![প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে](uploads/2024/02/13/1707797578.Editorial.gif)
উন্নয়ন বাজেট বা এডিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ জোগানের বড় একটি অংশ আসে বিদেশি ঋণ থেকে। বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে এ অর্থ ব্যবহৃত হয়। এডিপিতে মোট প্রকল্পের ৩০ শতাংশ হচ্ছে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প। সে হিসাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার অধীনে প্রায় ৪ শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এর মধ্যে বেশি হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। তারপর রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। দ্বিপক্ষীয় দেশের মধ্যে ভারত, চীন, জাপান ও রাশিয়া থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অন্য দেশ থেকেও ঋণ নেওয়া হয়। তার পরিমাণ কম। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে যে ঋণ নেওয়া হয় তা নমনীয়। এর সুদহার কম ও পরিশোধের মেয়াদ ৩০ থেকে ৪০ বছর। অন্যদিকে, দ্বিপক্ষীয় দেশের মধ্যে চীন, রাশিয়া ও ভারতের ঋণের শর্ত কঠিন এবং পরিশোধের সময়ও কম থাকে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহৃত বিদেশি ঋণের পাহাড় জমেছে পাইপলাইনে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে গত এক দশকে পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে কয়েক গুণ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পাইপলাইনে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ আটকে রয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী দেশীয় মুদ্রায় এর অঙ্ক প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে অন্তত ১৫টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন সংস্থার কাছে এই টাকা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর অদক্ষতা, দুর্বল তদারকিসহ নানা কারণে ওই টাকা আটকে রয়েছে বছরের পর বছর।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পাইপলাইনে বিদেশি ঋণ আটকে থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কারণ একটি ঋণচুক্তি সই হওয়ার পর তা পাইপলাইনে চলে আসে। আমাদের দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর। এই ঋণ ছাড় হতে আরও বেশি সময় লাগে। প্রকল্পের মেয়াদ সময়মতো শেষ না হওয়ার কারণেই পাইপলাইনে টাকার পাহাড় জমেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রিজার্ভের এই দুর্দিনে পাইপলাইনে আটকে থাকা বিদেশি সহায়তা বা ঋণের দ্রুত ছাড়ের উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থ ছাড় দ্রুত হলে ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা লেনদেনের ভারসাম্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকে মজুত রিজার্ভে স্বস্তি ফিরবে। সবশেষ তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে। তবে নিট রিজার্ভ আরও কম।
ইআরডির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরে পাইপলাইনে আটকে থাকা বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৪৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। আলোচ্য অর্থবছরে এটি ছিল ৫০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং লেনদেনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের যথাযথ ব্যবহার সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পাইপলাইনে বিশাল অঙ্কের বিদেশি ঋণ আটকে রয়েছে। রিজার্ভের এই দুর্দিনে জমে থাকা ঋণ দ্রুত ছাড় করাতে পারলে ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা লেনদেনের ভারসাম্য ও রিজার্ভে স্বস্তি আসবে।’ চলমান ডলারসংকটের মধ্যে বিদেশি ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে নেওয়া কঠিন শর্তের অনেক ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে। এ কারণে দ্রুত বাড়ছে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ, যা আগামী বছরগুলোয় আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করতে হবে। তা না হলে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাবে। পাইপলাইনে আটকে থাকার এটাও একটা বড় কারণ। পাইপলাইনে জমে থাকা ঋণ দ্রুত ছাড় করতে হলে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে হবে। ধীরগতির প্রকল্প কাজের গতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলে আটকে থাকা বিপুল বিদেশি ঋণের সঠিক ব্যবহার সম্ভব হবে। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।