ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

ফুলেশ্বরী নদীর পাড়ে

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
ফুলেশ্বরী নদীর পাড়ে

সিংহের হঠাৎ মনে হলো সবাই মিলে অনেকদিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হচ্ছে না। এই ভেবে বনের সবাইকে ডেকে বললেন, ‘কতদিন হয়ে গেল আমাদের আনন্দ-উৎসব হয় না। চলো আমরা বনের বাইরে মনোরম, সুন্দর কোনো জায়গায় ঘুরে আসি।’

সিংহের কথা শুনে পেছন থেকে একটা বানর লাফ দিয়ে উঠে বলল, ‘মানে চড়ুইভাতি!’
সিংহ বললেন, ‘চড়ুইভাতিও বলতে পার। বাড়ির বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলে জম্পেশ খাওয়াদাওয়াও হবে, তাই না! কোথায় যাওয়া যায় বল দেখি?’
সবার মাঝখানে বসে ছিল যে হরিণটা! সে দাড়িয়ে বলল, ‘বন থেকে তিন গ্রাম দূরে ফুলেশ্বরী নদীর ধারে খেলার মাঠ আছে। সেই মাঠে চড়ুইভাতি খেলতে যেতে পারি। কিন্তু এতগুলো পশুপাখি এতদূর যাব কেমন করে?’
হরিণের পেছন থেকে মাথা বের করে শেয়াল বলল, ‘পঞ্চাশ সিটের একটা বাস ভাড়া করে নিই। আমরা যারা মুরব্বি আছি সবাই সিটে বসলাম, পাখিরা বাসের ছাদে আর বানরগুলো জানালায় ঝুলতে ঝুলতে চলে যাব।’
ছোট্ট একটা বানর তিড়িং করে লাফিয়ে উঠে বলল, ‘অন্যরা ঝুলে ঝুলুক, আমি ঝুলতে পারব না।’
শেয়াল বলল, ‘তোমাকে ঝুলতে হবে না, তুমি ছোট্ট বানর আমার কোলে বসে যেও কেমন!’ শেয়ালের কথা শুনে সবাই হাসে।
কিছু সময় আলোচনা চলল- এতগুলো পশুপাখির খাবার কী হবে? খাবার প্যাকেট করে নিয়ে যাবে নাকি গিয়ে রান্না করবে? রান্নার বাবুর্চি পাবে কোথায়? বিনোদনের ব্যবস্থা কী ইত্যাদি ইত্যাদি। আলোচনা শেষে ঠিক হলো রান্না গিয়েই হবে, সিংহ নিজেই করবে। খেলাধূলার জন্য ফুটবল নিয়ে যাবে। বিনোদন হিসেবে আরও থাকবে গানবাজনার ব্যবস্থা। যাত্রাকালে বাসে নানারকম বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গানবাজনা চলবে। এতসব আলোচনার মাঝে একটা বাঘ ঝিমুচ্ছিল। সবার কথা শেষ হলে একটুখানি আড়মোরা কেটে সে বলল, ‘খেলাধূলায় পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকা দরকার। অথবা র‌্যাফেল ড্র। এমন একটা চড়ুইভাতির অনুষ্ঠানে পুরস্কারের ব্যবস্থা না থাকলে হয়!’
বাঘের কথাটা বেশ মনে ধরল সিংহের। বললেন, ‘বেশ, কী কী পুরস্কার থাকলে ভালো হয় বলে তুমি মনে করো, বাঘ?’
বাঘ বলল, ‘র‌্যাফেল ড্রতে প্রথম পুরস্কার হোন্ডা। প্রথম পুরস্কারটা আমিই পাব কি না, তাই! হোন্ডা করে বনের এ মাথা থেকে ও মাথা অবধি ঘোরার খুব শখ আমার। দ্বিতীয় পুরস্কার টেলিভিশন। শুনেছি জিওগ্রাফি বলে একটা চ্যানেল আছে, ওখানে আমাদের নাকি খুব দেখায় টেখায়, টেলিভিশনে নিজেকে দেখারও অনেক শখ।’
পাশ থেকে একটা শেয়াল হুক্কা হুয়া আওয়াজ দিয়ে বলল, ‘দ্বিতীয় পুরস্কার টেলিভিশনটা আপনিই পাবেন তাই না বাঘ মামা?’
শেয়ালের কথা শুনে সবাই আবার হাসে। বাঘ শেয়ালকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলল। আরও বলল, ‘তৃতীয় পুরস্কার মোবাইল। একটা মোবাইল জরুরি হয়ে গেছে। বনের বাইরে কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখা যাচ্ছে না।’
সব শুনে সিংহ বললেন, ‘হোন্ডা আর টেলিভিশনের ব্যাপারটা বিবেচনা করা যায়, মোবাইল একদম নয়। মোবাইল হাতে পেলে বনের ছোট ছোট পশু-পাখিরা সারা দিন শুধু গেমস খেলবে। এত গেমস খেলা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।’
বড়রা হাততালি দিয়ে বলল, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন সিংহজি।’
একটা সুরেলা কণ্ঠের পাখি দু’কলি গান গেয়ে বলল, ‘আমি বলি কী, প্রথম পুরস্কার গাছের চারা দেওয়া হোক। এক লাখ একটা চারা। বনে গাছপালা কমে আসছে। মাঝে মধ্যে উড়ে এসে মনে হয় বসে একটু আরাম করব সেরকম গাছই খুঁজে পাচ্ছি না।’
পালকজুড়ে হলুদের কারুকাজে ভরা একটা পাখি। সে বলল, ‘দ্বিতীয় পুরস্কার ফসলি বীজ। ফসলের অভাবে মনে হচ্ছে প্রয়োজনমত খাবার জুটছে না।’
সাদা ধবধবে একটা পাখি, মাথায় কালো রঙের চূড়ো তার। সে বলল, ‘তৃতীয় পুরস্কার মোবাইল দেওয়া যেতে পারে, শীতের সময় অতিথি পাখিরা এসে ওদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না। মোবাইলটা থাকলে একটু কথাবার্তা বলতে পারবে।’ পাখিটার কথা শুনে ফের হাসে সবাই।’
সিংহ সবাইকে হাসি থামাতে বলে জানায়- সামনের শুক্রবার তারা চড়ুইভাতি খেলতে ফুলেশ্বরী নদীর পাড়ে যাচ্ছে। এই বলে তাদের মিটিং শেষ হয়।
শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ পশুপাখিরা বাস ভরে ফুলেশ্বরী নদীর পাড়ে এসে দেখে- এমা! এত এত মানুষ ফুলের মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের বরণ করতে। বলছে- ফুলেশ্বরী নদীর পাড়ে তোমাদের স্বাগতম প্রিয় পশুপাখির দল ’
তারা চড়ুইভাতির অনুষ্ঠানে মানুষদেরও নিমন্ত্রণ করে। মানুষে, পশুপাখি মিলে একসাথে রান্না করে, নাচে-গায় আর ভূরি ভোজে মেতে উঠে। সবশেষে নিজেদের জন্য আনা পুরস্কার গাছের চারা, ফসলের বীজ প্রিয় মানুষদের উপহার দেয়। তারা বুঝতে পারে নিজেদের থেকে এগুলো এখন মানুষেরই বেশি প্রয়োজন।  

জাহ্নবী

আমরা আঁকি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:২১ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:২১ পিএম
আমরা আঁকি

দেবনীল চেীধুরী
কেজি ওয়ানৎ স্কলার্সহোম প্রিপারেটরি
পাঠানটুলা, সিলেট।
/আবরার জাহিন

 

আমরা আঁকি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৯ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৯ পিএম
আমরা আঁকি

নাজিবাহ ইবনাত প্রান্তি
নবম শ্রেণি 
আটি পাঁচদোনা উচ্চ বিদ্যালয়
কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

/আবরার জাহিন

নীল সাগরের তিমি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম
নীল সাগরের তিমি

ইউরোপের একটি ছবির মতো সুন্দর দেশ নরওয়ে। মানুষগুলো ছিমছাম, নির্ভেজাল ও হাসিখুশি। নরওয়ের রয়েছে বিশাল সমুদ্র উপকূল। এ দেশের অনেক মানুষ তাই মাছ ধরে। এজন্য নরওয়েকে জেলেদের দেশ বলা হয়।

নরওয়ের খোলা সাগরে ভেসে বেড়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে তিমির দল। মাঝে মাঝে উপকূলে ঢু দিয়ে যায়। তারা সমুদ্রে খেলা করে। অবাক করার মতো হলেও এটা সত্যি যে, তারা গানও গায়। সে গান অন্য তিমিরাও শুনতে পায় বহু বহু  দূর থেকে। বিজ্ঞানীরা তো এ-কথাও বলেন যে, তিমিদের নিজস্ব ভাষাও আছে। তারা সে ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথাও বলে। আর যখন তখন সমুদ্রের বুকে ডিগবাজি খায়। 9তিমিরা দল বেঁধে চলে। অবাক করার মতো কথা হলো, তাদের পরিবারও আছে। মা তিমি তার সন্তানকে পনেরো বছর পর্যন্ত নিজের কাছে রাখে। তার পর ছেড়ে দেয় স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার জন্য।

তো আমাদের এ গল্পের তিমি শিশুটির নাম অ্যাবে। তার মা সিলোনি তাকে খুব আদর করত। খুব ভালোবাসত। কিন্তু যখন অ্যাবের বয়স পনেরো হয়ে গেল, তখন তার মা সিলোনি তাকে স্বাধীন করে দিল। সত্যি সত্যিই, সিলোনি এটা চায়নি। কিন্তু সমাজের নিয়ম বলে কথা! তাই ছেলেকে না ছেড়ে তার উপায় ছিল না। অ্যাবে কয়েকদিন কান্না করতে করতে সমুদ্রে ভেসে বেড়াল। ধীরে ধীরে সমুদ্রের নানা রকম মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীর সঙ্গে তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়ে গেল। তাদের সঙ্গে ভেসে বেড়িয়ে, গল্প করে তার সময় ভালোই কাটতে লাগল। ভালো লাগল সমুদ্রের প্রাণীদের সঙ্গে খেলা করতে। এমনি করতে করতে একদিন একটা রে-ফিসের সঙ্গে সাঁতরাতে সাঁতরাতে সে চলে এল নরওয়ের সমুদ্র উপকূলের খুব কাছে। সেখানে নরওয়ের রাজা হ্যানসনের রাজকীয় জাহাজ এমভি মার্টিনা নোঙর করা ছিল। রাজা এই জাহাজে চড়ে তার ভীষণ অসুস্থ ছেলে হ্যানসনকে নিয়ে ইংল্যান্ডে যাবেন উন্নত চিকিৎসা করাতে।

জাহাজটি এক সপ্তাহের মধ্যেই রওনা হবে। ছোট্ট তিমি অ্যাবে আগে কখনো জাহাজ দেখেনি। সে বিস্মিত হলো। আনন্দে সে বড় করে দম নিয়ে সমুদ্রে ডুব দিল, একটু পরেই ভুস করে ভেসে উঠে আকাশের দিকে লাফ দিল পানি ছিটাতে ছিটাতে। তখন অ্যাবেকে মনে হচ্ছিল একটা উড়ন্ত পানির ফোয়ারা। রাজপুত্র হ্যানসন তখন জাহাজের খোলা ডেকে দাঁড়িয়ে ছিল। খালাসিরা ছোটাছুটি করে জাহাজে প্রয়োজনীয় মালপত্র ওঠাচ্ছিল। হ্যানসন তিমিটাকে দেখে ফেলল আর ওকে খুব ভালোবেসে ফেলল। সে তিমিটার উদ্দেশে গান গেয়ে উঠল। গানটা কিন্তু ছোট্ট তিমি অ্যাবের খুব ভালো লাগল। সে প্রতিদিন রাজপুত্র হ্যানসনের সঙ্গে দেখা করতে আসতে লাগল।

একদিন রাজার সেনাপতি রবরয় তিমিটিকে দেখে ফেলল। সে হারপুন গান দিয়ে তিমিটির দিকে গুলি ছুড়ল। ছোট্ট তিমির চারপাশে রক্তে লাল হয়ে গেল পানি। ধীরে ধীরে সে সমুদ্রে তলিয়ে গেল। রাজপুত্র হ্যানসন ডেক থেকে সবকিছু দেখে চিৎকার করে সমুদ্রে দিল ঝাঁপ। সে সাঁতার জানত না, তাই সেও সমুদ্রে তলিয়ে গেল।

সমুদ্রে স্কুবা ডাইভার পাঠিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রাজপুত্রকে আর পাওয়া গেল না। শোনা যায় আজও নরওয়ের জেলেরা যখন সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়, তখন তারা কখনো কখনো রাজপুত্রের করুন কণ্ঠের গান শোনে। জেলেদের মন তখন রাজপুত্রের কথা ভেবে বিষণ্ন হয়ে ওঠে।

/আবরার জাহিন

বৃষ্টিঝরা দিনে

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
বৃষ্টিঝরা দিনে
ছবি: সংগৃহীত

মেঘ গুরগুর ডাকছে দেয়া
আকাশ কালো করে,
ঠাণ্ডা হাওয়ার ডানায় চড়ে
নামল বৃষ্টি জোরে।
তা-ধিন তা-ধিন সোনাব্যাঙে
নাচছে খালে বিলে,
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ভাঙা সুরেই
ডাকছে সবাই মিলে।
শিশু-কিশোর উঠোনজুড়ে
করছে লুটোপুটি,
কেউবা বিলে বড়শি পেতে
ধরছে ট্যাংরা পুঁটি।
কদম ফুলের পাপড়ি মেলে
বর্ষা ওঠে হেসে,
নদী-নালা পায় ফিরে প্রাণ
রূপসী বাংলাদেশে।

বাদলা দিনে

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
বাদলা দিনে
ছবি: সংগৃহীত

ঝুপঝুপাঝুপ বৃষ্টি ঝরে 
ভরেছে ওই ঝিল,
শব্দ ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ 
নদী ও খালবিল!

জলের নাচন দেখবে খোকন 
ভাল্লাগে না ঘরে,
টইটম্বুর ডোবা পুকুর
জল থইথই করে!

বাদলা দিনে করতে মানা
এমন ছোটাছুটি,
ওই দেখো মা জলে ভাসে 
টেংরা, বেলে, পুঁটি!

শুনব না আজ কোনো বাধা 
ধরব মাগুর কই,
ধুম পড়েছে বিলের মাঝে
মাছ ধরার হইচই!