সংস্কৃতির শহর যশোরে বাংলা বর্ষবরণে প্রাণের ছোঁয়ার আশা । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

সংস্কৃতির শহর যশোরে বাংলা বর্ষবরণে প্রাণের ছোঁয়ার আশা

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৮ পিএম
সংস্কৃতির শহর যশোরে বাংলা বর্ষবরণে প্রাণের ছোঁয়ার আশা

যশোর শহরের মাওলানা মোহাম্মদ আলী রোড (এম এম আলী) রোডে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জেলা শাখা। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটির প্রধান ফটক ধরে এগোতেই কানে ভেসে এলো নাচ আর গানের মহড়ার শব্দ। পরে দেখা গেল, পায়ে ঘুঙুর বেঁধে চলছে কচি-কাঁচাদের নাচের মহড়া। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের ভঙ্গিসমূহ। কোন জায়গায় কোন তাল। এ যেন নৃত্যকে নিখুঁত করার ঘষামাজার শেষ পর্যায়। আরেকটু পথ এগিয়ে গেলেই আরেকটি কক্ষ। সেখানে তবলা আর হারমনিয়ামের সঙ্গে দলবেঁধে চলছে গানের চর্চা। এসো হে বৈশাখ, এসো এসো....। 

উদীচী কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মিনিট তিনিকের পথ এগোতেই পৌর পার্ক। পার্কের ভেতরে আরেক সাংস্কৃতিক সংগঠন চারুপীঠ। সেখানে অনেকে মিলে বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন বিশাল আকৃতির মোরগ ও পুতুল। কাগজ কেটে ফুল, প্যাঁচা, পাখপাখালির আদল গড়ছেন কেউ কেউ। গভীর মনোযোগে কেউবা জলরঙে ছবি আঁকছেন, কেউবা নকশা করছেন কাগজে। নানা আকৃতি ও ধরনের মুখোশে দেওয়া হচ্ছে রং তুলির পরশ।

শুধু এই দুটি সংগঠন নয়, যশোর শহরের অন্তত ২৫টি সাংস্কৃতিক সংগঠন শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাঁচ শতাধিক সাংস্কৃতিক কর্মী। বিবর্তন, উদীচী, পুনশ্চ, চাঁদের হাটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে চলছে গান, নাচ, নাটক, কবিতা আবৃত্তি ও গীতিনাট্যের মহড়া। বর্ণিল উৎসব ঘিরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তৈরি করেছে ভিন্ন আঙ্গিকের আমন্ত্রণপত্রও।
 
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলা বর্ষবরণে যশোরের ঐতিহ্য চার দশকের বেশি। করোনা সংক্রমণ ও রমজানের কারণে গত চার বছর নববর্ষের উৎসব ছিল অনেকটা ঘরবন্দি ও সংক্ষিপ্ত। এবার ঈদুল ফিতরের পরপরই পহেলা বৈশাখ হওয়ায় আনন্দ দ্বিগুণ হবে বলে মনে করছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। 

পহেলা বৈশাখে বর্ণিল সাজে ঢাক-ঢোলের বাদ্যে মাততে প্রস্তুত হচ্ছে সংগঠনগুলো। বরাবরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখে জেলার ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দান থেকে সকাল ৯টায় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। এবার পহেলা বৈশাখটি যশোরবাসীকে পরিপূর্ণতা দিতে প্রায় তিন দশক পর যোগ হয়েছে ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। শহরের ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত। 

যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, ‘কোভিড ও রমজানের কারণে পরপর চার বছর সাড়ম্বরে বৈশাখী উদযাপন করতে পারিনি। এ বছর আমরা চেষ্টা করছি যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এবং যশোরের শিল্পী সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে নববর্ষকে একটি বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য আয়োজন উপহার দেওয়ার। মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈকালিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এ ছাড়াও এবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আর এ মেলার সঙ্গে থাকবে লোক সাংস্কৃতিক উৎসব। এ সাংস্কৃতিক উৎসবে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশ নেবে। এর মাধ্যামে বৈশাখী যে বাঙালির সার্বজনীন উৎসব এবং সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে প্রচেষ্টা তা এর মাধ্যামে অব্যাহত থাকবে।’

বর্ষবরণের প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভাষ্য, দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৫ সালে সূচনা হয় সংস্কৃতি যশোর শহর থেকে। সেই সময়ে ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহবুব জামাল শামীম আরও দুই সহপাঠীকে নিয়ে যশোরে প্রতিষ্ঠা করেন চারুকলার প্রতিষ্ঠান চারুপীঠ। এই প্রতিষ্ঠানই মঙ্গল শোভাযাত্রার সূতিকাগার।

চারুপীঠের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘পয়লা বৈশাখে যশোরের মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণাঢ্য ইতিহাস আছে। যশোরে প্রথম দিন যে উদ্দীপনায় বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করা হয়েছিল, আমরা সেখান থেকে একচুলও সরে আসিনি। এবারও চারুপীঠের পক্ষ থেকে শোভাযাত্রায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ 

উদীচী যশোর ৫০ বছর ধরে পৌর উদ্যানে নববর্ষের প্রথম প্রভাতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। যশোর শহরের শত শত মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে নতুন পোশাকে, নতুন সাজে সেই আয়োজনে শামিল হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব জানান, এ বছরও বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি তাদের। সকাল ৭টায় পৌর উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। 

বিবর্তন যশোরে সভাপতি নওরোজ আলম খান চপল বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও আমাদের ব্যতিক্রমী আয়োজন থাকছে আমন্ত্রণপত্রে। মিষ্টিমুখ, শোভাযাত্রা, নাটক, নৃত্য সংগীতে সঙ্গে এবার প্রধান আকর্ষণ তোতারাম নাটক মঞ্চায়ন।’ 

এদিকে বাংলা নববর্ষ ঘিরে এবার টাউন হল ময়দানে ১০ দিনব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক উৎসব ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও যশোর ইনস্টিটিউট। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই মেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সংশ্লিষ্ঠরা। 

কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় সরকার যশোরের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসান মেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলা সংস্কৃতি পরিচয়বাহী কবিগান, পটগান, গম্ভীরা, জারিগান, সঙগান যাত্রাপালা, লাঠিখেলা সাপখেলাসহ গ্রাম বাংলার লোকজ আঙ্গিকে ধারাবাহিকভাবে প্রদর্শিত হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে শিশুদের আর সন্ধ্যার পরে সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন। জেলা ও উপজেলার মোট ১৩০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেবে এই লোকজ সাংস্কৃতি উৎসবে। 

বাহারি কার্ডে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও আমন্ত্রণ:
পহেলা বৈশাখে উৎসব আয়োজনের পাশাপাশি ‘নববর্ষে’র শুভেচ্ছা জানানো চিরায়ত বাংলার রীতি। এই শুভেচ্ছা ও নববর্ষের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর পত্রেও তাই ঠাঁই পেয়েছে বাংলার ঐতিহ্য। যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এখন নববর্ষের আমন্ত্রণপত্রকে ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে পরিণত করেছে। জেলার অন্তত ২০টি সংগঠন বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় শুভেচ্ছা ও আমন্ত্রণপত্র তৈরি করছে। নববর্ষে কার্ড বা শুভেচ্ছাপত্র দেওয়ার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে এখন এক অন্যরকম প্রতিযোগিতায় রূপ দিয়েছে যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এ প্রতিযোগিতা নান্দনিকতার প্রতিযোগিতা। ইতিহাস, ঐতিহ্য ধরে রেখে শুভেচ্ছাপত্রকে রঙ, রূপ আর বৈচিত্র্যে ভরে তোলার প্রতিযোগিতা।
 
বির্বতন যশোর কাগজ দিয়ে বাঙালির ঐতিহ্য ঢুলি তৈরি করেছেন। মানুষের মুখবয় ও দুটি হাত দিয়ে ঢোলি ঢোল বাজাচ্ছেন। ঢোলের উপরে লেখা ১৪৩১ বিবর্তন। 

সাংস্কৃতিক সংগঠন তির্যক গ্রাম বাংলার খেজুর গাছ কাটার অনুসঙ্গ ঠুঙ্গি ও গাছি দা। একটি চারকোণা কাঠের ওপরে বাঁশ দিয়ে সুনিপুন কারুকাজের তৈরি ঠুঙ্গি। তার ভিতরে কাঠ দিয়ে তৈরি ‘গাছি দা’। 

এ ছাড়া যশোরের অন্তত ২০টি সংগঠন বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় শুভেচ্ছা ও আমন্ত্রণপত্র তৈরি করছে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিপাঙ্কর দাস রতন বলেন, ‘এক দশকের বেশি সময় ধরে যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নববর্ষের শুভেচ্ছা ও আমন্ত্রণপত্র বাংলার ঐতিহ্য ধরে রেখে নান্দনিকতায় ভরপুর করে তুলছে। এখন সংগঠনগুলোর মধ্যে আমন্ত্রণপত্রে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।’

এইচ আর তুহিন/জোবাইাদা/অমিয়/

লাল মিয়া থেকে শিল্পী সুলতান

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১০:০৮ এএম
লাল মিয়া থেকে শিল্পী সুলতান
শিল্পী এস এম সুলতান

শিল্পী এস এম সুলতানকে জানতে হলে ঘুরতে হবে পুরো ভারতবর্ষ। তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর মাটির মানুষ। মাটির সঙ্গে ছিল তার নাড়ির যোগ, মাটির সঙ্গেই ছিল আজন্ম বসবাস। তিনি শুধু একজন চিত্রশিল্পীই নন, তিনি ছিলেন ঋষি, দার্শনিক। ছিলেন এক ক্যারিশম্যাটিক চরিত্র। জয়নুল আবেদীন আর এস এম সুলতান ছিলেন একই আদর্শের ধারক ও বাহক। এমনকি তিনি ছিলেন চমৎকার রসবোধসম্পন্ন একজন মানুষ।

শনিবার (১৮ মে) ‘লাল মিয়া থেকে শিল্পী সুলতান কিছু খণ্ডচিত্র’- এই শিরোনামে শিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে বেঙ্গল শিল্পালয়ের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় উপস্থিত বিশিষ্টজনদের আলোচনায় বারবার উঠে আসে, শিল্পীর অসাধারণ ‘সাধারণ’ জীবনযাপন, তার মনস্তত্ত্ব, জীবনবোধ এবং সারা জীবন ছবি আঁকার সংগ্রাম। 

আলোচনা সভার মূল বক্তা ছিলেন শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভী। আলোচক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন এবং ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম। এ সময় শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভীর ক্যামেরায় তোলা এস এম সুলতানের কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি প্রদর্শন করা হয়।

শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভী বলেন, ‘আমি যখন প্রথম চারুকলায় তাকে দেখি, তার পরনে ছিল একটি গেরুয়া রঙের শাড়ি, বড় চুল। আমার মনে হয়েছিল, এখানে পড়লে আমাকেও কি এমন বেশ নিয়ে থাকতে হবে? আবার পরবর্তী সময়ে দেখি তিনি তার বেশ পরিবর্তন করেছেন। সুলতান আসলে এত বিনয়ী একজন মানুষ ছিলেন যে তিনি নিচ থেকে সবাইকে ওপরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি সব সময় সাধারণ মানুষের কথা বলে গেছেন।’

সুলতান সম্পর্কে আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন বলেন,‘ সুলতানের একেকটি ছবি স্বাধীনতার মেনোফেস্টো। তিনি যেভাবে তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে ওই সময় যা দেখে গেছেন তা অকল্পনীয়। তাকে এক-দুই দিনে পাঠ করে জানা সম্ভব নয়। তাকে জানতে হলে পুরো ভারতবর্ষ জানতে হবে, ব্রিটিশ কলোনিয়াল সময় সম্পর্কে জানতে হবে, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে হবে।’ 

ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম বলেন, ‘তিনি আকাশের চাঁদ, ধ্রুবতারা। তিনি এত সহজ একজন মানুষ ছিলেন যে তার কাছে যেই যেত তাকে তিনি আপন করে নিতেন। ঠিক ওই মুহূর্তে মনে হতো, ওই সময়টুকু সুলতান শুধু তার। এমনকি খুব বেশি দিন চেনেনও না, তার সঙ্গেও তিনি আপনজনের মতো কথা বলতেন।’ 

সুলতানের ছবিতে আমরা দেখি গ্রাম-বাংলার নতুন এক প্রতিচ্ছবি। একই সঙ্গে তার এ ছবিগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্রেণি-দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির ক্রূর বাস্তবতাও উঠে এসেছে।

এস এম সুলতান যাদের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছিলেন, তারা আজও সক্রিয়। বাংলাদেশের অনেক তরুণ এস এম সুলতান হতে চান, এই যে জনপ্রিয়তা অনেক শিল্পীই মানতে পারেন না। কিন্তু বাংলাদেশে এস এম সুলতান টিকে থাকতেই এসেছিলেন, তার কোনো সহায় নেই, সম্পত্তি নেই, কিন্তু তাকে নিয়ে আলোচনা আজও চলমান, তিনি ছিলেন মহামানব, ধরাবাঁধা স্কুলিং না থাকলেও তিনি ছিলেন অসামান্য মেধাবী। তিনি শুধু ছবি উপহার দেননি, সুলতান মিশে আছেন এ দেশের প্রকৃতি, জলবায়ুর সঙ্গে।

ব্রেইন ড্যামেজ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি লেখক হোসেনউদ্দিন

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ১০:০৬ এএম
ব্রেইন ড্যামেজ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি লেখক হোসেনউদ্দিন
লেখক হোসেনউদ্দিন হোসেন

‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১’ প্রাপ্ত বরেণ্য প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও গবেষক হোসেনউদ্দিন হোসেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন। সিটিস্ক্যান রিপোর্টে তার ব্রেন ড্যামেজ ধরা পড়েছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। 

হোসেনউদ্দিন হোসেনের ছোট মেয়ে শাহনাজ রাহানা রত্না জানান, ২০১৯ সালে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। পরে গল ব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। এ ছাড়া তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত ১৪ মে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিন তাকে যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। 

তিনি জানান, শুক্রবার (১৭ মে) বাবার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বেশির ভাগ সময় সেন্সলেস (চেতনাহীন) থাকছেন। কেউ ডাকলে একটু-আধটু চোখ মেলে দেখছেন। রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেছে। প্রতিদিন দুই ব্যাগ রক্ত লাগছে। তার ফুসফুসে পানি জমেছে।

‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ আলোচনা-মিলনমেলা

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ আলোচনা-মিলনমেলা
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ। ছবি : খবরের কাগজ

খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে ২০১৪ সালের ১৭ মে যাত্রা শুরু হয় ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’-এর। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে বধ্যভূমিতে ৫০টি স্মৃতিফলক, মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত প্রায় ৯ হাজার ছবি ও অনেক স্মৃতিচিহ্ন রাখা হয়েছে। এই জাদুঘরই প্রথম ডিজিটাল জেনোসাইড ম্যাপ তৈরি করেছে।

শুক্রবার (১৭ মে) গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর-এর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ শিরোনামে দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও মিলনমেলা খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়। এই আয়োজনের মাধ্যমে খুলনার সাউথ সেন্ট্রাল রোডে নতুন ভবনে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করছে গণহত্যা জাদুঘর। 

১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার নির্ভুল ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শন অন্বেষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিল গণহত্যা জাদুঘর। সকালে সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সেমিনার উদ্বোধন করেন। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। 

দ্বিতীয় পর্বে একাডেমিক সেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক পুনম মুখার্জি এবং পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. সাগর তরঙ্গ মণ্ডল। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মাহবুবর রহমান। বিকেলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘যে জাদুঘর জীবনের কথা বলে’ দশম শহিদ স্মৃতিস্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি তারিক সুজাত। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

তারেক খানের স্মৃতির প্রতি অনুশীলন নাট্যদলের শ্রদ্ধা

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১০:৫০ পিএম
তারেক খানের স্মৃতির প্রতি অনুশীলন নাট্যদলের শ্রদ্ধা
চিত্রশিল্পী, থিয়েটার কর্মী ও অনুষ্ঠান প্রযোজক তারেক খান। ছবি : সংগৃহীত

চিত্রশিল্পী, থিয়েটার কর্মী ও অনুষ্ঠান প্রযোজক তারেক খানের প্রয়াণে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে অনুশীলন নাট্যদল। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার (১৫ মে) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

সাবেক কর্মীর মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে রাজশাহীতে দলের সদস্যরা অনুশীলন নাট্যদল কার্যালয়ে শোকসভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি অধ্যাপক এস এম আবু বকর। 

সভার শুরুতেই প্রয়াত তারেক খানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং শোকাতুর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। 

সভায় তার কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন দলের সদস্যরা।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারেক খান বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন গাজী টিভির অনুষ্ঠান সমন্বয়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আগামীকাল শুক্রবার (১৭ মে)  বিকেল ৫টায় ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে তারেক খানের  স্মরণে সভার আয়োজন করেছে অনুশীলন নাট্যদলের প্রাক্তন সদস্যরা।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ আন্দোলনের সহযাত্রী: স্মরণসভায় বিশিষ্টজনরা

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০১:০১ পিএম
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ আন্দোলনের সহযাত্রী: স্মরণসভায় বিশিষ্টজনরা
রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রয়াণবার্ষিকীতে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিকরা। ছবি: খবরের কাগজ

রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আনিসুজ্জামান জাতির দুর্দিনে পথ দেখিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এবং গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ আন্দোলনের সহযাত্রী। 

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জীবন ও কর্ম স্মরণে স্মরণসভায় এ মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিকরা।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে কালি ও কলম পত্রিকার আয়োজনে অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি মাহফুজা খানম, কবি পিয়াস মজিদ। 

মঙ্গলবার ছিল বাংলা একাডেমির প্রয়াত সভাপতি, শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চতুর্থ প্রয়াণবার্ষিকী। 

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি লেখালেখির মাধ্যমে তরুণদের জাগাতে চেয়েছিলেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি তরুণদের সেখানে ঘাটতি আছে। তাকে স্মরণ করে সেই কাজটাই আমরা করতে চাই। তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন চিন্তা প্রসারিত করতে হবে। আমরা সকলেই মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী। আমরা সেই বিশ্বাসকে প্রসারিত করব।’

বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি মাহফুজা খানম বলেন, নতুন প্রজন্মকে মানবিক, উদারতা, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করাসহ নানা কর্মে অবদান রেখেছেন। রাজনৈতিক বিভাজন, ধর্মীয় উন্মাদনা, সন্ত্রাস, মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় রোধে জাতীয় জাগরণের আশায় অনেককে একত্রিত করার নানা কর্মকাণ্ডে তিনি যুক্ত ছিলেন।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চতুর্থ প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল আজিমপুর কবরস্থানে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা। একাডেমির পরিচালক ডা. মো. হাসান কবীরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত মোনাজাতে অংশ নেন একাডেমির বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক, উপপরিচালক, সহ-পরিচালক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।