চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একাডেমিক ভবনে তালা দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। দুই ছাত্র নিহতের ঘটনায় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে চতুর্থ দিনেও রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয় শিক্ষার্থীরা।
এ সময় পুরকৌশল ভবন, আর্কিটেকচার ভবন, কম্পিউটার সায়েন্স ভবন, প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে।
একইসঙ্গে চতুর্থদিনের মতো সড়ক অবরোধ চলছে। ফলে সোমবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে। চুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ক্ষান্ত করার চেষ্টা করা হলেও প্রশাসনের কাছে ১০ দফা দাবি পেশ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ দাবি না মানা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে চতুর্থ দিনের মতো শিক্ষার্থীরা চুয়েট গেটে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে অবস্থান নিয়েছে। এর আগে বুধবার, মঙ্গলবার ও সোমবার বিকেলে একই ভাবে সড়কে অবস্থান নেন তারা।
বিক্ষোভে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক ব্যবহারকারী রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে এ সড়কে যাতায়াতকারীরা।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে দুই সহপাঠী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক, দুই শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবি, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা এক শিক্ষকের বহিষ্কারসহ ১০দফা দাবি পেশ করেন।
প্লেকার্ডে লিখে শিক্ষার্থীরা তাদের ১০ দফা তুলে ধরেন। এ দাবি মেনে নিতে তারা ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়।
তবে ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও দাবি না মানা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত রাখবে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
এর আগে,মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে বিক্ষোভে নেমে পড়ে। এ সময় জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এ সড়কে চলা শাহ আমানত লাইনের একটি গাড়ি। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয় আরও চারটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, চুয়েট গেটের দুই পাশে সড়কে ব্যারিকেড দেওয়ার ফলে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা হেঁটে চুয়েট গেট অতিক্রম করছেন।
দুপুরে শহিদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা পুরকৌশল ভবনে তালা দেয়, এরপর কম্পিউটার সায়েন্স ভবনে, আর্কিটেক্ট ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হতেও দেখা যায়। এর আগের দিন সন্ধ্যায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয় তারা।
শিক্ষার্থী মতিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দুই ভাই নিহত হয়েছে। আমরা শান্তি থাকবো কিভাবে। আমাদের একটি দাবিও মেনে নেয়নি প্রশাসন। ফলে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। দাবি না মানা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।’
চুয়েটের শিক্ষার্থী আবদুল কাদের খবরের কাগজকে বলেন, ‘একজন শিক্ষক এ নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন ফলে আমরা সুমন দে নামের ওই শিক্ষকেরও বহিষ্কার দাবি করছি।’
শিক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি আমাদের ১০ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের একটি দাবিও মেনে নেওয়ার আশ্বাস পাইনি। ফলে আমাদের আন্দোলন চলছে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি সভায় বসেছেন চুয়েটের ভিসি ড. মো. রফিকুল আলম।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চুয়েটের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসেন নিহত হন।
আবদুস সাত্তার/অমিয়/