ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

সেখ জুয়েল এখন বিধান মল্লিক, এই তথ্য ভুয়া

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম
আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম
সেখ জুয়েল এখন বিধান মল্লিক, এই তথ্য ভুয়া
ছবি কৃতজ্ঞতা: রিউমর স্ক্যানার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ভারতে আশ্রয় নিয়ে বিধান মল্লিক নাম ধারণ করে আধার কার্ড করে সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন এমন দাবি করে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে যে খবর প্রচারিত হয়েছে তা ভুয়া বলে চিহ্নিত করেছে তথ্য যাচাইকারী সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই খবরটি খুব ভাইরাল হতে দেখা গেছে। দাবি করা হচ্ছে, সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল আধার কার্ডে তার নাম দিয়েছেন বিধান মল্লিক। বাবার নাম দিয়েছেন মুদিন্দ্রনাথ মল্লিক। 

রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধান করে দেখেছে, সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের ভারতীয় আধার কার্ড দাবিতে প্রচারিত তথ্য সঠিক নয়। একাধিক উপায়ে কথিত আধার কার্ডটি ভুয়া।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কথিত আধার কার্ডটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার। কার্ডটির বাম দিকে সেখ জুয়েলের একটি ছবি রয়েছে। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় জুয়েলের নাম ‘বিধান মল্লিক’ লেখা রয়েছে। একই ভাবে পিতার নাম ‘মুদিন্দ্রনাথ মল্লিক’ লেখা রয়েছে। জন্মতারিখ দেওয়া হয়েছে ১ জানুয়ারি ১৯৫৯। আধার কার্ড নম্বর দেওয়া হয়েছে ৮৪৪২০৫৬৭৫৭২৬। কার্ডটির ডানে একটি কিউআর কোড বসানো রয়েছে।  

এই আধার কার্ডের নম্বরটি রিউমর স্ক্যানার এ সংক্রান্ত সরকারি অ্যাপে যাচাই করে দেখেছে। ভারতীয় একাধিক ফ্যাক্টচেকারের সহায়তায় যাচাই করে এই নম্বরের বিপরীতে কোনো ব্যক্তির তথ্য ডাটাবেজে পাওয়া যায়নি৷ এ থেকে বুঝা যায়, এটি ভুয়া আধার কার্ড।

আধার হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সনাক্তকরণ টুল। এটি অনেকটা বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন সনদের মতো। 

এ প্রসঙ্গে রিউমর স্ক্যানার ভারতীয় একজন ফ্যাক্টচেকারের কাছে আধারে পিতার নাম সামনে থাকা বা না থাকা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল ফরমেট একই। অনেকের ক্ষেত্রে যেমন আড্রেসে বাবার নাম (কার্ডের পেছনের অংশে) আছে তাই সামনে বাবার নাম লেখা নেই।’

তিনি জানান, ‘দুই রকম কার্ড হয়। একটা এ রকম। আধার কার্ড তৈরি হওয়ার পর প্রথমে সাধারণ একটা বড় মোটা কাগজে এ রকম প্রিন্ট করে দেয়। আর আপনি যদি পার্মানেন্ট একটু ভালো কোয়ালিটির কার্ড চান তাহলে বেশি টাকা খরচা করে এপ্লাই করলে এ রকম Polyvinyl Chloride card দেয়।’

রাজ্যভেদে আধার কার্ডের ডিজাইনে ভিন্নতা আছে জানিয়ে ভারতীয় এই ফ্যাক্টচেকার বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে (আধার) তৈরি হয়েছে। রাজ্যভিত্তিক ছোট বড় কিছু পরিবর্তন থাকবে। তবে মূল ফরমেট সেম। সেটা হলো সামনে ছবি, নাম, ডেট অব বার্থ, আর আধার নম্বর। পেছনে ঠিকানা আর আধার নম্বর। কোনো ক্ষেত্রে কিউআর কোড সামনে কোথাও পিছনে। আর হ্যাঁ, যেই রাজ্যের প্রধান ভাষা যেটা সেটাই প্রথম ভাষা হিসেবে এই কার্ডে ব্যবহার হয়। দ্বিতীয়টা সব সময় ইংরেজি।’

ভুয়া আধার কার্ড দিয়ে কী ধরণের কাজ করা যাবে? এমন প্রশ্নে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকার রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘ভারতে জাল আধার কার্ড প্রচুর তৈরি হয়। জাল আধার কার্ড দিয়ে হোটেলে চেক ইন করে নিতে পারে। কারণ এসব জায়গায় খালি কার্ড ফটোকপি বানিয়ে রেখে দেয়। তবে সিম নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। কারণ এ ধরনের কাজ করতে গেলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করাতে হয়, ওটিপি যায় ফোনে। আধার কার্ড তৈরির সময় ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়, মোবাইল রেজিস্টার হয়। সেখানেই OTP যায়। তবে সেটাও ক্ষেত্রবিশেষে জাল হয়।’

তবে সেখ জুয়েলের ক্ষেত্রে ডেটাবেজে তার পরিচয়ের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি। তাছাড়া এই কার্ডে পিতার নামটিও (মুদিন্দ্রনাথ মল্লিক) সন্দেহের উদ্রেক করে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামের সঙ্গে মিল রেখে ভুয়া এই কার্ডে সমজাতীয় একটি নাম পিতার নাম হিসেবে যুক্ত করা হতে পারে রিউমর স্ক্যানারের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।

অনুসন্ধানে সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের ভাইরাল হওয়া বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্রটি (১৯৬৭২৬৯২৬১৯০০০০৩৩) যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার। কথিত এই জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম সেখ আবু নাছের, মাতা- রাজিয়া খাতুন, জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৬৭ রয়েছে। তবে স্বাক্ষরে লেখা Naser।

এছাড়া, এই কার্ডে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নামের ইংরেজি বানানেও ভুল রয়েছে। Government কে লেখা হয়েছে Governmment। People’s কে লেখা হয়েছে Peple’s। 

রিউমর স্ক্যানার এনআইডি নম্বরটি (19672692619000033) নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে যাচাই করে একই নম্বরে এনআইডি থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পায়। পরবর্তীতে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা যায়, এই এনআইডি নম্বরটি সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলেরই। তবে স্বাক্ষরের বিষয়টি ওপেন সোর্সে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গভর্নমেন্ট বানানটি ভুল দেখে প্রতীয়মান হয় যে, এটি আসল এনআইডি নয়। মূল এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে ভুয়া এই এনআইডির ছবি তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের ভারতীয় আধার কার্ড দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ভুয়া ও বানোয়াট।

মার্চ ফর গাজার ছবি ভারতের দাবি করে প্রচার

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৮ পিএম
মার্চ ফর গাজার ছবি ভারতের দাবি করে প্রচার
ছবি কৃতজ্ঞতা: রিউমর স্ক্যানার

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শনিবার (১২ এপ্রিল) লাখো মানুষের ঢল নামে। সকাল ৯টা থেকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে লোকজন আসতে থাকেন। একপর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে রমনা পার্ক, শাহবাগ, টিএসসি, হাইকোর্ট এলাকার সংযোগ সড়কগুলোয় লোকজন ভরে যায়। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই গণজমায়েতের একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়, ‘গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ভারতের কলকাতার সোহরাওয়ার্দী পার্কে হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছে।’

লন্ডন থেকে পরিচালিত ফিলিস্তিন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘Quds News Network’ তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে এবং ফিলিস্তিন, তুর্কিসহ একাধিক দেশ থেকে পরিচালিত ‘The Times of Palestine’ নামক ফিলিস্তিন ভিত্তিক সংবাদের একটি ফেসবুক পেজে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে তথ্য যাচাইকারী সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত গণজমায়েতের ছবিগুলো ভারতের কলকাতার নয়। এগুলো গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ১২ এপ্রিল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশের দৃশ্য। এগুলোকেই ভারতের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবি দাবি করে প্রচার করা হয়।

অনুসন্ধানে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে এ ধরণের ছবি পাওয়া যায়। যেগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রতিবাদের ছবি দাবি করে প্রচার করা হয়। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো মূলত ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়া ‘মার্চ ফর গাজা’র।

সুতরাং, ঢাকায় আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশের দৃশ্য কলকাতায় গণজমায়েতের দৃশ্য নয়। এগুলো অপপ্রচার।

ইসরায়েল ইস্যুতে সংঘবদ্ধ গুজবের শিকার হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা: রিউমর স্ক্যানার

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম
ইসরায়েল ইস্যুতে সংঘবদ্ধ গুজবের শিকার হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা: রিউমর স্ক্যানার
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রীতিমতো সংঘবদ্ধ গুজবের শিকার হচ্ছেন বএল জানিয়েছে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

সোমবার (৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশের এই তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া এসব ভুয়া দাবি চলমান সংঘাতের মধ্যে ব্যাপকভাবে নেটিজেনরা প্রচার করছেন বলে লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

রিউমর স্ক্যানার জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যখন ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামলার ভয়াবহতা শুরু হয় সে সময়ই বাংলাদেশে প্রচার হতে শুরু করে, ইসরায়েলকে ১০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিষয়টি নিয়ে সে সময়ই বিস্তারিত অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার। অনুসন্ধানে জানা যায়, অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারের (বর্তমানে বন্ধ) সে বছরের ১৩ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদন থেকে আলোচিত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত প্রতিবেদনে দাবিটির পক্ষে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতির বিষয়ে বলা হলেও উক্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক সে সময়ে প্রকাশিত কোনো বিবৃতিতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। উক্ত দাবি সম্বলিত কোনো বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়। তাছাড়া, ইসরায়েলের সাংবাদিক এবং ফ্যাক্টচেকারও এমন কোনো সহায়তার বিষয়ে অবগত নন বলে রিউমর স্ক্যানারকে জানান। একই সাথে, ইউনূস সেন্টারও বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে। এই ফ্যাক্টচেক পরিবর্তে সময়েও নিয়মিত বিরতিতে এই গুজব প্রচার হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতা বৃদ্ধির ঘটনার প্রেক্ষিতেও তাকে জড়িয়ে এই ভুয়া দাবি ফের ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি, ‘ইসরায়েল কে মনো সমর্থন দেওয়ায় ড. ইউনুস কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার হচ্ছে। যদিও ফটোকার্ডটিতে তারিখ লেখা রয়েছে ৩ অক্টোবর, ২০২৪। মূলত, সে সময়ই এই দাবিটি ছড়ায়। রিউমর স্ক্যানার সে সময়ই বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক করে জানায়, যমুনা টিভি এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে নেতানিয়াহুও কোনো মন্তব্য করেননি। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। এই দাবিটি সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে ফেসবুক এবং এক্সে ফের প্রচার হতে দেখা যাচ্ছে।

গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে এই ইস্যুতে পুরোনো আরেকটি ভুয়া দাবিও সম্প্রতি ফের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। ২০২৩ সালের ০৫ অক্টোবর দুদক কার্যালয়ে নিজের বিরুদ্ধে চলা মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে তার বক্তব্য নিয়ে একটি ফটোকার্ড প্রকাশিত হয়। উক্ত ফটোকার্ডে থাকা ড. ইউনূসের বক্তব্য সম্পাদনা করে তিনি “ইজরায়েল তার আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার সে সময়ই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের পর ফ্যাক্টচেক করে জানায়, ড. ইউনূস এমন কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময়ে এবং পূর্বে বিভিন্ন সময়ে হুবহু একই মন্তব্য করেছেন। এই দাবিটিও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে আবারও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

ফটোকার্ড ছাড়াও সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি ভুয়া ছবি দিয়েও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এমনই একটি ছবিতে দেখা যায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ড. ইউনূসের সাথে করমর্দন করছেন। অন্তত গত বছর থেকেই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি আবারও ছবিটি নিয়ে ফেসবুক ও এক্সে আলোচনা দেখা যাচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে জেনেছে, ছবিটি সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে৷ মূল ছবিটি ২০২৩ সালের। ছবিতে নেতানিয়াহু ছিলেনই না। মূলত পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট মারসোলো রেবেলো ডি সুজার সাথে ড. ইউনূসের করমর্দনের ছবি সম্পাদন করে ভুয়া ছবিটি তৈরি করে প্রচার হচ্ছে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে ড. ইউনূসের করমর্দনের দাবিতে সমজাতীয় আরেকটি ছবিও গেল বছরের অন্তত সেপ্টেম্বর থেকে প্রচার হয়ে আসছে। নভেম্বরে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের পর রিউমর স্ক্যানার জানায়, গত বছরের ১১ মে ইতালীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি সার্জিও ম্যাটারেলার সাথে ড. ইউনূসের সাক্ষাতের সময়ে তোলা ছবি থেকে ড. ইউনূসের ছবিটি নেওয়া হয়। অন্যদিকে, ২০১৯ সালের মার্চে নেতানিয়াহু সামোয়ার প্রধানমন্ত্রী তুইলেপা আইওনো সাইলেলে মালিলেগাওইয়ের সাথে সাক্ষাতের সময় তোলা ছবি থেকে ছবির পেছনের অংশটি নেওয়া হয়। অর্থাৎ, দুইটি আলাদা ছবিকে জোড়া দিয়ে এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন উপাদান সম্পাদনার মাধ্যমে এই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। এই ছবিটিও বর্তমানে প্রেক্ষাপটে ফের আলোচনায় এসেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রচার হওয়া এসব ভুয়া দাবিগুলো শুধু যে পোস্টের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে এমন নয়। পোস্টের চেয়ে কমেন্টে ছবি আকারে এবং ইনবক্সে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে যাচ্ছে উক্ত দাবির ছবিগুলো। ফ্যাক্টচেক হওয়ার পর ভুয়া এসব দাবি প্রচারকারী সকলের কাছে তা না পৌঁছানোর দরুণ এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে যাচ্ছে। এভাবে পরবর্তীতে ভিন্ন কোনো প্রেক্ষাপটে আবার ছবিগুলো একই দাবিতে প্রচার হচ্ছে৷ তবে এসব ভুয়া ছবি প্রচারকারীদের বড় একটি অংশই বিষয়টি ভুয়া জেনেও অপতথ্য হিসেবে বছর বছর সেগুলো প্রচার করে আসছেন। 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এরই প্রেক্ষিতে কিছু সুস্পষ্ট দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে যেগুলো আগেই মীমাংসিত হয়ে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রিউমর স্ক্যানার।

সিফাত/

মার্চে ছড়িয়েছে ২৯৮ ভুল তথ্য, সবচেয়ে বেশি শেখ হাসিনাকে নিয়ে

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২১ পিএম
মার্চে ছড়িয়েছে ২৯৮ ভুল তথ্য, সবচেয়ে বেশি শেখ হাসিনাকে নিয়ে
প্রতীকী ছবি

গেল মার্চে ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে এমন ২৯৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে।

বুধবার (২ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়  বাংলাদেশের এই তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হয় যথাক্রমে ২৭১ ও ২৬৮টি ভুল তথ্য।

এর মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে ১০৫টি ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩৫ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় বিষয়ে ১০৩টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১২টি, ধর্মীয় বিষয়ে ৩৬টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে তিনটি, শিক্ষা বিষয়ে তিনটি, প্রতারণা বিষয়ে ১২টি ও খেলাধুলার বিষয়ে ১৬টি।

এসব ঘটনায় ভিডিওকেন্দ্রিক ভুল ১৪৩টি, তথ্যকেন্দ্রিক ১১০টি এবং ছবিকেন্দ্রিক ৪৫টি।

শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৬৮টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৯৭টি এবং বিকৃত হিসেবে ৩১টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়।

প্লাটফর্ম হিসেবে ফেসবুকে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ২৭৩টি, এক্সে ৬২টি, টিকটকে সাতটি, ইউটিউবে ৪৪টি, ইন্সটাগ্রামে ২৬টি, থ্রেডসে অন্তত পাঁচটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে।

ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

মার্চে ভারতীয় গণমাধ্যমে চারটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া তিনটি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার করা হয়েছে। মার্চে ২৬টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে অর্ধেক ঘটনাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গেল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১৫টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়।

মার্চে ২২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও।

গেল মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে সাতটি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়। বিএনপিকে জড়িয়ে চারটি, ছাত্রদলকে জড়িয়ে চারটি, আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে ছয়টি, ছাত্রলীগকে জড়িয়ে একটি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়। 

তাছাড়া শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে এই সময়ে ৩৩টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে।

তাছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টিকে জড়িয়ে গত মাসে দুইটি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়।

এই দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে গত মাসে চারটি, হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে ছয়টি, সারজিস আলমকে জড়িয়ে তিনটি, তাসনিম জারাকে জড়িয়ে চারটি, হুমায়রা নুরকে জড়িয়ে একটি, আব্দুল হান্নান মাসউদকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচার হয়।  

গেল মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে সাতটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ২৩টি ভুল তথ্য প্রচার হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো তিনটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর বাইরে র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে জড়িয়ে একটি করে ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল মার্চে।  

গেল মাসের ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, বিভিন্ন অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে গত মাসে ১৭টি মৃত্যুর গুজব প্রচার করা হয়। মার্চে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে ৯টি। একই সময়ে ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে পাঁচটি। 

মার্চে ধর্ষণ সম্পর্কিত খবর এবং এ সংক্রান্ত তথ্য, ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে প্রচার বেড়ে যাওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মার্চ মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনেও দাবি করা হচ্ছে, মার্চ মাসে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এর ফলে জনমনে শঙ্কার অবকাশের সুযোগ নিয়ে অপতথ্যের প্রচার ছিল গত মাসে। এরই প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার গেল মাসে ধর্ষণবিষয়ক অন্তত ২৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে একক ঘটনা হিসেবে মাগুরায় আট বছরের এক শিশুর ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। 

অন্যদিকে, রমজান নিয়ে ১৬টি এবং ঈদ নিয়ে ছয়টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়। 

গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৩৮টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ৩৯টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৪৫টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়।

এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে মূল ধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির নাম ১০ বার ব্যবহার করা হয়। এর পর জনকণ্ঠ ৫ বার ও আমার দেশ ৪ বার ব্যবহার করা হয়।

অমিয়/

উপদেষ্টা আসিফকে নিয়ে প্রচারিত ভিডিওর নেপথ্যে যা জানা গেল

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫২ পিএম
উপদেষ্টা আসিফকে নিয়ে প্রচারিত ভিডিওর নেপথ্যে যা জানা গেল
ছবি: ভিডিও থেকে

ঈদুল ফিতরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের আয়োজন করে। সেখানে নামাজ আদায় করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নামাজে তার কাতারে দাঁড়ানোর দৃশ্যের ছবি এবং ভিডিও ঈদের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় ছিল।

নামাজের ভিডিও নিয়ে সমালোচনার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে তথ্য যাচাইকারী সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।

প্রচারিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ইমামের ঠিক পেছনে আলাদা একটি কাতারে দাঁড়িয়েছেন আসিফ। এই কাতারে আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এর ফলেই আলোচনা-সমালোচনা শুরু। 

ঈদের এই জামাতে ইমামতি করেন ক্কারি গোলাম মোস্তফা এবং বিকল্প ইমাম হিসেবে ছিলেন মুফতি জুবাইর আহমদ আল-আযহারী।

রিউমর স্ক্যানার এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও খুঁজে বের করে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আসিফ শুরুতে অন্য মুসল্লিদের সঙ্গে প্রথম কাতারেই দাঁড়িয়েছিলেন। নামাজ শুরুর আগে ইমাম সাহেব নামাজের জন্য সবাইকে দাঁড়াতে বলেন। বিকল্প ইমাম মুফতি জুবাইর আহমদ আল-আযহারী তখন ইমামের হাতের ডান পাশে একটু পেছনে দাঁড়ান। মাইকে প্রথম কাতার থেকে যে কোনো একজনকে ইমামের বাম পাশে একটু পেছনে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। কয়েকজনের পরামর্শে আসিফ সামনে গিয়ে দাঁড়ান।

এই ভিডিও দেখে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আসিফ শুরুতেই সামনে এসে দাঁড়াননি। ইমামের আহ্বানে এবং পরবর্তীতে অন্যদের পরামর্শে তিনি সামনে এসেছেন।

এ প্রসঙ্গ নিয়ে রিউমর স্ক্যানার কথা বলে বিকল্প ইমাম (যিনি উপদেষ্টা আসিফের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন) মুফতি জুবাইর আহমদ আল-আযহারীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘ইমাম সাহেবের সাথে বিকল্প ইমাম সাহেব দাঁড়াবেন। এক পাশে দাঁড়ালে অন্য পাশে খালি থাকে। পেছনে জায়গা হচ্ছিল না বিধায় সামনে আরেকজন আসতে হয়। তখন প্রশাসক মহোদয় মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়কে সামনে আসার অনুরোধ করে। পরে উনি সামনে আসেন।’

ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যর্থ ক্যু’র ভুয়া খবর

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০৭:০৯ পিএম
আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৭ এএম
ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যর্থ ক্যু’র ভুয়া খবর
ছবি কৃতজ্ঞতা: রিউমর স্ক্যানার

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের ‘ব্যর্থ ক্যু’ সংক্রান্ত খবরটি ভুয়া বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক স্বীকৃত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

বুধবার (১২ মার্চ) প্রকাশিত এক ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সফর শেষে গত ৬ মার্চ দেশে ফিরেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এরই প্রেক্ষিতে ভারতীয় গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, সেনাপ্রধান দেশে ফেরার পর তাকে বহনকারী বিমান ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেনি। অবতরণ করেছে তেজগাঁও বিমানবন্দরে। একই সাথে এও দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে। এই চেষ্টায় জড়িত হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুর রহমানসহ ১১ জন সেনা কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সেনা অভ্যুত্থান সংক্রান্ত দাবিটি সঠিক নয় বরং প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পরে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া আলোচিত দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া। আইএসপিআরের পক্ষ থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ বিষয় অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিগুলোর সূত্রপাতের খোঁজ চালায় রিউমর স্ক্যানার। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সেনাপ্রধান দেশে ফেরার পরদিন থেকেই ফেসবুকে এই দাবিটি করা হচ্ছিল যে, “তিনি নির্ধারিত সময়ের ৫-৬ ঘন্টা আগে ঢাকা পৌঁছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে না নেমে তেজগাঁও বিমানবন্দরে তাকে নিয়ে আসা বিমান অবতরণ করান।” হাওলাদার আব্দুর রশিদ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ০৭ মার্চ রাত ৯ টা ৪৭ মিনিটে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি করা হয়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুর রহমানের বিষয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচারের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে এক্সের নাম এসেছে। প্লাটফর্মটিতে গত ৯ মার্চ ‘Nepal Correspondence’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ‘𝐉𝐔𝐒𝐓 𝐈𝐍: 𝐂𝐎𝐔𝐏 𝐏𝐑𝐄𝐕𝐄𝐍𝐓𝐄𝐃 𝐈𝐍 𝐁𝐀𝐍𝐆𝐋𝐀𝐃𝐄𝐒𝐇 𝐀𝐑𝐌𝐘’ শিরোনামে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়।

Nepal Correspondence নামের এই অ্যাকাউন্টটি পূর্বে থেকেই বাংলাদেশ বিষয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও অপপ্রচারমূলক তথ্য ছড়ানোর জন্য পরিচিত।

অর্থাৎ, এ সংক্রান্ত দাবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথম প্রচার হতে দেখা যায়। এসব পোস্ট বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দাবিগুলোর বিপরীতে কোনো প্রমাণ বা সূত্রের উল্লেখ পায়নি।

পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে আজতক বাংলা ১০ মার্চ সকাল ৮.৩০ টা মিনিটে সমজাতীয় দাবি নিয়ে তথ্য প্রচারের পর দেশটির অন্যান্য গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।  

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস “Bangladesh Army coup plot thickens as pro-Pakistan Lt General put under surveillance” শিরোনামে গত ১০ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অংশ বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা করছে। অভ্যুত্থানের প্রতি সমর্থন যাচাই করার জন্য রহমান একটি সভা ডেকেছিলেন কিন্তু তার উপস্থিতি সীমিত ছিল। সামরিক গোয়েন্দারা এখন তার উপর নজর রাখছে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও খারাপ হতে পারে। এই ষড়যন্ত্রে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা জড়িত।”

ইকোনমিক টাইমসের এই প্রতিবেদনটি দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী নামের এক ভারতীয় সাংবাদিক লিখেছেন, যার আগে থেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক, অপপ্রচারমূলক প্রতিবেদন প্রকাশের ইতিহাস রয়েছে। ৫ আগস্টের পরেও তিনি বাংলাদেশ নিয়ে কয়েকটি অপপ্রচারমূলক প্রতিবেদন করেছেন। যার মধ্যে আছে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।

এছাড়াও, এর পূর্বে একই বিষয়ে একই গণমাধ্যম গত ২৬ জানুয়ারি “বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে” (অনূদিত) শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ না পেয়ে গতকাল সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালকের সাথে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার৷ তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, সেনাপ্রধানের সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সফরে তিনি নিজেও সফরসঙ্গী ছিলেন। তাদের বহনকারী বিমান ০৬ মার্চ শাহজালাল বিমানবন্দরেই অবতরণ করে।  
একই সাথে জেনারেল ফয়জুর রহমানের সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা, এর ফলে তাকে সরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত দাবিগুলো ভুয়া বলে উল্লেখ করেছে আইএসপিআর কর্তৃপক্ষ।  

বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে গতকাল রাতে রিউমর স্ক্যানারের কাছে একটি প্রতিবাদলিপির কপি পাঠিয়েছে আইএসপিআর। পরবর্তীতে প্রতিবাদলিপিটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও পোস্ট করা হয়েছে। ‘Rejoinder: Response to False Reports on Bangladesh Army by Certain Media Outlets from India’ শিরোনামে এই প্রতিবাদলিপিতে লেখা হয়,

“বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছে যে, ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম, বিশেষ করে The Economic Times ও India Today, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা এবং কমান্ড চেইনের ভঙ্গুরতা নিয়ে একাধিক ভিত্তিহীন ও মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশ ও এর সশস্ত্র বাহিনীর স্থিতিশীলতা ও ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে চালানো একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।”

সুতরাং, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের ‘ব্যর্থ ক্যু’ সংক্রান্ত খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

সিফাত/