বৃষ্টির জন্য নামাজ কেন পড়বেন, কীভাবে পড়বেন? । খবরের কাগজ
ঢাকা ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

বৃষ্টির জন্য নামাজ কেন পড়বেন, কীভাবে পড়বেন?

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম
বৃষ্টির জন্য নামাজ কেন পড়বেন, কীভাবে পড়বেন?
বৃষ্টি প্রার্থনায় উন্মুক্ত মাঠে নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। খবরের কাগজ

আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রিয় বান্দার জন্য ভালোবাসার বার্তা বৃষ্টি। বৃষ্টির সফেদ নির্মল ফোঁটায় প্রভুর ভালোবাসা ভর করে নেমে আসে। রহমতের ধারা বইতে থাকে দুনিয়া জুড়ে। বৃষ্টির পবিত্র পানির স্পর্শে প্রশান্ত হয় মানবমন। যৌবন ফিরে পায় নদী-নালা, খাল-বিল। জীবন্ত উর্বর হয় খাঁ খাঁ রোদে পুড়তে থাকা মাটি। সতেজ সজীব হয় বৃক্ষ। পাখির হৃদয় জেগে ওঠে উষ্ণ অভ্যর্থনায়। পৃথিবী হয়ে ওঠে রঙিন সজীব ও প্রেমময়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সকল বিষয় জানেন।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৬৩)

বৃষ্টি প্রার্থনা বা ইসতিসকার নামাজ
বৃষ্টি না হলে দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। শুকিয়ে যায় নদী-খাল-জলাশয়। জীর্ণ হয়ে যায় গাছপালা, উদ্ভিদ ও তৃণলতা। ক্ষতি হয় ফসলের। কষ্ট হয় জীবজন্তু ও পশুপাখির। এমন বিপর্যয় ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়। অতীত গুনাহের ক্ষমা চাইতে হয়। এসব প্রার্থনা করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে বিনয়াবত হয়ে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা জানানো হলো ইসতিসকা। এটাকে ইসতিসকা বা বৃষ্টির প্রার্থনার নামাজ বলা হয়।

খরা দেখা দিলে রাসুলুল্লাহ (সা.) যা করতেন
রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, “একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হলো। ওই সময় একদিন জুমার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরে উপবিষ্ট হয়ে লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, ধনসম্পদ বরবাদ হয়ে গেল, সন্তান-সন্ততি ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছে, (অনাবৃষ্টির ফলে) ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দেন।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই হাত উঠিয়ে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের বৃষ্টি দিন।’ ক্ষণিকের মধ্যে পেছন থেকে ঢালের ন্যায় একখণ্ড মেঘ উদিত হলো। একটু পর তা মাঝ আকাশে এলে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হলো।” (বুখারি, হাদিস: ১০১৯; নাসায়ি, হাদিস: ১৫০৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে খরা দেখা দিলে তিনি সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে চলে যেতেন। দুই রাকাত নামাজ পড়তেন। নামাজ শেষে কিবলামুখী হয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে দোয়া করতেন। কাঁদতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এরপর আমাদের নিয়ে আজান-ইকামত ছাড়া দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজের পর খুতবা দিলেন এবং কিবলার দিকে ফিরে হাত তুলে দোয়া করলেন। এরপর চাদরের ডানের অংশ বাঁয়ে এবং বাঁয়ের অংশ ডানে পরিবর্তন করে দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১০২৭; নাসায়ি, হাদিস: ১৫২৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) পর সাহাবিরাও বৃষ্টি প্রার্থনায় নামাজ পড়তেন।

পূর্ববর্তী যুগে ইসতিসকার নামাজ
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগেও অন্যান্য নবি-রাসুল ও মুমিনরা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ পড়েছেন। নুহ (আ.)-এর সময়ে একবার বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে জাতির অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর নাফরমানি করত। নুহ (আ.) তাদের বৃষ্টি প্রার্থনার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১১)। বনি ইসরায়েলেও একবার পানি সংকটে পড়েছিল। তখন মুসা (আ.) পানির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৬০)। সোলায়মান (আ.)ও বৃষ্টির জন্য সদলবলে দোয়া করেছেন। (ইবনে আসাকির)

যেভাবে পড়বেন
ইসতিসকার নামাজ দুই রাকাত। এ নামাজের কোনো নির্ধারিত সময় নেই, নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যেকোনো সময় পড়া যাবে। তবে উত্তম হলো ঈদের নামাজের মতো সকালে সূর্যোদয়ের ২৩ মিনিট পরপরই পড়া। এ নামাজে কোনো আজান ও ইকামত নেই। সশব্দে তেলাওয়াত করতে হয়। জরাজীর্ণ পুরনো অথচ পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র পোশাক পরে উন্মুক্ত প্রান্তরে গিয়ে মুসল্লিরা জড়ো হবেন। অত্যন্ত বিনয়-নম্রতার সঙ্গে মাঠে যাবেন। ইমামের জন্য একটি মিম্বর নিয়ে যাওয়া ভালো। শিশু ও নারীদেরও এ নামাজে নিয়ে যাওয়া, তবে বৃদ্ধদের উপস্থিতি আরও উত্তম। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর সাতবার তাকবির দিতে হবে; আর দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর আগে পাঁচবার তাকবির দিতে হবে। প্রত্যেক তকবিরের সময় হাত ওঠাবে এবং তাকবিরগুলোর মাঝখানে সামান্য বিরতি নিয়ে আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ শরিফ পড়তে হবে। অনেকের মতে, এই তাকবিরগুলোর প্রয়োজন নেই। নামাজের পরে ইমাম সমভূমিতে দাঁড়িয়ে পরপর দুটি খুতবা দেবেন। খুতবায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তওবা-ইস্তেগফারের আয়াতগুলো পড়বে। দোয়ার সময় ইমাম মুসল্লিদের দিকে পিঠ দিয়ে কিবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করবে। দোয়ার সময় হাত যতটুকু সম্ভব ওপরে উঠিয়ে দোয়া করবে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন, তখন তার দুই বোগল পর্যন্ত নজরে আসত। দুই হাতের পিঠ ওপরে এবং তালু নিচের দিকে দিয়ে দোয়া করবে। সেসময় গায়ের চাদর বা রুমাল উল্টিয়ে পরবে।  (শরহুস সুন্নাহ লিল বাগাবি, ৪/৪০২)


লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

অপবিত্র জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করা যাবে?

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
অপবিত্র জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করা যাবে?
চিকিৎসার সরঞ্জাম। ইন্টারনেট

ইসলাম কল্যাণের ধর্ম। মানুষকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার ধর্ম। এ ধর্মের প্রতিটি বিধান দেওয়া হয়েছে মানুষের ভালোর জন্য। মুসলমান যখন দুঃখ-কষ্ট পায়, বিনিময়ে গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা ও রোগ যা দিয়েই একজন মুমিন আক্রান্ত হোক, এমনকি কোনো উদ্বেগও যদি তাকে উদ্বিগ্ন করে, তবে আল্লাহতায়ালা এর বিনিময়ে তার গুনাহসমূহ (ছোট গুনাহ) মাফ করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩১৮)

এ কারণেই অসুস্থ অবস্থায় কোনো মুমিনের পাপে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। কারণ তাহলে পাপের কারণে ওই পুরস্কার ও সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হবে। অসুস্থ হলে কোনো নাপাক, অপবিত্র ও হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা নেওয়াও চরম ভুল। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা যেসব বস্তু হারাম করেছেন তাতে তিনি তোমাদের জন্য কোনো আরোগ্য রাখেননি। তার এ কথাটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ থেকেই সংগৃহীত।’ (মুসতাদরাক লিল হাকিম, হাদিস: ৭৫০৯)

আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ অপবিত্র জিনিস দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৭০) হাদিসে ‘খবিস’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এ ব্যাপক শব্দের মধ্যে হারাম, অপবিত্র ও ঘৃণিত সব জিনিস অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বলা ব্যাপক অর্থবোধক শব্দগুলোর অন্যতম এটি। অর্থাৎ যত অপবিত্র বস্তু তাঁর যুগে ছিল অথবা পরবর্তীকালে উদ্ভব ঘটবে, সবই নিষিদ্ধের তালিকায় চলে আসবে। ফলে চিকিৎসা বা নিরাময় লাভে তা ব্যবহার করা যাবে না।

তারিক ইবনে সুওয়াইদ জুফি (রা.) একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে নিষেধ করলেন অথবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব খারাপ মনে করলেন। এরপর তারিক (রা.) বললেন, ‘আমি তো ওষুধ প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে মদ বানাই।’ তিনি বললেন, ‘এটি তো (রোগ নিরাময়কারী) ওষুধ নয়; বরং এটি নিজেই রোগ।” (মুসলিম, হাদিস: ১৯৮৪)

কেউ যদি হারাম বা অপবিত্র জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করতে একান্ত বাধ্য হয় এবং হারাম বা অপবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা না থাকে, তা হলে তার জন্য প্রয়োজন অনুপাতে হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসার অনুমতি রয়েছে। কারণ কোরআনে জীবন সংকটাপন্ন হলে হারাম জিনিস ভক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দুররুল মুখতার কিতাবে হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসার একটি সুস্পষ্ট মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। হারাম জিনিসের মাঝে চিকিৎসা সুনিশ্চিত হয় এবং এটি ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা না থাকে, তা হলে হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হবে। (আদ-দুররুল মুখতার, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২১০)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

সাহাবিদের আত্মত্যাগের অনন্য নজির তাবুক যুদ্ধ

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০৯:১৫ এএম
সাহাবিদের আত্মত্যাগের অনন্য নজির তাবুক যুদ্ধ
সৌদি আরবের মদিনা থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাবুক শহর। ইন্টারনেট

আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের হয়েছে কী যে, যখন তোমাদের আল্লাহর পথে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তোমরা আরও জোরে মাটি কামড়ে ধরো। তোমরা কি আখেরাতের স্থলে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি পছন্দ করো? আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী তো অতি সামান্য। তোমরা যদি যুদ্ধাভিযানে বের না হও, তাহলে তোমাদের ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হবে, আর তোমাদের স্থলে অন্য সম্প্রদায় আনা হবে (অথচ) তোমরা তার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৮-৩৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন মদিনায়। এর মধ্যে আত্মরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কয়েকটি যুদ্ধ করেছেন তিনি। সবগুলো যুদ্ধ করেছেন মদিনার সীমানায় কিংবা আশপাশে থেকে। এ যুদ্ধে যাবেন মদিনার বাইরে। যেতে হচ্ছে। সময়টি ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের নবম হিজরি। যুদ্ধটি তাবুকের যুদ্ধ।

তাবুক মদিনা ও দামেস্কের (সিরিয়া) মধ্যবর্তী একটি জায়গার নাম। মদিনা থেকে এটি ৬৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইসলামের বিরুদ্ধে আরবের কাফের ও মুনাফিকদের শেষ চেষ্টা ছিল এই যুদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দূত হারেস বিন উমায়ের (রা.)-কে হত্যার মধ্য দিয়ে রোমানদের বিরুদ্ধে তাবুক যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দূতের মাধ্যমে জানতে পারলেন, মুতা যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে চূড়ান্ত ফায়সালাকারী একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে পরাশক্তি রোম। শাম ও আরব সীমান্তে তারা বিশাল বাহিনী মোতায়েন করেছে। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় মদিনায়। নবিজি (সা.) সাহাবিদের বললেন, হিরাক্লিয়াসের আক্রমণের আগে আমরা আক্রমণ করব। মদিনার সব মুসলমানকে তৈরি হতে বললেন। এর আগে এমন রাজকীয় বাহিনীর মুখোমুখি তারা কোনো দিন হননি। মদিনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধও করেননি।

এদিকে মদিনায় তখন খেজুর পাকার মৌসুম চলছে। খেজুরের ভারে নুইয়ে আছে কাঁদিগুলো। মন ভালো হয়ে যায় এমন একটি দৃশ্য লেগে আছে বাগানগুলোয়। সময়মতো ঘরে খেজুর তুলতে পারলে এবার জীবন হবে অন্যরকম। তবে সময়মতো খেজুর ঘরে না তুলতে পারলে মুশকিলে পড়তে হবে। মদিনায় খাদ্যাভাবও দেখা দিয়েছে এর মধ্যে। তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

এদিকে তাবুক প্রান্তরে পৌঁছাতে হলে পাড়ি দিতে হবে দুর্গম মরুভূমি। যুদ্ধের রসদও তেমন নেই। এসবের মধ্যে শহর ছেড়ে এমন রাজকীয় বিশাল বাহিনীর মোকাবিলা করতে যাওয়া; বিরাট কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপারই বটে। কিন্তু রাসুলপ্রেমী সাহাবিরা সবকিছু পেছনে ফেলে ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নবিজির হাতে যুদ্ধের বাইয়াত নেন। অনেকে যুদ্ধে যেতে চাইলেন না। আল্লাহ তাদের মুনাফিকির পরিচয় সুস্পষ্ট করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ৩০ হাজার যোদ্ধা সাহাবির কাফেলা নিয়ে চললেন তাবুক প্রান্তের দিকে। হিরাক্লিয়াস মুসলমানদের এমন দুঃসাহসিক অভিযানের সংবাদ পেয়ে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিনা যুদ্ধেই আল্লাহ মুসলমানদের বিজয় দেন।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

জিনের সঙ্গে কি মানুষের বিয়ে হয়?

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
জিনের সঙ্গে কি মানুষের বিয়ে হয়?
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

আল্লাহতায়ালা প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। জিন জাতির মধ্যেও রয়েছে নর-নারীর জোড়া। মানুষের মতো তাদেরও রয়েছে বিয়েশাদি ও বাচ্চা প্রজননের নির্ধারিত প্রক্রিয়া। পবিত্র কোরআনে জান্নাতি রমণীদের কুমারিত্বের বর্ণনায় এসেছে যে, ‘তাদের কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি।’ (সুরা আর রহমান, আয়াত: ৫৬)

অনেকেই মনে করে জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়ে সম্ভব। আগে কখনো কখনো তাদের মাঝে বিয়ে হয়েছে। কোরআনের একটি আয়াত, সাহাবি এবং তাবিয়িদের থেকে কিছু বর্ণনা থেকে তারা এমনটা মনে করে থাকেন। আল্লাহ শয়তানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আর তুই তাদের (মানুষের) ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততির মধ্যে অংশীদার হ এবং তাদেরকে (মিথ্যা) প্রতিশ্রুতি দিতে থাক। তাদের প্রতি শয়তানের অঙ্গীকার ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৬৪)

সুদ ও হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও ব্যয় করার মাধ্যমে শয়তান মানুষের সম্পদে অংশীদার হয়। আর জিনা অথবা স্ত্রী সহবাসের সময় যারা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, শয়তান তাদের কর্মে অংশীদার হয়। ইমাম আল-হাকিমুত তিরমিজি মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘স্ত্রী সহবাস করার সময় যে ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, শয়তান তার সাথে স্ত্রী-সহবাসে লিপ্ত হয়।’ (নাওয়াদিরুল উসুল, আল-হাকিমুত তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৮৪)

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘ইয়েমেনের সাবা অঞ্চলের রানি বিলকিসের মা ছিল একজন দীর্ঘ কেশিনী নারী জিন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৩১৮৬০)

শরিয়তের বিধান সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে এ ধরনের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও ইতিহাসের পাতায় বর্ণনাগুলো উঠে এসেছে।

অধিকাংশ ফকিহ জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়েশাদি নিষেধ করেছেন; চাই সে পুরুষ হোক বা নারী। মানুষ ও জিন আলাদা জাতি। মৌলিক উপাদান ভিন্ন হওয়া এটির বড় প্রমাণ। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর অন্যতম একটি নিদর্শন হলো, তোমাদের থেকেই তিনি তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর সুদৃঢ় করেছেন তোমাদের পরস্পরের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা। নিশ্চয় এর মাঝে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য বহু নিদর্শন।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)

অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকেই তোমাদের জোড়া তৈরি করেছেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৭২)

এই দুই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেছেন, ‘আল্লাহ পুরুষের সঙ্গী হিসেবে নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন সমগোত্রীয় এবং একই উপাদান থেকে।’

আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর কাছে ইয়েমেনের এক সম্প্রদায় জিজ্ঞাসা করে, “একটি পুরুষ জিন আমাদের গোত্রের এক নারীর ব্যাপারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, ‘তারা ভেবেছিল এ ধরনের বিয়ে হালাল হবে।’ আমরা কি তা কবুল করব।’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি তা ভীষণ অপছন্দ করি। এর দ্বারা বরং ফিতনাই বৃদ্ধি পাবে। কারণ যখন কোনো গর্ভবতী নারীকে জিজ্ঞাসা করা হবে এটা কার সন্তান? সে বলবে জিনের।’ (রুহুল মায়ানি, আল্লামা আলুসি, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ১৮৪)

আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর মতে, ‘কেউ কেউ জিনের সঙ্গে বিয়েকে হারাম না বলে অপছন্দনীয় বলেছেন।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া, খণ্ড: ১৯, পৃষ্ঠা: ৩৯)। জিন জাতি আল্লাহর মাখলুকের মধ্য থেকে একটি মাখলুক। মহান আল্লাহ তাদের রব।

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

মূর্খদের এড়িয়ে চলতে হয় যে কারণে

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১০:১২ এএম
মূর্খদের এড়িয়ে চলতে হয় যে কারণে
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো তা দিয়ে, যা উৎকৃষ্টতর। ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে যেন হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হামিম সিজদা, আয়াত: ৩৪-৩৫)

মানুষ সামাজিক জীব। একা চলতে পারে না। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। ওঠাবসা করতে হয়। বহুজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মুমিন মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় ভদ্রতা বজায় রাখে। সুন্দর আচরণ করে। কিন্তু কখনো মুমিন বান্দার এমন লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে যায়, যাদের মধ্যে ভদ্রতার লেশমাত্রও থাকে না। এ ধরনের লোকদের মুখোমুখি হলে কী করবে তারা, এ নিয়ে ভাবনায় পড়ে যায় অনেক সময়। ইসলামের নির্দেশনা হলো, মূর্খদের এড়িয়ে যেতে হবে। তারা তর্ক করলে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। এটাই সুন্নাহ।

মূর্খ হচ্ছে, যারা তর্ক করার সময় বা কথা বলার সময় নিজের বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগাতে চায় না। ফলে সদুপায়ে তাদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে সমাধানে পৌঁছার সুযোগ থাকে না। তাই নিজের স্বাভাবিক আচরণ ও ভদ্রতা বজায় রাখতে তাদের এড়িয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবি,) আপনি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করুন, (মানুষকে) সৎকাজের আদেশ দিন এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৯৯)

এখানে তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলা হয়নি; বরং তাদের সঙ্গে অযথা কথা না বাড়িয়ে যথাসম্ভব তাদের এড়িয়ে চলার ব্যাপারটি বলা হয়েছে। স্বাভাবিক আচরণবিধির গণ্ডি পেরিয়ে যেসব লোক এ ধরনের আচরণ করে তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে, হাদিসে তার বিবরণ এসেছে। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, “এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার আত্মীয়স্বজন আছে। আমি তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করি, কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে মূর্খতাসুলভ আচরণ করে।’ তিনি বললেন, ‘তুমি যা বললে, যদি প্রকৃত অবস্থা এমনই হয়, তা হলে তুমি যেন তাদের ওপর গরম ছাই নিক্ষেপ করছ। সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী (ফেরেশতা) থাকবে, যত দিন তুমি এই অবস্থায় বহাল থাকবে।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৫৮)

মূর্খদের এড়িয়ে চলার উপায় হচ্ছে, তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা; তাদের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত না হওয়া। তাদের কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য এর চেয়ে কার্যকর ওষুধ নেই; তাদের শত্রুতা প্রতিরোধের এর চেয়ে উত্তম উপায় নেই। তাদের এড়িয়ে চলার মধ্যেই মুমিনদের প্রশান্তি ও মর্যাদা আছে।


লেখক: আলেম ও গবেষক

মানুষের ওপর কি জিনদের বদনজর পড়ে?

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম
মানুষের ওপর কি জিনদের বদনজর পড়ে?
ইংরেজিতে 'জিন' লেখা ছবি। ইন্টারনেট

মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহতায়ালা জিনদের সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো কাদামাটি থেকে, যা শুকিয়ে ঠনঠনে হয়েছিল। আর তাদের আগে জিনকে সৃষ্টি করেছি লেলিহান অগ্নিশিখা থেকে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ২৬-২৭)। এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, মানবজাতির আগেই জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে, ঠিক কতদিন আগে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

মানুষের ওপর জিনের বদনজর পড়ে কি না, এ ব্যাপারে অনেক লোকাচার রয়েছে। বদনজর দুইভাবে হয়ে থাকে। এক. মানুষের থেকে। দুই. জিনের থেকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বদনজরের বিষয়টি সত্য।’ (মুসলিম, হাদিস: ২১৮৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘বদনজরের ব্যাপারটি সত্য। যদি কোনো কিছু ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারত, তবে বদনজরই পারত।’ (মুসলিম, হাদিস: ২১৮৮)

মানুষের মধ্যে অনেকে আছেন, বদনজরের বিষয়টি অস্বীকার করতে চান। তারা এটি নিয়ে বেশ কড়া কথা বলেন। কিন্তু হাদিস থেকে বোঝা যায়, নজর সত্য। ফলে প্রত্যেক মুসলিম হৃদয় বিনাবাক্যে মেনে নেয় ব্যাপারটি। উরওয়া ইবনে জুবাইর (রা.) বলেন, ‘একদিন নবিজি (সা.) উম্মে সালামার ঘরে চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে এমন একজন দাসীকে দেখত পান। তখন তিনি উম্মে সালামাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই দাসীকে রুকইয়া অর্থাৎ ঝাড়ফুঁক করাও, তার বদনজর লেগেছে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৯)

ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ‘বদনজর জিন ও মানুষ উভয়ের থেকেই লাগতে পারে।’ (মুসনানে আহমাদ, হাদিস: ৯৬৬৮)

ইমাম আহমাদ (রহ.) আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বদনজর সত্য, যা শয়তান ও হিংসুক বনি আদমের কারণে হয়।’ (ফাতহুল বারি, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ২০২)

বদনজর থেকে বাঁচতে সব সময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে বদনজর থেকে বাঁচা যেতে পারে। যদি কেউ বদনজরে আক্রান্ত হয়ে যায়, তা হলে তাকে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে রুকইয়া তথা ঝাড়ফুঁক করা যেতে পারে। রুকইয়ার মাধ্যমে বদনজর থেকে পরিত্রাণের কথা হাদিসে পাওয়া যায়।

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক