![অগ্নিকাণ্ড নিবারণে সচেতনতা জরুরি](uploads/2024/03/02/1709355123.Editorial.jpg)
দেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এতে ঝরে পড়ছে অসংখ্য প্রাণ। রাজধানী ঢাকা যেন অগ্নিকুণ্ডের ওপর অবস্থান করছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার প্রাণচঞ্চল ও ব্যস্ততম বেইলি রোডের বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে প্রাণ হারান প্রায় ৪৬ জন। রাতেই ঢাকা শহরে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারি ও বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে ঢাকার বাতাস। দেশের মানুষ কি এভাবেই পুড়ে অঙ্গার হবে? এর কি কোনো প্রতিকার নেই?
বেইলি রোডে আগুন লাগার অব্যবহিত পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন খবরের কাগজকে বলেন, অগ্নিদগ্ধ যাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের মধ্যে ৩৩ জন এবং শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ১০ জন মারা গেছেন। গতকাল আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামে বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোডের একটি বহুতল ভবনে।
এর আগে ২০২৩ সালে ভোররাতে আগুনে ভস্মীভূত হয় বঙ্গবাজার মার্কেট। তখনকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছিলেন, আগুনে প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ব্যবসায়িক ক্ষতির অঙ্ক হিসাবের বাইরেই থেকে যায়।
২০২২ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত চার বর্গকিলোমিটার এলাকা। ভয়াবহ ওই আগুন ৮৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এলেও এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ৯ জন সদস্যসহ পুড়ে মারা যান প্রায় অর্ধশত মানুষ। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বনানীতে এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। ওই ঘটনায় ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এসব দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ রকম বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের পেছনে মানুষের অসাবধানতা ও অজ্ঞতাকে দায়ী করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিসকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা ভবনমালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। আবার তারা যেসব ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেন, সেসব ভবনের বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও দেখা যায়নি।
অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার (অব.) আলী আহমেদ খান বলছেন, ‘সরকারিভাবে ফায়ার সার্ভিসকে তেমন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা, জরিমানা করা বা আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। সেই সুযোগটাই অনেকে নিয়ে থাকে।’
প্রত্যেক মানুষকে দেশের অগ্নিকাণ্ড রোধে সচেতন হতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যেকোনো ভবন নিরাপদ করতে ভবন নির্মাণ বিধিমালা বা বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি শিল্প-কারখানায়, সরকারি ও বেসরকারি ভবনে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ও বিধি অনুযায়ী অগ্নি প্রতিরোধব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। অটো ফায়ার অ্যালার্মিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে যেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই সবাই সতর্ক হতে পারে। মূলত যেসব কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে, সেসব কারণ সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে। ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে নির্গমন পথপ্রদর্শক চিহ্ন থাকতে হবে যেন তা অন্ধকারেও দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তাদের জনবল এবং উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ভবনের বাসিন্দাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরি। সরকারকে আধুনিক সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিসকে সুসংগঠিত করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।