ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

মনিপুরী ভাষায় সাহিত্য চর্চা বেগবান নয়

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:১১ এএম
আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ০২:২১ পিএম
মনিপুরী ভাষায় সাহিত্য চর্চা বেগবান নয়
শুভাশিস সিনহা

এবারের বইমেলায় মাছরাঙা প্রকাশনী থেকে এসেছে আমার দীর্ঘ কবিতার বই ‘কাহার বাতাস আসি লাগে।’ দীর্ঘ কবিতার বিষয়ে আমি বলব, আমাদের দেশে কবিতার ধারণা এসেছে অনেক পরে। পাঁচালি, গীতি, রামায়ণ, মহাভারত বা বিষাদসিন্ধু-যা কিছু ছিল আমাদের দেশে, তার সবই ছিল দীর্ঘকাব্য বা মহাকাব্য। কবিতায় সাধারণত ছোট আকারে আমরা নিজের মনের ভাব ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করি। তবে দীর্ঘ কবিতার মধ্যে একটা ভ্রমণ থাকে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ভাবনার ডালপালা বিস্তৃত করেন কবি। কোনো গল্পের মধ্য দিয়ে আমরা যেভাবে এগোই, কবিতায় তো আমেজ বা ব্যঞ্জনা সেভাবে থাকে না। সেখানে দীর্ঘ কবিতায় পাঠককে অনেক সময় ধরে রেখে নিজের কথা বলার চেষ্টা করেছি।

‘কাহার বাতাস আসি লাগে’ বইটির নামকরণে ‘কাহার’ শব্দটি সাধু ভাষা। চলতি ভাষার অনেক কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ সাধু শব্দ প্রয়োগ করেছেন। আর ‘বাতাস’ শব্দটির যোজনা হলো, এটি করে কবিতায় একটি আমেজ তৈরির চেষ্টা করেছি। অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন, এটি প্রেমের কবিতা কি না। আমি বলছি, এটি প্রেমের কবিতা নয়। 

‘কাহার বাতাস আসি লাগে’-দীর্ঘ কবিতা আমাদের যাপিত জীবনের গল্প বলে। আমাদের মন এমন এক পরিবর্তন চায়, যাতে আমরা নিজেদের চাওয়া-পাওয়াগুলো সময়ের সঙ্গে মেলাতে পারি। সব মানুষের ভেতরে একটা অবরুদ্ধ সময় কাটে। ওই জড় সময়ে আমরা আশা করি কোনো একটা বাতাস আসবে। স্যামুয়েল বেকেটের ‘ওয়েটিং ফর গডো’তে আমরা দেখি, একটা গডো আসবে। এখানে আমি সেই আবহ নিয়ে এসেছি। এখানে আমি আলোড়িত হয়েছি, শিহরিত হয়েছি নতুন ভাবনায়। অনুরণিত হয়েছি ওই বাতাসের আকাঙ্ক্ষায়।

আমি মণিপুরি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করি। মণিপুরি সাহিত্যের চর্চার বিষয়ে বলব, তা খুব বেশি বেগবান হয়নি। ওখানে কৃতবিদ্য শিল্পকলার ব্যাপারটি যেমন শক্তিশালী, তেমনিভাবে কিন্তু লিখিত সাহিত্যের চর্চা বেশ দুর্বল। তারপরও আমরা বেশ কজন চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মনে করি, মণিপুরি ভাষায় কবিতা ও গল্প অপ্রতুল। উপন্যাসও সেভাবে নেই। মণিপুরি ভাষায় আমার ৯টি বই আছে। আমার ইচ্ছা আছে, আমি মণিপুরিদের নিয়ে একটি বৃহৎ উপন্যাস লিখব। বাংলা ভাষায় লেখা হলেও আমার উপন্যাসের চরিত্র, গল্প সব কিছুর পটভূমি হবে মণিপুরি সমাজ ব্যবস্থা।

কবি, নাট্যকার

অনুলিখন: জয়ন্ত সাহা

অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ স্টল ভাড়া কমানোসহ ১৬ দাবি বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশকদের

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম
আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০১ পিএম
স্টল ভাড়া কমানোসহ ১৬ দাবি বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশকদের
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের হাতে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক নেতৃবৃন্দ। ছবি: সংগৃহীত

অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ উপলক্ষে ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশকরা। রবিবার (৩ নভেম্বর) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও সভাপতিকে এ স্মারক লিপি দেন তারা।

একুশে বইমেলায় স্টল ভাড়া ৫০ ভাগ কমানো, প্যাভিলিয়ন পদ্ধতি বাতিল, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন ও অধিকসংখ্যক প্রকাশক প্রতিনিধি মনোনয়নসহ ১৬ দফা দাবি জানিয়ে এ স্মারক লিপি দেন বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশকরা।

বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির পক্ষে সিনিয়র সহসভাপতি রাজিয়া রহমান (জাগৃতি প্রকাশনী)- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের কাছে প্রস্তাবনাপত্র, স্বৈরাচারের দোসর লুটপাটকারী প্রকাশকদের তালিকা, বইমেলায় প্রকাশক প্রতিনিধি মনোনয়ন তালিকা প্রদান করেন।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি সাঈদ বারী, সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হক শাহজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন কলি, অর্থ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, মেলা সম্পাদক মশিউর রহমান, বাজার উন্নয়ন সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান, প্রচার সম্পাদক ওয়াহিদ তুষার, দপ্তর সম্পাদক মো. ফিরোজ মিয়া, সদস্য সহিদুল ইসলাম, মো. শিহাব উদ্দিন, মহসিন রুবেল, জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর হোসেন, এইচ এম আলমগীর, ইসমাঈল আহসান, হানিফ রাশেদীনসহ ৬৫ জন প্রকাশক উপস্থিত ছিলেন।

পরে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের হাতে অনুরূপ স্মারকলিপি প্রদান করেন বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি সাঈদ বারী।

প্রকাশক নেতৃবৃন্দ একই দিনে জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগমের কাছে বিভাগীয় বইমেলার স্টল ভাড়া কমানো, বই বাছাই প্রতিনিধি মনোনয়ন, আন্তর্জাতিক বইমেলায় বৈষম্যের শিকার প্রকাশকদের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং স্বৈরাচারের দোসর প্রকাশকদের বিষয়ে তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এ স্টলভাড়া এক ইউনিট ১৫ হাজার ১৮০ টাকা, দুই ইউনিট ৩১ হাজার ৬২৫, তিন ইউনিট ৫৯ হাজার ৮০০ টাকা, চার ইউনিট ৮৩ হাজার ৪৯০ টাকা ও প্যাভিলিয়ন ভাড়া (২০x২০) ১ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ ও (২৪x২৪) ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি 

ভাঙল প্রাণের মেলা, ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৬ এএম
ভাঙল প্রাণের মেলা, ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি

একুশে বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি হয়েছে। গত বছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি টাকা। মেলার শেষ দিনে প্রকাশিত হয়েছে নতুন ১৪৯টি বই। এবার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৫১। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৩০। গতকাল  শনিবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাহেদ মন্তাজ।

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ আর রহস্য-রোমাঞ্চ; কথাসাহিত্যের নানা শাখার কবি-গল্পকার-কথাসাহিত্যিকদের নানা বইয়ের সম্ভার নিয়ে মাসজুড়ে বাঙালি পাঠকের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল অমর একুশে বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কবি-সাহিত্যিক, লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের ভাব বিনিময়, মিথস্ক্রিয়ায় এই বইমেলা হয়ে উঠেছিল বাঙালির প্রাণের মেলা। 

গতকাল ৩১ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনে তেমন ভিড় না থাকলেও বইপ্রেমী পাঠকের হাতে ছিল বই। শেষ দিনে তারা প্রিয় বইটি কিনে নিয়েছেন। সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তে জমে ওঠে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের প্রাণময় আড্ডা।

রীতি অনুযায়ী গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। প্রকাশকদের অনুরোধে মেলার সময় দুই দিন বাড়িয়ে দেয় সরকার। এরই মধ্যে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোকাস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ। সেই শোকের আবহ ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণেও। বিষণ্নতার শোকার্ত পরিবেশ থাকায় মিইয়ে পড়ে শেষ দিনের মেলা।

সমাপনী আয়োজনে বইমেলা স্থানান্তরের ইস্যু 
বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে রাজধানীর বেইলি রোডে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এই বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে কথা উঠেছে। আমরা কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানেই রাখার ব্যবস্থা করব।’ অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে।  অভিভাবকদের বলব, প্রতি সপ্তাহে শিশুদের হাতে অন্তত একটি ছোট বই হলেও কিনে দিন।’ সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ বলেন, ‘বইমেলার স্থায়ী কাঠামোর নির্মাণের জন্য চেষ্টা চলছে। কোনো একটি স্থায়ী জায়গায় বইমেলা করার কথা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন।’

কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘সারা পৃথিবী ঘুরে এসেও এমন একটি বইমেলা খুঁজে পাবেন না। এ বইমেলা আমাদের আবেগের মেলা, জাতিসত্তার মেলা। এই বইমেলা জাতি হয়ে ওঠার বইমেলা, আমাদের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার বইমেলা।’

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারের নাম আগেই ঘোষণা করেছিল বাংলা একাডেমি। গতকাল বইমেলার মূল মঞ্চে এই পুরস্কারগুলো তুলে দেওয়া হয়। 

২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিকসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ পেয়েছে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। 

২০২৩ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিকসংখ্যক শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি পেয়েছে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার।
এ বছর অমর একুশে বইমেলা নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেঙ্গল বুকস (এক ইউনিট); নিমফিয়া পাবলিকেশন (দুই-চার); অন্যপ্রকাশ পায় কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার। 

কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ০৭:২১ পিএম
কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
ছবি : খবরের কাগজ

কাজ করেই নিজেকে প্রমাণ করতে চান নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। এ জন্য সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা চাইলেন তিনি৷ 

শনিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন৷ 

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে রাজধানীর বেইলি রোডে নিহতদের স্মরণ করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন৷ 

পরে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি আমি বইমেলার উদ্বোধনী আয়োজনে এসেছিলাম৷ জীবনে চিন্তাও করিনি আমি বইমেলার সমাপনী আয়োজনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে হাজির হবো৷
 
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিশ্রুতি করতে চাই না৷ আমি কোনো প্রমিজে বিশ্বাস করি না৷ আমি কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই৷ প্রতিশ্রুতি তো ভঙ্গ হয়ে যায়৷ আমরা সবাই মিলে যদি একটি টিমওয়ার্ক করতে পারি, তাহলে কাজটি ভালো হবে৷’

বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে৷ এই বইমেলা প্রস্থানের বিষয়ে কথা উঠেছে৷ কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানে রাখার চেষ্টা করা হবে৷’

অভিভাবকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে৷ অভিভাবকদের উদ্দেশে বলব, প্রতি সপ্তাহে শিশুদের হাতে অন্তত একটি ছোট বই হলেও কিনে দিন৷ 

জয়ন্ত সাহা/অমিয়/

পর্দা নামল চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলার

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
পর্দা নামল চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলার
ছবি: খবরের কাগজ

দীর্ঘ বাইশ দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় চলা অমর একুশে বইমেলার। 

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শিরীষতলায় আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে বইমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সমাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রাণের বইমেলার জন্য আরও এক বছরের অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হলো। 

তবে শেষ দিনের মতো আগামীকাল শনিবারও বইমেলা চলবে। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত শুক্রবারের সমাপনী অনুষ্ঠান লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।  

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন দেশ গড়ার ইচ্ছা বাঙালির মনে জন্ম নিয়েছিল। অনেক দেশে গিয়েছি। কোনো দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড কেবল বিদেশি কোনো ভাষায় লিখতে দেখিনি। আমরা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। তবে ভাষাপ্রেমের চেতনা যেন আমাদের অনেকের মাঝে কমে গেছে। আমি কিছুটা হতাশাবোধ করতাম। তবে এবার বইমেলায় তরুণদের যে সাড়া দেখেছি তাতে আমি আশাবাদী। তরুণরা জাগলে বাংলা ভাষা বাঁচবে, বাঙালি বাঁচবে। বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে বাঙালি জাতি। আসুন আমরা বাঙালি হই।’ 

এ সময় আগামী বছর আন্তর্জাতিক মানের চট্টগ্রাম বইমেলা আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মেয়র।

শোকের আবহ, ভাঙছে মিলনমেলা

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:০৬ এএম
শোকের আবহ, ভাঙছে মিলনমেলা

বসন্তবিকেলে সব উচ্ছ্বাস থেমে গেছে, প্রাঙ্গণজুড়ে সব মুখ বিবর্ণ-পাণ্ডুর। বাঙালি পাঠকের বৃহৎ মিলনোৎসব অমর একুশে বইমেলার শেষ বেলায় গতকাল শুক্রবার বইপ্রেমীদের চোখে-মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। গতকাল বেলা ১১টায় দুয়ার খোলে অমর একুশে বইমেলার। ছুটির দিনে দুপুর গড়াতেই বইমেলা লোকারণ্য হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ অনেকটাই ফাঁকা।

প্রকাশকরা জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় দেশজুড়ে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তার ছাপ পড়েছিল অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণেও। অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীবাসী থমকে গেছেন। তারা শোকে স্তব্ধ। যারা বই কিনতে এসেছিলেন, তাদের সবার মুখে কেমন বিষাদ, কেমন এক আতঙ্ক দেখেছি। বইমেলার শেষভাগে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখার প্রত্যাশা করেছিলাম, তা নেই। অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘শনিবার বইমেলা শেষ হয়ে যাবে। আজ যে উচ্ছলতা প্রত্যাশা করেছিলাম তরুণ পাঠকদের, তা নেই। অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে বইমেলায়।’ অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা তার মোবাইলে ধারণ করা এক ভিডিও দেখিয়ে বলেন, ‘শুক্রবার (গতকাল) বেলা ৩টা পর্যন্ত মেলায় তেমন কোনো দর্শক-পাঠক ছিলেন না। হাতে গোনা যারা এসেছেন, তারা অবশ্য কিছু বই কিনেছেন।’

অমর একুশে বইমেলা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে প্রকাশকদের অনুরোধে বইমেলার সময় আরও দুই দিন বাড়িয়ে দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বইমেলার শেষ দিন আজ শনিবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, শেষ হবে রাত ৯টায়। 

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে এ বছরের বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০০টির বেশি। প্রকাশকরা জানান, নতুন বইয়ের সংখ্যা আদতে আরও বেশি। নতুন-পুরোনো বইয়ের বিকিকিনির পাশাপাশি বইমেলায় পাঠক তার পছন্দের মানসম্মত বইটি খুঁজে পেলেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তর জানতে খবরের কাগজের প্রতিবেদক কথা বলেন বেশ কজন পাঠকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে অভিনেত্রী জ্যোতি সিনহা বলেন, ‘মেলায় গুটিকয়েক প্রকাশনী মানসম্মত বই প্রকাশ করে। তাদের বুকলিস্ট দেখে বই কিনেছি বেশ কিছু। কিছু প্রকাশনীতে আমার প্রিয় লেখকদের বই রয়েছে। সেসব বই খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয়েছে।’ একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক লতিফুল হক বলেন, ‘ছোট প্রকাশক হিসেবে যাদের অনেকে অবজ্ঞা করেন, সেসব প্রকাশনীতেও কিন্তু তরুণ লেখকদের ভালো মানের বই থাকে। তাদের বইয়ের প্রচার হয়তো একটু কম। তবে একটু খোঁজ করলে সেখানে বইগুলো পাওয়া যায়।’ 

বই বিক্রি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

বইমেলার বাণিজ্যিক দিক নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রকাশকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নালন্দার প্রকাশক রেদওয়ান রহমান জুয়েল বলেন, ‘গতবারের মেলার চেয়ে এবার বই বিক্রি ২০ শতাংশ কমে গেছে। শুক্রবার বই বিক্রির পরিমাণ একটু বেশি হওয়ার আশা করলেও তা হয়নি। পাঠক বইমেলা থেকে না, অনলাইন বুকশপে বই কিনতে এখন বেশি আগ্রহী।’ অনন্যার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক বলেন, ‘শুরুর দিকে বইমেলায় বিক্রির পরিমাণ বেশ ভালো থাকলেও শেষ দিকে এসে তা হঠাৎ কমে গেছে। ২১ ফেব্রুয়ারির পর আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, বই বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। তবে ব্যাপার হলো মানুষ তার আর্থিক সংকট সামলে যে বই কিনতে আলাদা অর্থ ব্যয় করবে, সেদিন নেই।’ অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন, ‘অনুপমের মিলন নাথ, আকাশের আলমগীর শিকদার লোটন, কাকলীর এ কে নাছির আহমেদ সেলিম জানান, তাদের প্যাভিলিয়নে বই বিক্রি বেশ ভালো হয়েছে। নাছির আহমেদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনীতে বই বিক্রির পরিমাণ ভালো হওয়ার কারণ হলো হুমায়ূন আহমেদ। তার রচনাবলির বিশাল সম্ভার রয়েছে আমাদের। এ ছাড়া আনিসুল হক, সুমন্ত আসলামের আলাদা পাঠক রয়েছে। তাদের বইয়ের চাহিদাও তুমুল ছিল।’ 

জার্নিম্যান বুকসের স্বত্বাধিকারী কবি তারিক সুজাত বলেন, বইমেলায় আগত দর্শক-পাঠক সংখ্যা কত, তা জানতে বাংলা একাডেমি একটি ডেটাবেজ করতে পারে। সেখানে আগতরা নাম নিবন্ধন করে আসবেন। নিবন্ধিতদের কাছে বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের তথ্যগুলো জানিয়ে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠানো যেতে পারে। মেলাকে গতানুগতিক ধারার বাইরে নিয়ে আসতে হবে। বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের বইমেলায় বিশ্বের নানা দেশ থেকে লেখক-প্রকাশক ও অনুবাদকদের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। বাংলা ভাষার বইগুলো কীভাবে তারা অনুবাদ করবেন, সেই প্রক্রিয়া নিয়ে এখানে আলোচনা হতে পারে, কপিরাইট ইস্যু নিয়েও কথা হতে পারে।’ অনুপমের স্বত্বাধিকারী মিলন নাথ বলেন, ‘বইমেলার কাঠামোগত পরিবর্তন করা দরকার। আয়োজক হলো বাংলা একাডেমি, প্রকাশকরা হলেন অংশগ্রহণকারী। বইয়ের মান, সাহিত্যের বাজার এসব নিয়ে যদি কাজ করতেই হয়, তবে বাংলা একাডেমিকে একটি আলাদা বিভাগ খুলতে হবে। তারা শুধু বইমেলাকেন্দ্রিক কাজগুলো করবে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস না, বইমেলা নিয়ে বছরজুড়েই কাজ করতে পারেন তারা।’

বিশ্বসাহিত্য ভবনের প্রকাশক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বইমেলায় বই বিক্রির পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, এবার ভালো বইয়ের পাঠকের সংখ্যা অনেক। মেলায় সিরিয়াস পাঠক বাড়ছে। তারা গল্প, কবিতা ছেড়ে সমকালীন সাহিত্য, সমালোচনা বা ইতিহাসের বইয়ের যে চাহিদার কথা আমাদের জানিয়ে গেলেন, সন্তানদের হাতে যেসব বই তুলে দিলেন, তাতে আমরা জানলাম যে সামনে আমাদের কী ধরনের বই প্রকাশ করতে হবে।’

মেলার নতুন বই 

গতকাল বইমেলার নতুন বইয়ের স্টলে জমা পড়েছে ২১৯টি বই। কথাপ্রকাশ এনেছে আফসান চৌধুরীর ‘দ্য মিডিয়া ইন বাংলাদেশ’, অন্যপ্রকাশ এনেছে ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর ‘উনিশ শ একাত্তর’; অবসর এনেছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল, হাসান হাফিজ, আলী রীয়াজ ও অন্যান্যর ‘স্কুলদিনের বই পড়া’; গণপ্রকাশ এনেছে পাভেল রহমানের ‘সেইসব দিনগুলি’; গ্রন্থিক এনেছে তোফায়েল আহমেদের ‘সংস্কার সংলাপ: সূচনা সূত্র’; সৌম্য প্রকাশনী এনেছে মেসবাহ কামালের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা’; নান্দিক এনেছে হায়াৎ মামুদের ‘সে এক ঘটনা বটে’ ও পবিত্র সরকারের ‘খেয়ালিমেরিক’।

আজ শনিবার বিকেল ৫টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্যসচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।