![বান্দরবানে মিরিঞ্জা ভ্যালির হাতছানি](uploads/2023/12/26/1703564586.Mirinza.jpg)
ভ্রমণপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে বান্দরবানের মিরিঞ্জা ভ্যালি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত এই পর্যটনকেন্দ্র। এখানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো পাহাড় আর মেঘের খেলা উপভোগ করা। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। এখানে মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের যেন আজন্ম বন্ধুত্ব। প্রকৃতি এই এলাকাটিকে সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। এখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ, আকাশকেও মনে হয় বেশ কাছে। রাতে শহরের আলোতে যেন সৌন্দর্য আরও বৈচিত্র্যময়।
বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ পার্বত্য জেলা বান্দরবান। মেঘ-পাহাড়ের খেলা দেখার পাশাপাশি প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে পর্যটকদের অনাবিল আনন্দ দিতে চিরসবুজ সাজে সেজেছে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা ভ্যালি। বান্দরবান শহর থেকে ৮৬ কিলোমিটার ও চকরিয়া হতে ২৭ কিলোমিটার দূরে লামা উপজেলায় অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্র। এখানে সুউচ্চ সবুজ পাহাড়-বনানীঘেরা আঁকাবাঁকা পথ, আকাশ, মেঘগুলো পর্যটন কেন্দ্রটিকে দিয়েছে নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সৌন্দর্য। নির্মল আনন্দের রাজ্যে নগরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির বুকচিরে আকাশছোঁয়া চিরসবুজ এক শান্তিধাম। এখানে দেখা যায় পাহাড় ও মেঘের মিতালি। পর্যটকদের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে এ পর্যটনকেন্দ্র। সেখানে গেলে যে কারও মনে প্রকৃতিপ্রেম জাগবেই। তা ছাড়া পাহাড়ি পল্লিতে ঘরের আদলে তৈরি মাচাং ঘর। বাতাস ও বাঁশের বেড়ার ছিদ্র দিয়ে তাকালে দেখা মিলে হাজার তারার মেলা।
মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচু। ২ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটনকেন্দ্রটি। লামা শহর থেকে আঁকাবাঁকা সড়ক বেয়ে যেতে হয় এই কেন্দ্রটিতে। লামা সদর থেকে মিরিঞ্জা ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। এখানে পরিবেশবান্ধব ইকো রিসোর্ট হিসেবে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের তৈরি ২টি মাচাং ঘর। এ ছাড়াও পর্যটকদের সুবিধার্তে রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে কয়েকটি তাঁবুঘর। এদের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে রাতে চিকেন ফ্রাই, বিরিয়ানিসহ নানা পদের খাবার। কেন্দ্রটির চারপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো। কেন্দ্রটি ২০২১ সালে গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়েছে ২০২২ সালে। তা ছাড়া এই পর্যটনকেন্দ্রটি গড়ে ওঠার ফলে কর্মসংস্থান হয়েছে ছয়জনের, ভবিষ্যতে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
কথা হয় মিরিঞ্জা ভ্যালিতে নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সৈয়দ, আবির ও রূপালীদের একটি দলের সঙ্গে। তারা জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভ্যালিটি অনেক ওপরে। চারদিকে পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। এখানে না এলে জানতাম না প্রকৃতি এত সুন্দর। তা ছাড়া ভোর হলে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পাহাড়। এমন সৌন্দর্যের স্থানে এলে যে কারও মনে প্রকৃতিপ্রেম জাগবেই।
পর্যটনকেন্দ্রটির কাছেই উপজেলা সদরে আরও থাকছে, মুরং, মার্মা, ত্রিপুরাসহ ১১টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও লোকাচারের সান্নিধ্য। থাকছে সুখী ও দুঃখী নামের দুটি ১ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা মাতামুহুরী নদী।
মিরিঞ্জা ভ্যালির নকশাকার ভেনরিয়াল ম্রো জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে এই পাহাড়ে বিভিন্ন ফলদগাছের বাগান ছিল। তখন থেকে পর্যটকদের ঘুরতে আসা-যাওয়া ছিল অনেক। ভোর হলে বাগানে গেলে দেখা যেত মেঘের খেলা। সেখান থেকে পরিকল্পনা করে তৈরি করা হয় পর্যটন কেন্দ্র। নামকরণ করা হয় মিরিঞ্জা ভ্যালি। সম্পূর্ণ প্রকৃতিবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে কেন্দ্রটি। আগামীতে এটি পর্যটকদের কাছে অন্যরকম হয়ে উঠবে বলে আশা এই নকশাকারের।
কথা হয় মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জিয়া রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে পাহাড়টিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখেছিলেন। ২০২২ সালে এসে সেটি বাস্তবায়ন করেন। বর্তমানে এখানে প্রতিদিন পর্যটকরা বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন। আবার অনেকেই মুঠোফোনে বুকিং দিচ্ছেন। মাসে তার আয় হয় কয়েক লাখ টাকা। পর্যটকদের জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। তিনি বলেন- আগামীতে এই পর্যটন কেন্দ্রে ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হবে। যাতে পর্যটকরা আরও বিমোহিত হন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিবেশ বান্ধব এই রিসোর্টে রাত্রীযাপন করতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেক পর্যটক। মাচাং ঘরের পাশাপাশি রয়েছে প্রায় আটটি তাঁবু ঘর। ভোর হলে দেখা মিলে মেঘের কুয়াশা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। এতেই আনন্দে মুখরিত হন পর্যটকরা। কেউ তুলছেন ছবি, আবার কেউ বানাচ্ছেন ফেসবুকে রিল। পর্যটকরা চান আগামীতে মিরিঞ্জা ভ্যালি হয়ে উঠুক প্রকৃতিবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র।