আগে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে ৪১ রান তুলতে জিম্বাবুয়ে হারিয়ে বসে ৭ উইকেট। তাতে শঙ্কা জাগে হয়তো দলীয় সংগ্রহ তিন অঙ্কের কোটা পার হওয়ার আগেই অলআউট হবে জিম্বাবুয়ে। টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের ব্যর্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন ক্লাইভ মাদান্দে ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। ৮ম উইকেট জুটিতে তারা দুজন মিলে যোগ করেন ৭৫ রান। মূলত তাদের দুজনের ব্যাটে জিম্বাবুয়ে পায় শতরানের বেশি সংগ্রহের আশা। বাংলাদেশি বোলারদের একের পর এক বোলিং তোপে শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে থামে ১২৪ রানে। বাংলাদেশের হয়ে দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নেন তিনটি করে উইকেট।
সাগরিকায় আগে টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, উইকেট দেখতে বেশ ভালো মনে হচ্ছে। আশা করি, শুরুরদিকে ভালো সুইং ও টার্ন পাবো। টিভি দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল সবুজ ঘাসের উইকেটে থাকবে বোলারদের দাপট। পাওয়ার প্লের প্রথম পাঁচ ওভারে বাংলাদেশি বোলারদের উপর এক রকম দাপট দেখানোর চেষ্টা ছিল জিম্বাবুয়ের। স্কোরবোর্ডে তোলে ৩৬ রান। তাতে মনে হচ্ছিল জিম্বাবুয়ের স্কোরটা বড় হতে পারে। পাওয়ার প্লেতে বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম পেস ও বাউন্সে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার চেষ্টা চালান। তাতে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। তবে সেই ঝড় ছিল ৫ম ওভার পর্যন্তই। এরপর শুধু বাংলাদেশি বোলারদের দাপটের গল্প।
৫ম ওভারে দ্বিতীয় উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে পরের পাঁচ উইকেট হারায় পরের ১৬ বলের মধ্যে। সেই সময় জিম্বাবুয়ে স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পেরেছিল মাত্র ৫ রান। মুহূর্তে ২ উইকেটে ৩৬ থেকে স্কোরবোর্ডে জিম্বাবুয়ের রান দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ৪১ রান। অথচ, এই ধসের আগে অভিষিক্ত জয়লর্ড গ্যাম্বির পাশাপাশি দলকে ভালো শুরু এনে দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন ক্রেইগ আরভিন ও ব্রায়ান বেনেট। উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই তাদেরকে ফেরায় বাংলাদেশি বোলিং ইউনিট। ক্রেইগ আরভিনকে ফিরিয়ে স্বাগতিক শিবিরে প্রথম সাফল্য এনে দেন শেখ মাহেদি। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার চেষ্টায় থাকা দুই ব্যাটার গ্যাম্বি ও বেনেট ফেরেন পর পর দুই বলে। গ্যাম্বি আউট হন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে এবং বেনেট আউট হন রানআউটের শিকার হয়ে।
টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারের দেখানো ওই পথ অনুসরণ করতে ব্যর্থ তিন অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা ও রায়ান বার্ল। তিনজনের ব্যাটে আসনি কোনো রান। তিনজনই শিকার হন গোল্ডেন ডাকের। তাদের ব্যর্থতার পর পেস বোলিং অলরাউন্ডার লুক জোঙ্গের ব্যাটে ছিল মাত্র ২ রান। ভরসার এই চার ব্যাটারের ব্যর্থতার পর দলের হাল ধরার দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেন লেজের সারির ক্লাইভ মাদান্দে ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। ৮ম উইকেটে ৬৫ বলে তারা যোগ করেন ৭৫ রান। তাদের এই জুটিতে রান না এলে হয়তো একশ রানের আগেই আটকে যেতে জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
ইনিংসের ১৯তম ওভারে তাদের দুজনের এই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। দারুণ এক ইয়র্কারে মাদান্দেকে বোল্ড করেন এই ডানহাতি পেসার। ফেরার আগে ৩৯ বলে ৪৩ রান করে মাদান্দে। ৬ চারে সাজান নিজের এই ইনিংস। অন্যদিকে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে মাসাকাদজা ৩৮ বলে ৩৪ রান করেন। তার ইনিংসে ছিল দুইটি করে চার ও ছক্কা। তাদের দুইজনের ওই ইনিংসেই মূলত ১২৪ রানের সংগ্রহ পায় জিম্বাবুয়ে।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সাফল্য পাননি শুধুমাত্র শরিফুল ইসলাম ও রিশাদ হোসেন। দুইজনই নিজের কোটার পুরোটা বোলিং করে খরচ করেছেন ৩৭ রান করে। শেখ মাহেদি, তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন করেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। দুই উইকেট নেওয়া মাহেদির শিকার ছিল ১৬ রান। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা মাহেদি দেন এক মেডেন। তাসকিন-সাইফউদ্দিন মেডেন না দিলেও খরচ করেছেন যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ রান। দুজনই শিকার করেন তিনটি করে উইকেট। মূলত তাদের দুজনের বোলিংয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের টপ ও মিডল অর্ডার।