![বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন যারা](uploads/2023/12/02/1701511565.38-ok.jpg)
যেসব মুসলিম আল্লাহর প্রতি অটুট বিশ্বাস রাখে, তাকওয়া অবলম্বন করে (সর্বোচ্চ মাত্রায় তাঁকে ভয় করে), যথাসাধ্য সৎকর্ম করে এবং সত্য ধমের্র ওপর অবিচল থাকে, তারা সবাই বিনা হিসাবে একসঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের প্রথম ও শেষ ব্যক্তির মধ্যে সময়ের কোনো ব্যবধান থাকবে না। সবার চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝলমল করতে থাকবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রথম যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মতো আলোকোজ্জ্বল। সেখানে তাদের থুতু ফেলার প্রয়োজন হবে না; এমনকি প্রস্রাব-পায়খানারও উদ্রেক হবে না। সেখানে তাদের পানাহারের পাত্রগুলো হবে স্বণের্র তৈরি। তাদের চিরুনি হবে সোনা ও রুপার। তাদের ধূপদানি হবে ঘৃতকুমারীর। ঘাম হবে মেশকের। প্রত্যেকের দুজন স্ত্রী থাকবে। অত্যধিক সৌন্দযের্র কারণে তাদের গোশত ভেদ করে হাড় ও মজ্জা পর্যন্ত দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কখনো বিরোধ-বিসংবাদ দেখা দেবে না। তারা হবে দুই দেহ; একপ্রাণ। তারা সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৩২৪৫)
সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্য থেকে ৭০ হাজার কিংবা ৭ লাখ অনুসারী একসঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের মধ্যে সময়ের কোনো ব্যবধান থাকবে না। তাদের চেহারা হবে চাঁদনি রাতের চাঁদের মতো আলো ঝলমল।’ (বুখারি, হাদিস: ৩২৪৭)
বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে উপরিউক্ত ৭০ হাজারের প্রত্যেককে অতিরিক্ত আরও ৭০ হাজার জনকে সঙ্গে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, আমার উম্মতের ৭০ হাজার সদস্য বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের চেহারা হবে চাঁদনি রাতের চাঁদের মতো। সকলের হৃদয় হবে এক ব্যক্তির হৃদয়ের মতো। আমি আমার রবের কাছে এই সংখ্যা বৃদ্ধি করার অনুরোধ করলে তিনি প্রত্যেকের সঙ্গে ৭০ হাজার করে বৃদ্ধি করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২)
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার রব আমাকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমার উম্মতের ৭০ হাজার সদস্য কোনো প্রকার হিসাব ও শাস্তি ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রতি এক হাজারের সঙ্গে থাকবে অতিরিক্ত ৭০ হাজার এবং আমার রবের তিন মুঠো পরিমাণ।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৩৭)
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই অগ্রগামী ৭০ হাজারের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমার সামনে সকল উম্মতকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তখন দেখেছি, কোনো নবির সঙ্গে বিশাল একটি উম্মত যাত্রা করছে। কোনো নবির সঙ্গে ক্ষুদ্র একটি গোত্র। কোনো নবির সঙ্গে দশজনের ছোট একটি দল। কোনো নবির সঙ্গে মাত্র পাঁচজন। আবার কোনো কোনো নবির দলে একজন উম্মতও নেই। এরই মধ্যে হঠাৎ আমি বিশাল একটি সমাবেশ দেখতে পাই। জিবরাইলকে জিজ্ঞেস করি, এরা কি আমার উম্মত? তিনি বলেন, না; আপনি বরং উন্মুক্ত প্রান্তরের দিকে তাকান। আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখি, আরও বড় একটি জমায়েত। তিনি বলেন, এরা আপনার উম্মত। এদের অগ্রভাগে ৭০ হাজার সদস্য থাকবে, যাদের হিসাব গ্রহণ করা হবে না এবং কোনো প্রকার শাস্তি দেওয়া হবে না। আমি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তারা সেঁক নেয় না, ঝাড়ফুঁক করে না, কুলক্ষণ গ্রহণ করে না; বরং তাদের রবের ওপর ভরসা করে।
এই সময় উক্কাশা ইবনে মিহসান দাঁড়িয়ে বলেন, আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রাসুল বলেন, হে আল্লাহ, একে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন। এরপর আরেকজন দাঁড়িয়ে বলেন, আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেন আমাকেও তিনি তাদের মধ্যে গণ্য করেন। আল্লাহর রাসুল বলেন, তোমার আগেই উক্কাশা এই সুযোগটি নিয়ে ফেলেছে!’ (বুখারি, হাদিস: ৬৫৪১)
সম্ভবত এদেরকেই মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে ‘মুকাররাব’ বা নৈকট্যপ্রাপ্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘(ঈমানের কাফেলায়) অগ্রগামীরা (জান্নাতেও) অগ্রগামীই থাকবে। অধিকন্তু এরাই হবে (আল্লাহর) বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত। থাকবে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে।’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত: ১০-১২)
লেখক: আলেম ও গবেষক