![দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনুন](uploads/2024/02/12/1707712684.Editorial.jpg)
পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে প্রতিবছরই দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া হয়। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস চরমে ওঠে। নির্বাচন শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনি চ্যালেঞ্জে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন। তারই অংশ হিসেবে গত ১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা, সরকারি শূন্যপদ পূরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোট ১৫টি নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের মধ্যে রয়েছে পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪-এর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জাতীয় বাজেট প্রণয়নকালে নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪ বিবেচনায় রাখবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যপণ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চারটি স্তম্ভ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট জনগণ নিশ্চিত করতে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে করণীয় চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে, নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকল্পের উপকারিতা ও দেশের জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিদেশি ঋণ ও সহায়তা গ্রহণে যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। এ ছাড়া চলমান প্রকল্প বিশেষ করে যেগুলোর বাস্তবায়ন সর্বশেষ পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলোয় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান ও প্রবেশে সহায়তা করতে হবে। গার্মেন্টস সেক্টরের মতো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষিজাত পণ্যবিষয়ক শিল্প বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে শিক্ষাকে কর্মমুখী করার লক্ষ্যে আইসিটিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। যুবসমাজকে খেলাধুলা এবং শিল্প-সংস্কৃতিচর্চায় উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে বিরত রাখতে হবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেওয়ার পর সড়ক ও সেতুমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাসমূহ একটি দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র রমজান সামনে রেখে চাল, তেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক-কর কমানো হয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে এনবিআর।
সরকার চেষ্টা করছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার। এরই মধ্যে বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ যেন কমছেই না। পেঁয়াজের ভরা মৌসুম থাকলেও দাম নিয়ন্ত্রণে নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হয় না। এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখেছে। আশার কথা হচ্ছে, আমদানির খবরে কমছে আলুর দাম।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া ও কুষ্টিয়ার সংশ্লিষ্ট মিলমালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, দেশে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার জিরো টলারেন্সে রয়েছে। অবৈধ পন্থায় ব্যবসা পরিচালনা করা থেকে সরে আসতে হবে। তা না হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অবৈধ মজুতদারদের শুধু জরিমানা করেই ছাড় দেওয়া হবে না, সংশোধন না হলে তাদের জেলেও যেতে হবে।
মজুত করে কৃত্রিমভাবে যাতে দাম বৃদ্ধি করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রতিফলন বাজারে দেখা যাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম।
আমদানিকারক, লোকাল উৎপাদক, কৃষি বিভাগ, খাদ্য বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে বাজারে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করতে পারে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।