![স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গলদ দূর করুন](uploads/2024/02/28/1709094992.Editorial.gif)
পত্রিকা খুললেই চোখ আটকে যায় স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের খবরে। চিকিৎসা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হননি এমন কম লোকই আছেন সমাজে। একদিকে অসুস্থ রোগীকে নিয়ে আত্মীয়-পরিজন থাকেন চিন্তিত, অপরদিকে কিছু হাসপাতালের সেবাদানকারীর দুর্ব্যবহার রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনদের মন বিষিয়ে তোলে। এমনই হাজারও অভিযোগ এখন হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে। কয়েক দিন আগে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু। ভুলভাল চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে সমালোচনার ঝড় বইছে। ওষুধের যে ফর্দ তা নিয়ে ফার্মেসি থেকে ফার্মেসি ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হতে হয়। এর ওপর ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি। একসময় বয়স হলে মুরব্বিদের হাতে শোভা পেত পানের বাটা। এখন ওই বয়সী মানুষের হাতে দেখা যায় ওষুধের বাক্স। খাদ্যচক্রেও ঢুকে পড়েছে বিষ। যার প্রভাবে মানুষ দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। জটিল রোগ এখন মানুষের দেহে বাসা বাঁধছে। খবরের কাগজ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ‘নির্দেশনার আড়ালে চাপা পড়ে আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গলদ’!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোনো নির্দেশনা নতুন করে দিলেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না; বরং গলদ দূর করতে হবে। নয়তো এর আড়ালে চাপা পড়ে থাকবে সব অপকর্ম। কেন শর্ত মানা হচ্ছে না কিংবা মানানো যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখে সেই অনুসারে পদক্ষেপ নিতে হবে। যখনই ঘটনা ঘটে তখনই বলা হয়, জনবলসংকটে মনিটরিং করা যায় না। বছরের পর বছর এমনটাই চলছে। জনবল বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না কেন, সেটাও খুঁজে দেখা দরকার।
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১০ দফা নির্দেশনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই নির্দেশনার সবই পুরোনো। অর্থাৎ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নেওয়ার সময়ই এসব শর্ত দেওয়া থাকে। কোন ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানে কী করা যাবে, কী করা যাবে না তা উল্লেখ থাকে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিয়মের তোয়াক্কা না করে শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য যত্রতত্র নামমাত্র হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে প্রতারণা করছে। এখনো ১ হাজার ২০০টির ওপর প্রাইভেট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিবন্ধন নেই। প্রাইভেট চিকিৎসা সেক্টর এখন ‘সোনার ডিম’। যার ফল ভোগ করে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বেসরকারি উদ্যোক্তা চক্র। যদি আইন মেনে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা কার্যকর করা যায়, তবে এই সোনার ডিম ভেঙে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখনই কোনো অঘটন ঘটে, তখনই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে আর সেটি কার্যকর হয় কি না, তা দেখার কেউ নেই।
তথ্য বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনিস্টিক সেন্টার ব্যবস্থাপনা শাখার জনবল মাত্র ২০ জন। যারা সারা দেশের নানা ধরনের সমন্বয়ে কাজ করেন। নতুন নিবন্ধন দেওয়া, নবায়ন করা, যাচাই-বাছাই, পরিদর্শন, তদন্ত সবকিছুই করেন। সেই সঙ্গে ঢাকা মহানগরীর সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাও দেখভাল করার মূল দায়িত্ব তাদের। শুধু ঢাকায়ই বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল আমিন গত কয়েক দিনে দেশে স্বাস্থ্য খাতের অস্থিরতা প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, দেশের প্রাইভেট চিকিৎসাসেবা খাত এখন সরকারি চিকিৎসাসেবা খাতের চেয়ে অনেক বড় ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় সবাই ব্যস্ত সরকারি সেবা খাতে। বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের মনিটরিং করার মতো সামর্থ্য নেই অধিদপ্তরের। সেই সঙ্গে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নানা ধরনের কারণে আইন-বিধি উপযুক্ত মাত্রায় কার্যকর হয় না। ফলে শুধু নির্দেশনা জারি করলেই লাভ হবে না। সরকারের উচিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করা। সে জন্য প্রয়োজন এ খাতে ব্যবস্থাপনাগত সংস্কার। এই অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ যেসব গলদ রয়েছে সবার আগে তা চিহ্নিত করে দূর করতে হবে। আইন, বিধি, নির্দেশনা কার্যকর করার আগে দরকার কাজের স্বচ্ছতা। এটি করতে পারলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও বেশি গতিশীল হবে।