![রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ১০ বৈশিষ্ট্য](uploads/2024/03/01/1709261074.rasul.jpg)
আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এমন কিছু গুণ ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি স্বতন্ত্র মর্যাদায় উন্নীত হয়ে মানবজাতির সকলকে ছাড়িয়ে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছেন। এই গুণ ও বৈশিষ্ট্যগুলো জগতের সব সৃষ্টি ও নবি-রাসুলদের ওপর তাঁর মর্যাদা এবং শ্রেষ্ঠত্বের দলিল। এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্বতন্ত্র ১০টি বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরা হলো—
১. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনয়ন : পৃথিবীতে যত নবি-রাসুল এসেছেন, প্রত্যেকের কাছ থেকে আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ যখন নবিদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান, অতঃপর তোমাদের কাছে কোনো রাসুল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেওয়ার জন্য, তখন সে রাসুলের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে ও তাঁকে সাহায্য করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, ৮১)
২. চিরন্তন মুজেজা কোরআন : রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে চিরন্তন মুজেজা কোরআন প্রদান করা হয়েছে। এই মুজেজা চিরকালের। মহান আল্লাহ কোরআন অবতীর্ণ করে একে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিজে নিয়েছেন। এর আগে নবি-রাসুলদের ওপর যেসব ধর্মগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছিল, সেগুলো বিকৃত, পরিবর্তিত ও রহিত হয়ে গেছে। কিন্তু কোরআনের মধ্যে কোনো বিকৃতি, পরিবর্তন বা এর কোনো কিছু রহিত হয়নি। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমিই কোরআন নাজিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।’ (সুরা হিজর, ৯)
৩. বিশ্ববাসীর রাসুল : রাসুলুল্লাহ (সা.) ছাড়া যেসব নবি-রাসুল পৃথিবীতে এসেছেন, তারা সবাই নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের হেদায়েতের জন্য এসেছেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) পৃথিবীর সব জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তাঁর নবুয়তকাল থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত যত জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথিবীতে আসবে, তিনি সবার নবি ও রাসুল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা সাবা, ২৮)
৪. আল্লাহর দরবারে নিমন্ত্রণ : আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নিজ দরবারে নিমন্ত্রণ জানিয়ে নিজের নিদর্শনাবলি দেখিয়ে সম্মানিত করেছেন। এটা অন্য কোনো নবি-রাসুল বা মানুষের ক্ষেত্রে ঘটেনি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহীয়ান তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি কল্যাণময় করেছি। তাঁকে আমার নিদর্শনাবলি দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল, ১)
৫. গুণ ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে সম্বোধন : মহাগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহতায়ালা অনেক নবি-রাসুলকে তাদের নাম ধরে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশার্থে তাঁর শ্রেষ্ঠতম দুটি গুণ ‘নবি’ ও ‘রাসুল’ বলে সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবি! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আহজাব, ৪৫) আল্লাহতায়ালা আরেক জায়গায় বলেন, ‘হে রাসুল! পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা মায়েদা, ৬৭)
৬. প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিতকরণ : আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জান্নাতে এমন এক মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন, যেখানে তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে আর কেউ অধিষ্ঠিত হতে পারবে না। এ স্থানকে আরবিতে ‘মাকামে মাহমুদ’ (প্রশংসিত স্থান) বলা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়ো, ওটা তোমার জন্য নফল, শীঘ্রই তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উন্নীত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, ৭৯)
৭. ক্ষমার ঘোষণা প্রদান : আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পূর্বাপরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা ফায়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট। যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তার নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সুরা ফাতহ, ১-২)
৮. মর্যাদাপূর্ণ উসিলা প্রদান : পরকালে আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মর্যাদাপূর্ণ উসিলা প্রদান করবেন। এই উসিলার মাধ্যমে যারা প্রার্থনা করবেন, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শাফায়াত অবধারিত হবে। হাদিসে এসেছে, ‘...আমার জন্য আল্লাহর কাছে উসিলা প্রার্থনা করো। কেননা উসিলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেওয়া হবে। আমি আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে আল্লাহর কাছে আমার জন্য উসিলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৫)
৯. সুপারিশ করার যোগ্যতম মহামানব : কেয়ামতের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় হবে। মানুষ সুপারিশের জন্য বিভিন্ন নবি-রাসুলের কাছে ছুটবে। কেউ সুপারিশে রাজি হবেন না। শুধু রাসুলুল্লাহ (সা.) সুপারিশ করার জন্য সম্মত হবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তখন আল্লাহর আরশের নিচে এসে সেজদায় পড়ে কান্নাকাটি করতে থাকব। (আল্লাহ যেন আমাকে সুপারিশ করার অনুমতি দেন)। অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হবে, আপনি মাথা উঠান, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মাথা উঠিয়ে বলবেন, হে আমার রব! আপনি আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন। আল্লাহতায়ালা বলবেন, হে আমার প্রিয় নবি! আমার নিরপরাধ বান্দাদের বেহেশতের ডানদিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করান। অন্য দরজা দিয়েও ইচ্ছা করলে প্রবেশ করাতে পারেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭১২)
১০. সর্বশেষ নবি ও রাসুল : অন্য নবি-রাসুলের আগমনের পর নবি-রাসুলের আগমনের ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর আর কোনো নবি-রাসুল আগমন করবেন না। তিনি সর্বশেষ নবি ও রাসুল। তাঁর মাধ্যমে নবুওয়াত ও রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবি। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।’ (সুরা আহজাব, ৪০)
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ চকবাজার