![খাবারের দোষ ধরা যাবে কি?](uploads/2024/04/15/1713159856.eat.jpg)
আল্লাহতায়ালা নানা স্বভাব ও বিচিত্র রুচি দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। ফলে একজনের পছন্দ বা রুচি অন্যজনের সঙ্গে তেমন মেলে না। একজনের যেটা পছন্দ, সেটা অন্য কারও অপছন্দও হতে পারে। ব্যাপারটি দোষের কিছু নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ হলো, খাবার যদি হালাল হয়, তা হলে তাতে কোনোরকম ত্রুটি না ধরা। ভালো লাগলে খাওয়া, না লাগলে আদবের সঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরেননি। ইচ্ছা হলে তিনি খেতেন, না হলে রেখে দিতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৩৭০)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে অপর বর্ণনায় আছে, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে কখনো খাবারে দোষ ধরতে দেখিনি, ভালো লাগলে খেতেন। ভালো না লাগলে চুপ থাকতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০৬৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনীতে এর প্রায়োগিক উদাহরণ অনেক রয়েছে। যেমন খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ভুনা দব (সরীসৃপজাতীয় বুকে ভর দিয়ে চলা একটি প্রাণী। এর শরীরের চামড়া পুরু ও মসৃণ। লেজ চওড়া, রুক্ষ, খসখসে ও অতি গিঁটবিশিষ্ট) আনা হলে তিনি তা খাওয়ার উদ্দেশ্যে হাত বাড়ালেন। তখন তাকে বলা হলো, ‘এটা দব। তা শুনে তিনি হাত গুটিয়ে নিলেন।’ খালিদ (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটা কি হারাম?’ তিনি বললেন, ‘না। যেহেতু এটা আমাদের এলাকায় নেই, তাই আমি এটা খাওয়া পছন্দ করি না।’ তারপর খালিদ (রা.) তা খেতে থাকেন, আর রাসুল (সা.) তা দেখছিলেন।” (বুখারি, হাদিস: ৫০৮৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) কেন খাচ্ছেন না; তার একটি কারণ তুলে ধরেছেন, কিন্তু ওই অদ্ভুত খাদ্যের কোনো ত্রুটি বা দবের আকৃতি নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করেননি তিনি। যাতে করে যারা এটা খেতে চায়, তাদের মধ্যে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি না হয়। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে রসুন অথবা পেঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে অথবা বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে আর নিজ ঘরে বসে থাকে।’ (উক্ত সনদে আরও বর্ণিত আছে যে,) ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে একটি পাত্র আনা হলো, যার মধ্যে শাকসবজি ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর গন্ধ পেলেন এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তাঁকে সে পাত্রে রাখা শাকসবজি সম্পর্কে অবহিত করা হলো, তখন একজন সাহাবি আবু আইয়ুব (রা.)-কে উদ্দেশ করে বললেন, ‘তাঁর কাছে এগুলো পৌঁছে দাও। কিন্তু তিনি তা খেতে অনীহা প্রকাশ করলেন।’ তা দেখে রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি খাও। আমি যার সঙ্গে গোপন আলাপ করি তার সঙ্গে তুমি আলাপ করো না (ফেরেশতাদের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। আর তারা দুর্গন্ধ অপছন্দ করেন)।” (বুখারি, হাদিস : ৮১৭)
এই সুন্নাহটি পালন করলে আমাদের ঘর ও পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হবে। স্বামী যদি স্ত্রীর সঙ্গে, সন্তান যদি মায়ের সঙ্গে, বন্ধু যদি অপর বন্ধুর সঙ্গে আচরণের এই নিয়ম অনুসরণ করে, তা হলে সমাজের পরিবেশ আরও সুখের ও মধুর হয়ে উঠবে। মানুষের পারস্পরিক বন্ধন আরও সুখকর হবে।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক