যশোরে রাজাকারদের হাতে নিহত পাঁচজন কী পাবেন, ‘শহিদের’ মর্যাদা। ১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখমের পর গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও নিহত পাঁচজনকে যথাযথ মর্যাদা দেয়নি কোনো সরকার। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করা হয়নি উদ্যোগ। এর ফলে যুগ যুগ ধরে অবহেলায় পড়ে আছে তাদের সমাধি।
তবে প্রতি বছর স্থানীয় বামদল ও কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদদের স্মরণ করেন। ওদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। ১৯৭১ সালে নিহতরা হলেন আসাদুজ্জামান আসাদ, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, আহসান উদ্দীন খান মানিক, আশিকুর রহমান তোজো ও বজলুর রহমান বজলু।
ওই নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী চিনাটোলা বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী শ্যামা পদ। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ২৩ অক্টোবর সকালে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রত্নেস্বরপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র ছয় যুবক। কিন্তু পাকহানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের চোখ এড়াতে পারেননি তারা। স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার আব্দুল মালেক ডাক্তারের নেতৃত্বে মেহের জল্লাদ, ইসাহাক ও আবদুল মজিদসহ বেশ কয়েকজন মিলে ওই যুবকদের আশ্রয়স্থল ঘিরে ফেলে। পরে তাদের চোখ বেঁধে চিনাটোলা বাজারের পূর্বপাশে হরিহর নদের তীরে নেওয়া হয়।
সেখানে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের শরীরে লবণ দেওয়া হয়। নির্যাতন চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। নির্যাতনের পর রাত ৮টার দিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় হরিহর নদের একটি ব্রিজের পাশে নেওয়া হয়। তাদের একজন নদে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষা পাননি বাকিরা। হঠাৎ বাঁশি বেজে ওঠার শব্দ শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গে বন্দুকের কয়েকটি গুলির আওয়াজ শোনা যায়। নদের তীরে যেখানে তাদের হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে সেখানে তাদের সমাহিত করা হয়।
সেই পাঁচ সূর্য সন্তানের বর্বর হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি শ্যামা পদ। তার আক্ষেপ স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশমাতৃকার জন্য যারা অকাতরে শহিদ হলো তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে আজ পর্যন্ত কোনো সরকার কিছু করল না। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে শহিদদের সেই বধ্যভূমি।
এদিকে স্থানীয় সিরাজুল ইসলামের উদ্যোগে প্রতি বছর পরিচ্ছন্ন ও রং করান শহিদদের সমাধিস্থল। ধোয়ামোছার কাজ করেন স্থানীয় ওমর আলী। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি সিরাজুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরিচ্ছনতার কাজ করে আসছেন।
মনিরামপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গাজী আবদুল হামিদ বলেন, সরকারিভাবে পাঁচ সূর্য সন্তানকে মনে রাখা হয় না। শুধুমাত্র ফজলুকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেওয়া হয়েছে। অন্যদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠানো প্রয়োজন। একইসঙ্গে এদের স্মরণ করতে সরকারিভাবে স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
স্থানীয়ভাবে গঠিত পাঁচ শহিদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে প্রতি বছর ২৩ অক্টোবর এ সূর্য সন্তানদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক মশিয়ার রহমান।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আলা উদ্দিন বলেন, স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির কর্মসূচিতে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নিয়ে থাকি। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ওই পাঁচ শহিদসহ উপজেলার সব শহিদদের স্মৃতি ও বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে বলা হবে।