ঢাকা ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫
English

ঈদুল ফিতরে যা করবেন এবং যা করবেন না

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
ঈদুল ফিতরে যা করবেন এবং যা করবেন না
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

করণীয়: ঈদের দিন ভোরবেলা ফজর নামাজ জামাতে আদায় করার মাধ্যমে দিনটি শুরু করা উচিত। এ দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন ও সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম। ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘তিনি দুই ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন।’ (সুনানে কুবরা, বাইহাকি, ৬১৪৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে ফিরতেন। যাতে উভয় পথের লোকদের সালাম দেওয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (জাদুল মায়াদ, ১/৪৩২-৪৩৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৫৬৬৭)

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। ঈদের নামাজের আগে খাবার গ্রহণ করা সুন্নত। (বুখারি, ৯৫৩)

ঈদের নামাজ আদায় ও খুতবা শোনা ওয়াজিব। আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া ও ফিতরা আদায় করাও ইবাদত। 

বর্জনীয়: বিজাতীয় সংস্কৃতি উদযাপন না করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সঙ্গে সাদৃশ্য রাখবে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’(আবু দাউদ, ৪০৩১)

জুয়া, মদ, জিনা-ব্যভিচার ও মাদকদ্রব্য সেবন না করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটা দল পাওয়া যাবে, যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে।’(বুখারি, ৫৫৯০)

অশালীন পোশাকে রাস্তায় বের না হওয়া: রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একদল নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মতো হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে এবং অন্যরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের অবস্থা হবে উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না, যদিও তার সুগন্ধি বহুদূর থেকে পাওয়া যায়।’ (মুসলিম, ২১২৮)

লেখক: খতিব, বনানী আত-তাকওয়া জামে মসজিদ

যৌথ পরিবারে শুধু কর্তার কোরবানি সবার জন্য কী যথেষ্ঠ?

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
যৌথ পরিবারে শুধু কর্তার কোরবানি সবার জন্য কী যথেষ্ঠ?
যৌথ পরিবারের সকল সদস্যদের আলোচনার ছবি। সংগৃহীত

ইসলামি বিধান অনুসারে, কোরবানি কোনো পরিবারের ওপর ওয়াজিব হয় না, বরং এটি ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব হয়। এর অর্থ হলো, পরিবারের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য, যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার ওপর আলাদাভাবে কোরবানি ওয়াজিব হবে। এখানে যৌথ পরিবারে বসবাস বা আলাদা পরিবারে বসবাস কোনো পার্থক্য তৈরি করে না।

আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায়, যৌথ পরিবারে শুধু পরিবারের কর্তা কোরবানি দিয়ে থাকেন এবং অন্য উপার্জনক্ষম সদস্যরা মনে করেন যে তাদের কোরবানি আদায় হয়ে গেছে। এটি একটি প্রচলিত ভুল। যেমনটি ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ আলমগিরী (৫/২৯২) তে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, যৌথ পরিবার হোক বা ভিন্ন পরিবার হোক, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

কোরবানির নেসাব হলো সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা এর সমমূল্যের সম্পদ। যেকোনো ব্যক্তি, পুরুষ বা নারী, যার কাছে কোরবানি ঈদের দিনগুলোতে এই পরিমাণ সম্পদ (নগদ টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য, সোনা-রুপা ইত্যাদি) অতিরিক্ত হিসেবে থাকবে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।

অতএব, যৌথ পরিবারে যদি একাধিক উপার্জনক্ষম সদস্য থাকেন এবং তাদের প্রত্যেকের কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে প্রত্যেককে আলাদাভাবে কোরবানি দিতে হবে। একজনের কোরবানি দ্বারা অন্যজনের ওয়াজিব আদায় হবে না। এটি কেবল আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের একটি ব্যক্তিগত ইবাদত।

             এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি, যাতে কোরবানির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সঠিকভাবে পালিত হয়। 

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

 

নিজের কোরবানি না দিয়ে বাবা-মায়ের নামে কোরবানি দেওয়ার বিধান কী?

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
নিজের কোরবানি না দিয়ে বাবা-মায়ের নামে কোরবানি দেওয়ার বিধান কী?
কোরবানির পশুর ছবি । সংগৃহীত

ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়, তবে তাকে অবশ্যই নিজের কোরবানি আদায় করতে হবে। অন্য কারো পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়ে নিজের ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয় না। ওয়াজিব কোরবানি আদায় না করে শুধুমাত্র বাবা-মায়ের নামে কোরবানি দেওয়া শরিয়তসম্মত নয়। আদ্দুররুল মুখতারের মতো নির্ভরযোগ্য ফিকহ গ্রন্থগুলোতেও এই বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে (আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮)।

বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে কোরবানি কখন দিবে
নিজের ওয়াজিব কোরবানি আদায় করার পর, যদি আপনার আর্থিক সামর্থ্য থাকে, তবে আপনি ঐচ্ছিকভাবে আপনার বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে আলাদা কোরবানি দিতে পারবেন। এটি সওয়াবের কাজ এবং বাবা-মায়ের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ। কিন্তু কোনোভাবেই নিজের ওয়াজিব কোরবানি বাদ দিয়ে এই ঐচ্ছিক কোরবানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে না।

তাই, কোরবানির সময় প্রতিটি মুসলমানের উচিত, নিজের ওপর ওয়াজিব হয়েছে কিনা তা যাচাই করে সে অনুযায়ী প্রথমে নিজের কোরবানি নিশ্চিত করা। এরপর যদি অতিরিক্ত সামর্থ্য থাকে, তবেই বাবা-মায়ের নামে কোরবানি দেওয়ার কথা বিবেচনা করা উচিত। এতে শরিয়তের বিধানও পালিত হবে এবং সওয়াবও পূর্ণ হবে।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কখন আপনার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ১১:১২ এএম
কখন আপনার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে?
আলোচনায়রত দুই মুমিনের ছবি । সংগৃহীত

শুধু জিলহজের ১০ তারিখে কোরবানির নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে না বলে ধারণা করা হয়। ফলে জিলহজের ১১ বা ১২ তারিখে কারো কাছে হঠাৎ কোনভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদ আসলে সে আর কোরবানি করে না। যেমন, যে অবিবাহিত মেয়ের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয় কোরবানির পরদিন তথা যিলহজ্বের ১১ তারিখে তার বিয়ে হল, সেদিন স্বামী তাকে স্বর্ণ, টাকা-পয়সা ইত্যাদি দিলে, যা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি। তখন সে এই ভেবে কোরবানি করে না যে, কোরবানির দিন তো অতিবাহিত হয়ে গেছে। এধারণা ভুল। মাসআলা হলো, জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে ১২ তারিখ সূযার্স্ত পর্যন্ত মোট তিন দিন কোরবানি করা যায়। এ তিন দিনের মধ্যে যেকোন সময় কেউ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকেই কোরবানি দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮; আলমগীরী ৫/২৯৫)

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ১১:১১ এএম
কাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব?
দুই মুমিনের আলোচনার ছবি। সংগৃহীত

অনেকে মনে করেন, যাকাত ফরয হওয়ার জন্য যে ধরনের সম্পদ জরুরি যেমন, টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক সম্পদ, তেমনি কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্যও একই শর্ত। ফলে কোন কোন সচ্ছল পরিবারের লোকজনকেও কোরবানি দিতে দেখা যায় না। এটি ভুল ধারণা। সঠিক মাসআলা হল, যে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিকট কোরবানির দিনগুলোতে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যেকোন ধরনের সম্পদ থাকবে তার ওপরই কোরবানি ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কোরবানির পশু জবাইকারীকে কোন পারিশ্রমিক দিতে হবে কী?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
কোরবানির পশু জবাইকারীকে কোন পারিশ্রমিক দিতে হবে কী?
কোরবানির পশু জবাইকারার প্রস্তুতির ছবি। সংগৃহীত

কোরবানি আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহান ইবাদত। এই ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। কোরবানির পশু জবাই করার পর জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া প্রসঙ্গে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন। এ বিষয়ে ইসলামের বিধান অত্যন্ত পরিষ্কার।

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, কোরবানির পশু জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া জায়েজ। অর্থাৎ, আপনি আপনার কোরবানির পশু জবাই করার জন্য কাউকে নিযুক্ত করলে তাকে তার শ্রমের বিনিময়ে অর্থ বা অন্য কোনো হালাল বস্তু পারিশ্রমিক হিসেবে দিতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। এটি শ্রমের মূল্যায়নের অন্তর্ভুক্ত।

তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কোরবানির পশুর কোনো অংশ, যেমন - গোশত, চামড়া, মাথা ইত্যাদি পারিশ্রমিক হিসেবে জবাইকারীকে দেওয়া যাবে না। এর কারণ হলো, কোরবানির পশু সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত। এর গোশত, চামড়া বা অন্য কোনো অংশ বিক্রি করা বা পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করা জায়েজ নয়। যদি এমনটা করা হয়, তাহলে কোরবানির উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। ফিকাহশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'কিফায়াতুল মুফতী' (৮/২৬৫) এবং 'খুলাসাতুল ফাতাওয়া' (৪/৩১৯) তে এই মাসআলাটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অতএব, কোরবানির পশু জবাইকারীকে তার কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দিতে চাইলে নগদ অর্থ প্রদান করা উচিত। কোরবানির পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। এই বিধান মেনে চললে আমাদের কোরবানি আল্লাহর দরবারে মাকবুল হবে ইনশাআল্লাহ।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক