এক বছরে একজন বেকারও বাড়েনি! । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

এক বছরে একজন বেকারও বাড়েনি!

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
এক বছরে একজন বেকারও বাড়েনি!
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

করোনার ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। তৈরি পোশাকশিল্পসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। তার পরও বছরের ব্যবধানে কোনো লোক বেকার হননি বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দাবি করেছে।

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। গত বছরের একই সময়েও বেকার ছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এই তিন মাসে দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি। বছরের ব্যবধানে বেকারত্বের হারও বাড়েনি। প্রথম প্রান্তিকে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত বছরের এই সময়ে তা-ই ছিল।

সোমবার (৬ মে) বিবিএসের ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ করে। এই জরিপ প্রতিবেদনে চলতি বছরের গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ের বেকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে দেশের মোট জনসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ কোটি ২৯ লাখ। এর মধ্যে ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সী কর্মক্ষম লোকসংখ্যা হচ্ছে ১২ কোটি ২০ লাখ। পুরুষের সংখ্যা ৬ কোটি ১ লাখ এবং নারী ৬ কোটি ১৮ লাখ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিবিএস যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কারণ যতই দিন যাচ্ছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকজন বেকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিবিএস যেভাবে বেকারের সংখ্যা বের করে, সে পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আমরা বারবার বলছি, এটা ঠিক নয়। কারণ তারা জানতে চায় গত সাত দিনে এক ঘণ্টা কাজ করারও সুযোগ হয়েছে কি না। অনেকে মানসম্মানের ভয়ে তা বলতে চান না। আবার বিশ্বমন্দার প্রভাবে শ্রমবাজারেও লোক কমে গেছে। প্রশিক্ষণ কমে গেছে। শিক্ষাতেও কমেছে কর্মক্ষম লোক। এসব ক্ষেত্রে বেকার লোকের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ হতে পারে। বিবিএস তাদের জরিপে এর কতটুকু প্রতিফলন ঘটায়, তা দেখার বিষয়। তারা ৪ শতাংশও বেকার দেখায় না।’

ড. মোস্তাফিজুর আরও বলেন, ‘গত বছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। সরকারি বিনিয়োগও কমে গেছে। তাহলে বেকারের সংখ্যা তো বাড়বেই। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ কৃষি খাতে সারা বছরই টুকটাক কাজ লেগে থাকে। তার পরও এখানে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে গেছে। যে করেই হোক, বেকারের হার কমাতে হবে। শ্রমিকরা ভালো থাকলে মালিকের উৎপাদন বাড়বে। এর ফলে রপ্তানিও বাড়বে। অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠবে।’

তৈরি পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে আমরা কঠিন অবস্থায় পড়েছি। কারণ বায়াররা মূল্য বাড়াচ্ছেন না। প্রতিনিয়ত অর্ডার কমে যাচ্ছে। আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ অর্ডার কমে গেছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেকে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে অনেকেই বেকার হয়ে পড়ছেন। যেভাবে কারখানা বন্ধ হচ্ছে, সেভাবে কেউ নতুন করে কারখানা গড়ে তুলছেন না।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়মকে আমলে নিয়ে বিবিএসও বলছে, বেকার তারাই, যারা গত সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ পাননি। কিন্তু কাজ করার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন। গত এক মাস ধরে বেতন বা মুনাফার জন্য কোনো না কোনো কাজের খোঁজে ছিলেন।

বিবিএসের জরিপ বলছে, শ্রমশক্তিতে এখন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ আছেন। তাদের মধ্যে ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে ২৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষ বেকার ছিলেন। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও সেই অবস্থাই রয়ে গেছে অর্থাৎ বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। মানে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা আর বাড়েনি। বর্তমানে বেকারের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। ২০২৩ সালেও বেকারের হার ছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

প্রথম প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা না বাড়লেও পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, নারী বেকার কমেছে। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, গত মার্চ মাস শেষে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪০ হাজার। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (মার্চ-জানুয়ারি) সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১০ হাজার। গত বছরের এই সময়ে ৮ লাখ ৮০ হাজার নারী বেকার ছিলেন। এখন নারী বেকারের সংখ্যা ৩০ হাজার কমে ৮ লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

শ্রমশক্তির বাইরেও বিশাল জনগোষ্ঠী আছে। তারা কর্মে নিয়োজিত নন, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নন। বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে এমন জনগোষ্ঠীভুক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার। তারা হচ্ছেন সাধারণ ছাত্র, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক নারী-পুরুষ, কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কর্মে নিয়োজিত নন বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক গৃহিণী। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে এই সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার।

সড়ক যেন ‘ধান মাড়াইয়ের উঠান’

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
সড়ক যেন ‘ধান মাড়াইয়ের উঠান’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া-শিবগঞ্জ সড়কের ওপর ধানের খড় শুকানো হচ্ছে। খবরের কাগজ

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক দখল করে চাষিরা বোরো ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ করছেন। এতে যানবাহনের চালক ও পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ওই সড়কে চলাচলকারীরা বলছেন, রাস্তার ওপর ধান শুকানোর কারণে গাড়ি ধীরে চালাতে হয়।

এতে তাদের ট্রিপের সংখ্যা কমায় আগের তুলনায় আয় কমেছে। পাশাপাশি রয়েছে ছোট-বড় দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা। তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। অধিকারকর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী, বাড়িতে উঠান ছোট থাকার মতো ঠুনকো কারণকে সামনে এনে অনেকে রাস্তার ওপর ধান শুকাচ্ছেন। এগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। 

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশেই শ্যালোচালিত ইঞ্জিন দিয়ে ধান মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াই শেষে সড়কের ওপরেই সেগুলো শুকানো হচ্ছে। অনেকে ধান বাড়ি নিয়ে গেলেও খড় শুকানোর জন্য সড়কের ওপরই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। শুকানো শেষ হলে সড়কের পাশেই সেগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

ফুলবাড়িয়া-শিবগঞ্জ সড়কে অটোরিকশা চালান আকরাম হোসেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়কে ধান মাড়াইয়ের আগে প্রতিদিন গড়ে ১৩০০ টাকার ভাড়া উঠত। ৮০০ টাকা অটোরিকশার মালিককে দেওয়ার পরও ৫০০ টাকা থাকত। কিন্তু বর্তমানে সড়ক দখল করে ধান মাড়াইয়ের কারণে গাড়ি ধীর গতিতে চালাতে হয়। এতে ট্রিপের পরিমাণ কমে আসছে। এ জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৮শ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে না। ফলে মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার পর নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

সিএনজিচালিত অটোরকিশার চালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে যাত্রী নিয়ে শিবগঞ্জ বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে ধান-খড়ে চাকা পিছলে সিএনজি উল্টে যায়। এতে তিন যাত্রী আহত হন। সড়কে ধান মাড়াই করার কারণে সবসময় ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়েও গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

ফুলবাড়িয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, ‘উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি সড়ক দখল করে ধান মাড়াই ও খড় শুকানো হচ্ছে। দেখে মনে হবে বাড়ির উঠান। বৃষ্টি হলে ওই খড় সড়কে কর্দমাক্ত অবস্থা ধারণ করে। পরে সেগুলো আর সরানো হয় না। ধীরে ধীরে এগুলো পচে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।’

উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের পানজানা গ্রামের কৃষক চান মিয়া বলেন, আমি ৯ একর জমিতে ধান আবাদ করেছি। অনেক ধানসহ খড় বাড়ির উঠানে শুকানো সম্ভব হয় না। এ জন্য সড়কে এসেছি।

এভাবে সড়কে ধান মাড়াই করলে যানবাহনের যাত্রী, চালকসহ পথচারীদের সমস্যা হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, ‘জানি সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সবারই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। খুব দ্রুতই ধান-খড় সড়ক থেকে সরিয়ে বাড়িতে নেওয়া হবে।’

একই গ্রামের গৃহিণী আছমা খাতুন বলেন, আশপাশে ধান-খড় শুকানোর মতো কোনো মাঠ নেই। কয়েক বছর আগে বাড়ির উঠান বড় থাকলেও ভাগাভাগির কারণে উঠান ছোট হয়ে গেছে। তাই জমি থেকে ধান কেটে আনার পর মাড়াই ও শুকানোর যাবতীয় কাজ সড়কেই করা হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) ময়মনসিংহের সভাপতি আব্দুল কাদের চৌধুরী মুন্না বলেন, সবারই যে উঠান নেই, বিষয়টি এমন নয়। অনেকের উঠান থাকা সত্ত্বেও ভালোভাবে সহজে রৌদ্রে মাড়াই করতে সড়কে নিয়ে আসেন। সড়কে চলাচলকারীদের ঝুঁকি এড়াতে ধান মাড়াই কিংবা খড় শুকানো একেবারেই উচিত নয়।

এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল বলেন, সড়ক দখল করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেআইনি। জনস্বার্থে সড়কে ধান মাড়াই বন্ধ করা হবে।

‘মোরা না খাইয়া কষ্টে দিন কাডাব, ভারতীয়রা তো ঠিকই মাছ ধইরা নেবে’

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৯:২৩ এএম
‘মোরা না খাইয়া কষ্টে দিন কাডাব, ভারতীয়রা তো ঠিকই মাছ ধইরা নেবে’
ছবি : খবরের কাগজ

‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মোরা সাগরে মাছ ধরতে না গেলেও ভারতীয়রা তো ঠিকই মাছ ধইরা নেবে। এই সময় মোরা না খাইয়া কষ্টে দিন কাডাইলেও ভারতের ট্রলারগুলা ঠিকই মাছ ধরবে। এই ৬৫ দিনে আমাগো হাজার হাজার জেলে কর্মহীন হইয়া পড়বে। এ চিন্তায় জাইল্লা পল্লিগুলা আন্ধার ইইয়া যাইতাছে।’

রবিবার (২০ মে) বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার গোরাপদ্মমা এলাকার জেলে মো. দুলাল হাওলাদার।
 
দেশের মৎস্য সম্পদ সুরক্ষা ও মাছের বংশবিস্তারে সাগরে মাছ ধরার ওপর রবিবার মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারি আইন মেনে উপকূলীয় বরগুনার বেশির ভাগ জেলে ট্রলার ঘাটে ফিরলেও নিষেধাজ্ঞার এই সুযোগে পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা দেশের জলসীমানায় ঢুকে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায় বলে দাবি মো. দুলাল হাওলাদারসহ স্থানীয় জেলেদের। এ ছাড়া এ সময়ে সরকারের দেওয়া খাদ্যসহায়তাও অপ্রতুল বলে দাবি জেলেদের।

জানা যায়, বরগুনায় ২৭ হাজার ২৫০ জন সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে। এসব জেলের জন্য প্রথম ধাপে সহায়তার চাল বিতরণ করতে গত ২৯ এপ্রিল ১ হাজার ৫শ ২৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। 

জেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, জেলে পল্লিতে জেলে পরিবারগুলোতে কর্মহীন হয়ে যাওয়ার চিন্তা বিরাজ করছে। অভাব অনটনে কাটবে এই ৬৫ দিন।

বরগুনার ঢলুয়া এলাকার নাসির নামের এক জেলে বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমরা ৪০ কেজি চাল পাই। এ ছাড়াও যারা জেলে না, তারাও চাল পায়। কিন্তু আমাদের জন্য বরাদ্দ ৮৬ কেজি চাল আমরা পাই না। এই দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞায় ৪০ কেজি চালে আমাদের পরিবার চালানো কষ্ট হয়।’ 

পাথরঘাটার জেলে মো. সালাম বলেন, ‘এ সময়ে নদীতে ও সাগরে তেমন মাছও নেই। থাকলে পুঁজি করে কিছু টাকা রাখতে পারতাম। ধারদেনা করে জীবন চলে। আর অন্য কোনো কাজের ব্যবস্থা নেই যে সামনের ৬৫ দিন কাজ করে খাব।’

বরগুনা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের অনেকটাই কষ্টে কাটবে। এই ৬৫ দিনের জন্য জেলেদের বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেওয়ার দাবি জানাই সরকারের কাছে। পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সমুদ্রগামী জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত এসব চাল আমরা পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলেদের কাছে বরাদ্দকৃত চাল পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, ‘নিবন্ধনের বাইরে থাকা জেলেদের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালিকার কাজ চলছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে অন্য কোনো সহায়তা বৃদ্ধি করলে তা জেলেদের কাছে পৌঁছে দেব।’

আইএমএফের সুপারিশ মানলে শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
আইএমএফের সুপারিশ মানলে শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে

ডলারসংকট চলছে। চাহিদামতো এলসি খোলার সুযোগ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীদের অনেকেই। শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় শিল্পের বিভিন্ন খাতে রাজস্ব অব্যাহতি হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য আইএমএফের চাপের বিরোধিতা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, সর্বস্তরে রাজস্ব বাড়ানোর চাপ বাস্তবায়ন করা হলে দেশের শিল্প খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

শিল্প খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে রাজস্ব বাড়ানো হলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষজ্ঞরাও একই মত জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, শিল্পের অনেক খাতেই রাজস্ব (কর, ভ্যাট ও শুল্ক) অব্যাহতি কমানো ও প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আর এতে কর, ভ্যাট ও শুল্ক বেড়ে যাবে। 

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে শিল্প খাতে কর, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি কমানো বা প্রত্যাহার করা হলে পণ্য আমদানিতে আগের চেয়ে ব্যয় বেশি হবে। শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়বে। ডলারসংকটের কারণে এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা বিপাকে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজেটে রাজস্ব আরও বাড়ানো হলে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশের ব্যবসায়ীরা কী চান তা এফবিসিসিআই থেকে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকেও আলাদাভাবে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। আমি আশা করি বাজেটে তার প্রতিফলন থাকবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মো. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি। সরকার এ শর্ত মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করে। এখন কর, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি কমাতে হবে। আর এতে শিল্প উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অনেক শিল্প লোকসানে পড়ার ঝুঁকিতে আছে।’

এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর, ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন বেশ জোরালোভাবেই। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবেদন করে রাজস্ব ছাড় সুবিধা বহাল রাখার অনুরোধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছে বাজেটে শিল্প খাতে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে রাজস্ব ছাড় কমানো হলেও অন্য কোনোভাবে যেন শিল্প রক্ষায় সুবিধা বহাল রাখা হয়। এনবিআর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সামনে রেখে এখন বাজেট চূড়ান্ত করার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, আসন্ন বাজেট নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে এনবিআরের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। আইএমএফ থেকে কর, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। এনবিআর চেষ্টা করেছে এ প্রস্তাব না মানতে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে এনবিআরকে এ পরামর্শ মানতে হচ্ছে। 

বর্তমানে কর অব্যাহতি অথবা হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের সুবিধা পাচ্ছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্য। ২২টি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০০৮-এর ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া আছে। আসন্ন বাজেটে রেফ্রিজারেটর, এসি, মোবাইল ফোন ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের মতো পণ্যের ভ্যাট সুবিধা কমানো হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত জুসের ওপর ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে রেফ্রিজারেটর উৎপাদক পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ, মূল্য সংযোজনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে তা ২ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিক্রয় পর্যায়ে ৫ শতাংশ। বর্তমানে এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন পর্যায়ে পুরোপুরি ভ্যাট অব্যাহতি আছে। এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ করা হতে পারে। রেফ্রিজারেটর ও মোবাইল ফোনসেটের ক্ষেত্রে ২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হতে পারে। জুসের মতো পানীয়ের ওপর বিদ্যমান ভ্যাট হার ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হবে। এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়ানো হবে। 

জুস প্রস্তুতকারকদের বার্ষিক বিক্রি বা টার্নওভারের ওপরও ন্যূনতম করের হার বাড়নো হচ্ছে। 

রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের জন্য সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট করের পরিবর্তে ১২ শতাংশ হারে কর সুবিধা আছে। পরিবেশবান্ধব কারখানা হলে এই হার ১০ শতাংশ। বিরাজমান এসব সুবিধা কমাতে চাপ দিয়েছে আইএমএফ। তবে কোন খাতে কতটা কমানো হবে, তা চূড়ান্ত করে সরকারের ওপর মহলকে জানিয়ে বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভ্যাট অব্যাহতি দাবি করলেও আমলে না এনে রিসাইকেল ফাইবার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের বর্জ্য বা ঝুট স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের জন্য ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ও বাজারজাতকরণের জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখা হচ্ছে। 

সূত্র জানায়, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন করলে এলাকাভেদে ১০ বছর পর্যন্ত ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ কর অব্যাহতির সুবিধা পায়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্পেও কর অবকাশ সুবিধা আছে। এসব ক্ষেত্রে নতুন করে রাজস্ব সুবিধা কমানোর হিসাব কষছে এনবিআর। শিল্প খাতের পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, জ্বালানি, যোগাযোগ এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় ৩৯ ধরনের ভৌত অবকাঠামো খাতে নির্মাণের পর ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতেও বড় ধরনের কর অব্যাহতি সুবিধা আছে। যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আয়, বিদেশি ঋণের সুদ, শেয়ার হস্তান্তরের ফলে মূলধনি মুনাফার ওপর অর্জিত আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ ফি, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ফি এবং বিদেশি কর্মীদের আয়ের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর ছাড় আছে। আসছে বাজেটে এসব খাতে রাজস্ব সুবিধা কমছে বলে সূত্র জানিয়েছে। 

আইএমএফ থেকে এনবিআরকে জানানো হয়েছে, দেশে আমদানি পণ্যের ৪৪ শতাংশের ওপর শুল্ক-কর আরোপ নেই। এ ছাড়া কিছু সরকারি প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার কূটনীতিক এবং বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আছে। এনবিআর থেকে এরই মধ্যে এসব খাতে রাজস্ব সুবিধা কমিয়ে বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

এক বইয়ের রয়্যালটি ২৫ লাখ টাকা!

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
এক বইয়ের রয়্যালটি ২৫ লাখ টাকা!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

অন্যকে বাঁচাতে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিয়ে দুর্নীতির মামলায় ফাঁসলেন ইমা প্রকাশনীর মালিক ও ঢাকার লালবাগ রসুলবাগের বাসিন্দা পারভীন হোসেন ভূঁইয়া। 

সম্প্রতি অবৈধ সম্পদের মামলায় ঢাকার জেলা রেজিস্ট্রার (বরখাস্ত) অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে পারভীন হোসেন ভূঁইয়াকেও অভিযুক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অহিদুল ইসলাম তার অবৈধ সম্পদ আড়াল করতে সম্পদ বিবরণীতে নিজের লেখা একটি বইয়ের রয়্যালটি হিসেবে পারভীন হোসেন ভূঁইয়ার কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। পারভীন হোসেনও দুদকে এসে লিখিতভাবে স্বীকারোক্তি দেন। কিন্তু দুদকের তদন্তে টাকা লেনদেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। 

দুদকে দেওয়া চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, নীলক্ষেতে ১৪৪-১৪৫ ইসলামিয়া মার্কেটের ইমা প্রকাশনীর মালিক আসামি পারভীন হোসেন ভূঁইয়া দুর্নীতি মামলার আসামি অহিদুল ইসলামকে বই প্রকাশের রয়্যালটি বাবদ ২৫ লাখ টাকা দিয়েছেন মর্মে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তকালে প্রকাশক পারভীন হেসেন ভূঁইয়া আসামি অহিদুল ইসলামের সঙ্গে করা বই প্রকাশের চুক্তিপত্র, কোন সালে কতসংখ্যক বই প্রকাশ ও বিক্রি করা হয়েছে এবং কী পরিমাণ লভ্যাংশ পাওয়া গেছে এ-সংক্রান্ত কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এমনকি আসামি অহিদুল ইসলামকে রয়্যালটি বাবদ দেওয়া টাকার ব্যাংক চেক, রেজিস্টার, গ্রহণযোগ্য ভাউচার বা অন্য কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য রেকর্ডপত্র এবং অন্য কোনো লেখককে রয়্যালটি দেওয়ার কোনো রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেননি। এ ছাড়া পারভীন হোসেন ভূঁইয়া তার নিজ নামে কিংবা ইমা প্রকাশনীর নামে কোনো আয়কর নথি দেখাতে পারেননি এবং আসামি অহিদুল ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো লেখককে রয়‍্যালটি দেওয়ার কোনো রেকর্ডপত্রও দিতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, অহিদুল ইসলামের বই প্রকাশ হয়েছে ২০০০ থেকে ২০০২ সালে। অথচ রয়্যালটি লেনদেন দেখানো হয় ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৫-১৬ কর বছরে। ফলে অহিদুল ইসলামের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ আড়াল করতে এবং অহিদুল ইসলামের অপকর্মে সহযোগিতা করতেই পারভীন হোসেন ভূঁইয়া দুদকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে, যা দুদকের তফসিলভুক্ত দণ্ডবিধির ২০১ ও ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

এদিকে দুদকে দেওয়া পারভীন হোসেন ভূঁইয়ার ইমা প্রকাশনীর ঠিকানা নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটের ১৪৪-১৪৫ দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখান মিঠু ল বুক হাউস নামের বইয়ের দোকান। দোকানের মালিক মিঠু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি মার্কেটের শুরু থেকেই আমার এই দোকান চালাচ্ছি। ইমা প্রকাশনী নামে কোনো প্রতিষ্ঠান এই মার্কেটে নেই।’ 

এসব বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা তথ্য দিলে বা অপরাধের আলামত নষ্টের চেষ্টা কিংবা মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে কিংবা তা আদালতে প্রমাণ হলে তার কমপক্ষে তিন বছরের সাজা হতে পারে।’  

উল্লেখ্য, অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ২১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত শেষে গত জানুয়ারি মাসে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। চার্জশিটে অভিযুক্তের তালিকায় পারভীন হোসেন ভূঁইয়াকে দুই নম্বরে রাখা হয়েছে।

ডিএসসিসির ৪৩ হাজার জন্মসনদ কাজে আসছে না

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১২:১৪ পিএম
ডিএসসিসির ৪৩ হাজার জন্মসনদ কাজে আসছে না
প্রতীকী ছবি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৩ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন সনদ কোনো কাজে আসছে না। এই সনদ জমা নিচ্ছে না কোনো সংস্থা। কারণ সরকারের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারটি যুক্ত নয়। ফলে তাদের দেওয়া জন্মসনদগুলো সরকারি সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদে গলদের কোনো শেষ নেই। দেশের ১৬ কোটি ৯৭ লাখ জনসংখ্যা হলেও জন্মসনদ ইস্যু করা হয়েছে ১৯ কোটি ৩৫ লাখ।

জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধক রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পেতে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ২০২৩ সালে তিন মাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে গত ১ অক্টোবর থেকে আবার শুরু হয় এই কার্যক্রম। তারপর করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ডিএসসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে এসব সনদ দেওয়া হচ্ছে। অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েছে তারা।

গত বছর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সিস্টেমে ধীরগতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তখন নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে কাজ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

সেই সময়ে ডিএসসিসি এলাকার বাসিন্দারা খুব সহজে জন্মনিবন্ধন করতে পারছিলেন। কিন্তু সাময়িক সুবিধা পেলেও পরে ঘটে বিপত্তি। ১৮ বছরের কম বয়সী যাদের পাসপোর্ট করতে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগে বা যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাদের ডিএসসিসির জন্মসনদ দিয়ে পাসপোর্ট করা যাচ্ছে না।

শুধু পাসপোর্টই নয়, শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন সেবা পেতে জন্মসনদের প্রয়োজন হয়। এই সেবাগুলো নেওয়ার জন্য ডিএসসিসিকে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে শুরু করে মোট ২২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করতে হবে। এ ছাড়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের বিদ্যমান আইন-বিধিও সংশোধন করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন লাগবে।

ডিএসসিসি এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ১০ মাসের বেশি সময় ধরে ডিএসসিসির জন্মসনদ নিয়ে এ সমস্যা চলছে। যে কারণে এই এলাকার অনেকেই পাসপোর্টের প্রয়োজনে ডিএসসিসি এলাকার বাইরে গিয়ে ঠিকানা পাল্টে নতুন করে জন্মনিবন্ধন করতে বাধ্য হচ্ছেন। 

শিশুসন্তানের পাসপোর্ট করতে পারছিলেন না ইব্রাহিম (ছদ্মনাম) নামের একজন। তিনি বলেন, ‘ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, আমার সন্তানের জন্মসনদের নম্বর সিস্টেমে (সার্ভার) নেই। পরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে ছেলের জন্মনিবন্ধন করেছি।’

কেন জন্মসনদে পাসপোর্ট হচ্ছে না
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন ডিএসসিসির জন্মসনদ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সিস্টেমে দেখা যায় না? কেন্দ্রীয়ভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্য জমা হয় ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন’ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে। নিবন্ধন নম্বরের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য এ কার্যালয়ের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তযোগাযোগের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) আছে।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা সার্ভারের সঙ্গে ডিএসএসসির নিজস্ব সার্ভারের আন্তসংযোগ নেই। ফলে ডিএসসিসির নিজস্ব সার্ভারে নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে জমা হচ্ছে না। এ কারণে পাসপোর্ট করতে গেলে পাসপোর্ট অধিদপ্তর রেজিস্ট্রার জেনারেলের সিস্টেমে প্রবেশ করলে ডিএসসিসি থেকে দেওয়া সনদের তথ্য খুঁজে পায় না।

এদিকে নিজস্ব সিস্টেমে নতুন সনদ দিতে পারলেও পুরোনো সনদ সংশোধন করতে পারে না ডিএসসিসি। এ অবস্থায় পুরোনো সনদ সংশোধনে দক্ষিণ সিটির বাসিন্দাদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্যভাণ্ডারের (ডেটাবেজ) হস্তান্তর চেয়ে গত বছরের ১৮ অক্টোবর রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়কে আলাদা চিঠি দিয়েছিল ডিএসসিসি।

ডিএসসিসি এলাকার অনেক বাসিন্দা কেন ঠিকানা বদলে পাসপোর্ট করছেন? এ প্রশ্ন করলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের খবরের কাগজকে বলেন, জন্মসনদের বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য জানেন না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে বলেন জন্মসনদ নিয়ে কাজ করা রোকনের সঙ্গে। তবে যোগাযোগ করে রোকনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক মো. সাইদুর রহমান খবরের কাগজকে জানান, রেজিস্ট্রার জেনারেলের কেন্দ্রীয় সিস্টেমে জন্মনিবন্ধন নম্বর না থাকলে পাসপোর্ট কার্যালয়ের সফটওয়্যারে তা আসবে না। ফলে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার সফটওয়্যারে কিউআর কোড স্ক্যান করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে পাসপোর্ট করা যাচ্ছে না। 

রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন জানান, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজের এখতিয়ার রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের। দেশের সব সিটি করপোরেশন এই সিস্টেমে কাজ করছে। নিজস্ব সিস্টেমে নিবন্ধনের কাজ করা আইন ও বিধির ব্যত্যয়।