উৎসবমুখর পরিবেশে আর দিনভর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজধানীর নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের সমাবর্তনে ১ হাজার ৩৬১ জনকে ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
সমাবর্তনের নির্ধারিত সময়ের আগে সমাবর্তনের পোশাক পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন।
সমাবর্তন ঘিরে পুরো নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ নানা ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও তোরণে সাজানো হয়েছিল। ছিল গ্রাজুয়েটদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস। এবারের সমাবর্তন গ্রাজুয়েট-ফ্যাকাল্টি ও অতিথিদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এর পর ধারাবহিকভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, পতাকা উত্তোলনের পরপরই পবিত্র কুরআন, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক থেকে ধর্মীয় বাণী পাঠ করা হয়। পরে পরিবেশিত হয় দলীয় নৃত্য পরিবেশনা করা হয়।
সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমরা যে জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করেছো তা তোমার ভবিষৎ সফলতার পাথেয় হয়ে থাকবে। গ্রাজুয়েট হওয়া মানে শুধু ডিগ্রি অর্জন করা নয়, বরং দেশের প্রতি নিজের দায়িত্বও কাঁধে নেওয়া। আমার বিশ্বাস, দেশের সংস্কারে তোমরা হবে প্রথম সারির সৈনিক। দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গঠনে তোমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ও ছাড়া সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ নটর ডেমের কিওঘ-হেসবার্গ অধ্যাপক ড. আর. স্কট অ্যাপলবি।
অধ্যাপক অ্যাপলবি বলেন, নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা যদিও অল্পদিনের তবুও চমকপ্রদ। মাত্র ১১ বছরে এটি অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। যেখানে সত্য, ন্যায় এবং শান্তির মূল্যবোধ লালিত হয়ে উঠছে। যারা আজকের গ্রাজুয়েট তাদের যাত্রা এখানেই শেষ না বরং এখান থেকেই শুরু। এখন বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত তোমরা। তোমাদের দূরদর্শী, সৎ সাহস আর আত্মবিশ্বাস সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাও এবং ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসো। আমি জানি এদেশে দেশের বাহিরে অনেক প্রবাসী রয়েছে যারা তাদের পরিবারের জন্য অর্থ পাঠায়। তোমাদের কাজ হবে দেশ-জাতি এবং তোমাদের এলাকার জন্য কিছু করা। এই বিশ্ব তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
মানুষের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফাদার প্যাট্রিক ডি. গ্যাফনি, সিএসসি বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটা আমাদের দ্বিতীয় সমাবর্তন। সমাবর্তন মানেই শুধু শিক্ষার অ্যাকাডেমিক সাফল্যের সমাপ্তি না। বরং এটি এটি নৈতিক চেতনা জাগ্রত করার একটি বিষয়। ডিগ্রি অর্জনের পর এখন তোমাদের দায়িত্ব নৈতিক চেতনার মাধ্যমে বিশ্বের পরিবর্তন নিয়ে আসা। সত্য, ন্যায়, শ্রদ্ধাশীলতা ও মানবতার মূল্যবোধ ধারণ করে মানুষের সেবায় তোমরা নিজেদের উৎসর্গ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সমাবর্তনে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী আতিফ রাব বলেন, আমাদের জার্নিটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে। নানা চড়াই-উৎরাই পার করে আমরা আজ এখানে এসেছি। সেজন্য আমি আমার সৃষ্টিকর্তা, ফ্যাকাল্টি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মকর্মচারীদের প্রতিও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আজ থেকেই আমাদের যে জার্নি সেটি শেষ না বরং শুরু হলো।
অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ ক্রুজ, ওএমআই এবং এনডিইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ-এর চেয়ারম্যান ড. ফাদার জর্জ কমল রোজারিও, সিএসসিসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীনের ব্যান্ড শো অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের সমাবর্তনে শিক্ষাবর্ষ ফল ২০১৯ স্প্রিং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের উত্তীর্ণ ১ হাজার ৩৩ জনকে স্নাতক এবং ৩২৮ জনকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ ছাড়া একাডেমিক কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ গ্র্যাজুয়েটদের মধ্য থেকে দুজনকে চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডের্ল এবং সাতজনকে ভাইস চ্যাসেন্সর্ল গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়।
পাশাপাশি চারজনকে কুইনলিভান সিলভার মেডেল, তিনজনকে আর্চবিশপ টি. এ. গাঙ্গুলি সিলভার মেডেল, সাতজনকে ফাদার বেনজামিন কস্তা ব্রোঞ্জ মেডেল এবং দুজনকে ফাদার পিশোতো ব্রোঞ্জ মেডেল দেওয়া হয়। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ক্যাটাগরিতে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র দত্তকে ফাদার বাসিল অ্যান্থনী মেরী মরো গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে ১৮ ডিসেম্বর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ৫৩৬ জনকে স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন লাভ করে নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে এই বিদ্যাপিঠটি। রাজধানীর মতিঝিলে নটর ডেম কলেজ ক্যাম্পাসের দক্ষিণে এই ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ভবন স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি বিভাগে একাডেমিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের কার্যক্রম শুরু পরিকল্পনাধীন রয়েছে।
আরিফ/মেহেদী/