দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে সক্রিয় হয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে কমপক্ষে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) সূত্রমতে, ২০২৩ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ১২০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গি কাজে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে আটকের সংখ্যা বেশি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, বর্তমানে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গোপন অ্যাপস ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ প্রচার ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার ও আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে তারা।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নরসিংদী জেলার বেলাব থানার নারায়ণপুর ইউপির দুলালকান্দি এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সক্রিয় সদস্য মহিন উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোছা. শিরিন আক্তার জাহান বলেন, ‘মহিন জঙ্গিদের প্রতিনিধি হিসেবে নরসিংদী জেলার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে তথাকথিত খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম করে আসছিলেন।’
এদিকে ২২ এপ্রিল রবিবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে মো. শরীফ উল্যাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন দায়িত্বশীল নেতা। অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা জানান, শরীফকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তিনি পুলিশের উদ্দেশে হামলার পরিকল্পনা করেন। শরীফ নিজেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে উগ্রবাদী প্রচার চালাতেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি একাধিকবার স্থান পরিবর্তন করেন। দীর্ঘদিন নজরদারিতে রেখে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে ১৪ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও জেলায় এক অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইন, পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত জঙ্গি মো. শাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থেকে বিভিন্ন জেলায় জঙ্গিবাদী আদর্শ ছড়ান। তিনি প্রথমে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
জঙ্গিরা সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইমু, ভাইভারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে বলে দাবি করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সাবেক পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে র্যাবের সাফল্য রয়েছে। তবে সংস্থাটি কোনো আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে না। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সাইবার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গিদের কার্যক্রমেও নজরদারি রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এটিইউর এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা বসে নেই। সাম্প্রতিক সময় দেখা যাচ্ছে, তারা অনলাইনে অ্যাকটিভ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নতুন সদস্য ও সমর্থক সংগ্রহ করতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটিইউর অনলাইনে প্যাট্রোলিংয়ের মাধ্যমে এসব বিষয় দেখা যাচ্ছে। প্যাট্রোলিংয়ের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো আরও ভয়াবহ।
জঙ্গি তৎপরতা ও সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জঙ্গিরা একশ্রেণির মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তাদের পক্ষ নেয়। এদের কাজ হলো উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার চেষ্টা। এরা যেকোনো সময় সক্রিয় হতে পারে।’
অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মাহফুজুল আলম রাসেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘জঙ্গিরা সম্প্রতি তাদের সাংগঠনিক ও নানা বিষয় নিয়ে তৎপর হয়েছে। আমাদের সাইবার ইউনিটও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। জঙ্গিরা যাতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে, সেই বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।’