফেলা হবে বলে বারবার হুমকি দেওয়া হয়।

সরকার ২০১২ সালে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন করে। এই আইনে ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬ হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দেখা গেছে, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ পাচারের শিকার। এতে মোট আসামির সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এসব মামলার প্রায় সব কটি বছরের পর বছর ঝুলে আছে। সাজা হয়েছে ১ শতাংশেরও কম মামলায়। সেই সাজাও দৃষ্টান্তমূলক হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য তানিয়া হক খবরের কাগজকে বলেন, দেশের মানুষ সচেতন নয়, আবার আইনও মানতে চায় না। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কীভাবে কম টাকায় বিদেশে যাওয়া যায় সেই সুযোগ খোঁজে। ফলে অবধারিতভাবে ট্র্যাপে পড়ে। এই সংখ্যাও কম নয়। এজন্য সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

মানব পাচার মোকাবিলায় মানবাধিকার এবং সব মানুষের মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষার ভিত্তিতে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। 

দেশের সব কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করুন

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:১০ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:১০ এএম
দেশের সব কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করুন

নরসিংদী জেলা কারাগারের নাশকতা ভাবিয়ে তুলেছে দেশের মানুষকে। এ হামলা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কারাগারে হামলা, ভাঙচুর, আগুন দেওয়া, ফটক ভেঙে বন্দি পালানো ও লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে কারাগারের গুরুত্বপূর্ণ সব নথি। সূত্রমতে, দেশের ইতিহাসে এর আগে এমনভাবে কোনো কারাগার থেকে সব আসামি পালানো ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। ৪৬টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। 

এটি রীতিমতো উৎকণ্ঠার বিষয়। এ ঘটনা পরিকল্পিত ছাড়া কিছুই হতে পারে না। এই কারাগারে দুর্ধর্ষ ৯ জন জঙ্গি আসামি ছিল। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিচার বিভাগীয় দুটি তদন্ত কমিটি। 

ইতোমধ্যে নরসিংদী কারাগারের জেল সুপার, জেলারসহ সেখানে দায়িত্বরত সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কারাগারে এখন দায়িত্ব পালন করছেন একজন জেল সুপার ও দুজন ডেপুটি জেলার। কারাগারের সব নথি পুড়ে যাওয়ায় আসামিদের ডিজিটাল যে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়েছে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। 

অগ্নিকাণ্ডের ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে নরসিংদীর কারাগারটি। সংস্কারের কাজ চলছে। নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে পারলে প্রতিটির জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন আইজিপি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হয়। এতে বলা হয়, যেসব কয়েদি আত্মসর্পণ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র লুট, ভাঙচুরসহ কারাগারে হামলার দায়ে মামলা করা হবে।

হামলার বর্ণনা দিয়ে জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় আমরা তাকাতে পারছিলাম না। তখন আমরা গেটে ছিলাম, সবাই দায়িত্ব নিয়েই কাজ করছিলাম। এর মধ্যে জেলখানায় প্রবেশের প্রথম গেট ও বাসাবাড়ির গেট ভেঙে হামলাকারীরা ভেতরে ঢোকে। 

একপর্যায়ে তারা দেশি অস্ত্র ও হামার দিয়ে দ্বিতীয় গেট ভাঙে। এ সময় চায়নিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে তারা কোপানো শুরু করে। তা ছাড়া লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। এতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। আমরা বন্দিদের আটকাতে অনেক চেষ্টা করি, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। হামলাকারীরা কারাগারে ভাঙচুর করে, আগুন দেয় এবং অস্ত্র, বুলেটসহ কয়েদিদের খাবার চাল-ডাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক পুলিশের কোনো সহায়তা পাইনি আমরা।’

কারা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, গত চার দিনে পলাতক ৮২৬ বন্দির মধ্যে ৪৬৮ জন আত্মসমর্পণ করেছেন বা থানা-পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন। লুট হওয়া ৮৫ অস্ত্রের মধ্যে ৩৯টি, ১ হাজার গুলি ও অনেক হাতকড়া উদ্ধার করা হয়েছে। নাশকতার ঘটনায় কারাগারের ১১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, নরসিংদী কারাগার ভেঙে ৮২৬ জন আসামি পালিয়ে যাওয়া এবং তার মধ্যে ৯ জন জঙ্গি বের হয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। ইতোমধ্যে দুজন নারী জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে। জেলখানায় কমপক্ষে দুটি গেট থাকে। সেই গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করা খুবই কঠিন কাজ। 

ধারণা করছি, জেলখানার মূল গেট খোলা ছিল। কী কারণে গেট খোলা ছিল তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে। জেলখানার গেট খোলা ছিল বলেই দুষ্কৃতকারীরা ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হয়েছে। কয়েদিরাও সহযোগিতা করেছেন। কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল দেশের জন্য। 

এদের যদি পুনরায় গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে তা হবে দেশ ও জননিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি। তারা এখন দেশে অন্য কোনো নাশকতা তৈরি করে কি না তা দেখতে হবে। গোয়েন্দাসহ সব বাহিনীকে একযোগে এদের গ্রেপ্তারে কাজ করতে হবে। তা না হলে এরা দেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

চলমান পরিস্থিতিতে দেশের সব কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কারাগারে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঠেকাতে সরকারকে কঠোর নরজদারি বাড়াতে হবে। যেসব জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ কয়েদি অস্ত্র, গোলাবারুদসহ পালিয়েছে, তাদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। 

জঙ্গিরা পালিয়েছে, তারা যাতে নাশকতার পরিকল্পনা না করতে পারে সে জন্য দ্রুত তাদের গ্রেপ্তারে তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনসাধারণও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। সর্বোপরি দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকার জোরালো ভূমিকা পালন করবে, সেটিই প্রত্যাশা।

আঘাত সামলে এগিয়ে যেতে হবে

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
আঘাত সামলে এগিয়ে যেতে হবে

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংসতায় দেশজুড়ে অর্থনীতির চাকা প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় ইন্টারনেট সেবা। এর ফলে সংকটে থাকা অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত এসেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অচলাবস্থায় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে, তার সাময়িক হিসাব করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট‌(র‌্যাপিড)। 

সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, অচলাবস্থার সময় দেশের অর্থনীতিতে দৈনিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬০ কোটি ডলার বা ৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ছয় দিনে মোট আর্থিক ক্ষতি ৪২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিঃসন্দেহে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বন্দরে কাজ হয়নি। সারা দেশে পরিবহনব্যবস্থা বন্ধ ছিল। শ্রমিকরা কাজে উপস্থিত হতে পারেননি। সবকিছু মিলিয়ে অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের আঘাত এসেছে। এই ক্ষতি সহজেই পূরণ হওয়ার নয়।

রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাকশিল্প। মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশ আয় এই খাত থেকে আসে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই খাত। পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এরই মধ্যে জানিয়েছে, তাদের প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে গত ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

উদ্যোক্তারা বলেছেন, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যেখানে আমাদের স্থিতিশীল একটি পরিবেশ দরকার ছিল, সেখানেই বড় ধাক্কাটি লেগেছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থনীতিতে নতুন করে আরেক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

তাদের মতে, এই মুহূর্তে বেশি দরকার দেশের স্থিতিশীলতা। গত কয়েক দিনে দেশজুড়ে যে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরবরাহব্যবস্থা। এ কারণে সব ধরনের ব্যবসা ও শিল্পকারখানা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথ্যমতে, সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কারণে গত ছয় দিনে তাদের ১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

বর্তমানে মানুষের জীবনযাপনের একটি বড় অংশ ই-কমার্সের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট না থাকায় এটিও বন্ধ রয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ছয় দিনে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট না থাকায় পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম যেমন চলছে না, তেমনি ফ্রিল্যান্সিংও প্রায় বন্ধ। 

দেশে সাড়ে ৬ থেকে ৭ লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের কাজও থমকে আছে। এতে তাদের ১৩-১৪ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। সহিংসতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে স্টিল, সিরামিক ও সিমেন্ট খাত। পুঁজিবাজারও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কর অফিস ও ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকায় আয়করও আদায় হচ্ছে না।

সারা দেশে সাধারণ ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় চেক ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন অগণিত মানুষ। সহিংস আন্দোলনের সময় ইন্টারনেটসহ সবকিছু বন্ধ থাকায় দেশের প্রধান ও বৃহৎ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। 

সহিংসতায় সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু বিভাগের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সহিংসতায় বিদ্যুৎ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। চলমান পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিঃসন্দেহে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। কারফিউর কারণে শ্রমিকরা ঠিকমতো কর্মস্থলে যেতে পারেননি। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। দেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে ক্ষতি হয়ে গেছে এটা সহজে মেটানো যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার তার কার্যালয়ে সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, তার একটা ধারণা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসতে পারে।

নাশকতাকারীদের আগুন ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার রাজধানীর সরকারি স্থাপনাগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলের সেবা থেকে রাজধানীবাসী বঞ্চিত হচ্ছে। এতে রাজধানীতে যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে। 

অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সঠিক কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। কারফিউ তুলে নিয়ে দ্রুত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার উদ্যোগী হবে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে সব আঘাত সামলে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, অচিরেই সব কালো মেঘ কেটে যাবে। অগ্রগামী বাংলাদেশ আরও উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে, সেটাই প্রত্যাশা।

শঙ্কা কাটিয়ে ফিরছে স্বস্তি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ এএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ এএম
শঙ্কা কাটিয়ে ফিরছে স্বস্তি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন

গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলন ও সহিংসতার পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশ। কারফিউ শিথিল এবং অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা চালুর মধ্য দিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক রূপে ফিরছে জনজীবন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চলাচল আগের তুলনায় অনেক বেশি। পরিবহনের সংখ্যাও ছিল অনেক। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর অবস্থান ও টহলের ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। 

রাজধানীর বাইরেও একই ধারায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পোশাক কারখানা খুলেছে। এতে উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে কিছু শিল্পকারখানায়। শিল্পকারখানা খুলে দেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন ব্যবসায়ীরা। ইন্টারনেট সংযোগও সীমিত আকারে চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় বিভিন্ন জেলা ও মিল থেকে রাজধানী ঢাকায় ডিম, মুরগি, সবজি, চিনি, আটা, তেলসহ অন্যান্য পণ্যভর্তি ট্রাক আসতে শুরু করেছে। তার পরও সরবরাহ-সংকট কাটেনি। নিত্যপণ্যের বাজার এখনো চড়া। গত কয়েক দিনের সহিংসতায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। করোনার ধাক্কায় অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় চলমান অনিশ্চয়তা উচ্চ মূল্যস্ফীতি তথা অর্থনীতিতে নতুন করে সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বিপাকে পড়েছে গরিব, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিন টিসিবির কার্ডধারী ১ কোটি পরিবার ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ মানুষের ওপর খড়্গ নেমে আসে। সংসার চালানো তখন দায় হয়ে যায়। নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ অস্বাভাবিক চাপে পড়েছে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায়।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম রাজধানীর বাজার ঘুরে পণ্যের দাম ও সরবরাহের খোঁজ নেন। তিনি জানান, কারফিউর মধ্যেও পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের মতো পচনশীল পণ্যের সরবরাহে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে, সে জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ফলে সরবরাহ নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হবে না বলে আশা করেন তিনি।

এক বছর ধরে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। মানুষের আয় বাড়ছে না। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা অর্থবছরের সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। যা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ বলা যায়। অন্যদিকে জাতীয় মজুরির হার বৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশের মতো। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় নতুন রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ায় এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

এসব বিষয় সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে নতুন করে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করেছে। তথ্যমতে, এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় প্রতিদিন দেশের ক্ষতি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। স্থানীয় মুদ্রার যা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। গত আট দিন প্রায় অচলাবস্থা থাকায় দেশের অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রায় অচল ছিল। এতে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে অর্থনীতিতে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সঠিক কর্মকৌশল ও নীতি গ্রহণ করবেন। চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটিই প্রত্যাশা।

কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষার্থীদের দাবিই পূরণ হলো

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম
কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষার্থীদের দাবিই পূরণ হলো

সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ১ শতাংশ ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য রাখা হয়েছে। ৯ম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই কোটাব্যবস্থা কার্যকর হবে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল (রদ ও রহিত) করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। নারী ও জেলা কোটা বাদ দেওয়া হয়েছে। চাকরিতে নারীদের জন্য কোটা না থাকলে বৈষম্য আরও বাড়বে বলে মনে করছেন দেশের বিভিন্ন নাগরিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, গবেষক ও শিক্ষাবিদরা। তারা মনে করেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোর (এসডিজি) একটি হলো নারী-পুরুষের সমতা। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নারী কোটা অবশ্যই প্রয়োজন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কর্মচারী কর্মরত। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৯ হাজার ৬৮। আর পুরুষ ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫০ জন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অনেকে। বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের এই সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। দেশের চলমান সংকটময় মুহূর্তে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে রায়ের প্রজ্ঞাপন পড়ে শোনান। প্রজ্ঞাপনের আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের যে রায় সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ দিয়েছেন, সরকার তা প্রতিপালন করেছে। সব ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে সরকার দেখভাল করবে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মামলাও সরকার দেখবে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং সব ছাত্রছাত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ সরকার নিশ্চিত করবে। সরকার ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট সজাগ। কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল। সরকার তা পূরণ করেছে। অতএব, শিক্ষার্থীদের কর্তব্য তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়া। সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় দিয়েছেন।’

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা ঢোকানোর পরিকল্পনা অপশক্তির আগে থেকেই ছিল। ডেটা সেন্টার জ্বালিয়ে দিয়ে ইন্টারনেট থেকে দেশকে বিচ্ছিন্ন করেছে তারা। সারা বিশ্বে তারা একটা ভুল বার্তা পৌঁছে দিয়েছে এই সুযোগে। তিনি গণমাধ্যমকে ঘটনার সঠিক তথ্য তুলে ধরার অনুরোধ জানান।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে দেশে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় স্থগিত করতে হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষা। এরই মধ্যে তিন শতাধিক পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। একাডেমিক, পাবলিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও পেছাতে হচ্ছে। ফলে পরীক্ষায় জট তৈরির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে হবে। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ সুনিশ্চিত করবে। দ্রুত ইন্টারনেট সেবা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। কারফিউ তুলে দিয়ে জনজীবনের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা নাশকতা, সহিংসতা ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

নাশকতাকারীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৪, ১০:০০ এএম
আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪, ১০:০০ এএম
নাশকতাকারীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন। এতে করে কোটাসংক্রান্ত জটিলতা অনেকটাই অবসানের পথে। ইতোমধ্যেই আপিল বিভাগের রায়ে স্বাক্ষর করেছেন সাত বিচারপতি। রায়ের কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, গতকাল কোটা সংস্কারসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেছেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো অনেকটা উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। 

ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে সহিংসতার পথ বেছে নেয় রাজনৈতিক কুচক্রী মহল। তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ অফিস, স্থাপনা ধ্বংস করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করেছে। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন আর শান্তিপূর্ণ থাকেনি। সেতু ভবনের ৫৫টি গাড়ি পুড়ে কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিআরটিএ ভবনে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। দুর্যোগ ভবনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। মিরপুর বিআরটিএ অফিসের ১২১ কোটি টাকার ডিআইসি ধ্বংস করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নথি। গান পাউডার দিয়ে এমনভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে, যা দেখে বোঝাই যাচ্ছে এটা শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এতে অবশ্যই দক্ষ ও পেশাদার লোক জড়িত। 

বীভৎস তাণ্ডবে তছনছ বিভিন্ন ভবন। মেট্রোরেলের দুই স্টেশনে কেবলই ধ্বংসের চিত্র। নাশকতার এসব ধকল কাটাতে এক বছর লাগবে বলে জানিয়েছেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় এমন ভয়ানক নাশকতার তাণ্ডব, সেই সঙ্গে সমানতালে চলেছে লুটপাট। সভ্যসমাজে কখনো এটি আশা করা যায় না। নরসিংদীর কারাগার থেকে ৮২৬ জন কয়েদি পালিয়েছে। এর মধ্যে ৯জন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। ৭জন আনসার উল্লাহ বাংলা বাহিনীর এবং ২জন নারী জেএমবির সদস্য। এদিকে দুর্বৃত্তদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কারাগারটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কারাগার থেকে বের হওয়া জঙ্গিরাও সারা দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। অনেকে অস্ত্র ও গুলিসহ পালিয়েছে। তারাও দেশে বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে। অবিলম্বে এসব অস্ত্র উদ্ধার ও কয়েদিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সহিংসতা ও নাশকতাকারীদের ধরতে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ডিএমপি। পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র সরকার উৎখাত করতে এ ধরনের নাশকতামূলক কাজ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ঢাকাসহ সারা দেশে গতকালও সহিংসতা হয়েছে। এতে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৫ শতাধিক। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৯৩ জন। ইতোমধ্যে বহু প্রাণ ঝরে গেছে। দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ এখনো সুবিধাজনক মনে করছে না সরকার। এ জন্য সরকারের মধ্যে অস্বস্তি রয়ে গেছে। সরকার মনে করছে, এতদিন ধরে চলা সহিংসতায় বিএনপি ও জামায়াত সরাসরি জড়িত।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে কোনো কিছু স্পষ্ট করেনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা আন্দোলন বন্ধ রাখবে নাকি চালিয়ে যাবে, তা জানা যায়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। 

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, কারফিউ বলবৎ থাকলে সাধারণ ছুটিও বাড়তে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে।

সারা দেশে জনমনে চরম অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। স্বাভাবিক জনজীবন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। একটি বিশেষ পরিস্থিতি চললেও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, দেশের পরিবেশ বিনষ্টকারী ও নাশকতাকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সব বিষয়ে সতর্ক থেকে কাজ করছি। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য। 

যারা নাশকতা সৃষ্টি করছে এবং জানমালের নিরাপত্তার জন্য যারা হুমকিস্বরূপ তাদের যেকোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে সব ইন্টারনেট সেবা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে কারফিউ তুলে নিতে হবে। জনজীবনের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসুক সেটিই প্রত্যাশা।