বাঙালি জাতির কল্যাণচিন্তায় নিবিষ্ট বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনার কেন্দ্রে ছিল এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা, যা মানুষকে মহৎ করে, সৎ করে গড়ে তোলে, দক্ষ ও যোগ্য সুনাগরিক নির্মাণ করে, দেশপ্রেমিক সত্তার উদ্ভব ঘটায়, দিগন্তপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে, মনোজাগতিক চৈতন্য বিকাশ লাভ করে ও সর্বোপরি সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ মানুষে রূপান্তর করে
বাংলার আকাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো উজ্জ্বল, মেধাবী, প্রজ্ঞাবান ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটেছিল বিধায় আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাচিন্তার যে বর্ণনা আমরা ইতিহাসে পাই, তা একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতার নিরিখে বলা যায় অসাধারণ ভবিষ্যৎদর্শনের রূপরেখা। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংগ্রাম মূলত শিক্ষার আন্দোলন।
পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রক্কালে ২৮ অক্টোবর ১৯৭০ তারিখে বেতার ও টেলিভিশনে দেশবাসীর উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা থেকে বোঝা যায়, শিক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধু কত গভীরভাবে চিন্তা করতেন। সেদিনের সে ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে একটি দেশের জন্য উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর হতে পারে না। ১৯৪৭ সালের পর বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পরিসংখ্যান একটা ভয়াবহ সত্য। আমাদের জনসংখ্যার শতকরা ৮০ জন অক্ষরজ্ঞানশূন্য। প্রতি বছর ১০ লাখেরও অধিক নিরক্ষর লোক বাড়ছে। জাতির অর্ধেকের বেশি শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শতকরা মাত্র ১৮ জন বালক ও ছয়জন বালিকা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। জাতীয় উৎপাদনের শতকরা কমপক্ষে ৪ ভাগ সম্পদ শিক্ষা খাতে ব্যয় হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কলেজ ও স্কুল, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে। নিরক্ষরতা অবশ্যই দূর করতে হবে।’
‘পাঁচ বছর বয়স্ক শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য একটি ক্র্যাশ কোর্স প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার সব শ্রেণির জন্য খোলা রাখতে হবে। দ্রুত মেডিকেল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দারিদ্র্য যাতে উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অভিশাপ না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে যাতে বাংলা ও উর্দু ইংরেজির স্থান দখল করতে পারে সে ব্যাপারে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আঞ্চলিক ভাষার বিকাশ ও উন্নয়নের ব্যাপারে উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে।’ (অধুনালুপ্ত আজাদ, ২৯ অক্টোবর, ১৯৭০)। এখানে উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বছর ১৯৪৭ সালের পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করার সময় এই জনপদকে বাংলাদেশ বলে অভিহিত করেন এবং ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন- ‘এখন হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম হইবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ।’ (ইত্তেফাক, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৯)।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সারা পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন কিন্তু ইয়াহিয়া-ভুট্টোর ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ২৫ মার্চ ১৯৭১ মধ্যরাতে যখন গণহত্যা শুরু করে তখন বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ ১৯৭১ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করি এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের যে কত সম্মান করতেন, কতটা ভালোবাসতেন তা বোঝা যায় যখন ২০ জুলাই, ১৯৭২ তারিখে তিনি সুগন্ধা কার্যালয় থেকে ছুটে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসে তদানীন্তন উপাচার্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে ছাত্রদের ঘেরাও থেকে মুক্ত করতে। অফিসে বসে যখন তিনি খবর পান যে, বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অটো প্রমোশনের দাবিতে উপাচার্যকে তার অফিসে ঘেরাও করে রেখেছে, তখনই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে যাত্রা করেন এবং উপাচার্য ও অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকদের ঘেরাও থেকে উদ্ধার করে আবার কার্যালয়ে দ্রুত ফিরে যান।
বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে শেখ রাসেলের গৃহশিক্ষক গীতালী দাশগুপ্তা বলেছেন যে, রাসেলের লেখাপড়ার খোঁজখবর নিতে কখনো কখনো পড়ানোর কক্ষে বঙ্গবন্ধু প্রবেশ করলে স্বাভাবিকভাবেই তিনি (গীতালী দাশগুপ্তা) দাঁড়িয়ে যেতেন। বঙ্গবন্ধু বারবার তাকে বলেছেন, তুমি রাসেলের শিক্ষক, তুমি আমারও শিক্ষক। আমি এলে তুমি কখনো দাঁড়াবে না। এই ছিল শিক্ষকদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সম্মান। গীতালী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ফাঁকে গৃহশিক্ষকতা করতেন এবং এক সভায় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমি তো পরিপূর্ণ শিক্ষকও নই, একজন ছাত্রী, পড়ার খরচ মেটানোর জন্য গৃহশিক্ষকতা করি কিন্তু আমাকেও বঙ্গবন্ধু যে সম্মান দিয়েছেন তা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনটাই আমাদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। তার প্রতিটি বক্তৃতা ও কর্ম আমাদের নবীনদের জন্য শিক্ষার উপকরণ হয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধু যখন ৭ মার্চ, একাত্তরে উচ্চারণ করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ তখন আমরা উপলব্ধি করি যে, শিক্ষা ছাড়া মানবমুক্তি সম্ভব নয় আর শিক্ষার সঠিক পরিবেশের জন্যই প্রয়োজন বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র, যেখানে মুক্ত পরিবেশে নিজ ভাষায় নিজ সংস্কৃতি অনুসরণ করার সুযোগ পাবে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরে যেমন দেশের মুক্তির কথা বলছেন, ঠিক তেমনি ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষা বাংলার মুক্তির দাবিতে সদ্য প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে প্রথম কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধু ভাষার মুক্তির আন্দোলন থেকে পর্যায়ক্রমে ঔপনিবেসিক শাসন থেকে মুক্তির জন্য যুদ্ধের ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা শেখার অনুপ্রেরণা পাই।
বাঙালি জাতিকে স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু যে কথাগুলো বলে গেছেন তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করা আমাদের দায়িত্ব। ১৯৭২ সালের ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে বুদ্ধিজীবী সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এতদিন পর্যন্ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হইতে মানুষ সৃষ্টি হয় নাই, এক ধরনের আমলাই কেবল সৃষ্টি হইয়াছে।’ জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার আলোকবর্তিকা পৌঁছে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পল্লির জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার করার জন্য আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে গ্রামাঞ্চলে গিয়া অতিবাহিত করা উচিত।’ নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ছাত্র রাজনীতির আশ্রয় গ্রহণ না করার জন্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আমাকে ভুল বুঝিবেন না, আমি নিজে সুদীর্ঘকাল আন্দোলন ও সংগ্রামের পথ পার হইয়া আসিয়াছি বলিয়াই এমনভাবে কথা না বলিয়া পারিতেছি না।’ (ইত্তেফাক, ৩১ মার্চ, ১৯৭২) রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনার অন্তহীন মিল রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘দৃষ্টান্তরূপে বলিতে পারি, প্যাট্রিয়টিজম-নামক পদার্থ। ইহার মধ্যে যেটুকু সত্য ছিল, প্রতিদিন সকালে পড়িয়া সেটাকে তুলাধুনিয়া একটি প্রকাণ্ড মিথ্যা করিয়া তুলিয়াছে, এখন এই তৈরি বুলিটাকে প্রাণপণ চেষ্টায় সত্য করিয়া তুলিবার জন্য কত কৃত্রিম উপায়, কত অলীক উদ্দীপনা, কত অন্যায় শিক্ষা, কত গড়িয়া তোলা বিদ্বেষ, কত কূট যুক্তি, কত ধর্মের ভান সৃষ্ট হইতেছে তাহার সীমা সংখ্যা নাই। এইসব স্বভাবভ্রষ্ট কুহেলিকার মধ্যে মানুষ বিভ্রান্ত হয়- সরল ও উদার, প্রশান্ত ও সুন্দর হইতে সে কেবল দূরে চলিয়া যাইতে থাকে। কিন্তু বুলির মোহ ভাঙ্গানো বড়ো শক্ত। বস্তুকে আক্রমণ করিয়া ভূমিসাৎ করা যায়, বুলির গায়ে ছুরি বসে না।’ (রবীন্দ্রসমগ্র, খণ্ড ৬, পৃ: ৫৯৮)
আমাদের স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়ে গেছেন, যারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। কারণ তারা তাদের বর্তমানকে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য উৎসর্গ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু তাদের কথা বারবার আমাদের স্মরণ করিয়ে গেছেন। ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নগরবাড়ীতে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিতা মহিলাদের গৃহিণীর মর্যাদা প্রদান করে আমাদের মহত্বের ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, এসব নির্যাতিতা মহিলার একমাত্র দোষ ছিল তারা বাঙালি এবং তারা তাদের মাতৃভূমিকে গভীরভাবে ভালোবাসে। বঙ্গবন্ধু এসব নির্যাতিতা মহিলার মাঝ থেকে স্ত্রী পেতে ইচ্ছুক যুবকদের নামের তালিকা প্রস্তুতের আবেদন জানান। (সংবাদ, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২) বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে সামাজিক ন্যায়বিচার ও নীতিনৈতিকতা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হওয়ার দিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর, ১৯৭২ তারিখে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আইনের চোখে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই চারটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে শাসনতন্ত্র রচিত হয়েছে। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির মাঝে অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক, সর্বজনীন ও একমুখী প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ও তৃতীয় ভাগে নাগরিকদের ২২টি ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়। কেউ কি চিন্তা করতে পারবেন যে, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ মে বগুড়া ভ্রমণে গিয়ে বগুড়া মহিলা কলেজের ছাত্রী আখতারকে সংজ্ঞাহীন দেখে তিনি তাকে সার্কিট হাউসে নিয়ে চিকিৎসক ডেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন ও মেয়েটি সুস্থ হয়ে বাড়ি না যাওয়া পর্যন্ত তিনি সব অফিসিয়াল কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। (অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলা, ৯ মে, ১৯৭২) কেউ কি ভাবতে পারেন যে, ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বৃদ্ধ কৃষক কুলমান সিং-এর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাকে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ পাঠিয়েছিলেন। (অধুনালুপ্ত বাংলার বাণী, ২ জুন ১৯৭২) সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতায় সমৃদ্ধ ওপরের দুটি ঘটনায় বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া গেল না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জীবনের এমন অগণিত দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে, যা শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্ত হলে তা নবীন প্রজন্মকে সহনশীল, উদার, সমব্যথী, নিষ্ঠাবান ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষে পরিণত করবে।
বঙ্গবন্ধু একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন মৃত্যুর কিছুদিন আগে। সপরিবারে হত্যাকাণ্ডরে সেই অভিশপ্ত পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের কথা ছিল। বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব ল’ ডিগ্রিতে ভূষিত করার প্রস্তাব করে। বঙ্গবন্ধু এ সম্মান গ্রহণ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। কারণ, চ্যান্সলের হিসেবে এ ডিগ্রি গ্রহণ করা অনুচিত হবে বলে তিনি মনে করেন। (অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলা, ২৭ জুলাই, ১৯৭৫)। বঙ্গবন্ধুর এই সৌজন্যবোধ ও এর তাৎপর্য আমাদের জন্য এক শিক্ষণীয় বার্তা।
বাঙালি জাতির কল্যাণচিন্তায় নিবিষ্ট বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনার কেন্দ্রে ছিল এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা, যা মানুষকে মহৎ করে, সৎ করে গড়ে তোলে, দক্ষ ও যোগ্য সুনাগরিক নির্মাণ করে, দেশপ্রেমিক সত্তার উদ্ভব ঘটায়, দিগন্তপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে, মনজাগতিক চৈতন্য বিকাশ লাভ করে ও সর্বোপরি সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ মানুষে রূপান্তর করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাভাবনাকে স্মরণ রেখে আসুন আমরা নিজেদের সোনার মানুষে রূপান্তর করি।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়