ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে আজ বুধবার ভোট গ্রহণ হচ্ছে ১৩৯ উপজেলায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ব্যবহৃত হচ্ছে নির্বাচনি অ্যাপস (স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস, বিডি)।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই অ্যাপসের মাধ্যমে ভোটের দিন সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর (সকাল ১০টা, দুপুর ১২টা, দুপুর ২টা ও বিকেল ৪টায়) ভোট পড়ার হার জানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নির্বাচনি অ্যাপস ব্যবহার করতে ভোটারকে তার এনআইডি নম্বর দিয়ে অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের এই অ্যাপস সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে প্রার্থী ও সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য সরবরাহে সংস্থাটির পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষের স্মার্টফোন না থাকা ও নেটওয়ার্কজনিত সমস্যাসহ এই অ্যাপস ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পৌঁছেনি। ফলে উপজেলা নির্বাচনেও এই অ্যাপস নির্বাচনি তথ্য সরবরাহে কতখানি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কয়েকটি উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অনেক প্রার্থী ও ভোটারেরই নির্বাচন কমিশনের এই অ্যাপস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। আবার অনেকে শুনেছেন কিন্তু ব্যবহার করেননি।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেছেন, নির্বাচনি অ্যাপসটি তার ফোনে আছে, কিন্তু ব্যবহার করেননি। ভোটের দিন সম্ভব হলে ওই অ্যাপসে গিয়ে ভোটের আপডেট তথ্য দেখে নেওয়ার ইচ্ছা আছে তার। এবারের উপজেলা নির্বাচনে ডিজিটাল প্রচার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচারের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার কর্মীরা পোস্ট করেছেন। এ ছাড়া ম্যাসেঞ্জারেও কিছুটা প্রচার চালানো হয়েছে। রায়গঞ্জ এলাকার ভোটার মিলন দাস জানান, গত সংসদ নির্বাচনে অ্যাপসের মাধ্যমে তথ্য আপডেট নিয়েছিলাম। এবারও উপজেলা নির্বাচনের তথ্য আপডেট দিলে ঘরে বসে জানার চেষ্টা করব।
যশোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, প্রথম ধাপে দুই উপজেলায় (কেশবপুর ও মনিরামপুর) ভোটের জন্য প্রায় তিন হাজার প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের সময় প্রিজাইডিং অফিসারদের নির্বাচনি অ্যাপসে ভোটের তথ্য আপডেট করার প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
কক্সবাজারের রিটার্নিং অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন বলেছেন, অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর ভোট পড়ার তথ্য আপডেট নিশ্চিত করতে প্রত্যেক প্রিজাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ কাজটি করতে তাদের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্যপত্র ও নোটিশও দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এবার খুব ভালোভাবে এই অ্যাপসে নির্বাচনি তথ্য আপডেট করা সম্ভব হবে।
ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই পর্যায়ক্রমে উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক তথ্য এই অ্যাপসে সংযুক্ত করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একজন ভোটার ঘরে বসেই তার ভোটার নম্বর, ভোটকেন্দ্র, ভোটকেন্দ্রের ছবি, ভোটকেন্দ্রের ভৌগলিক অবস্থান (ম্যাপসহ), নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামাসহ নির্বাচনসংক্রান্ত নানা তথ্য জানতে পারবেন। কোন উপজেলায় ভোটার কত, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের নামের তালিকাও থাকবে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর অ্যাপসেই কেন্দ্রভিত্তিক ফলও দেখা যাবে। বেসরকারি ফলাফলটাও দেখা যাবে। এ ছাড়া অ্যাপসটির মাধ্যমে এবার চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোন ধাপে কতগুলো এবং কোন কোন উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে সেসব তথ্যও পাওয়া যাবে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও যে নির্বাচনি অ্যাপস ব্যবহৃত হচ্ছে- সে বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য পৌঁছাতে ইসির ব্যবস্থাপনা কী ছিল? এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ খবরের কাগজকে বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ বিষয়ে তথ্য জানাতে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে তথ্যভিত্তিক প্রচার চালানো হয়েছে। আর ভোটের দিন প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর চার দফায় ভোট গ্রহণের তথ্য অ্যাপসে কীভাবে সরবরাহ করা হবে সে বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণের সময় বিস্তারিত জানানো হয়েছে। নেটওয়ার্কজনিত কারণে জাতীয় নির্বাচনে এই অ্যাপস ব্যবহারে কিছুটা সংকট দেখা দিলেও এই নির্বাচনে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।