ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব খাবার খেতেন

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ০৮:৪০ এএম
আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ০১:১৩ পিএম
রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব খাবার খেতেন
রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব খাবার খেতেন, তার ছবি।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষ ছিলেন। রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। আর মানুষ হিসেবে জীবনমুখী বিভিন্ন প্রয়োজন থাকাটা স্বাভাবিক। পার্থিব জীবনের অন্যতম একটি প্রয়োজন ক্ষুধা নিবারণ। সুস্থ-সবলভাবে দুনিয়ায় থাকতে হলে খেতে হয়। খাওয়ার বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) সুস্থভাবে জীবনধারণের জন্য খেতেন। তবে খাওয়ার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল না। জীবনধারণের জন্য তিনি খেতেন। খাওয়ার জন্য জীবনধারণ করতেন না। কিছু কিছু খাবার ছিল তাঁর প্রিয়। আর কিছু খাবার খেতেন সাধারণ জীবনযাত্রার নিয়ম মেনে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কী খেতেন, কী খেতে পছন্দ করতেন—এমন সব খাবারের নাম ও পরিচয় তুলে ধরা হলো।

গোশত
রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ‘জাফাফ’ ছাড়া তৃপ্তিসহকারে রুটি ও গোশত খাননি। মালিক ইবনে দিনার (রা.) বলেন, আমি জানতে চাইলাম, জাফাফ কি? তিনি বললেন, মানুষের সঙ্গে একত্রে পানাহার করা। (শামায়েলে তিরমিজি, ৫৭) রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর বাড়িতে গেলে তিনি বকরি জবাই করলেন। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘মনে হচ্ছে তারা জানে, আমি গোশত পছন্দ করি।’ (শামায়েলে তিরমিজি, ১৩২) রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন ধরনের গোশত খেতেন এবং খেতে পছন্দ করতেন, হাদিসের আলোকে সেসব গোশতের পরিচয় তুলে ধরা হলো—

    • গরুর গোশত: বেশ কিছু হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সময়ে গরু কোরবানি দিয়েছেন এবং গরুর গোশত খেয়েছেন। (মুসলিম, ১৩১৯)
      একবার হজের সফরে মিনায় অবস্থানকালে আয়েশা (রা.)-এর কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো এবং তিনি জানতে চাইলেন, এটা কী? বলা হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন। (বুখারি, ৫১৫০)
    • বকরির গোশত: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে বকরির সামনের রানের গোশত পরিবেশন করা হলো। তিনি তা খুবই পছন্দ করতেন। অতঃপর তিনি তা থেকে দাঁত দিয়ে কেটে কেটে খেলেন।’ (বুখারি, ৪৭১২)
      আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমরা ছোট বকরির পায়া রান্না করতাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির পনেরো দিন পরও তা খেয়েছেন।’ (বুখারি, ৫১২২)
    • ভেড়ার গোশত: রাসুলুল্লাহ (সা.) ভেড়ার গোশতও খেতেন এবং ভেড়ার সামনের মাথার কাছের অংশ খেতে পছন্দ করতেন। (বুখারি, ৫৪৬২)
    • উটের গোশত: রাসুলুল্লাহ (সা.) উটকে শুধু বাহন হিসেবে ব্যবহার করেননি। উট কোরবানি করেছেন এবং এর গোশত খেয়েছেন। (মুসলিম, ৩০৫৪)
      জাবের বিন সামুরা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে উটের গোশত খেয়ে অজু করার এবং ছাগলের গোশত খেয়ে অজু না করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (মুসলিম, ৩৬০)
    • খরগোশের গোশত: রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে খরগোশের গোশত খেয়েছেন এবং সাহাবিদেরও খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। (তিরমিজি, ১৪৭২)
      মক্কার অদূরে মাররাজ-জাহরান নামক স্থানে সাহাবিরা একটি খরগোশ ধরতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। অবশেষে আনাস (রা.) সেটিকে ধরলেন এবং আবু তালহা (রা.) খরগোশটিকে জবাই করে তার দুই ঊরু বা রান রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে পাঠালেন এবং তিনি তা গ্রহণ করলেন। (বুখারি, ২৫৭২)
    • মোরগ বা মুরগির গোশত: আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মোরগের গোশত খেতে দেখেছি।’ (তিরমিজি, ১৮২৭) অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন, ‘মুরগির গোশত খেতে দেখেছি।’ (মুসলিম, ৪৩৫৪)
    • হরিণের গোশত: সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া (রা.) কিছু দুধ, হরিণের গোশত ও শসা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে সালাম না দিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং বলো আসসালামু আলাইকুম। (আবু দাউদ, ৫১৭৬)
    • এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার ওমরার সফরে সাহাবিদের জেব্রা শিকার করে খাওয়ার (তিব্বে নববি, ৭৫) এবং খায়বারের যুদ্ধের সময় গৃহপালিত গাধার গোশত না খেয়ে ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারি, ৪২১৯) আর দবের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দব আমি খাই না আর হারামও বলি না।’ (বুখারি, ৫৫৩৬)

খেজুর
খেজুর ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় খাবার। এটি ছিল আরবের সবচেয়ে সহজলভ্য ও প্রধানতম ফল বা খাবার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ঘরে খেজুর নেই, সে ঘরের বাসিন্দা অভুক্ত।’ (আবু দাউদ, ৩৭৫৪) তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে খেজুর খেতেন এবং খাওয়ার কথা বলেছেন। যেমন—

    • সাধারণ খাবার: আয়েশা (রা.) বলেন, ‘উপোস থেকে আমাদের মাস অতিবাহিত হতো। আমরা ঘরে রান্নার আগুন জ্বালাতাম না। আমরা শুধু খুরমা খেজুর ও পানি খেতাম। তবে যৎসামান্য গোশত এসে যেত।’ (বুখারি, ৬৪৫৮)
    • আরোগ্যের খাবার: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মদিনার আলিয়া (উঁচু ভূমির) অঞ্চলের আজওয়া খেজুরে শেফা (আরোগ্য) রয়েছে।’ (মুসলিম, ৫১৬৮)
    • ইফতারে: আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তা হলে শুকনো খেজুর দিয়ে আর শুকনো খেজুরও না থাকলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন।’ (তিরমিজি, ৬৩২)
    • সাহরিতে: আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহরির সময় আমাকে বললেন, ‘আমি রোজা রাখতে চাই, আমাকে কিছু আহার করাও। এরপর আমি খেজুর এবং পানি পরিবেশন করলাম।’ এ ছাড়া ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য সাহরির উত্তম খাবার হলো খেজুর।’ (আবু দাউদ, ২৩৪৩)
    • ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে: আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন খেজুর না খেয়ে (নামাজের জন্য) বের হতেন না।’ (বুখারি, ৯৫৩)
    • সদকাতুল ফিতর: আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে আমরা এক সা (তিন কেজি ৩০০ গ্রাম) খাদ্যবস্তু দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। তখন আমাদের খাবার ছিল—জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (বুখারি, ১৫০৩)
    • তাহনিক: আবু মুসা (রা.) বলেন, ‘আমার একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করলে আমি তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি সন্তানের নাম রাখলেন ইবরাহিম। এরপর তিনি তাহনিক করালেন মানে খেজুর চিবিয়ে সন্তানের মুখে দিলেন।’ (বুখারি, ৫০৭১)
    • পুষ্টিতে: আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার মা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সংসারে পাঠাতে চাইতেন বলে আমার দৈহিক পরিপুষ্টির জন্য চিকিৎসা করালেন, কিন্তু কোনো উপকার হলো না। অবশেষে আমি তাজা খেজুরের সঙ্গে শসা মিশিয়ে খেলাম এবং উত্তমভাবে দৈহিক পরিপুষ্টি লাভ করলাম।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৩২৪)
    • অলিমায়: খায়বার থেকে ফিরে আসার সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) মধ্যবর্তী এক স্থানে তিনদিন অবস্থান করলেন। সেখানে সাফিয়া (রা.)-কে নিয়ে যাওয়া হলো। তাকে মুক্ত করে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বিবাহ করলেন। মোহর নির্ধারণ করা হলো তার মুক্তিপণ। আনাস (রা.) সবাইকে অলিমার দাওয়াত দিলেন। অলিমাতে রুটি বা গোশত কিছুই পরিবেশন করা হলো না। রাসুলুল্লাহ (সা.) চামড়ার দস্তরখান বিছানোর আদেশ দিলেন এবং তাতে খেজুর, পনির ও ঘি পরিবেশন করা হলো।’ (বুখারি, ৫১৬৯)

পনির
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘তাবুকের যুদ্ধকালে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কিছু পনির নিয়ে আসা হলো। তিনি বিসমিল্লাহ বলে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কেটে তা থেকে খেলেন।’ (আবু দাউদ, ৩৮১৯)

মাখন
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার ইবনাই বিস আল মুসলিমাইন নামক দুইজন সাহাবির ঘরে গেলেন। তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আপ্যায়নে মাখন ও খেজুর পরিবেশন করলেন। কারণ তারা জানত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মাখন ও খেজুর পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, ৫১১৫)

মধু ও মিষ্টি
রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টিজাতীয় খাবার পছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু খেতে পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, ৫১১৫)

ঘিয়ে ভাজা বা মাখা রুটি
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘উম্মে সুলাইম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য ঘি দিয়ে রুটি তৈরি করলেন। এরপর তাঁকে দাওয়াত দিলেন এবং তিনি এসে বললেন, তুমি যা তৈরি করেছ, তা নিয়ে এসো। ঘি দিয়ে তৈরি করা রুটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে দেওয়া হলে তিনিসহ সবাই তা খেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৩৪২)

দুধ
মিরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে জিবরাইল (রা.) তাঁর সামনে আলাদা দুটি পাত্রে শরাব ও দুধ পেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) দুধের পাত্রটি বেছে নিলেন। এটা দেখে জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস বেছে নিয়েছেন।’ (বুখারি, ৩১৬৪)

নাবিজ
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য মশকে কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো। (কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে রেখে যে পানীয় তৈরি করা হয়, তাকে নাবিজ বলা হয়)। তিনি সেই নাবিজ সেদিন, পরের দিন এবং তার পরের দিন মানে তৃতীয় দিন সন্ধ্যা বেলায়ও পান করতেন। এর পরও কিছু থেকে গেলে তা ঢেলে ফেলে দিতেন।’ (মুসলিম, ২০০৪) ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) লাউ বা মিষ্টি কুমড়ার খোসায় এবং আলকাতরা মাখানো পাত্রে নাবিজ তৈরি করতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি, ৫৫৮৭)

কালোজিরা
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করো বা খাও। কারণ এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক রয়েছে।’ (তিরমিজি, ২০৪৮)

সারিদ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষের মধ্যে অনেকেই কামালিয়াত অর্জন করেছে। কিন্তু নারীদের মধ্যে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া, ইমরানের কন্যার মরিয়ম ছাড়া কেউ কামালিয়াত অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তবে আয়েশার মর্যাদা রমণীদের মধ্যে তেমন, সব ধরনের খাদ্যের মধ্যে সারিদের (গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরো টুকরো রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্যকে সারিদ বলা হয়) মর্যাদা যেমন।’ (বুখারি, ৩১৭২)

তালবিনা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তালবিনা (জব পিষে বা গুঁড়া করে দুধ দিয়ে জ্বাল দিয়ে বা পাকিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে তৈরিকৃত এক প্রকার খাবারকে তালবিনা বলা হয়) শোকাতুর হৃদয়কে শান্ত করে এবং অসুস্থ হৃদয়কে সেভাবে পরিষ্কার করে, তোমরা মুখ থেকে নোংরা ধুয়ে ফেলো যেভাবে।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৪৪৫) এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তালবিনা রোগীর কলিজা মজবুত করে এবং নানাবিধ দুশ্চিন্তা দূর করে।’ (বুখারি, ৫৬৮৯)

সিরকা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিরকা (সিরকার ইংরেজি হলো ভিনেগার। আরবি শব্দ খললুন)। এটি একটি সুন্নতি খাবার। ভালো তরকারি। চমৎকার তরকারি সিরকা।’ (মুসলিম, ৫১৮০) তিনি আরও বলেছেন, ‘সিরকা খুব মজাদার সালুন বা তরকারি।’ (মুসলিম, ৫১৮২) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ঘরে সিরকা আছে, সে ঘর তরকারিশূন্য নয়।’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ, ২২২০)

লাউ বা মিষ্টি কুমড়া
একবার এক দর্জি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দাওয়াত করলেন। আনাস (রা.) সে দাওয়াতে অংশগ্রহণ করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে বার্লির রুটি, গোশতের টুকরা ও লাউ বা মিষ্টি কুমড়া মেশানো ঝোল পরিবেশন করা হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) পাত্র থেকে খুঁজে খুঁজে লাউ বা মিষ্টি কুমড়া খেলেন। এটা দেখে আনাস (রা.) লাউ বা মিষ্টি কুমড়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন।’ (বুখারি, ২০৯২)

জয়তুন
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জয়তুনের তেল দিয়ে রুটি খাও এবং তা দেহে মাখো। কারণ, তা বরকতপূর্ণ গাছ থেকে নির্গত হয়।’ (তিরমিজি, ১৮৫১) অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা জয়তুন খাও এবং এর তেল শরীরে মাখো।’ (ইবনে মাজাহ, ১০০৩)

মাশরুম
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাশরুম জান্নাতি এক প্রকার খাবার। এর রস চোখের জন্য নিরাময়।’ (বুখারি, ২২৯০)

টিড্ডি বা পঙ্গপাল
আবদুল্লাহ ইবনে আবু আউফা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে গিয়েছি এবং তাতে পঙ্গপাল খেয়েছি।’ (বুখারি, ৫৪৯৫) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের জন্য দুই প্রকার মৃত প্রাণীর গোশত এবং রক্ত খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রাণী দুটি হলো—মাছ ও পঙ্গপাল। রক্ত দুটি হলো—কলিজা ও হৃৎপিণ্ড।

সামুদ্রিক মাছ
আবু উবায়দা ইবনুল জাররা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সামুদ্রিক মাছ পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, ৪৩৬১) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়লা আদম সন্তানের জন্য সমুদ্রের সকল মাছ জবাই করে খাওয়াকে হালাল করে দিয়েছেন।’ (দারা কুতনি, ৪৭১০)

শসা
আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি তাজা খেজুরের সঙ্গে শসা খেতে দেখেছি।’ (মুসলিম, ৫১৫৭)

তরমুজ
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তরমুজের সঙ্গে রাতাব খেজুর খেতেন। তিনি বলতেন, এটার (তরমুজ) ঠান্ডা ওটার (খেজুর) গরম কমাবে এবং এটার (খেজুর) গরম ওটার (তরমুজ) ঠান্ডা কমিয়ে দেবে।’ (বুখারি, ৫১৩৪)

আঙুর
ফায়রুজ দায়লামি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কাছে অনেক আঙুর আছে। আমরা এগুলো কি করব? তিনি বললেন, তোমরা সেগুলোকে কিশমিশ বানাও। আমরা আবার জিজ্ঞাসা করলাম, কিশমিশ দিয়ে কি করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কিশমিশ দিয়ে নাবিজ তৈরি করবে। ভিজিয়ে রেখে বিকেলের আহারে পান করবে অথবা সন্ধ্যায় ভিজিয়ে রেখে সকালের খাবারের পর পান করবে। মাটির পাত্রে না রেখে মশকে রাখবে এবং বেশি দেরি হলে তা সিরকা হয়ে যাবে।’ (নাসায়ি, ৫৭৩৬)

 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

 

অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো কবিরা গুনাহ

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৯ এএম
অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো কবিরা গুনাহ
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত সবজি বিক্রেতার ছবি

প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে চাপে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। বাড়তি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। চাহিদার তালিকা বহু কাটাছেঁড়ার পরও স্বস্তি মিলছে না। জীবন যেন আর চলছেই না।

 
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির নানা কারণের সঙ্গে মজুতদারি, সিন্ডিকেট এবং অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো উল্লেখযোগ্য। একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী কালোবাজারি, মজুতদার ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ী পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। পণ্য মজুত রেখে তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ইসলামে মজুতদারি, মুনাফাখোরি ও অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো নিষিদ্ধ। হানাফি মাজহাব মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত করা মাকরুহ তাহরিমি (হারাম সমতুল্য)। 


একশ্রেণির ব্যবসায়ী খাদ্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। বাজারে ওই খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। মানুষের তখন ওই খাদ্যের প্রতি চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে খাদ্যের দাম বাড়ে। গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা, অবৈধভাবে পণ্যের মূল্য বাড়ানো পাপ। আল্লাহ এদের শাস্তি দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৩৮) আরেকটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি (সংকট তৈরি করে) খাদ্যশস্য গুদামজাত করে, সে অপরাধী।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬০৫)


আল্লামা ইবনে হাজর হাইতামি (রহ.) গুদামজাত করে মূল্যবৃদ্ধি করাকে কবিরা গুনাহ বলে উল্লেখ করেছেন। (নিহায়াতুল মুহতাজ, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা ৪৫৬)।  দুনিয়ার সব কিছু আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত নিরাপত্তার ভেতরে আছে। তাঁর অনুগ্রহে বেঁচে আছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠের সব কিছু তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তোমাদের জন্য তাঁর অনুগ্রহগুলো পরিপূর্ণ করেছেন?’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ২০)  
তবে মজুতদার আল্লাহর নিরাপত্তার বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুত রাখে, সে আল্লাহ প্রদত্ত নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে যায়।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ২০৩৯৬)


আল্লাহতায়ালা মানুষের রিজিকের ফায়সালা করেন। বান্দাদের পরীক্ষার জন্য রিজিক বৃদ্ধি বা হ্রাস করেন তিনি। রিজিক বৃদ্ধি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়; কিংবা রিজিকের সংকীর্ণতাও তার অসন্তুষ্টির কারণ নয়। রিজিকের এই হ্রাস-বৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ। তবে সৎ ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয়। আর পণ্য মজুতদার অভিশপ্ত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘খাঁটি ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর পণ্য মজুতকারী অভিশপ্ত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৭২৮)

ইসলামে ব্যবসা মহৎ পেশা। কোনোভাবেই ব্যবসাকে কলুষিত করা যাবে না; নির্ভেজাল ও ক্রটিমুক্ত রাখতে হবে। যারা সত্য ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান। মানুষও তাদের পছন্দ করেন। হাশরের ময়দানেও এমন ব্যবসায়ীকে পুরস্কৃত করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের হাশর হবে নবিগণ, সিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সঙ্গে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৫১৫)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

হাদিস গ্রহণে সতর্কতা ও যাচাই-বাছাই জরুরি

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৬ এএম
হাদিস গ্রহণে সতর্কতা ও যাচাই-বাছাই জরুরি
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত গবেষণারত গবেষকের ছবি

যুগে যুগে হাদিসের মুহাদ্দিস ও ইমামরা হাদিস গ্রহণের কিছু নীতিমালা তৈরি করেছেন। রচনা করেছেন রাবি তথা হাদিস বর্ণনাকারীদের জীবনীগ্রন্থ। যাতে আলোচিত হয়েছে বর্ণনাকারীর জীবনের নানা দিক। এর মধ্যে রয়েছে রাবিদের আমল-আখলাক, আকিদা ও আদর্শের বিবরণ। শিক্ষা–দীক্ষা, দুনিয়া ত্যাগ ও আল্লাহভীতির বর্ণনা। এমনকি তাদের মেধা ও স্মরণশক্তির ভিত্তি এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের সম্ভার। এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি বিবেচনা করেই হাদিসের ইমামরা হাদিস সংকলন ও সংরক্ষণে মনোনিবেশ করেছেন। লিখেছেন শত হাদিসগ্রন্থ। যেগুলোর মধ্যে আমাদের কাছে বেশি প্রসিদ্ধ হচ্ছে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম। এ ছাড়া কুতুবে সিত্তা তথা ছয় কিতাবের পরিচিতিও আছে বেশ। 


বর্তমানে ইসলামি জ্ঞানার্জনের চাহিদা বাড়ছে। বাড়ছে হাদিস, কোরআন, ফিকহ, তাফসির, উলুমুল হাদিস প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চতর ও গবেষণামূলক শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ। বিশেষ করে এখন হাদিসের মান তথা সনদ, মতন, রিজাল ইত্যাদি পরিভাষাবিষয়ক জ্ঞানার্জন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাদিসের সঠিক মান, শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় হচ্ছে। সোনালি যুগ থেকে এই হাদিস নির্ণয়, নির্বাচন ও সংকলনের কাজ হয়ে আসছে। 


অনেক আগে থেকেই উম্মাহর মানিত, বরেণ্য হাদিসবিশারদ ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের এই স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ ও ব্যবহার করে একশ্রেণির ধূর্ত পশ্চিমা গবেষক হাদিসের নামে বিভিন্ন বানোয়াট বক্তব্য ও বর্ণনা তুলে ধরার মাধ্যমে ইসলাম বিকৃতির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। কোরআন ও হাদিসের অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। কখনো বিখ্যাত কোনো একজন রাবির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সমালোচিত করার ঘৃণ্য প্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের ইসলাম বিদ্বেষমূলক অপব্যাখ্যা ও বিকৃতিকেই গবেষণার নামে নিজেদের মত ও আদর্শ বাস্তবায়নে কাজে লাগাচ্ছে। তারা মুসতাশরিকিন বা ওরিয়েন্টালিস্ট নামে পরিচিত। যাদের গবেষণা ইসলামের বিরুদ্ধে। বাংলায় যারা প্রাচ্যবিদ হিসেবে আলোচনায় এসেছে। 


বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়েখ সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদবি (রহ.) বলেন, ‘প্রাচ্যবিদদের মিশনই হলো, মুসলমানদেরকে তাদের অতীত সম্পর্কে সন্দিহান বা ভীতশ্রদ্ধ করে ভবিষ্যতের ব্যাপারে হতাশ ও বর্তমান বিষয়ে নির্লিপ্ত করে দেওয়া।’ (মাসিক আলকাউসার, এপ্রিল ৫, পৃ. ১১)
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এমন কিছু হাদিস বা আয়াত সম্পর্কে তারা অতি সূক্ষ্মভাবে সন্দেহ তৈরি করে দিচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে, যার ফলে অতীতের যাবতীয় দীনি খেদমত ও মেহনত সম্পর্কেও অনেক মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, হাদিস মানা যাবে না। অনেকে দাবি করছেন, একমাত্র কোরআনই মানতে হবে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য ও মতভিন্নতা তৈরি হচ্ছে। মুসলমানরা দলাদলি বৃদ্ধি করছে। বিভিন্ন মতাদর্শ গড়ে উঠছে। দল মত গোত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, কোনো পাপাচারী যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে। তবে তোমরা তার সত্যতা যাচাই করো। তা না হলে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে বসবে। এরপর তোমরা যা করেছ সে জন্য তোমাদেরকেই অনুতপ্ত হতে হবে। (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ৬)


যাচাই-বাছাই না করে সংবাদ গ্রহণ করা যাবে না। সংবাদের সত্যতা যাচাই ও পরীক্ষা করে প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে। অন্যথায় মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। মনে রাখতে হবে পাপাচারী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী লোকদের অনুসরণ করা হারাম। এখন আমাদের মধ্যে এমন লোকও কোরআন-হাদিসের বক্তব্য তুলে ধরছেন, যাদের ইসলাম বিষয়ে কোনো একাডেমিক শিক্ষা নেই। যিনি আলেম নন। এ জাতীয় লোকদের কথা কী আদৌ কোরআন-হাদিসনির্ভর এবং সঠিক হতে পারে? এ জন্যই আলোচক ও বক্তার সম্পর্কে জেনে-বুঝে তারপর তার বক্তব্যের ওপর আমল করা উচিত। বুখারি ও মুসলিমসহ একাধিক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামে কিছু বলার পরিণাম কত ভয়াবহ, তা আলোচনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করল, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করল।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৩)


রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামে হাদিস বানানোর পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম। এখন জেনে-বুঝে কেউ যদি হাদিস বানিয়ে বলেন, তার কী উপায় হবে? এ জাতীয় গর্হিত পন্থা অনুসরণ করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। যেকোনো হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে হাদিস শাস্ত্রজ্ঞ প্রাজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। 

লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর 

ইবাদত কবুলের ৫ শর্ত

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৬ এএম
ইবাদত কবুলের ৫ শর্ত
ইন্টারনেট তেকে সংগৃহীত নামাজরত মুসল্লির ছবি

আল্লাহতায়ালা জিন ও মানবজাতিকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত বলতে শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত—এই কয়েকটি বিষয়কে বুঝায় না; বরং ইবাদত হলো, যাপিত জীবনে প্রতিটি কাজকর্মে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা। ইবাদত কবুলের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। ইবাদত কবুলের ৫টি শর্ত এখানে তুলে ধরা হলো—

ইবাদত আল্লাহর জন্য হওয়া: ইবাদত আল্লাহর জন্য হতে হবে। আল্লাহকে ভালোবেসে তাঁর কথা হৃদয়ে ধারণ করে ইবাদত করতে হবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহর ইবাদত করো ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬)। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। অন্য কারও ইবাদত বা উপাসনা করা তাঁর অবাধ্যতার প্রমাণ। যারা আল্লাহর অবাধ্য, তাদের আমল-ইবাদত কবুল হয় না।  

ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করা: একনিষ্ঠতার সঙ্গে কাজ করে সফলতা লাভ করা যায়। একনিষ্ঠতা না থাকলে মানুষ গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। একনিষ্ঠতা মুমিনের গুণ। আল্লাহ এমন মানুষকে ভালোবাসেন। তার ইবাদত কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘বলে দাও, আমাকে তো আদেশ করা হয়েছে, যেন আল্লাহর ইবাদত করি তাঁর জন্য আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ১১)। হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মুয়াজ (রা.)-কে বললেন, ‘ইখলাসের (একনিষ্ঠ) সঙ্গে ইবাদত করো, অল্প আমলই যথেষ্ট হবে।’ (শুআবুল ঈমান, ৬৮৫৯)

হালাল খাওয়া: ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল খাবার গ্রহণ। হারাম খাদ্যের ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল, উৎকৃষ্ট বস্তু খাও এবং যেই আল্লাহর প্রতি তোমরা ঈমান রাখো তাকে ভয় করে চলো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৮৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে দেহের মাংস হারাম সম্পদে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম সম্পদে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন।’ (মিশকাত, ২৭৭২)

রিয়ামুক্ত হওয়া: আল্লাহকে পেতে হলে শুধু তাঁর জন্যই মনের মধ্যে ভালোবাসা পুষতে হবে। তাঁকে খুশি করার জন্য জীবনের প্রতিটি কাজ করতে হবে। লোকদেখানো কিংবা অন্যকে খুশি করার জন্য ইবাদত করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, খোটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের সদকা সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হুব্বুল হুজন’ থেকে তোমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, হুব্বুল হুজন কী? তিনি বললেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। এ থেকে খোদ জাহান্নামও প্রতিদিন একশবার আশ্রয় চায়। জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কার তাতে প্রবেশ হবে? তিনি বললেন, ওইসব কারি (তেলাওয়াতকারী) যারা লোকদের দেখানোর জন্য আমল করে।’ (তিরমিজ, ২৩৮৩)

সঠিক পদ্ধতিতে ইবাদত: মানুষের জীবনে উত্তম আদর্শের বাতিঘর রাসুলুল্লাহ (সা.)। তাঁকে অনুসরণ করে চলতে হবে। তাঁর আদর্শ মানতে হবে। তাঁর অনুসরণ ছাড়া ইবাদত করলে কবুল হবে না।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখছ, সেভাবে নামাজ পড়ো।’ (বুখারি, ৬৩১)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদরাসা মধুপুর, টাঙ্গাইল

জোহরের নামাজ কয় রাকাত, শুরু ও শেষ সময় কখন?

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ এএম
জোহরের নামাজ কয় রাকাত, শুরু ও শেষ সময় কখন?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত নামাজরত ব্যক্তির ছবি।

আল্লাহতায়ালা মানুষের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথা—

  • আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা।
  • নামাজ কায়েম করা।
  • জাকাত আদায় করা।
  • রমজানের রোজা পালন করা।
  • হজ করা।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সব নামাজের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। তোমরা যদি (শত্রুর) ভয় করো, তবে দাঁড়িয়ে বা আরোহী অবস্থায় (নামাজ পড়ে নাও)। এরপর তোমরা যখন নিরাপদ অবস্থা লাভ করো, তখন আল্লাহর জিকির সেভাবে করো, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা সম্পর্কে তোমরা অনবগত ছিলে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৮-২৩৯)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে জোহরের নামাজ অন্যতম। আল্লাহর রাসুল মিরাজ থেকে ফিরে এসে প্রথম জোহরের নামাজ আদায় করেছেন। জোহরের নামাজ মোট ১০ রাকাত। প্রথমে চার রাকাত সুন্নত। তারপর চার রাকাত ফরজ। তারপরে দুই রাকাত সুন্নত। এ ছাড়া আরও সুন্নত নামাজও পড়া যায়।  

জোহরের ওয়াক্তের শুরু ও শেষ
দ্বিপ্রহর থেকে সূর্য যখন একটু পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। প্রতিটি জিনিসের আসল ছায়া ছাড়া তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের সময় থাকে। জুমা আর জোহরের নামাজের ওয়াক্তও এক। (বাহরুর রায়েক, ১/৪২৩)

শীতকালে জোহরের নামাজ তাড়াতাড়ি পড়া ভালো। গরমের দিন একটু দেরি করে পড়া ভালো। তবে জুমার নামাজ সব মৌসুমে শুরুর সময়ে পড়া উত্তম। (বাহরুর রায়েক, ১/৪২৯)

আবু বারজা আসলামি (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জোহরের নামাজ সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন।’ (বুখারি, ৫৪৭)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

দেনমোহর সর্বনিম্ন কত টাকা?

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৫১ এএম
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৪ এএম
দেনমোহর সর্বনিম্ন কত টাকা?
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

নারী-পুরুষের পারস্পরিক ভালোবাসা, প্রশান্তির জীবনযাপন এবং পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আল্লাহতায়ালা বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা বিয়ে করো তোমাদের পছন্দের নারীদের থেকে, দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজন; কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে তোমরা ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না, তা হলে মাত্র একজন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩) 

বিয়ে নবিজি (সা.)-এর সুন্নত
বিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিয়ে আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়। তোমরা বিয়ে করো। কেননা আমি উম্মতের সংখ্যা নিয়ে হাশরের মাঠে গর্ব করব।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৪৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘চারটি জিনিস নবিদের চিরাচরিত সুন্নাত— ১. লজ্জা-শরম ২. সুগন্ধি ব্যবহার ৩. মেসওয়াক করা ও ৪. বিবাহ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১০১৮) ‍

দেনমোহর নারীর অধিকার
বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারণ করা অপরিহার্য। দেনমোহর নারীর অধিকার ও সম্মান। কোনোভাবেই নারীকে মোহর থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো। যদি তোমরা তাদের দেনমোহর প্রদান করো বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৫)

দেনমোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ
দেনমোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত নেই। স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে দেনমোহর দিতে হবে। তবে এমন মোহর নির্ধারণ করা যাবে না, যা স্বামীর পক্ষে আদায় করতে কষ্টকর হয় বা স্ত্রীর জন্য লজ্জাজনক হয়। ইসলামি শরিয়তে নারীর প্রকৃত অধিকার হলো ‘মোহরে মিছাল’। ওই নারীর বংশে তার মতো অন্য নারীদের সাধারণত যে মোহর নির্ধারণ করা হয়, সেটা তার মোহরে মিছাল। তার বংশে এমন নারী না থাকলে অন্য বংশে তার সমপর্যায়ের নারীদেরটা দেখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবন-জীবিকা সীমিত, আল্লাহ যা দান করেছেন সে তা থেকে ব্যয় করবে...।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৭)

দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ 
মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো ১০ দিরহাম। এর কমে মোহর দেওয়া যাবে না। ১০ দিরহামের পরিমাণ বর্তমান হিসাবে পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপা।  পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপার বাজারমূল্য ধরে মোহর দিতে হবে। সর্বনিম্ন মোহর দিতে গিয়ে নারীকে ঠকানো যাবে না। সামর্থ্য অনুযায়ী মোহর দিতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীদের মোহর দাও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক