মনিপুরী ভাষায় সাহিত্য চর্চা বেগবান নয় । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

মনিপুরী ভাষায় সাহিত্য চর্চা বেগবান নয়

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:১১ এএম
মনিপুরী ভাষায় সাহিত্য চর্চা বেগবান নয়
শুভাশিস সিনহা

এবারের বইমেলায় মাছরাঙা প্রকাশনী থেকে এসেছে আমার দীর্ঘ কবিতার বই ‘কাহার বাতাস আসি লাগে।’ দীর্ঘ কবিতার বিষয়ে আমি বলব, আমাদের দেশে কবিতার ধারণা এসেছে অনেক পরে। পাঁচালি, গীতি, রামায়ণ, মহাভারত বা বিষাদসিন্ধু-যা কিছু ছিল আমাদের দেশে, তার সবই ছিল দীর্ঘকাব্য বা মহাকাব্য। কবিতায় সাধারণত ছোট আকারে আমরা নিজের মনের ভাব ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করি। তবে দীর্ঘ কবিতার মধ্যে একটা ভ্রমণ থাকে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ভাবনার ডালপালা বিস্তৃত করেন কবি। কোনো গল্পের মধ্য দিয়ে আমরা যেভাবে এগোই, কবিতায় তো আমেজ বা ব্যঞ্জনা সেভাবে থাকে না। সেখানে দীর্ঘ কবিতায় পাঠককে অনেক সময় ধরে রেখে নিজের কথা বলার চেষ্টা করেছি।

‘কাহার বাতাস আসি লাগে’ বইটির নামকরণে ‘কাহার’ শব্দটি সাধু ভাষা। চলতি ভাষার অনেক কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ সাধু শব্দ প্রয়োগ করেছেন। আর ‘বাতাস’ শব্দটির যোজনা হলো, এটি করে কবিতায় একটি আমেজ তৈরির চেষ্টা করেছি। অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন, এটি প্রেমের কবিতা কি না। আমি বলছি, এটি প্রেমের কবিতা নয়। 

‘কাহার বাতাস আসি লাগে’-দীর্ঘ কবিতা আমাদের যাপিত জীবনের গল্প বলে। আমাদের মন এমন এক পরিবর্তন চায়, যাতে আমরা নিজেদের চাওয়া-পাওয়াগুলো সময়ের সঙ্গে মেলাতে পারি। সব মানুষের ভেতরে একটা অবরুদ্ধ সময় কাটে। ওই জড় সময়ে আমরা আশা করি কোনো একটা বাতাস আসবে। স্যামুয়েল বেকেটের ‘ওয়েটিং ফর গডো’তে আমরা দেখি, একটা গডো আসবে। এখানে আমি সেই আবহ নিয়ে এসেছি। এখানে আমি আলোড়িত হয়েছি, শিহরিত হয়েছি নতুন ভাবনায়। অনুরণিত হয়েছি ওই বাতাসের আকাঙ্ক্ষায়।

আমি মণিপুরি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করি। মণিপুরি সাহিত্যের চর্চার বিষয়ে বলব, তা খুব বেশি বেগবান হয়নি। ওখানে কৃতবিদ্য শিল্পকলার ব্যাপারটি যেমন শক্তিশালী, তেমনিভাবে কিন্তু লিখিত সাহিত্যের চর্চা বেশ দুর্বল। তারপরও আমরা বেশ কজন চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মনে করি, মণিপুরি ভাষায় কবিতা ও গল্প অপ্রতুল। উপন্যাসও সেভাবে নেই। মণিপুরি ভাষায় আমার ৯টি বই আছে। আমার ইচ্ছা আছে, আমি মণিপুরিদের নিয়ে একটি বৃহৎ উপন্যাস লিখব। বাংলা ভাষায় লেখা হলেও আমার উপন্যাসের চরিত্র, গল্প সব কিছুর পটভূমি হবে মণিপুরি সমাজ ব্যবস্থা।

কবি, নাট্যকার

অনুলিখন: জয়ন্ত সাহা

ভাঙল প্রাণের মেলা, ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৬ এএম
ভাঙল প্রাণের মেলা, ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি

একুশে বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি হয়েছে। গত বছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি টাকা। মেলার শেষ দিনে প্রকাশিত হয়েছে নতুন ১৪৯টি বই। এবার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৫১। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৩০। গতকাল  শনিবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাহেদ মন্তাজ।

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ আর রহস্য-রোমাঞ্চ; কথাসাহিত্যের নানা শাখার কবি-গল্পকার-কথাসাহিত্যিকদের নানা বইয়ের সম্ভার নিয়ে মাসজুড়ে বাঙালি পাঠকের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল অমর একুশে বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কবি-সাহিত্যিক, লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের ভাব বিনিময়, মিথস্ক্রিয়ায় এই বইমেলা হয়ে উঠেছিল বাঙালির প্রাণের মেলা। 

গতকাল ৩১ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনে তেমন ভিড় না থাকলেও বইপ্রেমী পাঠকের হাতে ছিল বই। শেষ দিনে তারা প্রিয় বইটি কিনে নিয়েছেন। সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তে জমে ওঠে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের প্রাণময় আড্ডা।

রীতি অনুযায়ী গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। প্রকাশকদের অনুরোধে মেলার সময় দুই দিন বাড়িয়ে দেয় সরকার। এরই মধ্যে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোকাস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ। সেই শোকের আবহ ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণেও। বিষণ্নতার শোকার্ত পরিবেশ থাকায় মিইয়ে পড়ে শেষ দিনের মেলা।

সমাপনী আয়োজনে বইমেলা স্থানান্তরের ইস্যু 
বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে রাজধানীর বেইলি রোডে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এই বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে কথা উঠেছে। আমরা কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানেই রাখার ব্যবস্থা করব।’ অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে।  অভিভাবকদের বলব, প্রতি সপ্তাহে শিশুদের হাতে অন্তত একটি ছোট বই হলেও কিনে দিন।’ সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ বলেন, ‘বইমেলার স্থায়ী কাঠামোর নির্মাণের জন্য চেষ্টা চলছে। কোনো একটি স্থায়ী জায়গায় বইমেলা করার কথা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন।’

কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘সারা পৃথিবী ঘুরে এসেও এমন একটি বইমেলা খুঁজে পাবেন না। এ বইমেলা আমাদের আবেগের মেলা, জাতিসত্তার মেলা। এই বইমেলা জাতি হয়ে ওঠার বইমেলা, আমাদের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার বইমেলা।’

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারের নাম আগেই ঘোষণা করেছিল বাংলা একাডেমি। গতকাল বইমেলার মূল মঞ্চে এই পুরস্কারগুলো তুলে দেওয়া হয়। 

২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিকসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ পেয়েছে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। 

২০২৩ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিকসংখ্যক শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি পেয়েছে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার।
এ বছর অমর একুশে বইমেলা নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেঙ্গল বুকস (এক ইউনিট); নিমফিয়া পাবলিকেশন (দুই-চার); অন্যপ্রকাশ পায় কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার। 

কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ০৭:২১ পিএম
কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
ছবি : খবরের কাগজ

কাজ করেই নিজেকে প্রমাণ করতে চান নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। এ জন্য সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা চাইলেন তিনি৷ 

শনিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন৷ 

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে রাজধানীর বেইলি রোডে নিহতদের স্মরণ করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন৷ 

পরে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি আমি বইমেলার উদ্বোধনী আয়োজনে এসেছিলাম৷ জীবনে চিন্তাও করিনি আমি বইমেলার সমাপনী আয়োজনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে হাজির হবো৷
 
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিশ্রুতি করতে চাই না৷ আমি কোনো প্রমিজে বিশ্বাস করি না৷ আমি কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই৷ প্রতিশ্রুতি তো ভঙ্গ হয়ে যায়৷ আমরা সবাই মিলে যদি একটি টিমওয়ার্ক করতে পারি, তাহলে কাজটি ভালো হবে৷’

বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে৷ এই বইমেলা প্রস্থানের বিষয়ে কথা উঠেছে৷ কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানে রাখার চেষ্টা করা হবে৷’

অভিভাবকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে৷ অভিভাবকদের উদ্দেশে বলব, প্রতি সপ্তাহে শিশুদের হাতে অন্তত একটি ছোট বই হলেও কিনে দিন৷ 

জয়ন্ত সাহা/অমিয়/

পর্দা নামল চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলার

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
পর্দা নামল চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলার
ছবি: খবরের কাগজ

দীর্ঘ বাইশ দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় চলা অমর একুশে বইমেলার। 

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শিরীষতলায় আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে বইমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সমাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রাণের বইমেলার জন্য আরও এক বছরের অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হলো। 

তবে শেষ দিনের মতো আগামীকাল শনিবারও বইমেলা চলবে। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত শুক্রবারের সমাপনী অনুষ্ঠান লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।  

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন দেশ গড়ার ইচ্ছা বাঙালির মনে জন্ম নিয়েছিল। অনেক দেশে গিয়েছি। কোনো দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড কেবল বিদেশি কোনো ভাষায় লিখতে দেখিনি। আমরা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। তবে ভাষাপ্রেমের চেতনা যেন আমাদের অনেকের মাঝে কমে গেছে। আমি কিছুটা হতাশাবোধ করতাম। তবে এবার বইমেলায় তরুণদের যে সাড়া দেখেছি তাতে আমি আশাবাদী। তরুণরা জাগলে বাংলা ভাষা বাঁচবে, বাঙালি বাঁচবে। বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে বাঙালি জাতি। আসুন আমরা বাঙালি হই।’ 

এ সময় আগামী বছর আন্তর্জাতিক মানের চট্টগ্রাম বইমেলা আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মেয়র।

শোকের আবহ, ভাঙছে মিলনমেলা

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:০৬ এএম
শোকের আবহ, ভাঙছে মিলনমেলা

বসন্তবিকেলে সব উচ্ছ্বাস থেমে গেছে, প্রাঙ্গণজুড়ে সব মুখ বিবর্ণ-পাণ্ডুর। বাঙালি পাঠকের বৃহৎ মিলনোৎসব অমর একুশে বইমেলার শেষ বেলায় গতকাল শুক্রবার বইপ্রেমীদের চোখে-মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। গতকাল বেলা ১১টায় দুয়ার খোলে অমর একুশে বইমেলার। ছুটির দিনে দুপুর গড়াতেই বইমেলা লোকারণ্য হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ অনেকটাই ফাঁকা।

প্রকাশকরা জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় দেশজুড়ে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তার ছাপ পড়েছিল অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণেও। অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীবাসী থমকে গেছেন। তারা শোকে স্তব্ধ। যারা বই কিনতে এসেছিলেন, তাদের সবার মুখে কেমন বিষাদ, কেমন এক আতঙ্ক দেখেছি। বইমেলার শেষভাগে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখার প্রত্যাশা করেছিলাম, তা নেই। অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘শনিবার বইমেলা শেষ হয়ে যাবে। আজ যে উচ্ছলতা প্রত্যাশা করেছিলাম তরুণ পাঠকদের, তা নেই। অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে বইমেলায়।’ অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা তার মোবাইলে ধারণ করা এক ভিডিও দেখিয়ে বলেন, ‘শুক্রবার (গতকাল) বেলা ৩টা পর্যন্ত মেলায় তেমন কোনো দর্শক-পাঠক ছিলেন না। হাতে গোনা যারা এসেছেন, তারা অবশ্য কিছু বই কিনেছেন।’

অমর একুশে বইমেলা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে প্রকাশকদের অনুরোধে বইমেলার সময় আরও দুই দিন বাড়িয়ে দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বইমেলার শেষ দিন আজ শনিবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, শেষ হবে রাত ৯টায়। 

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে এ বছরের বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০০টির বেশি। প্রকাশকরা জানান, নতুন বইয়ের সংখ্যা আদতে আরও বেশি। নতুন-পুরোনো বইয়ের বিকিকিনির পাশাপাশি বইমেলায় পাঠক তার পছন্দের মানসম্মত বইটি খুঁজে পেলেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তর জানতে খবরের কাগজের প্রতিবেদক কথা বলেন বেশ কজন পাঠকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে অভিনেত্রী জ্যোতি সিনহা বলেন, ‘মেলায় গুটিকয়েক প্রকাশনী মানসম্মত বই প্রকাশ করে। তাদের বুকলিস্ট দেখে বই কিনেছি বেশ কিছু। কিছু প্রকাশনীতে আমার প্রিয় লেখকদের বই রয়েছে। সেসব বই খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয়েছে।’ একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক লতিফুল হক বলেন, ‘ছোট প্রকাশক হিসেবে যাদের অনেকে অবজ্ঞা করেন, সেসব প্রকাশনীতেও কিন্তু তরুণ লেখকদের ভালো মানের বই থাকে। তাদের বইয়ের প্রচার হয়তো একটু কম। তবে একটু খোঁজ করলে সেখানে বইগুলো পাওয়া যায়।’ 

বই বিক্রি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

বইমেলার বাণিজ্যিক দিক নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রকাশকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নালন্দার প্রকাশক রেদওয়ান রহমান জুয়েল বলেন, ‘গতবারের মেলার চেয়ে এবার বই বিক্রি ২০ শতাংশ কমে গেছে। শুক্রবার বই বিক্রির পরিমাণ একটু বেশি হওয়ার আশা করলেও তা হয়নি। পাঠক বইমেলা থেকে না, অনলাইন বুকশপে বই কিনতে এখন বেশি আগ্রহী।’ অনন্যার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক বলেন, ‘শুরুর দিকে বইমেলায় বিক্রির পরিমাণ বেশ ভালো থাকলেও শেষ দিকে এসে তা হঠাৎ কমে গেছে। ২১ ফেব্রুয়ারির পর আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, বই বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। তবে ব্যাপার হলো মানুষ তার আর্থিক সংকট সামলে যে বই কিনতে আলাদা অর্থ ব্যয় করবে, সেদিন নেই।’ অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন, ‘অনুপমের মিলন নাথ, আকাশের আলমগীর শিকদার লোটন, কাকলীর এ কে নাছির আহমেদ সেলিম জানান, তাদের প্যাভিলিয়নে বই বিক্রি বেশ ভালো হয়েছে। নাছির আহমেদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনীতে বই বিক্রির পরিমাণ ভালো হওয়ার কারণ হলো হুমায়ূন আহমেদ। তার রচনাবলির বিশাল সম্ভার রয়েছে আমাদের। এ ছাড়া আনিসুল হক, সুমন্ত আসলামের আলাদা পাঠক রয়েছে। তাদের বইয়ের চাহিদাও তুমুল ছিল।’ 

জার্নিম্যান বুকসের স্বত্বাধিকারী কবি তারিক সুজাত বলেন, বইমেলায় আগত দর্শক-পাঠক সংখ্যা কত, তা জানতে বাংলা একাডেমি একটি ডেটাবেজ করতে পারে। সেখানে আগতরা নাম নিবন্ধন করে আসবেন। নিবন্ধিতদের কাছে বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের তথ্যগুলো জানিয়ে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠানো যেতে পারে। মেলাকে গতানুগতিক ধারার বাইরে নিয়ে আসতে হবে। বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের বইমেলায় বিশ্বের নানা দেশ থেকে লেখক-প্রকাশক ও অনুবাদকদের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। বাংলা ভাষার বইগুলো কীভাবে তারা অনুবাদ করবেন, সেই প্রক্রিয়া নিয়ে এখানে আলোচনা হতে পারে, কপিরাইট ইস্যু নিয়েও কথা হতে পারে।’ অনুপমের স্বত্বাধিকারী মিলন নাথ বলেন, ‘বইমেলার কাঠামোগত পরিবর্তন করা দরকার। আয়োজক হলো বাংলা একাডেমি, প্রকাশকরা হলেন অংশগ্রহণকারী। বইয়ের মান, সাহিত্যের বাজার এসব নিয়ে যদি কাজ করতেই হয়, তবে বাংলা একাডেমিকে একটি আলাদা বিভাগ খুলতে হবে। তারা শুধু বইমেলাকেন্দ্রিক কাজগুলো করবে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস না, বইমেলা নিয়ে বছরজুড়েই কাজ করতে পারেন তারা।’

বিশ্বসাহিত্য ভবনের প্রকাশক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বইমেলায় বই বিক্রির পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, এবার ভালো বইয়ের পাঠকের সংখ্যা অনেক। মেলায় সিরিয়াস পাঠক বাড়ছে। তারা গল্প, কবিতা ছেড়ে সমকালীন সাহিত্য, সমালোচনা বা ইতিহাসের বইয়ের যে চাহিদার কথা আমাদের জানিয়ে গেলেন, সন্তানদের হাতে যেসব বই তুলে দিলেন, তাতে আমরা জানলাম যে সামনে আমাদের কী ধরনের বই প্রকাশ করতে হবে।’

মেলার নতুন বই 

গতকাল বইমেলার নতুন বইয়ের স্টলে জমা পড়েছে ২১৯টি বই। কথাপ্রকাশ এনেছে আফসান চৌধুরীর ‘দ্য মিডিয়া ইন বাংলাদেশ’, অন্যপ্রকাশ এনেছে ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর ‘উনিশ শ একাত্তর’; অবসর এনেছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল, হাসান হাফিজ, আলী রীয়াজ ও অন্যান্যর ‘স্কুলদিনের বই পড়া’; গণপ্রকাশ এনেছে পাভেল রহমানের ‘সেইসব দিনগুলি’; গ্রন্থিক এনেছে তোফায়েল আহমেদের ‘সংস্কার সংলাপ: সূচনা সূত্র’; সৌম্য প্রকাশনী এনেছে মেসবাহ কামালের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা’; নান্দিক এনেছে হায়াৎ মামুদের ‘সে এক ঘটনা বটে’ ও পবিত্র সরকারের ‘খেয়ালিমেরিক’।

আজ শনিবার বিকেল ৫টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্যসচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।

বইমেলার শেষ সপ্তাহে নির্বাচিত কুড়িটি বই

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ০২:০০ পিএম
বইমেলার শেষ সপ্তাহে নির্বাচিত কুড়িটি বই

আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি। জার্মান ভাষার উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক ফ্রান্‌ৎস কাফকা বলেছেন, ‘আমাদের আত্মার মাঝে যে জমাটবাঁধা সমুদ্র সেই সমুদ্রের বরফ ভাঙার কুঠার হলো বই।’ আসলে মন হলো হাজার দুয়ারি বাড়ি, আর বই হলো কক্ষ। যারা বই পড়ে না তাদের কাছে সেই বেশির ভাগ কক্ষ অপ্রবিষ্টই থেকে যায়।… 

বই দেশ ও জাতি গঠনের উত্তম হাতিয়ার। যে জাতি সর্বোৎকৃষ্ট সেই জাতির প্রকাশনাও তত উন্নত। সারা পৃথিবীতে যত বই প্রকাশিত হয় তার ৭০ শতাংশ ইউরোপ-আমেরিকার। সেখানকার যেকোনো লাইব্রেরিতে বাংলাদেশের বই পাওয়া যায়। একুশে বইমেলাকে যদি আমরা জ্ঞানের মেলায় পরিণত করতে পারি তাহলে জাতি গঠন ও রাষ্ট্র নির্মাণে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। মনীষী সক্রেটিসের সেই বিখ্যাত উক্তি ‘জ্ঞানই শক্তি, জ্ঞানই পণ্য’।

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু
শ্রেণি: জীবনী ও স্মৃতিচারণ: বিবিধ
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২০৪; মূল্য: ৯০০ টাকা

গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার একজন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী এবং অক্লান্ত কর্মী মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, সাতষট্টির ভুট্টা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন এবং সর্বোপরি একাত্তরের রণাঙ্গনের তিনি একজন সম্মুখ যোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নির্ভীকচিত্ত মানুষ হিসেবে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তিনি কারানির্যাতন ভোগ করেন। জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সার-নির্যাস থেকে যে কলামগুলো রচনা করেছেন, তা এক মলাটে করেই এ গ্রন্থ। ইতিহাসের পরতে পরতে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করে শেকড় থেকে শিখরে ওঠা একজন মানুষের জীবন, সংগ্রাম ও আদর্শের বয়ান বইটিতে।…

লেনিন কেন জরুরী
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
শ্রেণি: রাজনৈতিক গবেষণা ও প্রবন্ধ
প্রকাশনী: বিদ্যাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৯২; মূল্য: ৪২০ টাকা

প্রবন্ধগুলোর অধিকাংশ লেখা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। এই প্রবন্ধের মূল বক্তব্যটি হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক, অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা। পুঁজিবাদ যে আজ চরম অবস্থায় পৌঁছে ফ্যাসিবাদী রূপ পরিগ্রহ করছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই; এবং বিশ্বব্যাপী এই সচেতনতা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে যে ঘটনা যেদিকে চলছে সেদিকে চলতে দিলে মানুষের মনুষ্যত্বই কেবল নয়, তার বেঁচে থাকাটাই হুমকির মুখে পড়বে। সমাধান সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা বটে, তবে সেটা আপনা আপনি ঘটবে না; তার জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। বক্তব্য তাত্ত্বিক ঠিকই, কিন্তু উপস্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রসঙ্গের বিবেচনার মধ্য দিয়ে এবং হৃদয়গ্রাহী রূপে।...

রবীন্দ্রনাথ
হুমায়ুন আজাদ
শ্রেণি: নারীবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রবন্ধ
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৩১৬; মূল্য: ৮০০ টাকা

হুমায়ুন আজাদ গোঁড়া রবীন্দ্রভক্ত কিংবা কট্টর রবীন্দ্রবিদ্বেষী ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের একজন সমঝদার পাঠক ও নির্মোহ সমালোচক। পাকিস্তান আমলের বৈরী পরিবেশে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ক্লাসের ছাত্র থাকাকালীন তিনি রবীন্দ্রপ্রবন্ধে প্রতিফলিত রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা বিষয়ে অভিসন্দর্ভ লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও উপন্যাসের আলোচনার পাশাপাশি তিনি নারীবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে রবীন্দ্রসাহিত্যের বিশ্লেষণ করেছিলেন; সম্পাদনা করেছিলেন রবীন্দ্রকবিতার বৃহত্তম সংগ্রহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান কবিতা। এ সংকলনগ্রন্থে বিধৃত হয়েছে হুমায়ুন আজাদের রবীন্দ্রভাবনা। হুমায়ুন আজাদ বাংলা সাহিত্যের প্রথাবিরোধী লেখকই শুধু নন, একই সঙ্গে দুই বাংলার এক শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্র-গবেষকও বটে।...

তোমার ঘরে বসত করে ক’জনা
হাসনাত আবদুল হাই
শ্রেণি: অতিপ্রাকৃত ও ভৌতিক
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৪৪; মূল্য: ৪৫০ টাকা

রবীন্দ্রনাথ ছোট গল্প সম্বন্ধে যেমন বলেছিলেন, স্বল্প পরিসরে অসমাপ্ত রেখে কাহিনি বর্ণনা- সেই আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে এই সংকলনের অধিকাংশ গল্পে। পাশাপাশি আছে গল্পের বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে সমকালীন চিন্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আটপৌঢ়ে জীবনেও যে মাঝে মাঝে চমক এসে জানিয়ে দেয় সব কিছুই জানা হয়নি, জানা যাবে না, জানার পরও জেগে থাকবে জিজ্ঞাসা, সেই অনুভূতি নিয়েও লেখা হয়েছে এই সংকলনের গল্প। আছে আধিভৌতিক এবং অতিমারির অভিজ্ঞার গল্প। সম্প্রতি এবং অতি সাম্প্রতিককালের পটভূমিতে লেখা এই গল্প সংকলন বহতা জীবনের ক্যালাইডোস্কোপ।

আমার পৃথিবী
সরদার ফজলুল করিম
শ্রেণি: ডায়েরি ও চিঠিপত্র সংকলন
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২০০; মূল্য: ৫২০ টাকা

রালফ, জ্যাক ও টিপারকিন আবিষ্কার করে এক লোকের কঙ্কাল। পাশে পড়ে আছে একটি কুড়াল। এই অবস্থা দেখে চিন্তায় পড়ে যায় তারা। এই প্রবাল দ্বীপে তাদেরও কি লোকটার মতো অবস্থা হবে? সরদার ফজলুল করিমের পৃথিবী ছিল নিরন্তর অনুসন্ধানের। বিপুল বিচিত্র জীবনাভিজ্ঞতা আর অধ্যায়নের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তার জীবন।... আমার পৃথিবী বইয়ে তার লেখাগুলো ডায়েরি-আশ্রিত। সেগুলোকে দর্শন, সমাজ, রাজনীতি, দেশ, জীবন, সাহিত্য- এভাবে পর্ববিন্যস্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্য অংশে স্থান পেয়েছে বই ও লেখক নিয়ে তার পাঠানুভূতি। লেখকের চিন্তাজগৎকে বুঝতে বিশেষ সহায়ক হবে বইটি।

নিরালা নীলে
আসাদুজ্জামান নূর
শ্রেণি: জীবনী ও স্মৃতিচারণ: বিবিধ
প্রকাশনী: ঐতিহ্য, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৭৪; মূল্য: ১৭০ টাকা

আমার ছেলে সুদীপ্ত ও মেয়ে সুপ্রভা কিছুতেই মানতে চায় না আমি ওদের মতো ছোট ছিলাম। বাবারা কি কখনো ছোট হয়? ভাবটা এমন- বারারা সব দাড়ি নিয়ে জন্মায়। কী মুশকিল! কিন্তু আসলেই তো আমি ছোট ছিলাম তোমাদের মতো, সুদীপ্ত আর সুপ্রভার মতো। যখন ছোট ছিলাম, কত ছোট বলতে পারব না, স্মৃতিতে ছায়ার মতো ভাসে- আমার মা গান গাইতেন মনের আনন্দে ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধসুধা ঢালো, চাদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলো।...

১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শান্তি কমিটি গঠন ও তৎপরতা
মুনতাসীর মামুন
শ্রেণি: রাজাকার/পাকিস্তানি সহযোগী
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৬৬; মূল্য: ৪০০ টাকা

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সহায়তার জন্য অনেকগুলো ফ্রন্ট ভুলেছিল। রাজাকার, আলবদর, দালাল, আলশামস এবং শান্তি কমিটি তার মধ্যে অন্যতম। এসব বাহিনী প্রায় ক্ষেত্রে ছিল সশস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সহযোগীদের চিহ্নিত করা, খোঁজা ও তাদের আক্রমণ প্রতিহত করা, হিন্দু ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের দেশত্যাগে বাধ্য করা, পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখল, হত্যা, লুট ও ধর্ষণ এসবই ছিল তাদের কর্মকাণ্ড। এসব বাহিনী নিয়ে বিস্তারিত খুব একটা আলোচনা হয়নি। বিশেষ করে শান্তি কমিটি। শান্তি কমিটি গঠন ও তাদের তৎপরতা নিয়ে প্রকাশ হলো এই গ্রন্থ।

মুজিবমঞ্জুষা
মুহম্মদ নূরুল হুদা
শ্রেণি: বাংলা কবিতা
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২৮০; মূল্য: ১০০০ টাকা

মুহম্মদ নূরুল হুদার মুজিবকেন্দ্রিক কবিতামালা মুজিবমঞ্জুষা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতার কেন্দ্রধ্রুবা। কবিজীবনের ঊষাকালেই মুজিব হয়ে ওঠে তার অনিবার্যতম প্রসঙ্গ। পনেরো আগস্ট ট্র্যাজেডি অনেকের কবিতায় এসেছে নানাভাবে, কিন্তু যিসাস মুজিব-এর অভিধায় তাকে কবিতায় রক্তিম বিভূতিমণ্ডিত করেছেন কবি। এই কবিতার প্রতি সুধী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রণম্য কবি শামসুর রাহমান, তার ট্র্যাজিক মহিমার দুর্মর আকর্ষণে প্রবন্ধে। মুজিববাড়ি কাব্যে তিনি একটি গৃহের রূপকে সারা পুণ্যবাংলাকে অবলোকন করেন, যার অমোঘ বিস্তার ঘটেছে অনন্ত মুজিবজন্ম, স্বাধীন জাতির স্বাধীন পিতাসহ তার অনেকানেক কবিতায়।...

শিকাগোর চিঠি শিকাগোর স্মৃতি
আনিসুজ্জামান
শ্রেণি: আমেরিকা ভ্রমণ
প্রকাশনী: বাতিঘর, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৮৪; মূল্য: ৪০০ টাকা

আনিসুজ্জামান বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান লেখক। গবেষণামূলক একাধিক আকরগ্রন্থের পাশাপাশি তার প্রবন্ধ-সংকলন ও স্মৃতিমূলক রচনা, সাহিত্য সমালোচনা, নাটকের অনুবাদ প্রভৃতি সাহিত্য-বোদ্ধাদের আত্মার রসদ জুগিয়েছে। সারা জীবন অসংখ্য চিঠিপত্র লিখেছেন তিনি, যা শুধু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়; বরং অনেক বেশি পরিমাণে ঋদ্ধ সমাজ ও দেশের কথায়। তার শিকাগো পর্বের পত্রাবলি নিয়ে গ্রথিত এই সংকলনে পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষ আনিসুজ্জামানকে খুঁজে পাওয়া যাবে নতুন করে।

আমার সাস্ট জীবন
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
শ্রেণি: পেশাগত স্মৃতিচারণ ও অভিজ্ঞতা
প্রকাশনী: শিখা প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১২৮; মূল্য: ৩২০ টাকা

আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টি সাস্টে কাটিয়েছি। যেকোনো হিসেবেই আমার সাস্ট জীবন ছিল আনন্দময়, ঘটনাবহুল এবং উত্তেজনাপূর্ণ। মাঝে মাঝেই দেশ-বিদেশে আমার কোনো একজন প্রাক্তন ছাত্র বা ছাত্রীর সঙ্গে দেখা হয়, তারা এখন বড় হয়েছে, প্রায় সবাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়েছে। গল্পে গল্পে হঠাৎ তারা সাস্টের কোনো একটা ঘটনার কথা বলে, মাঝে মাঝেই আমি আবিষ্কার করি সেই গল্পটির কথা আমার মনে নেই! আমার স্মৃতি খুবই দুর্বল, শুধু তাই না, সেই দুর্বল স্মৃতি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কেও আমার কোনো ধারণা নেই, অনেক সময়েই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ভুলে যাই এবং অর্থহীন আর ছেলেমানুষি ঘটনা মনে থাকে। তাই মনে হয়েছে সাস্টের সেই মধুর স্মৃতিগুলো একটু লিখে রাখলে কেমন হয়?

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট
মতিউর রহমান (সম্পাদক)
শ্রেণি: স্মৃতি, দলিল, মতামত
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২১৫; মূল্য: ৪৬০ টাকা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় ইতিহাসের শোকাবহ রক্তরঞ্জিত দিন। দেশের পরবর্তী ইতিহাসের ওপর এর প্রভাব গভীর ও সুদূরপ্রসারী। সে সম্পর্কে বিশদ তথ্যাদি আজও পুরোপুরি উদ্ঘাটিত হয়নি। ১৫ আগস্টের ঘটনার পূর্বাভাস দেশি-বিদেশি কোনো সূত্রে পাওয়া গিয়েছিল কি না, বঙ্গবন্ধু নিজে সে সম্পর্কে কতটা অবহিত ছিলেন কিংবা তিনি বিষয়টিকে কীভাবে নিয়েছিলেন- সাংবাদিক, কূটনীতিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের রচনা ও সাক্ষাৎকার থেকে তা আজ ক্রমপ্রকাশমান। বইটিতে সংকলিত স্মৃতিকথা, দলিল ও গবেষণাধর্মী রচনার মাধ্যমে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও পূর্বাপর ঘটনাসম্পর্কিত তথ্য এবং সত্যের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটবে। আগস্ট ট্র্যাজেডি সম্পর্কে মতামত ও বিশ্লেষণধর্মী রচনা এ বইকে অমূল্য করেছে।

আমাদের দায় আমাদের প্রত্যাশা
রামেন্দু মজুমদার
শ্রেণি: বিবিধ বিষয়ক প্রবন্ধ
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১০২; মূল্য: ৩০০ টাকা

রামেন্দু মজুমদার বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের দ্যুতিময় ব্যক্তিত্ব, বহু বর্ণবিভায় উজ্জ্বল। নাট্যঅন্তপ্রাণ তিনি, সেই সঙ্গে সংস্কৃতির সামগ্রিক বিকাশে তার রয়েছে উদ্যোগী ভূমিকা। জীবনাভিজ্ঞতা থেকেই তার লেখালেখি, বাংলা ও ইংরেজিতে তাৎপর্যময় কতক গ্রন্থের তিনি প্রণেতা। তার সম্প্রতি রচিত প্রবন্ধগুলোর এই সংকলন সংস্কৃতি-জিজ্ঞাসার ব্যাপ্তি ও গভীরতা মেলে ধরছে। তিনি দায়বদ্ধ শিল্পী ও দায়মোচনের কর্মী, সংস্কৃতিপথে দীর্ঘ পরিক্রমণের উপলব্ধি বহন করে গ্রন্থভুক্ত নিবন্ধগুলো। আরও রয়েছে সংস্কৃতি-সাধকদের পরিচিতি, চলার পথের সাথি সারথি বন্ধুজনের প্রতিকৃতি। সহজিয়া অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে গভীরের বার্তা তিনি শুনিয়েছেন পাঠকদের, যা নিঃসন্দেহে হবে ব্যতিক্রমী পাঠ।

লন্ডন ষড়যন্ত্র
প্রফেসর ড. আবু সাঈদ
শ্রেণি: সমকালীন ঘটনা
প্রকাশনী: অনন্যা, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৮৪; মূল্য: ৩৫০ টাকা

বাংলাদেশে বিরাজমান প্রচলিত ধারাকে বাতিল করে জাতির পিতা যখন শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, দুঃখী মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে যেসব মহান আদর্শ ও দর্শন নিয়ে নবজাগরণে জাতীয় ঐক্যকে একসূত্রে প্রথিত করেছিলেন সেই সময় তার হত্যাকাণ্ডে জনগণ বাকরুদ্ধ, জাতি স্তম্ভিত এবং দেশ থমকে দাঁড়ায়। অনেকে বলেন এবং মনে করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ হয়নি, তারা সামরিক ঘটনাবলি না জেনেই এ ধরনের অর্বাচীন কথা বলেন। এই গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে শুধু প্রতিবাদ নয় কীভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

জন্মেছিলাম ভুল সময়ে
হাসান হাফিজ
শ্রেণি: কবিতা
প্রকাশনী: বিশ্বসাহিত্য ভবন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৬৪; মূল্য: ২০০ টাকা

আপাদমস্তক কবি হাসান হাফিজ। এই কাব্যগ্রন্থে ছাপ্পান্নটি কবিতা আছে। যা পাঠকসমাজকে আনন্দ দেবে। এই প্রসঙ্গে কবি আল মাহমুদ লিখেছিলেন কবি হাসান হাফিজ সম্পর্কে, ‘আমি সর্বান্তঃকরণে আশা করি- হাসান হাফিজ সাফল্যের উপকূলে এসে পৌঁছবেন। লিখতে হবে এবং একই সঙ্গে শিখতে হবে। কবির শিক্ষা, জানার বেদনা কোনো অবস্থাতেই শেষ হয় না। আমি তার সফলতার জন্য অপেক্ষা করতে থাকব। তার হাতে পূর্ণাঙ্গ, প্রস্ফুটিত আনন্দ-বেদনার এবং উদ্দীপনার উৎসারণ ঘটবে।’ মনস্বী কবি আবদুল মান্নান সৈয়দের মন্তব্য, ‘হাসান হাফিজের কবিতায় ব্যক্তিমানুষটির স্বাভাবিক ছাপ পড়েছে। তার দীর্ঘকালের সাংবাদিকী অভিজ্ঞতা তার কবিতাকেও ঋদ্ধ করেছে, বহুচারী করেছে- যেমন হয়েছিল কবি শামসুর রহমানের ক্ষেত্রে।’...

বাংলা কথাসাহিত্য ভিন্ন মাত্রা
শান্তনু কায়সার
শ্রেণি: কথাসাহিত্যের রচনা
প্রকাশনী: ঐতিহ্য, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২১৬; মূল্য: ৫০০ টাকা

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলা কথাসাহিত্যের বিশাল উত্তরাধিকারকে তাদের রচনায় ধারণ করেছেন। বজ্রে যে বাঁশি বাজে তার তো সহজ গান করবার উপায় নেই। মৃত্তিকায় পা রেখে তারা দেখেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোকে ধারণ ও বহন করেও তা বৈশ্বিক পটভূমিকে স্পর্শ করেছে। কথাসাহিত্য বস্তুজগতের সব উপাদানের সঙ্গে তার আবেগ ও মননকে ঋদ্ধ করে। কথাবস্তু তো কাহিনিমাত্র নয়, সে তো ইতিহাস, নৃতত্ত্ব এবং বিচিত্র মানবিক সম্পর্কের রসায়নও বটে। সময় ও নিসর্গ তার দুই আশ্চর্য চরিত্র। আর শান্তনু কায়সার তার বইয়ে তাদের ওই ভিন্ন মাত্রাকে অনুভব ও বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন। তার ভাষা বিষয়ানুগ, কিন্তু জীবনের প্রতি আস্থা ও সৌন্দর্যে নান্দনিক।

শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি পুরস্কার
ফয়েজ তৌহিদুল ইসলাম
শ্রেণি: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৭২; মূল্য: ২০০ টাকা

শ্রেষ্ঠ রাঁধুনী প্রতিযোগিতা বাঙালির সংস্কৃতি-চর্চায় নতুন হলেও ইদানীং ঘটা করে পালন করা হয়। ঈদের দিন টিভিতে আয়োজন করেছে দেশব্যাপী লাইভ শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি পুরস্কার। বিত্তহীন কবিয়াল হাসান আলীর মেয়ে রুকু তার রন্ধনশৈলীর ভরসায় সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতিযোগিতাকালীন বিশেষজ্ঞদের লাইভ প্রোগ্রামে নির্দেশিত মসলাপাতি দূরে থাক, খাসির রানের মাংসটুকুও জোগাড় করতে পারে না। তার বাবা যে এবার কোরবানিই দিতে পারেনি। [উপন্যাসের হতভাগিনী চরিত্র রুকুর আর্জি: আপনি যদি মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত বা বিত্তহীন হয়ে থাকেন, উপন্যাস পাঠে রুকুর জীবন এবং জীবনের পরিণতি দেখতে পারেন, দেখে কাঁদতেও পারেন, কিন্তু এলিট শ্রেণির জন্য এ উপন্যাসে প্রবেশ নিষেধ।]

ফাগুনের অগ্নিকণা
মনি হায়দার
শ্রেণি: ভাষা আন্দোলনভিত্তিক উপন্যাস
প্রকাশনী: বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌স, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৯৯; মূল্য: ৪৮০ টাকা

কল্যাণী রায়  চৌধুরী বা মমতাজ বেগম একই ব্যক্তি। কেমন করে সম্ভব? ভাষা-আন্দোলনের মহাসড়কে উঠে পেছনে তাকালেই মমতাজ ও কল্যাণীকে একটি সূত্রে আবিষ্কার করা যায়। কলকতার রায় বাহাদুর মহিমচন্দ্র রায়ের কন্যা কল্যাণী পূর্ব পাকিস্তানের নারায়ণগঞ্জের মর্গান বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়ে বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের মহাস্রোতের সঙ্গে যুক্ত হলেন, স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে মিছিল করলেন, অপরাধে পাকিস্তানের জেলে গেলেন, স্বামী মান্নাফ ও পাঁচ বছরের একমাত্র কন্যা খুকুকে সময়ের হাতে সমর্পণ করে জেলে দেড় বছর কাটিয়ে ফিরলেন শূন্য হাতে, পেছনে রোদন উঠল বাংলা ভাষার!... ইতিহাস খুঁড়ে ভাষা-আন্দোলনের মহীয়সী মমতাজ বেগমকে তুলে আনলেন ‌‘ফাগুনের অগ্নিকণা’ উপন্যাসের আখ্যান কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার।

আজও ভুলিনি
কোহিনূর আখতার সুচন্দা
শ্রেণি: আত্মচরিত
প্রকাশনী: অনন্যা, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২৩৬; মূল্য: ১০০০ টাকা

জীবনের তারুণ্যের প্রথম প্রহর থেকে, দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি পথ চলা। আমি অবিরাম পথ চলায় আমার একমাত্র সম্বল, আমার দেশ এবং আমাদের গভীর ভালোবাসা। এই ভালোবাসা পেয়ে আমি ধন্য। কারণ আজকের সুচন্দা অত সহজে হয়নি। কলেজে পড়া অবস্থা্য় চলচ্চিত্রে আগমন। সেই সময়ে সামাজিক এবং রক্ষণশীল পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকে বেরিয়ে এসে চলচ্চিত্রে অভিনয় করাটা বিশাল ব্যাপার ছিল।... মহান ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পরে, যখন একটি সদ্য স্বাধীন জাতি নতুন করে সৃষ্টির স্বপ্ন দেখছে, ঠিক তখনই একজন সুচন্দা এই আমি, স্বপ্নের মিছিলে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন দেখার শুরুতেই স্বপ্ন ঝরে গেল।... সমাজ ও জীবনের এতসব অস্থিরতার মাঝেও বিরামহীন পথ চলেছি সৃষ্টির উল্লাসে- দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য।...


মুনিয়ার অসুখ
মাসউদ আহমাদ
শ্রেণি: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১১০; মূল্য: ৩২০ টাকা

বেকার, হতাশাগ্রস্ত তরুণ ফাহাদ আবির। চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। প্রেমিকা নাবিলা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে কিন্তু তাতে তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। একপর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে ফাহাদ। পরামর্শের জন্য একজন মনোচিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে। চলে যায় গ্রামে মায়ের কাছে। তাতে যদি তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, এই আশায়। এরপর ঝড়ের বেগে তার জীবনে ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা। 
এই জীবন তার আর ভালো লাগে না, পালাতে চায় সে। তখন তার জীবনে আবির্ভাব হয় মুনিয়ার। কে এই মুনিয়া? 
আর শেষ পর্যন্ত ফাহাদ কি পেরেছিল জীবন থেকে পালাতে? নাকি তার পথ পরিবর্তন করেছিল?

মায়াঘুম
তৌফিক মারুফ
শ্রেণি: কবিতা
প্রকাশনী: এবং মানুষ প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৪৮; মূল্য: ১৬০ টাকা

কবিতার জন্য জীবন নয়, জীবনের জন্য কবিতা। একটি পাখির যেমন সীমানা নেই, কবিতারও নেই, কবিরও নেই। তাই, মায়াবী কবির লেখার কেন্দ্রীয় সুর- মায়া। পাতার সঙ্গে বোঁটার যে সম্পর্ক, সে সম্পর্কই মায়ায় বাঁধানো- যা একদিন বিচ্ছিন্ন হবে বোঁটা থেকে, ঝরে পড়বে মাটিতে- অনন্ত মায়ায় মিশে যাবে। মায়াবী কবির জগৎ যেন একটি বৃক্ষের মতোই। বৃক্ষের যেমন রয়েছে শাখা-প্রশাখা, পত্র-পল্লব, ফুল ও ফলের বিস্তার, তেমনি। বৃক্ষের যেমন প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে অন্যান্য অঙ্গের রয়েছে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক, যদিও এই সব সম্পর্ক একদিন ছিন্ন হয়- মানজীবন এই বৃক্ষের মতো, কত শত মায়ার বন্ধন একদিন ধূসর হয়ে যাবে- এই আর্তনাদই তৌফিক মারুফের কবিতার দহন।…