শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত প্রকৃতির হাতেই আমরা লালিত-পালিত হই। সেই প্রকৃতি তথা পৃথিবী আজ চরম দুর্দশায়। এখানে উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। বিজ্ঞানীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে পৃথিবী। প্রতিটি দেশেই কোথাও চরম খরা, কোথাও ভয়াবহ বন্যা হয়েই চলেছে! সবাই মিলে কি দায়িত্ব নেওয়া যায় না পৃথিবীর?
আজ আরও একটি পৃথিবী বা ধরিত্রী দিবস। সুন্দর এ পৃথিবীকে বাঁচাতে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার দিন। অনেকেই জানেন না যে ধরিত্রী দিবস বলে কিছু আছে। কী-ই বা তার তাৎপর্য। আসুন এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্বজুড়ে আজ ২২ এপ্রিল পালিত হচ্ছে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। এবার এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্ল্যানেট বনাম প্লাস্টিক’। পরিবেশ দূষণ থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোই এ দিবস পালনের আসল উদ্দেশ্য। প্লাস্টিক ও দূষণমুক্ত সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য সচেতনতা তৈরি করাই এবারের প্রতিপাদ্যের মূল কথা।
১৯৭০ সালে মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন ধরিত্রী দিবসের প্রচলন করেন। ওই বছরের ২২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শহরগুলোতে রাস্তায় নেমে এসেছিল প্রায় দুই কোটি মানুষ। তারা মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার প্রতিবাদ করেছিল। এ ঘটনাকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতেই জাতিসংঘ দিনটিকে ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
ধরিত্রী শব্দটি এসেছে ধরণী বা ধরা থেকে, যার অর্থ হলো পৃথিবী। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সর্বসম্মত ধার্য করার এ দিবসটি বর্তমানে ২০০টি দেশে প্রতিবছর পালিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর অনেক দেশেই সরকারিভাবে এই দিবস পালন করা হয়। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে বসন্তকালে আর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে শরতে ধরিত্রী দিবস পালিত হয়।
ধরিত্রী দিবসের অন্যতম সংগঠক হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ডেনিস হায়েসের মতে, ধরিত্রী দিবস হলো- ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মনিরপেক্ষ ছুটির দিন, বিশ্বে ১০০ কোটির বেশি মানুষ প্রতিবছর এ দিনটি উদযাপন করে।’
১৯৭০ সালে আমেরিকান অ্যানিমেটর ওয়াল্ট কেলি তার তৈরি পোগো চরিত্র দিয়ে দূষণবিরোধী পোস্টার বানিয়েছিলেন। এর সঙ্গে উদ্ধৃতি ছিল- ‘আমরা আমাদের শত্রুকে খুঁজে পেয়েছি এবং সে আমরাই’ (উই হ্যাভ মিট দ্য এনিমি অ্যান্ড হি ইজ আস)।
আর্থ ডে ডট ওআরজির প্রেসিডেন্ট ক্যাথলিন রোজার্স বলেন, ধরিত্রী দিবস উদযাপন মানে হলো পরিবেশবিষয়ক আন্দোলনে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণ।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৯৯০ সালে দিবসটি আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে। ওই বছর ১৪১টি দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষ এ দিবসটিকে উৎসবের আদলে পালন করে। একই ধরনের আরেকটি উৎসব পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবসে। জাতিসংঘের উদ্যোগে ৫ জুন এটি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পালিত হয়। ২০১৬ সালে ধরিত্রী দিবসে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ ১২০টি দেশ একটি দিকনির্দেশনামূলক প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে ঐতিহাসিক আবহাওয়া রক্ষা চুক্তির একটি আসল রূপ পায়। ২০১৭ সালে ধরিত্রী দিবস পালিত হয়েছিল বিজ্ঞানের জন্য পদযাত্রা হিসেবে। এমন থিম থেকে মানুষ আবহাওয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে সক্ষম হয়।
এবারের (২০২৪ সাল) প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘প্ল্যানেট ভার্সেস প্লাস্টিক’। এর বাংলা করলে দাঁড়ায়- ‘গ্রহ বনাম প্লাস্টিক’। প্লাস্টিক দূষণের সঙ্গে লড়াই করে এ পৃথিবী যে এগিয়ে চলেছে, সেটিই এখানে উঠে এসেছে। প্লাস্টিক প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন হওয়া জরুরি। তবেই এবারের প্রতিপাদ্য সার্থক হবে। সুন্দর এ পৃথিবীটাও হবে আরও সুন্দর এবং আরও বাসযোগ্য।