এ বছর আলোঘর প্রকাশনী থেকে আমার একটি বই এসেছে। বইটির নাম ‘উন্নয়ন কল্যাণ অর্থনীতি’। এই বইয়ের নিবন্ধগুলো অর্থনীতিবিষয়ক হলেও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের কল্যাণ ও তাদের সার্বিক উন্নতি। প্রত্যেক মানুষ তার জীবনকালে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সফলতার প্রতি নজর দেবে, এটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনই মানুষের জীবনকে অন্যের উপকার ও জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্যও মনোনিবেশ করতে হবে। এটাই মানবতার মূলমন্ত্র।
সেই সঙ্গে মানুষকে সমাজের কল্যাণের জন্যও কাজ করতে হবে। তদুপরি সমাজে ন্যায়, সুবিচার ও পরার্থপরতা নিশ্চিত করতে হবে। বইয়ে সন্নিবেশিত বিভিন্ন বিষয়ের বিচিত্র নিবন্ধগুলো বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমুখী, সুখী ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পাঠককে উৎসাহিত করবে। এই প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু লেখার সংকলন।
আমাদের বইমেলায় এখন অনেক গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করা হচ্ছে। আবার দেশের বাইরে অনেক প্রকাশনীতেও আমাদের বই প্রকাশিত হচ্ছে। তবে যত গবেষণাধর্মী বই প্রকাশিত হোক না কেন, গবেষকদের কথা, বিশেষজ্ঞদের কথা কি আমলে নেওয়া হচ্ছে? নীতিনির্ধারকরা তো এখন সব জানে। তাদের মধ্যে গবেষকদের কথাবার্তা অস্বীকার করার একটা প্রবণতা দেখতে পাই। স্বাধীনভাবে কাজ করা গবেষকরা যা বলছেন, তার সবটা ঠিক না। তাদের কথার সবটা নিতে হবে, এমনো নয়। তবে তাদের কথার নির্যাসটুকু নিয়ে যে কৌশল বা নীতি প্রণয়ন করা হবে, আমি সে জায়গায় অভাব দেখতে পাই।
হ্যাঁ, আমরা ৫২ বছরে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন একটা সন্তোষজনক জায়গায় এসেছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এসেছি। এখন মধ্যম আয়ের দেশ। তবে আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তবে এ নিয়ে এত প্রচার না করে এখন আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে সমাজের আয়ের বৈষম্য কীভাবে কমানো যায়। আমরা যেটাকে বলছি কাউন্টার ফ্যাক্টর আর্গুমেন্ট।
আমার মতে, বাংলাদেশের সম্পদ কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে কুক্ষিগত না থাকলে মানুষ আরও ভালো থাকতে পারত। বইমেলার প্রসঙ্গে বলব, বইমেলার পরিসর বেড়েছে, বই বিক্রি বেড়েছে। আমার যেটা মনে হয়, বইয়ের মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমন সব বই প্রকাশ করতে হবে, যা আমাদের নীতি-নৈতিকতা বা আদর্শ শিক্ষা দেয়।