![ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন?](uploads/2023/10/24/1698154298.Hamoon-final.jpg)
বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হামুন। মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের এমন ঝড়-বৃষ্টি বা ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ঝড়-বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশ কিছু আমল করতেন এবং বিভিন্ন দোয়া পাঠ করতেন।
আসুন প্রথমে আমরা জেনে নিই এসব প্রাকৃতি দুর্যোগ কেন আসে? ঘূর্ণিঝড়সহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহাতায়ালার পরীক্ষা। আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। মানুষের পাপাচারের কারণেই জলে-স্থলে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ থেকে) ফিরে আসে।’ (সুরা রোম, আয়াত : ৪১)
এবার আমরা জানবো, ঝড়-বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) কী কী আমল করতেন?
এক. দোয়া পড়া : ঝড়-বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বেশ কিছু দোয়া পাঠ করার আমলের বর্ণনা পাওয়া যায়—
ঝড়-তুফানের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) পড়তেন—
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া খাইরা মা ফিহা, ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি। ওয়া আউজু বিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা, ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।’
বাংলা অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এর, এর মধ্যকার এবং এর সঙ্গে আপনার পাঠানো কল্যাণ চাই। আর আমি আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২০৬; মুসলিম, হাদিস : ৮৯৯)
অতি বৃষ্টি থেকে বাঁচতে রাসুলুল্লাহ (সা.) পড়তেন—
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা। আল্লাহুম্মা আলাল-আ-কা-মি ওয়াযযিরা-বি ওয়াবুতূনিল আওদিয়াতি, ওয়ামানা-বিতিশ শাজার।’
বাংলা অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বর্ষণ করুন), আমাদের ওপর নয়। হে আল্লাহ, উঁচু ভূমিতে, পাহাড়ে, উপত্যকার কোলে ও বনাঞ্চলে (বর্ষণ করুন)।’ (বুখারি, হাদিস : ৯৩৩)
বজ্রপাত হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) পড়তেন—
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিআ, আল্লাহুম্মা সাইয়িবান হানিয়া। আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বি-গদাবিকা, ওয়ালা তুহলিকনা বি-আজাবিকা, ওয়া আ-ফিনা কাবলা যা-লিকা।’
বাংলা অর্থ : ‘হে আল্লাহ, উপকারী বৃষ্টি দিন। হে আল্লাহ সহজ বৃষ্টি দিন। আপনি আপনার গজব দিয়ে আমাদের হত্যা করে দেবেন না এবং আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন না। এসবের আগেই আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন।’ (বুখারি, হাদিস : ৭২১)
দুই. তওবা-ইস্তিগফার করা : তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে বিপদাপদ থেকে রক্ষা মেলে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি তাদের মাঝে থাকাবস্থায় কিছুতেই আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না। আর তারা ক্ষমা প্রার্থনা করাবস্থায়ও তাদের শাস্তি দেবেন না।’ (সুরা আনফাল, হাদিস : ৩৩)
তিন. ধৈর্য ধারণ করা : বিপদাপদে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং ধৈর্যধারণ করা মুমিনের গুণ। আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন। তাদের পুরস্কৃত করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)
চার. দান-সদকা করা : দান-সদকা বালা-মুসিবত দূর করে। দানকারীর জন্য বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অতিসত্বর দানের দিকে ধাবিত হও, কেননা বিপদাপদ দানকে অতিক্রম করতে পারে না।’ (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩০৮২)
পাঁচ. নিরাপদ স্থান বা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া : ঝড়-তুফান বা ঘূর্ণিজড়ের সময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থান বা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব? আমার উটনীটি ছেড়ে দিয়ে নাকি বেঁধে রেখে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘প্রথমে তোমার উটনীটি বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৭)
সুতরাং বাংলাদেশের ওপর ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় হামুনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উল্লিখিত আমলগুলো করা উচিত।
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক