![কুকুর পোষা কি জায়েজ?](uploads/2023/11/30/1701317809.36-ok.jpg)
বর্তমানে প্রচুর বিলাসী লোকজন খুব যত্নে কুকুর পালন করে। কুকুরের পেছনে হাজারো টাকা খরচ করে। এদের অনেকে কুকুরপ্রীতি প্রকাশের জন্য শুধু খরচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; মানুষের চেয়েও কুকুরের প্রতি তার ভালোবাসা, স্নেহ বেশি মাত্রায় প্রকাশ করে। কুকুর সম্পর্কে ইসলামের বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। এখানে কয়েকটি নির্দেশনা তুলে ধরা হলো—
বিনা কারণে (শরয়ি অনুমোদিত) প্রয়োজন ছাড়া কুকুর পোষা হারাম। শখ করে ঘরে কুকুর রাখা, মানুষের চেয়ে কুকুরের যত্ন বেশি নেওয়া, কুকুরের সঙ্গে মানবীয় সম্পর্ক স্থাপন করা—এগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে শিকার করা বা গবাদিপশু পাহারা অথবা শস্যখেত পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া কুকুর লালন-পালন করে, প্রতিদিন ওই ব্যক্তির দুই কিরাত পরিমাণ নেকি কমে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৫৭৫)
হাদিসে আছে, এক কিরাত হলো, উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৪৬৫০)
কুকুর পালন নিষিদ্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, প্রায়শই এটি মেহমান দেখলে উৎপাত করে, ভিক্ষুককে ভয় দেখায় এবং পথচারীকে কষ্ট দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন, গত রাতে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম। অতঃপর (আপনার) ঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমার একমাত্র অন্তরায় ছিল দরজায় থাকা কিছু ছবি, ঘরে বিদ্যমান ছবিযুক্ত একটি পর্দা এবং ঘরে অবস্থানরত একটি কুকুর।...আর কুকুরটিকে (ঘর থেকে) বের করে দেওয়ার হুকুম দিন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (আ.)-এর উপদেশ মতো কাজ করলেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪১৫৮)
কুকুর শখ করে ঘরে রাখা নিষেধ। ঘরের মধ্যে কুকুর থাকলে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ঘরে কুকুর আছে, সে ঘরে রহমতের ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৫২৫)
ঘরে কুকুর লালন-পালনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার অর্থ এই নয় যে, কুকুরের প্রতি কঠোর আচরণ করতে হবে বা কুকুরকে সমাজ থেকে বিলুপ্ত করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কুকুরগুলো (আল্লাহর সৃষ্ট) অন্যান্য জাতির মতোই একটি জাতি না হতো, তাহলে আমি এগুলোকে হত্যার নির্দেশ দিতাম।’ (আবুদ দাউদ, হাদিস: ৪১৫৮)
প্রয়োজনের খাতিরে কুকুর পোষা বৈধ। শিকারের উদ্দেশ্যে, ফসল হেফাজতের উদ্দেশ্যে, পাহারার জন্য, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির হেফাজতের লক্ষ্যে, ঘরবাড়ি, দোকান ও অফিস পাহারার জন্য, অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালনে কোনো সমস্যা নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে (গৃহপালিত) জীবজন্তুর পাহারা অথবা শিকার করা অথবা খেত পাহারার জন্য নিয়োজিত কুকুর ছাড়া অন্য কুকুর রাখবে, তার সওয়াব থেকে প্রতিদিন এক কিরাত (অর্থাৎ বিশাল অংশ) পরিমাণ কমতে থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৫৭৫)
এই হাদিসের ওপর ভিত্তি করে মালিকি মাজহাবের অনুসারীরা বলেছেন, কুকুর পালনের নিষেধাজ্ঞাটি মূলত মাকরুহ পর্যায়ের, হারাম পর্যায়ের নয়। যদি এটি হারাম পর্যায়ের হতো, তাহলে কুকুর পালন সর্বাবস্থায়ই নিষিদ্ধ হতো, এর দ্বারা সওয়াব নষ্ট হোক বা না হোক। (হালাল-হারামের বিধান, ড. ইউসুফ আল-কারজাভি, অনুবাদ: আসাদুল্লাহ ফুয়াদ, পৃষ্ঠা: ২২৪)
ইমাম ইবনুল হুমাম হানাফি (রহ.) বলেন, ‘পশুপালের পাহারা কিংবা শিকার করা অথবা খেত পাহারার জন্য কুকুর পালন করা সর্বসম্মতিক্রমে জায়েজ। তবে চোর-ডাকাতের ভয় না থাকলে (অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায়) তা ঘরে রাখা উচিত নয়।’ আল্লামা তাহতাবি হানাফি (রহ.) স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘কুকুর পালন করা হারাম। তবে পশুপালের পাহারা অথবা শিকার করা অথবা খেত পাহারার জন্য জায়েজ।’ (ফাতহুল কাদির, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ১১৮-১১৯; রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ২২৭)
হানাফি মতাদর্শের অনুসারীদের মতে, কুকুরের শরীর নাপাক নয়। তাই কুকুর কারও শরীর বা কাপড় স্পর্শ করলে তা নাপাক হবে না। তবে কুকুরের লালা নাপাক। কুকুর মুখ দিয়ে কারও জামা টেনে ধরলে যদি কাপড়ে লালা লেগে যায়, তবে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে; অন্যথায় নাপাক হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারও পাত্রে কুকুর মুখ দেবে, সে যেন পাত্রটি সাতবার পানি দিয়ে এবং একবার মাটি দিয়ে ধুয়ে ফেল।’ (বুখারি, হাদিস: ১৭২; আল-বাহরুর রায়েক, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১০১; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৮)
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক