![ইবলিস জিন না ফেরেশতা?](uploads/2024/04/18/1713416355.iblisss.jpg)
মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহর সৃষ্টিতে ছিল ফেরেশতা ও জিন। ইবলিস আগুনের তৈরি। থাকত ফেরেশতাদের সঙ্গে। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করত। এই ইবলিস জিন নাকি ফেরেশতা—এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান। তাদের জন্য এ লেখা কাজে দেবে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, “আর যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, ‘আদমকে সেজদা করো’; তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করল। সে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩৪)
কোরআনের এই বর্ণনা থেকে কারও কারও মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, ইবলিসকে কেন ফেরেশতাদের সঙ্গে সেজদা করতে আদেশ করা হলো? ইবলিস কি তাহলে ফেরেশতাদের দলভুক্ত?
ইবলিস জিনদের একজন, তার মৌলিক উপাদান আগুন। ইমাম রাজি (রহ.) তিনটি দলিল উপস্থাপন করে বলেছেন, ‘ইবলিসের জিন প্রমাণিত হওয়ার জন্য এই দলিলগুলো যথেষ্ট।’ (আত-তাফসিরুল কাবির, ফখরুদ্দিন রাজি, খণ্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৪২৯-৩০)
এক. ইবলিসকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে। কোরআনে এসেছে, ইবলিস বলেছে, ‘আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে আর তাকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১২)
কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহতায়ালা) জিনজাতিকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াহীন আগুন থেকে।’ (সুরা রহমান, আয়াত: ১৫)
আল্লাহ আগুন থেকে জিনদের সৃষ্টি করেছেন। ফেরেশতাদের সৃষ্টির মৌলিক উপাদান আলো, তাই ইবলিস ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে নুর বা আলো থেকে। জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়াহীন আগুন থেকে। আর আদম-সৃষ্টির বিবরণ তোমাদের কাছে বলা হয়েছে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৯৯৬)
দুই. ইবলিসের ছেলেমেয়ে আছে, সে বংশবিস্তার করে। ফেরেশতারা এসব বিষয় থেকে মুক্ত। তাদের স্ত্রী-সন্তান নেই। তাদের মধ্যে নেই নারী-পুরুষের বিভাজনও। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি তাকে (ইবলিসকে) এবং তার বংশধরকে আমার পরিবর্তে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করছ?’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৫০)
তিন. ফেরেশতারা আল্লাহর সব আদেশ মেনে চলে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তারা (ফেরেশতারা) কখনোই আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না; বরং যেই কাজে তাদের নিয়োজিত করা হয়েছে, সর্বদা সেই কাজই করে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬)
মানব সৃষ্টির আগে ফেরেশতারাই ছিল সৃষ্টির সেরা। আল্লাহতায়ালা সেই ফেরেশতাদের যখন আদেশ করলেন আদমকে সেজদা করতে, তখন তাদের থেকে নিম্নস্তরের জিনও সেই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহতায়ালা আদমকে সৃষ্টির আগেই ফেরেশতাদের আদেশ দিয়ে রেখেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং আমি যখন আদমের সৃষ্টি সম্পন্ন করব এবং তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেও।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ৭২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা জান্নাতে আদমের প্রতিকৃতি তৈরি করার পর নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত রেখে দেন। তখন ইবলিস আদমের মাটির প্রতিকৃতির চারপাশ ঘুরে ঘুরে যখন দেখল এর মধ্যে ফাঁকা আছে। সে বুঝতে পেরেছিল এটা এমন এক সৃষ্টি, যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৬১১)
বোঝা গেল সকল ঘটনা ঘটছিল ইবলিসের উপস্থিতিতেই। তাছাড়া যখন আদমের রুহ ফুৎকার দেওয়ার পর সৃষ্টিজগতের সব জ্ঞান দিয়ে সব সৃষ্টিকুলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করলেন এবং ফেরেশতাদের সেজদার আদেশ দিলেন, তখন ইবলিস সেই মজলিসেই উপস্থিত ছিল। তাই ইবলিস ফেরেশতা না হলেও সে ওই আদেশের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আবার আল্লাহ যখন ইবলিসকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘(হে ইবলিস) আমি আদেশ করার পরও কীসে তোমাকে সেজদা থেকে বিরত রাখল।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১২)
উত্তরে সে এটা বলেনি যে, হে আল্লাহ আপনি তো আমাকে আদেশ করেননি, বরং ইবলিস বলেছিল, ‘আমি তার (আদমের) চেয়ে উত্তম; আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে আর তাকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১২)
এই কথা থেকেও প্রমাণ হয় স্বয়ং ইবলিসও বুঝেছিল আদমকে সেজদার আদেশে সেও অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ কোরআনে অধিকাংশ স্থানে ইবলিসকে ‘শয়তান’ বলে সম্বোধন করেছেন। শয়তান শব্দটি দিয়ে কট্টরভাবে অবাধ্য হওয়াকে বোঝায়।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক