![পাখিরা মানুষের মতো কথা বলে কীভাবে](uploads/2024/02/02/1706853492.b2.jpg)
মানুষ মনের ভাব আদান-প্রদানের জন্য কথা বলে থাকে। প্রায় প্রতিটি প্রাণী নিজেদের মতো করে কথা বলে থাকে। এক্ষেত্রে তারা নিজেদের ভাষা ব্যবহার করে। পাখিরাও কিচির-মিচির শব্দে নিজেদের মাঝে ভাব বিনিময় করে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। টিয়া, ময়না, তোতা বা কাকাতুয়ার মতো কিছু পাখি আছে, যারা মানুষের মতো কথা বলতে পারে। এই পাখিরা কীভাবে শব্দ তৈরি করে, আর শব্দগুলো শেখে কীভাবে? মানুষের মতো কথা বলেই বা কীভাবে?
মানুষ সাধারণত ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলে। তবে ঠোঁট নাড়ানো ছাড়া মানুষের জন্য কথা বলা প্রায় অসম্ভব। তবে মায়াস্বরীরা (ভেন্ট্রিলোকুইস্ট) ঠোঁট প্রায় না নাড়িয়েই মুখ গহ্বরের মধ্যে স্পষ্ট শব্দ তৈরি করতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন হয় দীর্ঘ চেষ্টা ও অনুশীলন।
মানুষের ক্ষেত্রে ঠোঁট না নাড়িয়ে কথা বলাটা প্রায় অসম্ভব হলেও, পাখিদের ক্ষেত্রে এটা খুব সহজ ও স্বাভাবিক কাজ। বিশেষ করে টিয়া, ময়না, তোতাপাখিদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টা লক্ষ করা যায়। তারা ঠোঁট না নাড়িয়ে কথা বলতে পারে। মানুষ ও পাখিদের ঠোঁট থাকলেও এর ব্যবহারে বিস্তর ফারাক রয়েছে। মানুষ সাধারণত কথা বলতে ঠোঁট ব্যবহার করে। তবে মানুষের মতো করে পাখিদের কথা বলার জন্য এর প্রয়োজন হয় না। কথা বলার জন্য মানুষের মতো স্বরযন্ত্রও নেই পাখিদের। তারপরও চমৎকারভাবে মানুষের কথা নকল করতে পারে এসব পাখি। তোতাপাখির স্বরযন্ত্রই নেই, তারপরও তাদের কথা বলার অঙ্গের ওপর চমৎকার নিয়ন্ত্রণ থাকায়, তারা বোধগম্য শব্দ এবং বাক্যাংশ উচ্চারণ করতে সক্ষম।
পাখির শব্দ তৈরির প্রক্রিয়া: মূলত সিরিঙ্কস ও ব্রেইনের বিশেষ ব্যবহারের মাধ্যমে এই পাখিগুলো কথা বলতে পারে। টিয়া কিংবা ময়নার মানুষের মতো স্বরযন্ত্র বা ল্যারিনকস নেই। তবে তাদের গলায় স্বরযন্ত্রের পরিবর্তে শ্বাসনালির নিচে রয়েছে সিরিঙ্কস । এটি শ্বাসনালির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি প্রত্যঙ্গ। সিরিঙ্কস পাখির শরীরে ইংরেজি ওয়াই আকৃতির ফাঁপা একধরনের বিশেষ অঙ্গ। ফুসফুস ও শ্বাসনালির মধ্যে এটি অবস্থান করে। পাখি যখন শ্বাস নেয়, তখন বাতাস শ্বাসনালি থেকে সিরিংকসের মধ্য দিয়ে গিয়ে পৌঁছায় ফুসফুসে। এই সিরিঙ্কস পাখির শ্বাস নেওয়া বা ছাড়ার সময় বিভিন্ন ধরনের কম্পন তৈরি করে, যা শব্দে রূপান্তরিত হয়। স্থিতিস্থাপক পেশি ও নরম রিং বা আংটার মতো হাড়ের সাহায্যে সিরিংকসের এ কম্পন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে পাখিরা।
পাখিরা এই কম্পনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন ধরনের শব্দ বা সুর তৈরি করতে পারে। মানুষের মতো পাখিরা কোনো ভোকাল কর্ড বা ঠোঁট ব্যবহার করে না। পাখিরা শব্দ তৈরি করার জন্য সিরিংকসের কম্পন নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের বলা শব্দ নকল করতে পারে। কথা বলার সময় খানিকটা মাথা বাঁকা করতেও দেখা যায় এদের।
এই পাখিগুলোর ব্রেইনে একটি বিশেষ অঞ্চল রয়েছে। যা পুরো বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রেইনের ইন্টারকানেক্টেড রিজিয়নের মাধ্যমে শুধু কথা নকলই নয়, শব্দ শুনে তা মনে রাখতে পারে এরা। এমনকি নিজের ইচ্ছেমতো সাজিয়ে তা উপস্থাপন করতে পারে এসব পাখি।
অন্যান্য পাখি নিজের মধ্যে কথা বলতে পারলেও মানুষের কথা নকল করতে পারে না। অন্যান্য পাখির ক্ষেত্রে মাত্র একটি সং সিস্টেম থাকে। তবে প্রায় সব প্যারাকিট পাখিদের এই সং সিস্টেমের বাইরে আরেকটি নার্ভ সিস্টেম রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে এটি এ জাতীয় পাখিদের বাড়তি সুবিধা দেয়। যার কারণে এরা কথা শিখতে, মনে রাখতে ও বলতে পারে। এ ধরনের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এ জাতীয় পাখি চিৎকার-চেঁচামেচি, আবৃত্তি করতে পারে। এমনকি বকাও দিতে পারে।
পাখির শব্দ শেখার পদ্ধতি: পাখিরা শব্দ শেখে শ্রবণ ও অনুকরণের মাধ্যমে। এরা তাদের পরিবার বা দলের সদস্যদের শব্দ শুনে শেখে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের নিজের শব্দ বা সুর ব্যবহার করে তাদের ভাবনা, অবস্থা, অভিযোগ, আকর্ষণ বা সম্পর্ক প্রকাশ করে। মানুষের মতো পাখিরা শব্দ শেখে মানুষের কাছ থেকে শুনে ও অনুকরণ করে। এদের মানুষের মতো শব্দ বলতে পারে কারণ তারা মানুষের শব্দের উচ্চারণের শৈলী মনে রাখতে পারে। এরা মানুষের ভাষা রপ্ত করে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা বিশ্বাস তৈরি করার জন্য। তাদের কাছ থেকে খাদ্য বা আশ্রয় পাওয়ার জন্য।
ময়না, টিয়া বা তোতা যা বলে তা কি বুঝে বলে?
![](https://www.khaborerkagoj.com/public/image/22-1-24/b1.jpg)
ময়না, টিয়া বা তোতাপাখির ইতিবাচক কথা শুনে মাথায় প্রশ্ন আসে, এরা যা বলে তা কি বুঝে বলে? না সবই মুখস্থ বুলি? জানা গেছে, নিজেদের প্রজাতির মধ্যে বিভিন্ন শব্দ ও গানের মাধ্যমে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জানান দেয়। এভাবে তারা নিজস্ব গোত্রের মধ্যে সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে এরা নিজেদের প্রজননের ক্ষেত্রে সঙ্গীকে আকর্ষণ করারও চেষ্টা করে।
অন্যদিকে, যখন বন্য ময়না, টিয়া বা তোতাপাখিকে যখন খাঁচায় বন্দি করা হয়, তখন তারা কথা বলার মাধ্যমে মূলত স্বজাতির অনুপস্থিতিতে মানুষের সঙ্গে সামাজিক বন্ধন স্থাপন করার চেষ্টা করে। আর এ কারণেই সহজে পোষ মানিয়ে এদের কথা শেখানো যায়।
‘কঙ্গো আফ্রিকান গ্রে প্যারট’ একজাতীয় আফ্রিকান তোতাপাখি। এরা সবচেয়ে ভালো ও সুন্দরভাবে কথা বলতে পারে। অর্থ পুরোপুরি না বুঝলেও মানুষের ঠোঁট নাড়ানো দেখে সেটাই নকল করে মানুষকে সঙ্গ দিতে পারে এরা। আর এ কারণেই বিশ্বব্যাপী পাখিপ্রেমীদের কাছে এরা বেশ জনপ্রিয়।
জাহ্নবী