![মাদকাসক্ত শিশুর সুরক্ষায় পুনর্বাসন জরুরি](uploads/2024/02/16/1708059555.Editorial.gif)
যেসব শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, তাদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। অভিভাবকহীন হওয়ার কারণে তারা আদর-শাসন কোনোটিই পায় না। ফলে তারা হয়ে পড়ছে বিপথগামী। এ ছাড়া বাবা-মায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিশুদের ওপর। তাদের মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এসব শিশু মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত অশিক্ষা ও অর্থনৈতিক দীনতার কারণে নিম্নবিত্ত পরিবারে বিচ্ছেদের ঘটনা বেশি ঘটে। কিন্তু হাল আমলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারেও এ সংকট প্রকট হচ্ছে। মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে শিশুরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পথশিশু ও মধ্যবিত্ত পরিবারেই শুধু নয়, উচ্চবিত্ত অনেক পরিবারের শিশুরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। পরিবারে বাবা-মায়ের মধ্যে কলহ-বিবাদ বাড়লে অথবা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে সন্তানদের বিপথে যাওয়ার ভয় বেশি থাকে। সম্প্রতি ১৪ বছরের এক শিশুর বিষয়ে খবরের কাগজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার মা-বাবা দুজনেই চিকিৎসক। মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে সম্প্রতি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে ইয়াসিন (ছদ্মনাম)। এখন সে বেসরকারি একটি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছে। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোয় ছেলেশিশুদের পাশাপাশি মেয়েশিশুও রয়েছে, যদিও তাদের সংখ্যা কম। তবে বেশির ভাগ মেয়েশিশু শারীরিক নির্যাতনের শিকার। সেটি তারা মেনে নিতে না পারায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) পাঁচটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও চিকিৎসা নিচ্ছে। তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) দেওয়া তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে (২০১৯-২৩) এই নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছে ৭৮১ শিশু। এসব শিশুর ৯৯ শতাংশের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে।
পাঁচটি নিরাময় কেন্দ্রের একাধিক চিকিৎসক জানান, যেসব শিশু এখানে চিকিৎসা নিচ্ছে, তাদের বেশির ভাগ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে। এ বিষয়ে তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) চিফ কনসালট্যান্ট ডা. কাজী লুৎফুল কবির খবরের কাগজকে বলেন, ‘নিরাময় কেন্দ্রে যেসব শিশু চিকিৎসা নেয়, দেখা গেছে তাদের ৯৯ শতাংশের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে।’ সবচেয়ে বেদনার বিষয় হচ্ছে, এসব শিশু (ছেলেশিশু) যখন চিকিৎসা নিয়ে অনেকটাই সুস্থ হয়, তখন তাদের কেউ নিতে চায় না। তাদের ফেরার কোনো ঠিকানা থাকে না। আর মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে এসব শিশু চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে মেয়েশিশুরা বেশির ভাগই নির্যাতনের শিকার হয়। তারা নেশা করার পাশাপাশি ব্লেড দিয়ে তাদের হাত ও শরীর ক্ষতবিক্ষত করে। চিকিৎসা শেষে এক বছর ফলোআপ দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু তাদের দায়িত্ব নেওয়ার তেমন কেউ থাকে না বলে নিরাময় কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আবারও তারা নেশায় জড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ আদমশুমারিতে ভাসমান মানুষের সম্পর্কে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, ‘দেশে ৪ লাখের মতো পথশিশু রয়েছে, যার অর্ধেকই ঢাকায়।’ অন্যদিকে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।
পারিবারিক নির্যাতন, সহিংসতা এবং সামাজিক অনাচার থেকে শিশু সুরক্ষায় সরকারকে কাজ করতে হবে। মাঠপর্যায়ে এসব শিশুর তালিকা তৈরি করতে হবে। পিতৃ-মাতৃহীন শিশুদের অর্থ-সহায়তা, সুশিক্ষা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারলে শিশুরা পারিবারিক আবহে বেড়ে উঠতে পারবে। সমাজসেবা অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারি শিশুনিবাসগুলো এসব শিশুর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠুক, সেটাই সবার প্রত্যাশা।