ঢাকা ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, সোমবার, ০২ জুন ২০২৫
English

বইমেলার শেষ সপ্তাহে নির্বাচিত কুড়িটি বই

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ০২:০১ পিএম
বইমেলার শেষ সপ্তাহে নির্বাচিত কুড়িটি বই

আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি। জার্মান ভাষার উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক ফ্রান্‌ৎস কাফকা বলেছেন, ‘আমাদের আত্মার মাঝে যে জমাটবাঁধা সমুদ্র সেই সমুদ্রের বরফ ভাঙার কুঠার হলো বই।’ আসলে মন হলো হাজার দুয়ারি বাড়ি, আর বই হলো কক্ষ। যারা বই পড়ে না তাদের কাছে সেই বেশির ভাগ কক্ষ অপ্রবিষ্টই থেকে যায়।… 

বই দেশ ও জাতি গঠনের উত্তম হাতিয়ার। যে জাতি সর্বোৎকৃষ্ট সেই জাতির প্রকাশনাও তত উন্নত। সারা পৃথিবীতে যত বই প্রকাশিত হয় তার ৭০ শতাংশ ইউরোপ-আমেরিকার। সেখানকার যেকোনো লাইব্রেরিতে বাংলাদেশের বই পাওয়া যায়। একুশে বইমেলাকে যদি আমরা জ্ঞানের মেলায় পরিণত করতে পারি তাহলে জাতি গঠন ও রাষ্ট্র নির্মাণে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। মনীষী সক্রেটিসের সেই বিখ্যাত উক্তি ‘জ্ঞানই শক্তি, জ্ঞানই পণ্য’।

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু
শ্রেণি: জীবনী ও স্মৃতিচারণ: বিবিধ
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২০৪; মূল্য: ৯০০ টাকা

গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার একজন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী এবং অক্লান্ত কর্মী মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, সাতষট্টির ভুট্টা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন এবং সর্বোপরি একাত্তরের রণাঙ্গনের তিনি একজন সম্মুখ যোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নির্ভীকচিত্ত মানুষ হিসেবে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তিনি কারানির্যাতন ভোগ করেন। জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সার-নির্যাস থেকে যে কলামগুলো রচনা করেছেন, তা এক মলাটে করেই এ গ্রন্থ। ইতিহাসের পরতে পরতে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করে শেকড় থেকে শিখরে ওঠা একজন মানুষের জীবন, সংগ্রাম ও আদর্শের বয়ান বইটিতে।…

লেনিন কেন জরুরী
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
শ্রেণি: রাজনৈতিক গবেষণা ও প্রবন্ধ
প্রকাশনী: বিদ্যাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৯২; মূল্য: ৪২০ টাকা

প্রবন্ধগুলোর অধিকাংশ লেখা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। এই প্রবন্ধের মূল বক্তব্যটি হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক, অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা। পুঁজিবাদ যে আজ চরম অবস্থায় পৌঁছে ফ্যাসিবাদী রূপ পরিগ্রহ করছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই; এবং বিশ্বব্যাপী এই সচেতনতা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে যে ঘটনা যেদিকে চলছে সেদিকে চলতে দিলে মানুষের মনুষ্যত্বই কেবল নয়, তার বেঁচে থাকাটাই হুমকির মুখে পড়বে। সমাধান সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা বটে, তবে সেটা আপনা আপনি ঘটবে না; তার জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। বক্তব্য তাত্ত্বিক ঠিকই, কিন্তু উপস্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রসঙ্গের বিবেচনার মধ্য দিয়ে এবং হৃদয়গ্রাহী রূপে।...

রবীন্দ্রনাথ
হুমায়ুন আজাদ
শ্রেণি: নারীবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রবন্ধ
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৩১৬; মূল্য: ৮০০ টাকা

হুমায়ুন আজাদ গোঁড়া রবীন্দ্রভক্ত কিংবা কট্টর রবীন্দ্রবিদ্বেষী ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের একজন সমঝদার পাঠক ও নির্মোহ সমালোচক। পাকিস্তান আমলের বৈরী পরিবেশে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ক্লাসের ছাত্র থাকাকালীন তিনি রবীন্দ্রপ্রবন্ধে প্রতিফলিত রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা বিষয়ে অভিসন্দর্ভ লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও উপন্যাসের আলোচনার পাশাপাশি তিনি নারীবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে রবীন্দ্রসাহিত্যের বিশ্লেষণ করেছিলেন; সম্পাদনা করেছিলেন রবীন্দ্রকবিতার বৃহত্তম সংগ্রহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান কবিতা। এ সংকলনগ্রন্থে বিধৃত হয়েছে হুমায়ুন আজাদের রবীন্দ্রভাবনা। হুমায়ুন আজাদ বাংলা সাহিত্যের প্রথাবিরোধী লেখকই শুধু নন, একই সঙ্গে দুই বাংলার এক শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্র-গবেষকও বটে।...

তোমার ঘরে বসত করে ক’জনা
হাসনাত আবদুল হাই
শ্রেণি: অতিপ্রাকৃত ও ভৌতিক
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৪৪; মূল্য: ৪৫০ টাকা

রবীন্দ্রনাথ ছোট গল্প সম্বন্ধে যেমন বলেছিলেন, স্বল্প পরিসরে অসমাপ্ত রেখে কাহিনি বর্ণনা- সেই আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে এই সংকলনের অধিকাংশ গল্পে। পাশাপাশি আছে গল্পের বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে সমকালীন চিন্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আটপৌঢ়ে জীবনেও যে মাঝে মাঝে চমক এসে জানিয়ে দেয় সব কিছুই জানা হয়নি, জানা যাবে না, জানার পরও জেগে থাকবে জিজ্ঞাসা, সেই অনুভূতি নিয়েও লেখা হয়েছে এই সংকলনের গল্প। আছে আধিভৌতিক এবং অতিমারির অভিজ্ঞার গল্প। সম্প্রতি এবং অতি সাম্প্রতিককালের পটভূমিতে লেখা এই গল্প সংকলন বহতা জীবনের ক্যালাইডোস্কোপ।

আমার পৃথিবী
সরদার ফজলুল করিম
শ্রেণি: ডায়েরি ও চিঠিপত্র সংকলন
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২০০; মূল্য: ৫২০ টাকা

রালফ, জ্যাক ও টিপারকিন আবিষ্কার করে এক লোকের কঙ্কাল। পাশে পড়ে আছে একটি কুড়াল। এই অবস্থা দেখে চিন্তায় পড়ে যায় তারা। এই প্রবাল দ্বীপে তাদেরও কি লোকটার মতো অবস্থা হবে? সরদার ফজলুল করিমের পৃথিবী ছিল নিরন্তর অনুসন্ধানের। বিপুল বিচিত্র জীবনাভিজ্ঞতা আর অধ্যায়নের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তার জীবন।... আমার পৃথিবী বইয়ে তার লেখাগুলো ডায়েরি-আশ্রিত। সেগুলোকে দর্শন, সমাজ, রাজনীতি, দেশ, জীবন, সাহিত্য- এভাবে পর্ববিন্যস্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্য অংশে স্থান পেয়েছে বই ও লেখক নিয়ে তার পাঠানুভূতি। লেখকের চিন্তাজগৎকে বুঝতে বিশেষ সহায়ক হবে বইটি।

নিরালা নীলে
আসাদুজ্জামান নূর
শ্রেণি: জীবনী ও স্মৃতিচারণ: বিবিধ
প্রকাশনী: ঐতিহ্য, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৭৪; মূল্য: ১৭০ টাকা

আমার ছেলে সুদীপ্ত ও মেয়ে সুপ্রভা কিছুতেই মানতে চায় না আমি ওদের মতো ছোট ছিলাম। বাবারা কি কখনো ছোট হয়? ভাবটা এমন- বারারা সব দাড়ি নিয়ে জন্মায়। কী মুশকিল! কিন্তু আসলেই তো আমি ছোট ছিলাম তোমাদের মতো, সুদীপ্ত আর সুপ্রভার মতো। যখন ছোট ছিলাম, কত ছোট বলতে পারব না, স্মৃতিতে ছায়ার মতো ভাসে- আমার মা গান গাইতেন মনের আনন্দে ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধসুধা ঢালো, চাদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলো।...

১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শান্তি কমিটি গঠন ও তৎপরতা
মুনতাসীর মামুন
শ্রেণি: রাজাকার/পাকিস্তানি সহযোগী
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৬৬; মূল্য: ৪০০ টাকা

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সহায়তার জন্য অনেকগুলো ফ্রন্ট ভুলেছিল। রাজাকার, আলবদর, দালাল, আলশামস এবং শান্তি কমিটি তার মধ্যে অন্যতম। এসব বাহিনী প্রায় ক্ষেত্রে ছিল সশস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সহযোগীদের চিহ্নিত করা, খোঁজা ও তাদের আক্রমণ প্রতিহত করা, হিন্দু ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের দেশত্যাগে বাধ্য করা, পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখল, হত্যা, লুট ও ধর্ষণ এসবই ছিল তাদের কর্মকাণ্ড। এসব বাহিনী নিয়ে বিস্তারিত খুব একটা আলোচনা হয়নি। বিশেষ করে শান্তি কমিটি। শান্তি কমিটি গঠন ও তাদের তৎপরতা নিয়ে প্রকাশ হলো এই গ্রন্থ।

মুজিবমঞ্জুষা
মুহম্মদ নূরুল হুদা
শ্রেণি: বাংলা কবিতা
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২৮০; মূল্য: ১০০০ টাকা

মুহম্মদ নূরুল হুদার মুজিবকেন্দ্রিক কবিতামালা মুজিবমঞ্জুষা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতার কেন্দ্রধ্রুবা। কবিজীবনের ঊষাকালেই মুজিব হয়ে ওঠে তার অনিবার্যতম প্রসঙ্গ। পনেরো আগস্ট ট্র্যাজেডি অনেকের কবিতায় এসেছে নানাভাবে, কিন্তু যিসাস মুজিব-এর অভিধায় তাকে কবিতায় রক্তিম বিভূতিমণ্ডিত করেছেন কবি। এই কবিতার প্রতি সুধী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রণম্য কবি শামসুর রাহমান, তার ট্র্যাজিক মহিমার দুর্মর আকর্ষণে প্রবন্ধে। মুজিববাড়ি কাব্যে তিনি একটি গৃহের রূপকে সারা পুণ্যবাংলাকে অবলোকন করেন, যার অমোঘ বিস্তার ঘটেছে অনন্ত মুজিবজন্ম, স্বাধীন জাতির স্বাধীন পিতাসহ তার অনেকানেক কবিতায়।...

শিকাগোর চিঠি শিকাগোর স্মৃতি
আনিসুজ্জামান
শ্রেণি: আমেরিকা ভ্রমণ
প্রকাশনী: বাতিঘর, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৮৪; মূল্য: ৪০০ টাকা

আনিসুজ্জামান বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান লেখক। গবেষণামূলক একাধিক আকরগ্রন্থের পাশাপাশি তার প্রবন্ধ-সংকলন ও স্মৃতিমূলক রচনা, সাহিত্য সমালোচনা, নাটকের অনুবাদ প্রভৃতি সাহিত্য-বোদ্ধাদের আত্মার রসদ জুগিয়েছে। সারা জীবন অসংখ্য চিঠিপত্র লিখেছেন তিনি, যা শুধু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়; বরং অনেক বেশি পরিমাণে ঋদ্ধ সমাজ ও দেশের কথায়। তার শিকাগো পর্বের পত্রাবলি নিয়ে গ্রথিত এই সংকলনে পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষ আনিসুজ্জামানকে খুঁজে পাওয়া যাবে নতুন করে।

আমার সাস্ট জীবন
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
শ্রেণি: পেশাগত স্মৃতিচারণ ও অভিজ্ঞতা
প্রকাশনী: শিখা প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১২৮; মূল্য: ৩২০ টাকা

আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টি সাস্টে কাটিয়েছি। যেকোনো হিসেবেই আমার সাস্ট জীবন ছিল আনন্দময়, ঘটনাবহুল এবং উত্তেজনাপূর্ণ। মাঝে মাঝেই দেশ-বিদেশে আমার কোনো একজন প্রাক্তন ছাত্র বা ছাত্রীর সঙ্গে দেখা হয়, তারা এখন বড় হয়েছে, প্রায় সবাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়েছে। গল্পে গল্পে হঠাৎ তারা সাস্টের কোনো একটা ঘটনার কথা বলে, মাঝে মাঝেই আমি আবিষ্কার করি সেই গল্পটির কথা আমার মনে নেই! আমার স্মৃতি খুবই দুর্বল, শুধু তাই না, সেই দুর্বল স্মৃতি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কেও আমার কোনো ধারণা নেই, অনেক সময়েই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ভুলে যাই এবং অর্থহীন আর ছেলেমানুষি ঘটনা মনে থাকে। তাই মনে হয়েছে সাস্টের সেই মধুর স্মৃতিগুলো একটু লিখে রাখলে কেমন হয়?

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট
মতিউর রহমান (সম্পাদক)
শ্রেণি: স্মৃতি, দলিল, মতামত
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২১৫; মূল্য: ৪৬০ টাকা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় ইতিহাসের শোকাবহ রক্তরঞ্জিত দিন। দেশের পরবর্তী ইতিহাসের ওপর এর প্রভাব গভীর ও সুদূরপ্রসারী। সে সম্পর্কে বিশদ তথ্যাদি আজও পুরোপুরি উদ্ঘাটিত হয়নি। ১৫ আগস্টের ঘটনার পূর্বাভাস দেশি-বিদেশি কোনো সূত্রে পাওয়া গিয়েছিল কি না, বঙ্গবন্ধু নিজে সে সম্পর্কে কতটা অবহিত ছিলেন কিংবা তিনি বিষয়টিকে কীভাবে নিয়েছিলেন- সাংবাদিক, কূটনীতিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের রচনা ও সাক্ষাৎকার থেকে তা আজ ক্রমপ্রকাশমান। বইটিতে সংকলিত স্মৃতিকথা, দলিল ও গবেষণাধর্মী রচনার মাধ্যমে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও পূর্বাপর ঘটনাসম্পর্কিত তথ্য এবং সত্যের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটবে। আগস্ট ট্র্যাজেডি সম্পর্কে মতামত ও বিশ্লেষণধর্মী রচনা এ বইকে অমূল্য করেছে।

আমাদের দায় আমাদের প্রত্যাশা
রামেন্দু মজুমদার
শ্রেণি: বিবিধ বিষয়ক প্রবন্ধ
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১০২; মূল্য: ৩০০ টাকা

রামেন্দু মজুমদার বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের দ্যুতিময় ব্যক্তিত্ব, বহু বর্ণবিভায় উজ্জ্বল। নাট্যঅন্তপ্রাণ তিনি, সেই সঙ্গে সংস্কৃতির সামগ্রিক বিকাশে তার রয়েছে উদ্যোগী ভূমিকা। জীবনাভিজ্ঞতা থেকেই তার লেখালেখি, বাংলা ও ইংরেজিতে তাৎপর্যময় কতক গ্রন্থের তিনি প্রণেতা। তার সম্প্রতি রচিত প্রবন্ধগুলোর এই সংকলন সংস্কৃতি-জিজ্ঞাসার ব্যাপ্তি ও গভীরতা মেলে ধরছে। তিনি দায়বদ্ধ শিল্পী ও দায়মোচনের কর্মী, সংস্কৃতিপথে দীর্ঘ পরিক্রমণের উপলব্ধি বহন করে গ্রন্থভুক্ত নিবন্ধগুলো। আরও রয়েছে সংস্কৃতি-সাধকদের পরিচিতি, চলার পথের সাথি সারথি বন্ধুজনের প্রতিকৃতি। সহজিয়া অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে গভীরের বার্তা তিনি শুনিয়েছেন পাঠকদের, যা নিঃসন্দেহে হবে ব্যতিক্রমী পাঠ।

লন্ডন ষড়যন্ত্র
প্রফেসর ড. আবু সাঈদ
শ্রেণি: সমকালীন ঘটনা
প্রকাশনী: অনন্যা, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৮৪; মূল্য: ৩৫০ টাকা

বাংলাদেশে বিরাজমান প্রচলিত ধারাকে বাতিল করে জাতির পিতা যখন শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, দুঃখী মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে যেসব মহান আদর্শ ও দর্শন নিয়ে নবজাগরণে জাতীয় ঐক্যকে একসূত্রে প্রথিত করেছিলেন সেই সময় তার হত্যাকাণ্ডে জনগণ বাকরুদ্ধ, জাতি স্তম্ভিত এবং দেশ থমকে দাঁড়ায়। অনেকে বলেন এবং মনে করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ হয়নি, তারা সামরিক ঘটনাবলি না জেনেই এ ধরনের অর্বাচীন কথা বলেন। এই গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে শুধু প্রতিবাদ নয় কীভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

জন্মেছিলাম ভুল সময়ে
হাসান হাফিজ
শ্রেণি: কবিতা
প্রকাশনী: বিশ্বসাহিত্য ভবন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৬৪; মূল্য: ২০০ টাকা

আপাদমস্তক কবি হাসান হাফিজ। এই কাব্যগ্রন্থে ছাপ্পান্নটি কবিতা আছে। যা পাঠকসমাজকে আনন্দ দেবে। এই প্রসঙ্গে কবি আল মাহমুদ লিখেছিলেন কবি হাসান হাফিজ সম্পর্কে, ‘আমি সর্বান্তঃকরণে আশা করি- হাসান হাফিজ সাফল্যের উপকূলে এসে পৌঁছবেন। লিখতে হবে এবং একই সঙ্গে শিখতে হবে। কবির শিক্ষা, জানার বেদনা কোনো অবস্থাতেই শেষ হয় না। আমি তার সফলতার জন্য অপেক্ষা করতে থাকব। তার হাতে পূর্ণাঙ্গ, প্রস্ফুটিত আনন্দ-বেদনার এবং উদ্দীপনার উৎসারণ ঘটবে।’ মনস্বী কবি আবদুল মান্নান সৈয়দের মন্তব্য, ‘হাসান হাফিজের কবিতায় ব্যক্তিমানুষটির স্বাভাবিক ছাপ পড়েছে। তার দীর্ঘকালের সাংবাদিকী অভিজ্ঞতা তার কবিতাকেও ঋদ্ধ করেছে, বহুচারী করেছে- যেমন হয়েছিল কবি শামসুর রহমানের ক্ষেত্রে।’...

বাংলা কথাসাহিত্য ভিন্ন মাত্রা
শান্তনু কায়সার
শ্রেণি: কথাসাহিত্যের রচনা
প্রকাশনী: ঐতিহ্য, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২১৬; মূল্য: ৫০০ টাকা

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলা কথাসাহিত্যের বিশাল উত্তরাধিকারকে তাদের রচনায় ধারণ করেছেন। বজ্রে যে বাঁশি বাজে তার তো সহজ গান করবার উপায় নেই। মৃত্তিকায় পা রেখে তারা দেখেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোকে ধারণ ও বহন করেও তা বৈশ্বিক পটভূমিকে স্পর্শ করেছে। কথাসাহিত্য বস্তুজগতের সব উপাদানের সঙ্গে তার আবেগ ও মননকে ঋদ্ধ করে। কথাবস্তু তো কাহিনিমাত্র নয়, সে তো ইতিহাস, নৃতত্ত্ব এবং বিচিত্র মানবিক সম্পর্কের রসায়নও বটে। সময় ও নিসর্গ তার দুই আশ্চর্য চরিত্র। আর শান্তনু কায়সার তার বইয়ে তাদের ওই ভিন্ন মাত্রাকে অনুভব ও বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন। তার ভাষা বিষয়ানুগ, কিন্তু জীবনের প্রতি আস্থা ও সৌন্দর্যে নান্দনিক।

শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি পুরস্কার
ফয়েজ তৌহিদুল ইসলাম
শ্রেণি: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৭২; মূল্য: ২০০ টাকা

শ্রেষ্ঠ রাঁধুনী প্রতিযোগিতা বাঙালির সংস্কৃতি-চর্চায় নতুন হলেও ইদানীং ঘটা করে পালন করা হয়। ঈদের দিন টিভিতে আয়োজন করেছে দেশব্যাপী লাইভ শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি পুরস্কার। বিত্তহীন কবিয়াল হাসান আলীর মেয়ে রুকু তার রন্ধনশৈলীর ভরসায় সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতিযোগিতাকালীন বিশেষজ্ঞদের লাইভ প্রোগ্রামে নির্দেশিত মসলাপাতি দূরে থাক, খাসির রানের মাংসটুকুও জোগাড় করতে পারে না। তার বাবা যে এবার কোরবানিই দিতে পারেনি। [উপন্যাসের হতভাগিনী চরিত্র রুকুর আর্জি: আপনি যদি মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত বা বিত্তহীন হয়ে থাকেন, উপন্যাস পাঠে রুকুর জীবন এবং জীবনের পরিণতি দেখতে পারেন, দেখে কাঁদতেও পারেন, কিন্তু এলিট শ্রেণির জন্য এ উপন্যাসে প্রবেশ নিষেধ।]

ফাগুনের অগ্নিকণা
মনি হায়দার
শ্রেণি: ভাষা আন্দোলনভিত্তিক উপন্যাস
প্রকাশনী: বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌স, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১৯৯; মূল্য: ৪৮০ টাকা

কল্যাণী রায়  চৌধুরী বা মমতাজ বেগম একই ব্যক্তি। কেমন করে সম্ভব? ভাষা-আন্দোলনের মহাসড়কে উঠে পেছনে তাকালেই মমতাজ ও কল্যাণীকে একটি সূত্রে আবিষ্কার করা যায়। কলকতার রায় বাহাদুর মহিমচন্দ্র রায়ের কন্যা কল্যাণী পূর্ব পাকিস্তানের নারায়ণগঞ্জের মর্গান বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়ে বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের মহাস্রোতের সঙ্গে যুক্ত হলেন, স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে মিছিল করলেন, অপরাধে পাকিস্তানের জেলে গেলেন, স্বামী মান্নাফ ও পাঁচ বছরের একমাত্র কন্যা খুকুকে সময়ের হাতে সমর্পণ করে জেলে দেড় বছর কাটিয়ে ফিরলেন শূন্য হাতে, পেছনে রোদন উঠল বাংলা ভাষার!... ইতিহাস খুঁড়ে ভাষা-আন্দোলনের মহীয়সী মমতাজ বেগমকে তুলে আনলেন ‌‘ফাগুনের অগ্নিকণা’ উপন্যাসের আখ্যান কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার।

আজও ভুলিনি
কোহিনূর আখতার সুচন্দা
শ্রেণি: আত্মচরিত
প্রকাশনী: অনন্যা, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২৩৬; মূল্য: ১০০০ টাকা

জীবনের তারুণ্যের প্রথম প্রহর থেকে, দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি পথ চলা। আমি অবিরাম পথ চলায় আমার একমাত্র সম্বল, আমার দেশ এবং আমাদের গভীর ভালোবাসা। এই ভালোবাসা পেয়ে আমি ধন্য। কারণ আজকের সুচন্দা অত সহজে হয়নি। কলেজে পড়া অবস্থা্য় চলচ্চিত্রে আগমন। সেই সময়ে সামাজিক এবং রক্ষণশীল পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকে বেরিয়ে এসে চলচ্চিত্রে অভিনয় করাটা বিশাল ব্যাপার ছিল।... মহান ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পরে, যখন একটি সদ্য স্বাধীন জাতি নতুন করে সৃষ্টির স্বপ্ন দেখছে, ঠিক তখনই একজন সুচন্দা এই আমি, স্বপ্নের মিছিলে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন দেখার শুরুতেই স্বপ্ন ঝরে গেল।... সমাজ ও জীবনের এতসব অস্থিরতার মাঝেও বিরামহীন পথ চলেছি সৃষ্টির উল্লাসে- দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য।...


মুনিয়ার অসুখ
মাসউদ আহমাদ
শ্রেণি: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪
পৃষ্ঠা: ১১০; মূল্য: ৩২০ টাকা

বেকার, হতাশাগ্রস্ত তরুণ ফাহাদ আবির। চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। প্রেমিকা নাবিলা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে কিন্তু তাতে তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। একপর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে ফাহাদ। পরামর্শের জন্য একজন মনোচিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে। চলে যায় গ্রামে মায়ের কাছে। তাতে যদি তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, এই আশায়। এরপর ঝড়ের বেগে তার জীবনে ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা। 
এই জীবন তার আর ভালো লাগে না, পালাতে চায় সে। তখন তার জীবনে আবির্ভাব হয় মুনিয়ার। কে এই মুনিয়া? 
আর শেষ পর্যন্ত ফাহাদ কি পেরেছিল জীবন থেকে পালাতে? নাকি তার পথ পরিবর্তন করেছিল?

মায়াঘুম
তৌফিক মারুফ
শ্রেণি: কবিতা
প্রকাশনী: এবং মানুষ প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৪৮; মূল্য: ১৬০ টাকা

কবিতার জন্য জীবন নয়, জীবনের জন্য কবিতা। একটি পাখির যেমন সীমানা নেই, কবিতারও নেই, কবিরও নেই। তাই, মায়াবী কবির লেখার কেন্দ্রীয় সুর- মায়া। পাতার সঙ্গে বোঁটার যে সম্পর্ক, সে সম্পর্কই মায়ায় বাঁধানো- যা একদিন বিচ্ছিন্ন হবে বোঁটা থেকে, ঝরে পড়বে মাটিতে- অনন্ত মায়ায় মিশে যাবে। মায়াবী কবির জগৎ যেন একটি বৃক্ষের মতোই। বৃক্ষের যেমন রয়েছে শাখা-প্রশাখা, পত্র-পল্লব, ফুল ও ফলের বিস্তার, তেমনি। বৃক্ষের যেমন প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে অন্যান্য অঙ্গের রয়েছে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক, যদিও এই সব সম্পর্ক একদিন ছিন্ন হয়- মানজীবন এই বৃক্ষের মতো, কত শত মায়ার বন্ধন একদিন ধূসর হয়ে যাবে- এই আর্তনাদই তৌফিক মারুফের কবিতার দহন।…

রহস্যময় সোনার ঘোড়া

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ০২:২০ পিএম
আপডেট: ১২ মে ২০২৫, ০২:২২ পিএম
রহস্যময় সোনার ঘোড়া
উড়িতেছে সোনার ঘোড়া বইয়ের প্রচ্ছদ

‘কি, কি বললেন? আপনার ঘোড়াটা সোনায় নির্মিত?’ ঘোড়ার ডিমের মতো বড় বড় চোখ করে পাতলাদার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সর্বনাশ মিয়া, জুরাইন থানার নতুন দারোগা।

‘জি, আমার ঘোড়াটা চব্বিশ ক্যারেট খাঁটি স্বর্ণে নির্মিত। অনেক খেটেখুটে, দশ বছর গবেষণা করে আমি নিজেই আমার কারখানায় ঘোড়াটা তৈরি করেছি। এটি বানাতে লেগেছে মোট তিন টন ছাব্বিশ কেজি স্বর্ণ। সব সোনা আমি আফ্রিকার সেরা সেরা খনি থেকে সরাসরি আনিয়েছি।’ — পাতলাদা তার সোনার ঘোড়ার গল্প করেন।

আচ্ছা, মাঝে মাঝেই তো বাসার বড়দের বলতে শোনা যায়—দিনদিন স্বর্ণের দাম বেড়েই চলছে। স্বর্ণের যখন এত দাম, সেই সময়ে এমন ঘোড়া! নিশ্চয়ই আক্ষরিক অর্থে তোমাদের চোখ কপালে উঠে গেছে। কোথায় এই ঘোড়া? কীভাবে বানানো হলো এই স্বর্ণের ঘোড়া? মনের মধ্যে কত প্রশ্নের ঝড়! তাই না?
তোমাদের সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে ‘উড়িতেছে সোনার ঘোড়া’ বইটিতে। এই বইয়ের লেখক মনি হায়দার। বইটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ২০২৫ সালের বইমেলায়।

তোমাদের যাদের বয়স ১৪ বছর হয়েছে, মূলত তাদের জন্যই পাতলাদা সিরিজের এই বই। তবে কি বড়রা পড়তে পারবে না? উঁহু... এমন মজার বই তো সবার জন্যই! চাইলে তোমার পড়া শেষে বাবা-মাকেও পড়তে দিতে পারো ‘উড়িতেছে সোনার ঘোড়া’।

পাতলাদা আসলে পাতলা বা চিকন নন, বরং ইয়া মোটা! বখতিয়ার খিলজির মতো লম্বা দুটি হাত, বসে থাকেন ডান হাতল ভাঙা বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসনের চেয়ারে। পান চিবিয়ে চলেন অনবরত। থাকেন পুরান ঢাকার এঁদো গলির জুরাইনে—জন্মসূত্রে সেখানকার বাসিন্দা। পাতলাদার শাগরেদ হলো ভোম্বল, সাগর, জগলুল, টিয়া, আবুল, ইগল আর ব্যাকুল। এদের সঙ্গে নিয়ে অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য কাণ্ড করে বেড়ান তিনি।

জুরাইনে পাতলাদার ভূগর্ভস্থ কারখানায় তৈরি হয় সোনার ঘোড়া। গোপনে সেই খবর পৌঁছে যায় শত্রুরাষ্ট্রে। সেখানকার জেনারেলরা ঘোড়া চুরি করতে পাঠায় চৌকস সৈন্যদের একটি দল। ডুবোজাহাজে করে বুড়িগঙ্গায় এসে ভেসে ওঠে তারা। কালো পোশাকে রাতের অন্ধকারে শুরু হয় সোনার ঘোড়া চুরির অভিযান।

এদিকে পাতলাদার ঘোড়া চুরি হওয়ার খবর পেয়ে থানায় জানালে পেটমোটা দারোগা সর্বনাশ মিয়া তা বিশ্বাসই করে না। রাগে-দুঃখে পাতলাদা ও তার শাগরেদদের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে তার।

অন্যদিকে ঢাকার আকাশে কালো জালে আটকা পড়ে শত্রুরাষ্ট্রের চোরের দল। তাহলে সোনার ঘোড়া কোথায়? আকাশে উড়ল কীভাবে?

কী, আরও জানতে ইচ্ছে করছে সোনার ঘোড়ার খুঁটিনাটি? তাহলে আমার মতো তোমরাও পড়ে ফেলো মনি হায়দারের এই চমৎকার বইটি — ‘উড়িতেছে সোনার ঘোড়া’, প্রকাশিত হয়েছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড থেকে। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন হিরন্ময় চন্দ।

সাইফুল ইসলামের বই 'ছোটদের ইংলিশ থেরাপি'

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম
আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫, ০৬:০১ পিএম
সাইফুল ইসলামের বই 'ছোটদের ইংলিশ থেরাপি'

শিশুরা যেন আনন্দ নিয়ে সঠিকভাবে ইংলিশ শিখতে পারে, সেজন্য চলতি বছরের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে সাইফুল ইসলামের বই ‘ছোটদের ইংলিশ থেরাপি’।

বইটি সবচেয়ে সহজ ও প্র্যাকটিক্যাল মেথডে লেখা হয়েছে। অনেক ধরনের ইলাস্ট্রেশন যুক্ত করে সায়েন্টিফিক মেথডে শিক্ষার্থীরা কিভাবে ভোকাবুলারি শিখতে পারে সেই পদ্ধতি এখানে যুক্ত করা হয়েছে। সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে ছোট ছোট বাক্য গঠন কিভাবে করবে, সেই বিষয়গুলো শিখানো হয়েছে এই বইয়ের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি ও মেধা বৃদ্ধির যে চ্যালেঞ্জিং গেমগুলোও যুক্ত করা হয়েছে বইটিতে। এমন কিছু এক্সারসাইজে যুক্ত করা হয়েছে যেটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এটা শুধুমাত্র ইংলিশ শেখার বই নয়, এটা শিক্ষার্থীদের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে, সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে, মেধার বিকাশে, চিন্তাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। ইংলিশ শেখার পাশাপাশি শিশুরা ক্রিয়েটিভ ভাবনাও শিখবে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বইটির লেখক হিসেবে আমার লক্ষ্য ছিল ইংরেজি শেখাকে শিশুদের জন্য সহজ, মজাদার ও কার্যকর করা। অনেক শিশু ইংরেজি শেখায় সমস্যায় পড়ে। কারণ প্রচলিত পদ্ধতিগুলো কঠিন ও একঘেয়ে মনে হয়।’

‘ছোটদের ইংলিশ থেরাপি’ বইটি শিশু, অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য সহায়ক বন্ধু হয়ে উঠবে। ইংরেজি শেখার অভিজ্ঞতাকে আনন্দময় করে তুলবে।

উল্লেখ্য, সাইফুল ইসলাম ইংলিশ থেরাপির প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ ইনস্ট্রাক্টর। তিনি জেসিআই বাংলাদেশ টেন আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং পারসনস ২০২৩, বেস্ট নিউবি রাইজিং টিচার অ্যাওয়ার্ড, রকমারি বেস্টসেলার অ্যাওয়ার্ড, ডিআরআর অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, মজার ইশকুলের সেরা স্বেচ্ছাসেবক পুরস্কার পেয়েছেন।

 

 


তারেক

চট্টগ্রামে বইমেলার শেষ দিন ছিল ক্রেতাশূন্য

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৯ এএম
আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫, ১১:২৯ এএম
চট্টগ্রামে বইমেলার শেষ দিন ছিল ক্রেতাশূন্য
খবরের কাগজের ফাইল ছবি

‘চট্টগ্রামের বইমেলায় দর্শক আছে, স্টল আছে, বিক্রেতা আছে কিন্তু ক্রেতা নেই। 

শুক্রবার (২৮ য়েব্রুয়ারি) বিকেলের দিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ে প্রতিদিন। 

এ ছাড়া সরকারি বন্ধের দিন শুক্রবার ও শনিবার দর্শনার্থীর কমতি থাকে না। এরপর স্টলগুলোতে বিক্রি নেই। কারণ মানুষ এখন বই পড়ে না। বইয়ের প্রতি মানুষের প্রেম-ভালোবাসা নেই।’ কথাগুলো বলেন, ‘চট্টগ্রাম এমইএস কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোফরান উদ্দীন টিটু। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের বইমেলা শেষের দিকে। কিন্তু বই বিক্রি নেই বললেই চলে। অথচ প্রতিদিন স্টল খুলতে হচ্ছে। মানুষ মেলায় আসছেন, ঘুরছেন। কিন্তু বই কিনছেন না।’

একই কথা বলেন বইমেলায় রংপেনসিল প্রকাশনীর মালিক মোহাম্মদ শামীম। তিনি বলেন, ‘বই বিক্রি করে দৈনিক স্টল খোলা-বন্ধের খরচও ওঠে না।’ 

জানা গেছে, এক লাখ বর্গফুটের জিমনেসিয়াম মাঠজুড়ে ১৪০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের স্টল ৭৪টি ও ঢাকার স্টল ৪৪টি। মাসব্যাপী বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে, রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস-২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য ও ছাত্র সমন্বয় উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসবসহ মেলায় প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় দেশের বিশিষ্ট লেখক-কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ ছিল।

মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশুকিশোরদের চিত্রাঙ্কন, রবীন্দ্র-নজরুল, লোকসংগীত, সাধারণ নৃত্য, লোকনৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, দেশের গানের আয়োজন করা হয়। মেলাকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী ও বইপ্রেমীদের নিয়ে বিভিন্ন উপ-পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। তাদের সহযোগিতায় প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হয়। এতসব আয়োজনের মধ্যে বইমেলা উৎসবমুখর হলেও বই বিক্রি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন স্টল মালিকরা।

পর্দা নামল অমর একুশে বইমেলার ৩২৯৯টি বই এসেছে এবারের মেলায়

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৩:০০ এএম
৩২৯৯টি বই এসেছে এবারের মেলায়
ছবি: খবরের কাগজ

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি নিয়ে মাসজুড়ে যে বইমেলার আয়োজন করেছিল বাংলা একাডেমি; শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অনাড়ম্বর এক সমাপনী অনুষ্ঠানে তার পর্দা নামল। বাংলা কথাসাহিত্যের সব ধারার লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও প্রকাশকদের মিলনমেলায় শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছিল পাঠকের ঢল।

তবে যে উদ্দেশ্যে বইমেলার আয়োজন, তা কতটা পূরণ হয়েছে এ নিয়ে বহু প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে গেছে বইমেলার শেষ বেলাতেও। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এবার অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করতে হয়েছে বাংলা একাডেমিকে। গত জানুয়ারির শেষভাগে বইমেলার প্রস্তুতিপর্বে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) নেতাদের দ্বন্দ্বে বাংলা একাডেমিকে বেশ হ্যাঁপা পোহাতে হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির ব্যানারে একদল প্রকাশক আলাদা হয়ে যান। ‘আওয়ামী লীগ সমর্থক’ তকমা দিয়ে অনেক প্রকাশককে শুরুতে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার হুমকি আসে তাদের তরফ থেকে। তবে বাংলা একাডেমির বইমেলা পরিচালনা কমিটি মুনশিয়ানা দেখায় এ ক্ষেত্রে। বইমেলায় প্রভাবশালী লেখকদের সম্মিলন ঘটাতে পেরেছে তারা।

আলোচিত, সমালোচিত লেখক তসলিমা নাসরীনের বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে মেলায় সব্যসাচী প্রকাশনার স্টল ভাঙচুর ও পরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা বইমেলার শেষ দিনেও আলোচনার খোরাক জুগিয়েছিল লেখক, প্রকাশকদের আড্ডায়। তবে বইমেলার সমাপনী আয়োজনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘বইমেলায় ভিন্ন মত ও পথের লেখকদের সম্মিলন ঘটাতে হবে। তরুণ লেখকদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।’ 

শেষ বিকেলে জনস্রোত

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে বইমেলার দুয়ার উন্মুক্ত থাকলেও বইমেলার মূল জনস্রোতের দেখা মেলে বিকেল ৫টার পরে। মেলার সব প্রবেশপথেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। শেষ বেলায় প্রিয় বইয়ের খোঁজে মেলায় এসেছিল সব বয়সী পাঠক।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া থেকে সস্ত্রীক মেলায় এসেছিলেন নাট্যকর্মী পাভেল রহমান। তিনি বলেন, ‘চাকরির ফাঁকে ফুরসত মেলেনি বইমেলায় আসার। আর শেষ দিনে এসেছি, কারণ প্রিয় লেখকদের সব বই এদিন এসে যায়। সব বই কিনতে পারব না। তথ্য সংগ্রহ করে রাখব। কিছু দিনের মধ্যে বইগুলো সংগ্রহ করব।

বইমেলার দর্শকরা কেবল ছবি তুলতে আসেন- প্রকাশকরা পুরো মাসজুড়ে এমন অভিযোগ করে এসেছেন। তবে বইমেলার শেষদিনের বিকেলে এসে তাদের মুখে কিছুটা হাসি ফুটেছে।’

বাতিঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ বলেন, ‘গতবারের বিক্রির তুলনায় এবার ১০ শতাংশ কম হয়েছে। তবে শেষ বিকেলে তুলনামূলক ভালো ছিল। পাঠকরা শুধু সেলফি তুলতে নন, আজ বিকেলে বইও কিনেছেন বিস্তর।’

বিদ্যাপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মজিবুর রহমান খোকা বলেন, ‘মাসজুড়ে মন্দাই গেছে বইমেলার। তবে শেষদিনে কিছুটা বিক্রি বেড়েছে। তরুণরা মানসম্মত বইয়ের খোঁজ করেছেন। তরুণ লেখকের বই নিয়েও বেশ আগ্রহ ছিল।’

অমর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী অমর সাহা বলেন, ‘এক ইউনিটের স্টল পাওয়া প্রকাশকদের বিক্রি হয়েছে খুব কম। বলতে গেলে মেলায় যত টাকা লগ্নি হয়েছে, তার সিকিভাগও তুলতে পারিনি আমরা।’

বিতর্কে যুক্ত নয় মেলা কমিটি, দাবি মহাপরিচালকের

বইমেলার নানা ঘটনায় প্রকাশক, লেখকদের জড়িয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হলেও তার দায় নিতে নারাজ বাংলা একাডেমি। গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে বইমেলার সমাপনী আয়োজনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘মেলাজুড়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যার সঙ্গে বাংলা একাডেমি ও বইমেলা পরিচালনা কমিটি সংশ্লিষ্ট নয়। তবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পক্ষের সহায়তায় আমরা সমাধান করতে চেষ্টা করেছি।’

মেলার অব্যবস্থাপনা নিয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডাংকির সঙ্গেও মতানৈক্য হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এমন একটা পরিস্থিতিতে এবার বইমেলা আয়োজন করতে হয়েছে, যখন দেশে পুলিশ নেই; ব্যুরোক্রেসি ফাংশন করছে না। সংস্কৃতির ট্রেনটা লাইনে তুলতে ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে। আমার মনে হয়, সেটি এখন ঠিক লাইনে চলছে।’

বইমেলা পরিচালনায় নতুন পদ্ধতি প্রচলনে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। প্রতিবছর বইমেলায় সেরা বইগুলোর জন্য বাংলা একাডেমি থেকে বিশেষ পুরস্কার প্রবর্তনের কথাও বলেন তিনি।

মেলায় এসেছে ৩২৯৯টি নতুন বই

সমাপনী আয়োজনে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন জানান, এ বছর বইমেলায় ৩ হাজার ২৯৯টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমির নতুন বইয়ের স্টলে জমা পড়া নতুন বইয়ের সংখ্যা থেকে তিনি এ তথ্য জানান। তবে প্রকাশক সমিতির তথ্য বলছে, প্রকৃতপক্ষে নতুন বইয়ের সংখ্যা এর দ্বিগুণ বা আড়াইগুণ হবে।

সরকার আমিন জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৩ টাকার বই বিক্রি করেছে।

সমাপনী আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

বইমেলার সমাপনী আয়োজনে কবি জসীমউদদীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫ এবং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমির ‘কবি জসীমউদদীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫’-এ ভূষিত হয়েছেন কবি আল মুজাহিদী এবং ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এ ভূষিত হয়েছেন জার্মান অধ্যাপক হান্স হার্ডার ও কথাশিল্পী বর্ণালী সাহা। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের পুরস্কারের অর্থ, সম্মাননাপত্র ও সম্মাননা-স্মারক দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিকসংখ্যক বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৫ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশ (প্লেটো : জীবন ও দর্শন/আমিনুল ইসলাম ভুইয়া), ঐতিহ্য (ভাষাশহিদ আবুল বরকত : নেপথ্য-কথা/ বদরুদ্দোজা হারুন) এবং কথাপ্রকাশকে (গোরস্তানের পদ্য : স্মৃতি ও জীবনস্বপ্ন/ সিরাজ সালেকীন) মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়।

২০২৪ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিকসংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কাকাতুয়াকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়।

কল্পবিজ্ঞান আর মননশীল সাহিত্যেও আগ্রহ

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৮ এএম
কল্পবিজ্ঞান আর মননশীল সাহিত্যেও আগ্রহ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

তরুণ পাঠকদের মধ্যে সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞানের যে ঝোঁক, তা এবারের বইমেলায় নাকি একটু কমেছে! তরুণ পাঠকদের ভাষ্যে, এবারের বইমেলায় জুতসই বই মেলেনি, তাই কল্পবিজ্ঞানে আগ্রহ কমছে। কিন্তু স্কুলপড়ুয়া খুদে পাঠকদের কাছে বাংলা সাহিত্যের প্রথম পাঠ মানেই হলো, কল্পবিজ্ঞান। আর এ কথাটির প্রমাণ মিলেছে প্রায় প্রতিদিন। বেলা ৩টায় বইমেলার দুয়ার খুলতে যতক্ষণ, এরপর স্কুলপড়ুয়ারা এসে খুঁজতে থাকে কল্পবিজ্ঞানের সব বই। স্মার্টফোনে প্রিয় বইটির প্রচ্ছদ দেখিয়ে উৎসুক পাঠকের জিজ্ঞাসাও শোনা গেছে হরদম- ‘ভাইয়া দেখুন তো, সায়েন্স ফিকশনের এ বইটির কপি আছে কি না!’

কল্পবিজ্ঞানপ্রিয় খুদে লেখকদের জন্য এবারের বইমেলায় সময় প্রকাশন থেকে এসেছে ড. হাসিনুর রহমান খানের ‘গ্যালাক্টিক ত্রয়ী’, রাবেয়া বুকস্ থেকে এসেছে আহমেদ বায়েজীদের ‘মহাকাশে দুঃস্বপ্ন’, আফসার ব্রাদার্স প্রকাশিত জসীম আল ফাহিমের ‘বিজ্ঞানী মামার কাণ্ডকারখানা’, অনন্যা এনেছে মুহাম্মদ ইব্রাহীমের ‘দুই বুদ্ধি’, র্যামন পাবলিশার্স এনেছে রোকনুজ্জামান রিপনের ‘শেষ জ্যোৎস্না’ ও ড. মো. মনসুর আলীর ‘মহাকাশের সন্ধানে’, অবসর প্রকাশনা সংস্থা এনেছে হাসান খুরশীদ রুমীর ‘ইভ অব ম্যান’। 

প্রতিবার বইমেলাতেই প্রবন্ধ ও মননশীল সাহিত্যের একদল তরুণ পাঠকের দেখা মেলে। তাদের ভাষ্যে, সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র, ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে রচিত সৃজনশীল সাহিত্য তাদের জ্ঞানের জগৎকে আরও সমৃদ্ধ করে। উচ্চশিক্ষার নানা স্তরে এই বইগুলো ‘রেফারেন্স বুক’ হিসেবে কাজ করে বলে মননশীল সাহিত্যের প্রতি ক্রমেই আগ্রহ বাড়ছে তাদের মধ্যে।
বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, মননশীল বা প্রবন্ধের বই এসেছে ৭০টি। এবার বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক মোজাফ্ফর হোসেনের ‘ব্রাহ্মসমাজে ইসলাম সাহিত্যের সক্রিয়তাবাদ ও অন্যান্য’, অনন্যা থেকে প্রকাশিত হয়েছে গোলাম মাওলা রনির ‘কি দেখেছি কি দেখছি’, কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ওয়াসি আহমেদের ‘টিকিটাকা’, পালক পাবলিশার্স থেকে এসেছে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের ‘শিক্ষার তিন ভুবনে’, ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে মো. আবদুল হাই ভূঁইয়ার ‘স্বার্থপরতার অর্থনীতি’, সাহস পাবলিকেশনস থেকে এসেছে শহীদুজ্জামানের ‘আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের তত্ত্বাবলি’, পাঠক সমাবেশ প্রকাশ করেছে আবু সাইদ খানের ‘মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লববাদ ও অন্যান্য’, জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে সেলিম জাহানের ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ছাপ পড়েছে এবারের অমর একুশে বইমেলায়। বইমেলার প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বইমেলায় যত টাকা তারা লগ্নি করেন, এ বছর তার অর্ধেকও করেননি। বই বিক্রিতে ‘মন্দাভাব’ ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। 

জাগৃতির প্রকাশক রাজিয়া রহমান বলেন, ‘এবার নতুন বই বের করেছি ১৬টি। আগে বইমেলায় অন্তত ৩০টি নতুন বই আসত আমাদের প্রকাশনী থেকে। এবার দেশের যা পরিস্থিতি, খুব বেশি টাকা লগ্নি করতে চাইনি। মেলার অবস্থাও ভালো ছিল না। শুরু থেকেই যে মন্দাভাব লেগেছে, তা বইমেলার শেষভাগেও এসে রয়ে গেল। এবারের বইমেলা সত্যি বাজে কেটেছে।’

পালক পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী ফোরকান আহমদ বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই তো দেখছি, এই বইমেলা কীভাবে ক্রমে বিবর্ণ হচ্ছে। বই বিক্রি কম হবে বা বেশি হবে, সেটি সরিয়ে রাখলেও পাঠক, প্রকাশক ও ক্রেতার যে মিথস্ক্রিয়া সেটি ক্রমাগত যেন মিইয়ে যাচ্ছে। বইমেলায় ক্রেতা কমে যাচ্ছে। অবশ্য তাদের জন্য যথাযথ পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পেরেছি কি না, সেটা একটা প্রশ্ন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিন। এদিন বাংলা একাডেমির নতুন বইয়ের স্টলে নতুন বই এসেছে ১৭৬টি। এর মধ্যে রয়েছে গীতিকবি আসিফ আকবরের নতুন বই যদি লক্ষ্য থাকে অটুট- সাফল্যের খোলা কৌশল’। বাংলাদেশের করপোরেট জগতের উল্লেখযোগ্য নাম আসিফ ইকবাল, গীতিকবি হিসেবেও তিনি সমান উজ্জ্বল। নিয়মিত করছেন শিক্ষকতাও। সংগঠক হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে।  তিন দশকের অধিক সময়ের ক্যারিয়ারে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন এ বইয়ে। বইটি বের হয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে। 

গতকাল বিকেলে বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘একটি অভ্যুত্থানের জন্ম ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম রনি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সৈয়দ নিজার। সভাপতিত্ব করেন কাজী মারুফ। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সায়ীদ আবুবকর, কবি মিতা আলী এবং কবি, সম্পাদক ও শিশুসাহিত্যিক জামসেদ ওয়াজেদ।

আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার শেষ দিন। এদিন মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। 

আজ বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন অমর একুশে বইমেলার সদস্যসচিব ড. সরকার আমিন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

সমাপনী অনুষ্ঠানে কবি জসীমউদদীন সাহিত্য পুরস্কার, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার,  চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।