ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

বৃষ্টির জন্য নামাজ কেন পড়বেন, কীভাবে পড়বেন?

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম
আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম
বৃষ্টির জন্য নামাজ কেন পড়বেন, কীভাবে পড়বেন?
বৃষ্টি প্রার্থনায় উন্মুক্ত মাঠে নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। খবরের কাগজ

আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রিয় বান্দার জন্য ভালোবাসার বার্তা বৃষ্টি। বৃষ্টির সফেদ নির্মল ফোঁটায় প্রভুর ভালোবাসা ভর করে নেমে আসে। রহমতের ধারা বইতে থাকে দুনিয়া জুড়ে। বৃষ্টির পবিত্র পানির স্পর্শে প্রশান্ত হয় মানবমন। যৌবন ফিরে পায় নদী-নালা, খাল-বিল। জীবন্ত উর্বর হয় খাঁ খাঁ রোদে পুড়তে থাকা মাটি। সতেজ সজীব হয় বৃক্ষ। পাখির হৃদয় জেগে ওঠে উষ্ণ অভ্যর্থনায়। পৃথিবী হয়ে ওঠে রঙিন সজীব ও প্রেমময়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সকল বিষয় জানেন।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৬৩)

বৃষ্টি প্রার্থনা বা ইসতিসকার নামাজ
বৃষ্টি না হলে দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। শুকিয়ে যায় নদী-খাল-জলাশয়। জীর্ণ হয়ে যায় গাছপালা, উদ্ভিদ ও তৃণলতা। ক্ষতি হয় ফসলের। কষ্ট হয় জীবজন্তু ও পশুপাখির। এমন বিপর্যয় ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়। অতীত গুনাহের ক্ষমা চাইতে হয়। এসব প্রার্থনা করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে বিনয়াবত হয়ে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা জানানো হলো ইসতিসকা। এটাকে ইসতিসকা বা বৃষ্টির প্রার্থনার নামাজ বলা হয়।

খরা দেখা দিলে রাসুলুল্লাহ (সা.) যা করতেন
রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, “একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হলো। ওই সময় একদিন জুমার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরে উপবিষ্ট হয়ে লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, ধনসম্পদ বরবাদ হয়ে গেল, সন্তান-সন্ততি ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছে, (অনাবৃষ্টির ফলে) ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দেন।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই হাত উঠিয়ে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের বৃষ্টি দিন।’ ক্ষণিকের মধ্যে পেছন থেকে ঢালের ন্যায় একখণ্ড মেঘ উদিত হলো। একটু পর তা মাঝ আকাশে এলে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হলো।” (বুখারি, হাদিস: ১০১৯; নাসায়ি, হাদিস: ১৫০৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে খরা দেখা দিলে তিনি সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে চলে যেতেন। দুই রাকাত নামাজ পড়তেন। নামাজ শেষে কিবলামুখী হয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে দোয়া করতেন। কাঁদতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এরপর আমাদের নিয়ে আজান-ইকামত ছাড়া দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজের পর খুতবা দিলেন এবং কিবলার দিকে ফিরে হাত তুলে দোয়া করলেন। এরপর চাদরের ডানের অংশ বাঁয়ে এবং বাঁয়ের অংশ ডানে পরিবর্তন করে দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১০২৭; নাসায়ি, হাদিস: ১৫২৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) পর সাহাবিরাও বৃষ্টি প্রার্থনায় নামাজ পড়তেন।

পূর্ববর্তী যুগে ইসতিসকার নামাজ
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগেও অন্যান্য নবি-রাসুল ও মুমিনরা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ পড়েছেন। নুহ (আ.)-এর সময়ে একবার বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে জাতির অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর নাফরমানি করত। নুহ (আ.) তাদের বৃষ্টি প্রার্থনার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১১)। বনি ইসরায়েলেও একবার পানি সংকটে পড়েছিল। তখন মুসা (আ.) পানির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৬০)। সোলায়মান (আ.)ও বৃষ্টির জন্য সদলবলে দোয়া করেছেন। (ইবনে আসাকির)

যেভাবে পড়বেন
ইসতিসকার নামাজ দুই রাকাত। এ নামাজের কোনো নির্ধারিত সময় নেই, নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যেকোনো সময় পড়া যাবে। তবে উত্তম হলো ঈদের নামাজের মতো সকালে সূর্যোদয়ের ২৩ মিনিট পরপরই পড়া। এ নামাজে কোনো আজান ও ইকামত নেই। সশব্দে তেলাওয়াত করতে হয়। জরাজীর্ণ পুরনো অথচ পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র পোশাক পরে উন্মুক্ত প্রান্তরে গিয়ে মুসল্লিরা জড়ো হবেন। অত্যন্ত বিনয়-নম্রতার সঙ্গে মাঠে যাবেন। ইমামের জন্য একটি মিম্বর নিয়ে যাওয়া ভালো। শিশু ও নারীদেরও এ নামাজে নিয়ে যাওয়া, তবে বৃদ্ধদের উপস্থিতি আরও উত্তম। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর সাতবার তাকবির দিতে হবে; আর দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর আগে পাঁচবার তাকবির দিতে হবে। প্রত্যেক তকবিরের সময় হাত ওঠাবে এবং তাকবিরগুলোর মাঝখানে সামান্য বিরতি নিয়ে আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ শরিফ পড়তে হবে। অনেকের মতে, এই তাকবিরগুলোর প্রয়োজন নেই। নামাজের পরে ইমাম সমভূমিতে দাঁড়িয়ে পরপর দুটি খুতবা দেবেন। খুতবায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তওবা-ইস্তেগফারের আয়াতগুলো পড়বে। দোয়ার সময় ইমাম মুসল্লিদের দিকে পিঠ দিয়ে কিবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করবে। দোয়ার সময় হাত যতটুকু সম্ভব ওপরে উঠিয়ে দোয়া করবে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন, তখন তার দুই বোগল পর্যন্ত নজরে আসত। দুই হাতের পিঠ ওপরে এবং তালু নিচের দিকে দিয়ে দোয়া করবে। সেসময় গায়ের চাদর বা রুমাল উল্টিয়ে পরবে।  (শরহুস সুন্নাহ লিল বাগাবি, ৪/৪০২)


লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

পানি সংরক্ষণে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনিদের্শনা

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম
পানি সংরক্ষণে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনিদের্শনা
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

বর্তমান যুগে পরিবেশের সমস্যাগুলোর মধ্যে পানি সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে পানির অভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আর এর কারণে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পানির অপচয় রোধ এবং পানি সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় হলো, ইসলাম এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষায় আমরা পাই এক সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা, যার মাধ্যমে আমরা পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে পারি।

 

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, পানির অপচয় শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি একটি বড় পাপও বটে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে দেখা যায়, যখন সাদ (রা.) অজু করছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে প্রশ্ন করেন, ‘এই অপচয় কেন?’ সাদ (রা.) বলেন, ‘অজুতেও কি অপচয় হতে পারে?’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, যদিও তুমি প্রবহমান নদীতে থাকো।‘ (সুনানুত তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৩৩)

 

এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিষ্কারভাবে বুঝিয়েছেন যে, পানি ব্যবহার করার সময়ও অপচয় থেকে বিরত থাকা জরুরি, যদিও তা একটি বহমান নদী হয়। কেননা, কোনো একটি প্রাকৃতিক সম্পদও অযথা অপচয় করা ইসলামিক শিক্ষায় অগ্রাহ্য। তিনি আমাদের শেখান যে, অল্প পরিমাণে পানি দিয়েও সঠিকভাবে অজু করা সম্ভব, যদি আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করি।

 

আরেকটি হাদিসে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সা (৪ মুদ) থেকে পাঁচ মুদ পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং অজু করতেন এক মুদ দিয়ে। (ফাহমুর রিয়াজি, পৃ. ২৮) এই পরিমাণ পানি খুবই কম, প্রায় ৭৯৬ মিলিলিটার পানি দিয়েই তিনি গোসল করতেন এবং অজু করতেন। এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) পানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শিক্ষা দিয়েছেন—কীভাবে অল্প পরিমাণে পানি দিয়েও শরীরের পবিত্রতা বজায় রাখা সম্ভব। এটি আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। আজ আমরা যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদগুলো যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছি, সেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। যদি আমরা ইসলামিক শাসনব্যবস্থার শিক্ষা অনুসরণ করি, তবে আমরা বিশ্বের যেকোনো সংকটকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব। বিশেষত পানির অপচয় রোধ করতে এবং পানি সংরক্ষণে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। অতএব আসুন, আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই মহান সুন্নাহ অনুসরণ করে সুস্থ, সুন্দর এক পৃথিবী গড়ি ।

 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

স্বপ্নে মসজিদ দেখা কিসের ইঙ্গিত?

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
স্বপ্নে মসজিদ দেখা কিসের ইঙ্গিত?
দৃষ্টিনন্দন মসজিদের ছবি। সংগৃহীত

স্বপ্ন মানবমনের রহস্যময় জগৎ, যা আমাদের ভেতরের অনুভূতি, ভবিষ্যতের পূর্বাভাস এবং আধ্যাত্মিক উপলব্ধির বার্তা বহন করে। ইসলামে, মসজিদ বা কাবার মতো পবিত্র স্থান স্বপ্নে দেখা অত্যন্ত শুভ ও তাৎপর্যপূর্ণ। মসজিদ কেবল ইবাদতের স্থান নয়, এটি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চাবিকাঠি এবং আখিরাতের পথের দিশারি। 

স্বপ্নে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষের আগমন এবং অবাধে প্রবেশ করার সুযোগ— এসবই কল্যাণ ও বরকতের লক্ষণ। মসজিদ আখিরাতের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, ঠিক যেমন ময়লার স্তূপ পার্থিব মোহ ও লোভের প্রতীক। স্বপ্নে মসজিদ কখনো পবিত্র কাবা শরিফ, ন্যায়বিচারের স্থান, জ্ঞানীর মজলিস, হজের মিলনক্ষেত্র বা সত্যের পথে জিহাদের ময়দানের প্রতীক হতে পারে। এটি মূলত সাওয়াব, সাহায্য ও কল্যাণের এক পবিত্র আশ্রয়স্থল।

যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে নিজেকে মসজিদ নির্মাণ করতে দেখে, তবে এর অর্থ হলো তার মধ্যে নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার বা জ্ঞান বিতরণের মতো গুণাবলি রয়েছে। স্বপ্ন অনুযায়ী, সে বিচারকের আসনে বসতে পারে, ফতোয়া দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে অথবা একজন বিদ্বান আলেম হিসেবে সমাজে সম্মানিত হতে পারে। লেখক বা প্রকাশকের জন্য এই স্বপ্ন তাদের জ্ঞান ও লেখনীর মাধ্যমে মানুষের উপকারিতার ইঙ্গিত দেয়। অবিবাহিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি বিবাহের শুভ সংবাদ বয়ে আনতে পারে।

তবে, যদি মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য জাগতিক হয়, যেমন ধনসম্পদ লাভ, তবে এর অর্থ দাঁড়ায় তার উপার্জনের পথ হবে ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী। এই নির্মাণকার্য কোনো কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্রামাগার বা দাতব্য ভাণ্ডারও হতে পারে, যা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে।

অন্যদিকে, স্বপ্নে মসজিদ ধ্বংস করতে দেখা একটি অশুভ লক্ষণ, যা ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। মসজিদের পবিত্র স্থানে দোকান বা গর্ত নির্মাণ করা আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ এবং দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়ার লক্ষণ। এটি পারিবারিক কলহ বা দাম্পত্য জীবনে অস্থিরতাও ডেকে আনতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, স্বপ্নে মসজিদ দেখা কেবল একটি সাধারণ স্বপ্ন নয়, বরং এটি আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের গভীর বার্তা বহন করে। এই স্বপ্ন আমাদের আত্মিক পথে আরও সতর্ক ও সচেতন হতে এবং আল্লাহর পথে অবিচল থাকতে উৎসাহিত করে। তবে এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.)-এর মূল্যবান ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

মধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরীক্ষিত ওষুধ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
মধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরীক্ষিত ওষুধ
মৌমাছি ও মধুর ছবি। সংগৃহীত

আমরা সবাই জানি, অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শেখালেন, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ব্যাধির প্রতিকার রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩০) এ জন্য সঠিক সময়ে ও যথাযথ উপায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, আর আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা আরোগ্য লাভ করব।

চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন হাদিসের মধ্যে একটি খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো মধু পান। মধু একটি বিশেষ উপাদান, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী, বিশেষত পেটের ব্যথায়। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ‘তাকে মধু পান করাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৮৬)

এই ঘটনা বারবার ঘটেছিল। লোকটি প্রথমবার মধু পান করলেও তাঁর পেটের ব্যথা সেরে ওঠেনি। তখন আবারও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে মধু পান করতে বলেছেন। দ্বিতীয়বারও যখন ফলপ্রসূ কিছু হয়নি, তখন তিনি তৃতীয়বারও একই নির্দেশ দেন। অবশেষে লোকটি আবার এসে জানালেন যে, মধু পান করার পর তাঁর পেট ভালো হয়ে গেছে। এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কিছু নির্দেশ দেন, তখন তার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা জরুরি।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু শারীরিক চিকিৎসা সম্পর্কেই বলেননি, বরং তিনি মধুর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন। একবার যদি মধু পান করা ফলপ্রসূ না হয়, তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় রোগের প্রতিকার হবে, তবে আমাদের বিশ্বাস থাকতে হবে।

কোরআনের সুরা নাহলে বলা হয়েছে, ‘তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৯) এটি মধুর উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে রোগের প্রতিকার পাওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই আয়াতের দ্বারা আমাদেরকে মধুর উপকারিতা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

মধু পান কেবলমাত্র একটি সুন্নাহ নয়, বরং এটি আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে, এর অর্থ এই নয় যে আমরা ডাক্তারদের কাছে যেতে নিষেধ। বরং ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত, সেই সঙ্গে মধু পান করা আমাদের জন্য একটি সুন্নাহ হিসেবে পালন করা উচিত, যাতে আমরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সুন্নাহ অনুসরণ করে বিরাট পুরস্কার অর্জন করতে পারি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইসলামের একটি মহৎ শিক্ষা

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইসলামের একটি মহৎ শিক্ষা
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর ছবি । সংগৃহীত

সমাজে শান্তি, সুরক্ষা এবং সহযোগিতা স্থাপন করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর মধ্যে এমন অনেক কাজ রয়েছে, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ ও সুন্দর করে তোলে। এক্ষেত্রে এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না- এই অজুহাতে অনেকে এড়িয়ে যান। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উৎসাহিত করেছেন আমাদের নিজেদের ছোট ছোট উদ্যোগ দিয়ে সমাজকে আরও সুন্দর, মানবিক ও সুষ্ঠু করে তুলতে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহর হলো পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো একটি সদকা। (সহিহ বুখারি, ২৮২৭) অর্থাৎ, আমরা যখন রাস্তার ওপর পড়ে থাকা কাঁটা, পাথর বা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বস্তু সরিয়ে দিই, তখন আল্লাহর কাছে তা একটি সদকা হিসেবে গণ্য হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শুধু একে অপরকে সাহায্য করার জন্য উৎসাহিত করেননি, বরং সমাজে এমন কাজ করার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন, যেগুলোতে কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট উপকারিতার পরিচয় থাকে না। যেমন রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো। এ কাজটি করতে গিয়ে একজন ব্যক্তির কোনো প্রত্যাশা বা নিজের সুবিধার উদ্দেশ্য থাকতে পারে না, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দেহের প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে মানুষের সদকা আদায় করা কর্তব্য, সূর্য ওঠে এমন প্রতিদিন দুই ব্যক্তির মাঝে সুবিচার করা একটি সদকা, কাউকে সাহায্য করতে তাকে বাহনে উঠিয়ে দেওয়া বা তার মালপত্র তাতে তুলে দেওয়া একটি সদকা, ভালো কথা একটি সদকা, নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে গমনের প্রতিটি কদম একটি করে সদকা এবং পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা একটি সদকা (সহিহ মুসলিম, ১০০৯)

এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা শুধু নিজেরাই উপকৃত হই না, বরং সমাজের অন্য সদস্যদের জন্যও উপকারী হতে পারি। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো একদম সহজ একটি কাজ। কিন্তু এর মাধ্যমে আমাদের সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর কাছে অনেক পুরস্কার অর্জন করা যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি উল্লেখযোগ্য হাদিসে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি একদিন রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখে সেটি সরিয়ে রাখেন এবং আল্লাহতায়ালা তাঁর এই কাজের কারণে তাকে ক্ষমা করে দেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯১৪) কেবল একটি কাঁটাযুক্ত ডাল সরিয়েই একজন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে এত বড় পুরস্কার লাভ করেছেন! এটি আমাদের শেখায়, যে কাজটি সমাজে কোনো বড় পরিবর্তন আনতে পারে না বলে মনে হয়, সেটিও আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরস্কৃত হতে পারে।

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো শুধু একটি সুন্নাহ নয়, এটি একটি মহান সামাজিক দায়িত্ব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একটি উপায়। তাই আসুন, আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই মহান সুন্নাহ অনুসরণ করি এবং সমাজে শান্তি, সহযোগিতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে জেলখানা দেখার ব্যাখ্যা কী?

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে জেলখানা দেখার ব্যাখ্যা কী?
জেলখানার ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন মানুষের মনে নানা রহস্যের জাল বিছিয়ে রাখে। এর মধ্যে অন্যতম একটি রহস্যময় প্রতীক হলো— জেলখানা। ইসলামি তাফসির অনুযায়ী, জেলখানা একাধারে দুঃখ, শাস্তি, প্রতিবন্ধকতা, এমনকি কবরেরও প্রতীক হতে পারে।
তাফসিরুল আহলামের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে— জেলখানা যেমন অপরাধীদের আবাসস্থল, তেমনি জাহান্নামও অবাধ্যদের জায়গা। তাই কেউ যদি স্বপ্নে নিজেকে জেলখানায় দেখে, তবে তাকে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে।

যদি স্বপ্নদ্রষ্টা অসুস্থ হন এবং জেলখানা অপরিচিত হয়, তবে সেটি হতে পারে তার কবরের ইঙ্গিত— যেখানে সে কেয়ামত পর্যন্ত আবদ্ধ থাকবে। তবে যদি জেলখানাটি পরিচিত হয়, তা হলে সেটি ইঙ্গিত দেয়— তার অসুস্থতা দীর্ঘায়িত হবে, কিন্তু ভালো হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দুনিয়া হলো মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৯৫৬)

এ অনুযায়ী, দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টকেই অনেকে স্বপ্নে জেলখানার প্রতীক হিসেবে দেখতে পারেন। যদি স্বপ্নদ্রষ্টা কোনো গোনাহগার বা অপরাধী ব্যক্তি হন, তবে জেলখানা তার কবর বা জাহান্নামের ইঙ্গিত হতে পারে। তবে যদি সে তওবা করে বা সুস্থ হয়, তবে মুক্তির সম্ভাবনা থাকে।

স্বপ্নে জেলখানায় নিজেকে দেখা সুস্থ ব্যক্তির জন্যও সতর্কতা বয়ে আনতে পারে। যদি সে সফররত হয়, তবে তার ভ্রমণে বৃষ্টি, ঝড়, শত্রু বা কোনো বাধা আসতে পারে। আর যদি সে ভ্রমণরত না থাকে, তবে সে এমন কোনো জায়গায় প্রবেশ করতে পারে যেখানে আল্লাহর অবাধ্যতা হচ্ছে— যেমন গির্জা, মদের আসর বা অন্য কোনো পাপের স্থান।

তবে সব ব্যাখ্যাই নেতিবাচক নয়। কেউ যদি স্বপ্নে দেখে যে, সে নিজেই নিজের জন্য জেলখানা তৈরি করেছে বা তা নির্বাচন করেছে, তবে তাতে ভালো দিকও থাকতে পারে। এর মানে হতে পারে— তার স্ত্রী তাকে ভালোবাসে, তার মঙ্গল কামনা করে এবং আল্লাহ তাকে স্ত্রীর কোনো ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন।

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে— সাবুর ইবনে আরদাশির একবার স্বপ্নে দেখেন, তিনি জেলখানা নির্মাণ করছেন এবং সেখানে পারস্য থেকে বানর ও শূকর ধরে আনছেন। সঙ্গে ছিল ৩১টি মুকুট। পরবর্তী সময়ে একজন স্বপ্নবিশারদ এই স্বপ্নের গভীর ও প্রতীকী ব্যাখ্যা দেন।

স্বপ্নে জেলখানা দেখা সর্বদা খারাপ নয়, আবার একে হালকাভাবে নেওয়াও ঠিক নয়। এটি হতে পারে অন্তরের পাপের প্রতিচ্ছবি, দুনিয়ার সীমাবদ্ধতার চিত্র কিংবা আখিরাতের ভয়াবহ এক সংকেত। তবে আল্লাহর রহমত থেকে কখনো হতাশ হওয়া উচিত নয়। 

 

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.)-এর মূল্যবান ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক