জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও টিন নম্বর তৈরি করতেন জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস। সেই জাল এনআইডি ও টিন নম্বর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তৈরি করতেন ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল। পরে এসব ভুয়া দলিল বিভিন্ন ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ নিতেন ইদ্রিস। তিনি ও তার চক্রের সদস্যরা ভুয়া সব দলিল ও কাগজপত্র দিয়ে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এই জালিয়াত চক্রের মাস্টারমাইন্ড ইদ্রিসসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিলমোহর, একই ব্যক্তির একাধিক এনআইডি ও টিন নম্বর, ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ও নগদ তিন লাখ টাকা জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন ইদ্রিসের প্রধান সহযোগী মো. রাকিব হোসেন (৩৩), ইদ্রিসের ভায়রা ভাই কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪), জাল কাগজপত্র ও এনআইডি প্রস্তুতকারক মো. লিটন মাহমুদ (৪০), ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল প্রস্তুতকারক হাবিবুর রহমান মিঠু (৩০), এনআরবিসির ব্যাংক কর্মকর্তা হিরু মোল্যা (৪৪), আব্দুস সাত্তার (৫৪) ও সৈয়দ তারেক আলী (৫৪)।
শনিবার (৫ মে) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানের পর সিইউডি প্রথমে এই চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শুক্রবার মূল হোতা জয়নাল আবেদীন ইদ্রিসসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের ক্রেতা হিসেবে হাজির হতেন। ফ্ল্যাট কেনার জন্য শুরুতে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বায়না করতেন। এরপর ফ্ল্যাটের মালিকানার তথ্য যাচাইয়ের কথা বলে মালিকের কাছ থেকে তারা আসল দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্রের কপি সংগ্রহ করতেন। পরে সে দলিলসহ অন্যান্য কাগজপত্রের তথ্য নিয়ে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের অসাধু লোকদের মাধ্যমে জাল দলিল তৈরি করতেন। ইদ্রিস জাল দলিলে কখনো নিজে মালিক হন আবার কখনো চক্রের অন্য সদস্যদের মালিক বানান। এরপর সেই জাল দলিল দিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রির ফাঁদ পাতেন। এ অবৈধ অর্থ দিয়ে ইদ্রিস রাজধানীর বসুন্ধার আবাসিক এলাকায় ৭ তলা বাড়ি, ৩টি ফ্ল্যাট, মিরপুর ও আশকোনায় ৩টি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
সিআইডির অনুসন্ধানে ফ্ল্যাট জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর ইদ্রিসের মালিকাধীন রুমানা জুয়েলার্স, নীড় এস্টেট প্রোপার্টিস লিমিটেড, স্নেহা এন্টারপ্রাইজ, ইআর ইন্টারন্যাশনালসহ চক্রের ২৫ জন সদস্যের বিরুদ্ধে ডিএমপির উত্তরা-পূর্ব থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে সিআইডি।