![খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করুন](uploads/2024/05/25/Editorial-1716611964.gif)
আমাদের দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রধান কারণটি হলো অপর্যাপ্ত খাদ্য মজুত। এর ফলে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটিয়ে আর্থিক ফায়দা লুটছে ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট। এর প্রভাবে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং দাম বেড়ে যায়। এতে করে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের পুষ্টিসম্মত খাদ্য গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ তো রয়েছেই। দেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধানের ফলন ধারাবাহিকভাবে ভালো হলেও সরকার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যথাক্রমে সরকারের পরিকল্পনার ঘাটতি, অপর্যাপ্ত ধান-চাল সংগ্রহ, সাইলো বা গুদামের সংকট এবং বাজারজাতকরণে ব্যবসায়ী-মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের প্রভাব। এ ছাড়া খরা ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
একটি দেশের সব নাগরিক নিজ নিজ সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণকারী খাদ্য গ্রহণ করতে পারাকে খাদ্যনিরাপত্তা বলা হয়। এ নিরাপত্তা তখনই নিশ্চিত হয় যখন সংশ্লিষ্ট দেশটির জনসংখ্যার চাহিদা অনুপাতে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের মজুত থাকে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য কিনে মজুত করতে হবে। এর বিকল্প নেই।
ধারাবাহিকভাবে লক্ষ্যমাত্রার বেশি ধানের ফলন একটি শক্তি। এ শক্তির যথাযথ ব্যবহার করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। সরকার এবারের বোরো ফসল থেকে কমপক্ষে ২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করলে সারা বছর বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বোরো আবাদের ফলন ২ কোটি ২২ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। যা আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন। ধারাবাহিকভাবে বোরো আবাদের জমির পরিমাণ বছর বছর বাড়ছে। গত অর্থবছরে ৪৮ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে হয় ৫০ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর।
দেশে উৎপাদিত খাদ্যশসের তুলনায় সরকারের সংগ্রহের পরিমাণকে অপর্যাপ্ত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। স্বল্প পরিমাণে খাদ্যশস্য সংগ্রহের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় গুদাম বা সাইলোর অভাব। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক গুদাম অব্যবহৃত বা পরিত্যক্ত করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। তথ্য বলছে, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাওরাঞ্চল, চর ও বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোয় ৪ লাখ পরিবারকে পারিবারিক খাদ্যশস্য মজুতের জন্য ফুড গ্রেডেড প্লাস্টিকের তৈরি পাত্র বিতরণ করা হয়েছে। এটিকে পারিবারিক সাইলো নাম দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে, আপৎকালীন এক মাসের খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে রাখা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির পরিচালক রেজাউল করিম শেখ খবরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি ভেঙে বা বন্যায় ভেসে গেলেও ওই পাত্রটি বা প্লাস্টিকের সাইলোতে সংরক্ষিত খাদ্যশস্যের মান খাবার উপযোগী থাকবে। খাদ্যগুণ নষ্ট হবে না। এটিও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে একধরনের প্রচেষ্টা।
দেশে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য রয়েছে, সে অনুযায়ী সরকারের সংগ্রহের পরিমাণটা খুবই অপর্যাপ্ত। তাই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেচের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভর্তুকি মূল্যে সার বিতরণ এবং কৃষিঋণের সুবিধা বাড়াতে হবে। প্রতিবছর খাদ্যশস্য উৎপাদনে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়াতে হবে। সরকারের মজুতে ঘাটতি দূর হলে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।