ভার্চুয়াল জগতে সক্রিয় জঙ্গিরা । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

ভার্চুয়াল জগতে সক্রিয় জঙ্গিরা

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ১১:৩৫ এএম
ভার্চুয়াল জগতে সক্রিয় জঙ্গিরা
প্রতীকী ছবি

দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে সক্রিয় হয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে কমপক্ষে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) সূত্রমতে, ২০২৩ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ১২০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গি কাজে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে আটকের সংখ্যা বেশি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, বর্তমানে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গোপন অ্যাপস ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ প্রচার ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার ও আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে তারা।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নরসিংদী জেলার বেলাব থানার নারায়ণপুর ইউপির দুলালকান্দি এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সক্রিয় সদস্য মহিন উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোছা. শিরিন আক্তার জাহান বলেন, ‘মহিন জঙ্গিদের প্রতিনিধি হিসেবে নরসিংদী জেলার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে তথাকথিত খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম করে আসছিলেন।’

এদিকে ২২ এপ্রিল রবিবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে মো. শরীফ উল্যাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন দায়িত্বশীল নেতা। অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা জানান, শরীফকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তিনি পুলিশের উদ্দেশে হামলার পরিকল্পনা করেন। শরীফ নিজেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে উগ্রবাদী প্রচার চালাতেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি একাধিকবার স্থান পরিবর্তন করেন। দীর্ঘদিন নজরদারিতে রেখে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে ১৪ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও জেলায় এক অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইন, পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত জঙ্গি মো. শাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থেকে বিভিন্ন জেলায় জঙ্গিবাদী আদর্শ ছড়ান। তিনি প্রথমে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন।

জঙ্গিরা সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইমু, ভাইভারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে বলে দাবি করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সাবেক পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে র‌্যাবের সাফল্য রয়েছে। তবে সংস্থাটি কোনো আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে না। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সাইবার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গিদের কার্যক্রমেও নজরদারি রাখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে এটিইউর এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা বসে নেই। সাম্প্রতিক সময় দেখা যাচ্ছে, তারা অনলাইনে অ্যাকটিভ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নতুন সদস্য ও সমর্থক সংগ্রহ করতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটিইউর অনলাইনে প্যাট্রোলিংয়ের মাধ্যমে এসব বিষয় দেখা যাচ্ছে। প্যাট্রোলিংয়ের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো আরও ভয়াবহ।

জঙ্গি তৎপরতা ও সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জঙ্গিরা একশ্রেণির মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তাদের পক্ষ নেয়। এদের কাজ হলো উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার চেষ্টা। এরা যেকোনো সময় সক্রিয় হতে পারে।’

অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মাহফুজুল আলম রাসেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘জঙ্গিরা সম্প্রতি তাদের সাংগঠনিক ও নানা বিষয় নিয়ে তৎপর হয়েছে। আমাদের সাইবার ইউনিটও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। জঙ্গিরা যাতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে, সেই বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।’

ডলারের সরবরাহ বাড়াতে নানামুখী কৌশল

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ০২:২০ পিএম
ডলারের সরবরাহ বাড়াতে নানামুখী কৌশল
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আড়াই বছর ধরে চলে আসা ডলারসংকট এই মুহূর্তে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যে এক অস্থিরতা তৈরি করেছে। এর প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষয় হয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। আর এ ক্ষয় ঠেকাতে আমদানি ব্যয়বহুল ও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ফলে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের মুনাফা প্রত্যাবাসন করতে পারছেন না এবং নতুন বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহে ভাটা পড়েছে। এ সমস্যাকে এক্সটার্নাল সেক্টর ভলাটিলিটি বা বৈদেশিক খাতের অস্থিরতা নাম দিয়ে এটিকে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ডলারসংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজার, শিল্প, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন জোর করে টাকার দর ধরে রাখা হয়েছিল। ভারতের মতো স্থিতিশীল অর্থনীতিতে যেখানে দরপতন হয়েছে ঢের বেশি, সেখানে বাংলাদেশে টাকার মান জোর করে ধরে রাখার পরিণতিতে বর্তমান দুঃসময় এসেছে।

এদিকে শীর্ষ অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মনে ডলারসংকট নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল। সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও নীতিনির্ধারণীতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতি। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরকালে গত বুধবার এ ব্যাপারে জানতে চান কবে নাগাদ তার দেশের ব্যবসায়ীরা এ দেশে আয়ের অর্থ নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে পারবেন। 

এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সরকার কর্তৃক রেমিট্যান্সের দেওয়া প্রণোদনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেরও সমপরিমাণ প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ব্যাংকগুলো তাদের অফশোর হিসাবে সঞ্চিত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রেখে টাকা নিতে পারার সুবিধা সৃষ্টি যা টাকা-ডলার বিনিময় করার মাধ্যমে তারল্য সুবিধা দেওয়া, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালার উদারীকরণ এবং সর্বশেষ ডলারের দর ৭ টাকা অবমুল্যায়ন করা হয়।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এসব ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের সরবরাহ বাড়াতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই নেতাদের বলেছেন যে ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম খবরের কাগজকে গতকাল শনিবার বলেন, ‘আমরা গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানিয়েছি যে ডলারের সংকটে ব্যবসা ও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি (গভর্নর) আমাদের বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুল আলম মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি মনে করি এসব ব্যবস্থা কাজে আসবে এবং আগামী দিনে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।’

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের মে-জুন সময়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬৩৯ কোটি বা ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এরপর ২০২২ সালের মে-জুনে ওই রিজার্ভ কমে হয় ৪ হাজার ১৮২ কোটি বা ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের মে-জুনে এসে রিজার্ভ কমে হয় ৩ হাজার ১২০ কোটি বা ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের মে মাসে এসে রিজার্ভ আরও কমে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অর্থাৎ ১ হাজার ৮২৩ কোটি বা ১৮ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে। শতকরা হিসাবে রিজার্ভ ক্ষয় হয়েছে ৬০ শতাংশের বেশি।

এ সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের মে-জুন মাসে প্রতি ১ ডলার পাওয়া যেত ৮৬ টাকায়। পরের বছর ২০২২ সালের মে-জুনে সেই দর বেড়ে হয় ৯৩ টাকা, ২০২৩ সালের একই সময়ে তা বেড়ে হয় ১০৮ টাকা এবং ২০২৪ সালের মে মাসে এসে ডলারের দর আরও বেড়ে হয় ১১৭ টাকা। শতকরা হিসাবে দরপতনের এ হার ২৭ শতাংশের মতো।

এতদিন এ পরিস্থিতিতে অংশীজনদের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে নিয়ে শুধু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তা পুরোপুরি কাজে আসেনি। এবার ডলার সংগ্রহে সরাসরি অভিযানে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে এ লক্ষ্যে অফশোর ব্যাংকিং নীতিতে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টে দেশের শীর্ষ ব্যাংকারদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। এর একটি অনুষ্ঠান হলো অফশোর ব্যাংকিং জনপ্রিয় করার উদ্যোগ। আগামী ২৫ ও ২৬ মে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) হিসাবে আমানতে উৎসাহিত করতে আয়োজিত ‘রোড শো’তে যোগ দেবেন তারা।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আয়োজনে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধসংক্রান্ত অপর একটি কর্মসূচিতেও যোগ দেবেন বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তারা। শীর্ষ ব্যাংক নির্বাহীরা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পাচার হওয়া অর্থ নির্ভয়ে দেশে ফেরত আনতেও ক্যাম্পেইন চালাবেন।

দেশের প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার মাধ্যমে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসাহিত করার বিষয়টিও এ সফরে গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান এ দুটি কর্মসূচিতেই উপস্থিত থাকবেন। 

ডলারসংকট নিরসনে প্রথম উদ্যোগটি নেওয়া হয় গত বছরের (২০২৩ সালের) অক্টোবরে। এ সময় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) মাধ্যমে রেমিট্যান্স আয় কিনতে আগে থেকে সরকারের দেওয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও সমপরিমাণ বা ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ডলার সরবরাহ কিছুটা বাড়ে। কিন্তু ওই ব্যবস্থা টেকসই হয়নি। আবারও ভাটা পড়ে প্রবাসী আয়ে। দেশের বাজারে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার অনেকটা দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। মানি চেঞ্জারদের কাছেও ডলার দামি হয়ে ওঠে। কালো বা খোলাবাজারে ডলারের দর আরও বৃদ্ধি পায়। একপর্যায়ে খোলাবাজারে ১ ডলারের ক্রয়মূল্য হয় ১২৭-১২৯ টাকা পর্যন্ত। আমদানিতে প্রতি ডলার বেচাকেনা হয় ১২২-১২৩ টাকায়। 

এপ্রিলে ঈদুল ফিতরের পর ডলারের দরে তেজিভাব সামান্য কমে ১১৫ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্য আমদানি ও বেসরকারি খাতের প্রয়োজনীয় শিল্প আমদানি বাড়ায় ডলারের দর আবারও বাড়তে থাকে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পেগ-ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এবং ১১০ টাকার নির্ধারিত মূল্যের ডলার একসঙ্গে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। অর্থাৎ প্রতি ডলারের ক্রয়মূল্য হবে ১১৭ টাকা। এর সঙ্গে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা যোগ করলে রেমিট্যান্স ডলারের দর হয় ১২০ টাকা। এ বাড়তি দরের প্রভাব হিসেবে রেমিট্যান্স আয় বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

মানি চেঞ্জারদের জন্য নির্দেশনা

বাংলাদেশ ব্যাংক গত মঙ্গলবার মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দকে ডেকে বলে দিয়েছেন, নির্ধারিত ১১৭ টাকার সঙ্গে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা যোগ করে ডলারের দর সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা আদায় করতে পারবে। এর বেশি হলে লাইসেন্স বাতিল করার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেছেন, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে প্রতিদিন প্রায় দুই-তিন হাজার প্রবাসী যাতায়াত করে থাকেন। তারাই একটি বড় অংশের বৈদেশিক মুদ্রা স্থানীয় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সরবরাহ করেন। এভাবে প্রাপ্ত ভাসমান ডলারের প্রভাব মুদ্রাবাজারে বিস্তর। এর প্রভাবেই বিনিময় হারের ওঠানামা হয় বারবার। যখন যেমন চাহিদা, তেমন দর।

অফশোর ব্যাংকিং উদারীকরণ 

অফশোর ব্যাংকিং হিসাবে আমানত রাখা হলে তা করমুক্ত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় বিভিন্ন মেয়াদি স্থায়ী আমানতের সুদহার ৬ দশমিক ৮ থেকে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত। 

অফশোর আমানতের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের দেড় কোটি বা ১৫ মিলিয়ন প্রবাসী অফশোর হিসাবে অর্থ আমানত রাখতে পারেন। এটিকে বড় সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেনসহ সরকারের সমালোচনা করা অর্থনীতিবিদরা সর্বশেষ ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনকে একটি বাজারমুখী উদ্যোগ হিসেবে ইতিবাচক বলে বর্ণনা করেছেন। তারা আরও বলেছেন, এ উদ্যোগ আরও আগে দরকার ছিল। দেরিতে হলেও এটি মন্দের ভালো।

আইএমএফের সুপারিশ মানলে শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
আইএমএফের সুপারিশ মানলে শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে

ডলারসংকট চলছে। চাহিদামতো এলসি খোলার সুযোগ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীদের অনেকেই। শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় শিল্পের বিভিন্ন খাতে রাজস্ব অব্যাহতি হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য আইএমএফের চাপের বিরোধিতা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, সর্বস্তরে রাজস্ব বাড়ানোর চাপ বাস্তবায়ন করা হলে দেশের শিল্প খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

শিল্প খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে রাজস্ব বাড়ানো হলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষজ্ঞরাও একই মত জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, শিল্পের অনেক খাতেই রাজস্ব (কর, ভ্যাট ও শুল্ক) অব্যাহতি কমানো ও প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আর এতে কর, ভ্যাট ও শুল্ক বেড়ে যাবে। 

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে শিল্প খাতে কর, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি কমানো বা প্রত্যাহার করা হলে পণ্য আমদানিতে আগের চেয়ে ব্যয় বেশি হবে। শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়বে। ডলারসংকটের কারণে এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা বিপাকে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজেটে রাজস্ব আরও বাড়ানো হলে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশের ব্যবসায়ীরা কী চান তা এফবিসিসিআই থেকে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকেও আলাদাভাবে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। আমি আশা করি বাজেটে তার প্রতিফলন থাকবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মো. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি। সরকার এ শর্ত মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করে। এখন কর, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি কমাতে হবে। আর এতে শিল্প উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অনেক শিল্প লোকসানে পড়ার ঝুঁকিতে আছে।’

এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর, ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন বেশ জোরালোভাবেই। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবেদন করে রাজস্ব ছাড় সুবিধা বহাল রাখার অনুরোধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছে বাজেটে শিল্প খাতে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে রাজস্ব ছাড় কমানো হলেও অন্য কোনোভাবে যেন শিল্প রক্ষায় সুবিধা বহাল রাখা হয়। এনবিআর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সামনে রেখে এখন বাজেট চূড়ান্ত করার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, আসন্ন বাজেট নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে এনবিআরের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। আইএমএফ থেকে কর, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। এনবিআর চেষ্টা করেছে এ প্রস্তাব না মানতে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে এনবিআরকে এ পরামর্শ মানতে হচ্ছে। 

বর্তমানে কর অব্যাহতি অথবা হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের সুবিধা পাচ্ছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্য। ২২টি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০০৮-এর ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া আছে। আসন্ন বাজেটে রেফ্রিজারেটর, এসি, মোবাইল ফোন ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের মতো পণ্যের ভ্যাট সুবিধা কমানো হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত জুসের ওপর ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে রেফ্রিজারেটর উৎপাদক পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ, মূল্য সংযোজনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে তা ২ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিক্রয় পর্যায়ে ৫ শতাংশ। বর্তমানে এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন পর্যায়ে পুরোপুরি ভ্যাট অব্যাহতি আছে। এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ করা হতে পারে। রেফ্রিজারেটর ও মোবাইল ফোনসেটের ক্ষেত্রে ২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হতে পারে। জুসের মতো পানীয়ের ওপর বিদ্যমান ভ্যাট হার ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হবে। এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়ানো হবে। 

জুস প্রস্তুতকারকদের বার্ষিক বিক্রি বা টার্নওভারের ওপরও ন্যূনতম করের হার বাড়নো হচ্ছে। 

রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের জন্য সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট করের পরিবর্তে ১২ শতাংশ হারে কর সুবিধা আছে। পরিবেশবান্ধব কারখানা হলে এই হার ১০ শতাংশ। বিরাজমান এসব সুবিধা কমাতে চাপ দিয়েছে আইএমএফ। তবে কোন খাতে কতটা কমানো হবে, তা চূড়ান্ত করে সরকারের ওপর মহলকে জানিয়ে বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভ্যাট অব্যাহতি দাবি করলেও আমলে না এনে রিসাইকেল ফাইবার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের বর্জ্য বা ঝুট স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের জন্য ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ও বাজারজাতকরণের জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখা হচ্ছে। 

সূত্র জানায়, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন করলে এলাকাভেদে ১০ বছর পর্যন্ত ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ কর অব্যাহতির সুবিধা পায়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্পেও কর অবকাশ সুবিধা আছে। এসব ক্ষেত্রে নতুন করে রাজস্ব সুবিধা কমানোর হিসাব কষছে এনবিআর। শিল্প খাতের পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, জ্বালানি, যোগাযোগ এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় ৩৯ ধরনের ভৌত অবকাঠামো খাতে নির্মাণের পর ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতেও বড় ধরনের কর অব্যাহতি সুবিধা আছে। যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আয়, বিদেশি ঋণের সুদ, শেয়ার হস্তান্তরের ফলে মূলধনি মুনাফার ওপর অর্জিত আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ ফি, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ফি এবং বিদেশি কর্মীদের আয়ের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর ছাড় আছে। আসছে বাজেটে এসব খাতে রাজস্ব সুবিধা কমছে বলে সূত্র জানিয়েছে। 

আইএমএফ থেকে এনবিআরকে জানানো হয়েছে, দেশে আমদানি পণ্যের ৪৪ শতাংশের ওপর শুল্ক-কর আরোপ নেই। এ ছাড়া কিছু সরকারি প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার কূটনীতিক এবং বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আছে। এনবিআর থেকে এরই মধ্যে এসব খাতে রাজস্ব সুবিধা কমিয়ে বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

এক বইয়ের রয়্যালটি ২৫ লাখ টাকা!

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
এক বইয়ের রয়্যালটি ২৫ লাখ টাকা!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

অন্যকে বাঁচাতে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিয়ে দুর্নীতির মামলায় ফাঁসলেন ইমা প্রকাশনীর মালিক ও ঢাকার লালবাগ রসুলবাগের বাসিন্দা পারভীন হোসেন ভূঁইয়া। 

সম্প্রতি অবৈধ সম্পদের মামলায় ঢাকার জেলা রেজিস্ট্রার (বরখাস্ত) অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে পারভীন হোসেন ভূঁইয়াকেও অভিযুক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অহিদুল ইসলাম তার অবৈধ সম্পদ আড়াল করতে সম্পদ বিবরণীতে নিজের লেখা একটি বইয়ের রয়্যালটি হিসেবে পারভীন হোসেন ভূঁইয়ার কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। পারভীন হোসেনও দুদকে এসে লিখিতভাবে স্বীকারোক্তি দেন। কিন্তু দুদকের তদন্তে টাকা লেনদেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। 

দুদকে দেওয়া চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, নীলক্ষেতে ১৪৪-১৪৫ ইসলামিয়া মার্কেটের ইমা প্রকাশনীর মালিক আসামি পারভীন হোসেন ভূঁইয়া দুর্নীতি মামলার আসামি অহিদুল ইসলামকে বই প্রকাশের রয়্যালটি বাবদ ২৫ লাখ টাকা দিয়েছেন মর্মে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তকালে প্রকাশক পারভীন হেসেন ভূঁইয়া আসামি অহিদুল ইসলামের সঙ্গে করা বই প্রকাশের চুক্তিপত্র, কোন সালে কতসংখ্যক বই প্রকাশ ও বিক্রি করা হয়েছে এবং কী পরিমাণ লভ্যাংশ পাওয়া গেছে এ-সংক্রান্ত কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এমনকি আসামি অহিদুল ইসলামকে রয়্যালটি বাবদ দেওয়া টাকার ব্যাংক চেক, রেজিস্টার, গ্রহণযোগ্য ভাউচার বা অন্য কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য রেকর্ডপত্র এবং অন্য কোনো লেখককে রয়্যালটি দেওয়ার কোনো রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেননি। এ ছাড়া পারভীন হোসেন ভূঁইয়া তার নিজ নামে কিংবা ইমা প্রকাশনীর নামে কোনো আয়কর নথি দেখাতে পারেননি এবং আসামি অহিদুল ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো লেখককে রয়‍্যালটি দেওয়ার কোনো রেকর্ডপত্রও দিতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, অহিদুল ইসলামের বই প্রকাশ হয়েছে ২০০০ থেকে ২০০২ সালে। অথচ রয়্যালটি লেনদেন দেখানো হয় ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৫-১৬ কর বছরে। ফলে অহিদুল ইসলামের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ আড়াল করতে এবং অহিদুল ইসলামের অপকর্মে সহযোগিতা করতেই পারভীন হোসেন ভূঁইয়া দুদকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে, যা দুদকের তফসিলভুক্ত দণ্ডবিধির ২০১ ও ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

এদিকে দুদকে দেওয়া পারভীন হোসেন ভূঁইয়ার ইমা প্রকাশনীর ঠিকানা নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটের ১৪৪-১৪৫ দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখান মিঠু ল বুক হাউস নামের বইয়ের দোকান। দোকানের মালিক মিঠু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি মার্কেটের শুরু থেকেই আমার এই দোকান চালাচ্ছি। ইমা প্রকাশনী নামে কোনো প্রতিষ্ঠান এই মার্কেটে নেই।’ 

এসব বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা তথ্য দিলে বা অপরাধের আলামত নষ্টের চেষ্টা কিংবা মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে কিংবা তা আদালতে প্রমাণ হলে তার কমপক্ষে তিন বছরের সাজা হতে পারে।’  

উল্লেখ্য, অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ২১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত শেষে গত জানুয়ারি মাসে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। চার্জশিটে অভিযুক্তের তালিকায় পারভীন হোসেন ভূঁইয়াকে দুই নম্বরে রাখা হয়েছে।

ডিএসসিসির ৪৩ হাজার জন্মসনদ কাজে আসছে না

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১২:১৪ পিএম
ডিএসসিসির ৪৩ হাজার জন্মসনদ কাজে আসছে না
প্রতীকী ছবি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৩ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন সনদ কোনো কাজে আসছে না। এই সনদ জমা নিচ্ছে না কোনো সংস্থা। কারণ সরকারের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারটি যুক্ত নয়। ফলে তাদের দেওয়া জন্মসনদগুলো সরকারি সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদে গলদের কোনো শেষ নেই। দেশের ১৬ কোটি ৯৭ লাখ জনসংখ্যা হলেও জন্মসনদ ইস্যু করা হয়েছে ১৯ কোটি ৩৫ লাখ।

জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধক রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পেতে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ২০২৩ সালে তিন মাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে গত ১ অক্টোবর থেকে আবার শুরু হয় এই কার্যক্রম। তারপর করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ডিএসসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে এসব সনদ দেওয়া হচ্ছে। অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েছে তারা।

গত বছর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সিস্টেমে ধীরগতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তখন নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে কাজ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

সেই সময়ে ডিএসসিসি এলাকার বাসিন্দারা খুব সহজে জন্মনিবন্ধন করতে পারছিলেন। কিন্তু সাময়িক সুবিধা পেলেও পরে ঘটে বিপত্তি। ১৮ বছরের কম বয়সী যাদের পাসপোর্ট করতে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগে বা যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাদের ডিএসসিসির জন্মসনদ দিয়ে পাসপোর্ট করা যাচ্ছে না।

শুধু পাসপোর্টই নয়, শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন সেবা পেতে জন্মসনদের প্রয়োজন হয়। এই সেবাগুলো নেওয়ার জন্য ডিএসসিসিকে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে শুরু করে মোট ২২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করতে হবে। এ ছাড়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের বিদ্যমান আইন-বিধিও সংশোধন করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন লাগবে।

ডিএসসিসি এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ১০ মাসের বেশি সময় ধরে ডিএসসিসির জন্মসনদ নিয়ে এ সমস্যা চলছে। যে কারণে এই এলাকার অনেকেই পাসপোর্টের প্রয়োজনে ডিএসসিসি এলাকার বাইরে গিয়ে ঠিকানা পাল্টে নতুন করে জন্মনিবন্ধন করতে বাধ্য হচ্ছেন। 

শিশুসন্তানের পাসপোর্ট করতে পারছিলেন না ইব্রাহিম (ছদ্মনাম) নামের একজন। তিনি বলেন, ‘ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, আমার সন্তানের জন্মসনদের নম্বর সিস্টেমে (সার্ভার) নেই। পরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে ছেলের জন্মনিবন্ধন করেছি।’

কেন জন্মসনদে পাসপোর্ট হচ্ছে না
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন ডিএসসিসির জন্মসনদ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সিস্টেমে দেখা যায় না? কেন্দ্রীয়ভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্য জমা হয় ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন’ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে। নিবন্ধন নম্বরের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য এ কার্যালয়ের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তযোগাযোগের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) আছে।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা সার্ভারের সঙ্গে ডিএসএসসির নিজস্ব সার্ভারের আন্তসংযোগ নেই। ফলে ডিএসসিসির নিজস্ব সার্ভারে নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে জমা হচ্ছে না। এ কারণে পাসপোর্ট করতে গেলে পাসপোর্ট অধিদপ্তর রেজিস্ট্রার জেনারেলের সিস্টেমে প্রবেশ করলে ডিএসসিসি থেকে দেওয়া সনদের তথ্য খুঁজে পায় না।

এদিকে নিজস্ব সিস্টেমে নতুন সনদ দিতে পারলেও পুরোনো সনদ সংশোধন করতে পারে না ডিএসসিসি। এ অবস্থায় পুরোনো সনদ সংশোধনে দক্ষিণ সিটির বাসিন্দাদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্যভাণ্ডারের (ডেটাবেজ) হস্তান্তর চেয়ে গত বছরের ১৮ অক্টোবর রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়কে আলাদা চিঠি দিয়েছিল ডিএসসিসি।

ডিএসসিসি এলাকার অনেক বাসিন্দা কেন ঠিকানা বদলে পাসপোর্ট করছেন? এ প্রশ্ন করলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের খবরের কাগজকে বলেন, জন্মসনদের বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য জানেন না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে বলেন জন্মসনদ নিয়ে কাজ করা রোকনের সঙ্গে। তবে যোগাযোগ করে রোকনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক মো. সাইদুর রহমান খবরের কাগজকে জানান, রেজিস্ট্রার জেনারেলের কেন্দ্রীয় সিস্টেমে জন্মনিবন্ধন নম্বর না থাকলে পাসপোর্ট কার্যালয়ের সফটওয়্যারে তা আসবে না। ফলে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার সফটওয়্যারে কিউআর কোড স্ক্যান করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে পাসপোর্ট করা যাচ্ছে না। 

রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন জানান, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজের এখতিয়ার রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের। দেশের সব সিটি করপোরেশন এই সিস্টেমে কাজ করছে। নিজস্ব সিস্টেমে নিবন্ধনের কাজ করা আইন ও বিধির ব্যত্যয়। 

শ্যামলীতে গামছা দেয়াল

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১১:২৮ এএম
শ্যামলীতে গামছা দেয়াল
ফুটপাতের গামছা দেয়াল থেকে সংগ্রহ করা যাবে হরেক রকমের গামছা। ছবি : খবরের কাগজ

ক্লান্ত দুপুরে তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে হেঁটে চলেছে হাজারও মানুষ। জীবিকার সন্ধানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতিনিয়ত ছুটে চলা রাজধানীবাসীর। এই ছুটে চলার ফাঁকে কোথাও একটু দাঁড়ানোর ফুরসত নেই যেন। তবুও এই বিবর্ণ নগরীতে কোথাও একটু রঙের ছটা দেখলে এক মুহূর্তের জন্যও কি থমকে যায় ব্যস্ত মানুষের পা! অথবা চোখ আটকে যায় রঙিন গামছার দেয়ালে! 

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা শ্যামলী। ডজনখানেকের বেশি সরকারি, বেসরকারি ও স্পেশালাইজড হাসপাতাল, যত্রতত্র ফার্মেসি, শিশুদের আনন্দের জায়গা শিশুমেলা আর কমার্শিয়াল এরিয়া হওয়ায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষ গমগম করে এলাকাটিতে। সবাই ছুটে চলে আপন গতিতে। এই ব্যস্ততার মধ্যেই শিশু হাসপাতালের উলটো দিকে শিশুপল্লীর দেয়াল; ফুটপাত ঘেঁষে প্রায় সাত ফুট উঁচু দেয়াল। আর সেই দেয়ালজুড়ে সাজানো রয়েছে সারি সারি বাহারি রঙের গামছা। এদের কোনটা আড়াই হাত আবার কোনটা তিন হাত বহরের। বিভিন্ন নকশার গামছার কোনোটায় ছোট চেক, কোনোটায় বড়। কোনোটা আবার এক রঙা। আবার কোনটায় স্ট্রাইপের নকশা। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, কমলা- আছে সব রকম রং। চলার পথে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই বাহারি রঙের গামছা। নগরের ফুটপাতেই যেন এ এক গামছার হাট! গামছায় ঢাকা পড়েছে দেয়াল। মনে হয় এ যেন রীতিমতো গামছার দেয়াল।

এক যুগের বেশি সময় এই এলাকায় ফুটপাতে গামছা বিক্রি করছেন ষাটোর্ধ্ব আবু বকর সিদ্দিকী। এরই মধ্যে তার গামছার গুণমান ছড়িয়ে পড়েছে বেশ। মানভেদে প্রতি পিস গামছা ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। প্রতিদিন শ খানেকের মতো গামছা বিক্রি করেন তিনি। দিন শেষে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়ে থাকে। তবে শুধু বিক্রেতা হিসেবে নয়, মানবিক কারণেও এই এলাকার মানুষের কাছে এক পরিচিত নাম তিনি। সামর্থ্য যেমনই হোক, গামছা কিনতে আসা কোনো ক্রেতাকেই ফিরিয়ে দেন না। ১২ বছরের বিক্রির অভিজ্ঞতায় মানুষ চিনতে ভুল করেন না আবু বকর সিদ্দিকী। নিম্নআয়ের মানুষের কাছে ভর্তুকি দিয়ে হলেও সর্বনিম্ন ২০ টাকা দামে গামছা বিক্রি করেন তিনি। 

বাহারি এসব গামছা পাইকারি দরে কিনে আনা হয় বরিশালের ঝালকাঠি, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়া থেকে। এসব জায়গায় রয়েছে গামছার উৎকৃষ্টমানের আড়ত। আবু বকর সিদ্দিকী জানান, সপ্তাহে দুইবার করে চালান আসে তার। প্রতি চালানে সুতির ৪০০ পিস গামছা কিনে আনেন ৪০০০ টাকা করে পাইকারিতে। এর সঙ্গে যাতায়াত ভাড়া যুক্ত হয়ে প্রতি পিস গামছা ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকা পড়ে। আবার কিছু গামছা কাপড়ের সুতার ভিন্নতার কারণে দামে বেশি পড়ে। 

সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গামছা বিক্রি করেন বিক্রেতারা। সুতি কাপড়ের রংবেরঙের এসব গামছা ব্যবহারে যেমন আরামদায়ক, দামেও সস্তা। ফুটপাত দিয়ে চলতি পথে এসব গামছা নেড়েচেড়ে দেখেন পথচারীরা। পছন্দ হলে কিনে নেন। সাধ্যের নাগালে মেলে বলে অনেকেই ফুটপাতের এসব দোকান থেকে গামছা কেনেন।

আবু বকর সিদ্দিকী খবরের কাগজকে জানান, সব শ্রেণির মানুষই তার দোকান থেকে গামছা কেনেন। কেউ প্রয়োজনে কেনেন আবার কেউ কেনেন শখে। তবে এসব গামছার বড় ক্রেতা হলো ব্যাচেলর ছেলেমেয়েরা এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। 

গামছা কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল কামাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘টেকসই ও আরামদায়ক হওয়ায় অনেক দিন ব্যবহার করা যায় এসব গামছা। পরিবারের সব সদস্যই আরামদায়ক এই গামছা ব্যবহার করেন। তিনি ফুটপাতের এই দোকান থেকেই সব সময় গামছা কিনেন।’ 

আরেকজন ক্রেতা শফিক নূর জানান, দুই দিন পর কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে হাওরে ট্যুরে যাবেন। সেখানে বন্ধুরা মিলে পানিতে নেমে হইচই করবেন। তাই অল্প বাজেটে গামছা কিনতে এসেছেন। তা ছাড়া সুতির এসব পাতলা গামছা সহজেই ভাঁজ করে কাপড়ের সঙ্গে নেওয়া যায়, জায়গা কম লাগে। তিনি বলেন, ট্রাভেল এবং বাজেট উভয় দিকেই ফ্রেন্ডলি এই গামছা ভ্রমণপ্রিয় মানুষের নিত্যসঙ্গী।