রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষ ছিলেন। রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। আর মানুষ হিসেবে জীবনমুখী বিভিন্ন প্রয়োজন থাকাটা স্বাভাবিক। পার্থিব জীবনের অন্যতম একটি প্রয়োজন ক্ষুধা নিবারণ। সুস্থ-সবলভাবে দুনিয়ায় থাকতে হলে খেতে হয়। খাওয়ার বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) সুস্থভাবে জীবনধারণের জন্য খেতেন। তবে খাওয়ার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল না। জীবনধারণের জন্য তিনি খেতেন। খাওয়ার জন্য জীবনধারণ করতেন না। কিছু কিছু খাবার ছিল তাঁর প্রিয়। আর কিছু খাবার খেতেন সাধারণ জীবনযাত্রার নিয়ম মেনে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কী খেতেন, কী খেতে পছন্দ করতেন—এমন সব খাবারের নাম ও পরিচয় তুলে ধরা হলো।
গোশত
রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ‘জাফাফ’ ছাড়া তৃপ্তিসহকারে রুটি ও গোশত খাননি। মালিক ইবনে দিনার (রা.) বলেন, আমি জানতে চাইলাম, জাফাফ কি? তিনি বললেন, মানুষের সঙ্গে একত্রে পানাহার করা। (শামায়েলে তিরমিজি, ৫৭) রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর বাড়িতে গেলে তিনি বকরি জবাই করলেন। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘মনে হচ্ছে তারা জানে, আমি গোশত পছন্দ করি।’ (শামায়েলে তিরমিজি, ১৩২) রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন ধরনের গোশত খেতেন এবং খেতে পছন্দ করতেন, হাদিসের আলোকে সেসব গোশতের পরিচয় তুলে ধরা হলো—
-
- গরুর গোশত: বেশ কিছু হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সময়ে গরু কোরবানি দিয়েছেন এবং গরুর গোশত খেয়েছেন। (মুসলিম, ১৩১৯)
একবার হজের সফরে মিনায় অবস্থানকালে আয়েশা (রা.)-এর কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো এবং তিনি জানতে চাইলেন, এটা কী? বলা হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন। (বুখারি, ৫১৫০) - বকরির গোশত: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে বকরির সামনের রানের গোশত পরিবেশন করা হলো। তিনি তা খুবই পছন্দ করতেন। অতঃপর তিনি তা থেকে দাঁত দিয়ে কেটে কেটে খেলেন।’ (বুখারি, ৪৭১২)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমরা ছোট বকরির পায়া রান্না করতাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির পনেরো দিন পরও তা খেয়েছেন।’ (বুখারি, ৫১২২) - ভেড়ার গোশত: রাসুলুল্লাহ (সা.) ভেড়ার গোশতও খেতেন এবং ভেড়ার সামনের মাথার কাছের অংশ খেতে পছন্দ করতেন। (বুখারি, ৫৪৬২)
- উটের গোশত: রাসুলুল্লাহ (সা.) উটকে শুধু বাহন হিসেবে ব্যবহার করেননি। উট কোরবানি করেছেন এবং এর গোশত খেয়েছেন। (মুসলিম, ৩০৫৪)
জাবের বিন সামুরা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে উটের গোশত খেয়ে অজু করার এবং ছাগলের গোশত খেয়ে অজু না করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (মুসলিম, ৩৬০) - খরগোশের গোশত: রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে খরগোশের গোশত খেয়েছেন এবং সাহাবিদেরও খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। (তিরমিজি, ১৪৭২)
মক্কার অদূরে মাররাজ-জাহরান নামক স্থানে সাহাবিরা একটি খরগোশ ধরতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। অবশেষে আনাস (রা.) সেটিকে ধরলেন এবং আবু তালহা (রা.) খরগোশটিকে জবাই করে তার দুই ঊরু বা রান রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে পাঠালেন এবং তিনি তা গ্রহণ করলেন। (বুখারি, ২৫৭২) - মোরগ বা মুরগির গোশত: আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মোরগের গোশত খেতে দেখেছি।’ (তিরমিজি, ১৮২৭) অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন, ‘মুরগির গোশত খেতে দেখেছি।’ (মুসলিম, ৪৩৫৪)
- হরিণের গোশত: সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া (রা.) কিছু দুধ, হরিণের গোশত ও শসা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে সালাম না দিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং বলো আসসালামু আলাইকুম। (আবু দাউদ, ৫১৭৬)
- এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার ওমরার সফরে সাহাবিদের জেব্রা শিকার করে খাওয়ার (তিব্বে নববি, ৭৫) এবং খায়বারের যুদ্ধের সময় গৃহপালিত গাধার গোশত না খেয়ে ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারি, ৪২১৯) আর দবের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দব আমি খাই না আর হারামও বলি না।’ (বুখারি, ৫৫৩৬)
- গরুর গোশত: বেশ কিছু হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সময়ে গরু কোরবানি দিয়েছেন এবং গরুর গোশত খেয়েছেন। (মুসলিম, ১৩১৯)
খেজুর
খেজুর ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় খাবার। এটি ছিল আরবের সবচেয়ে সহজলভ্য ও প্রধানতম ফল বা খাবার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ঘরে খেজুর নেই, সে ঘরের বাসিন্দা অভুক্ত।’ (আবু দাউদ, ৩৭৫৪) তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে খেজুর খেতেন এবং খাওয়ার কথা বলেছেন। যেমন—
-
- সাধারণ খাবার: আয়েশা (রা.) বলেন, ‘উপোস থেকে আমাদের মাস অতিবাহিত হতো। আমরা ঘরে রান্নার আগুন জ্বালাতাম না। আমরা শুধু খুরমা খেজুর ও পানি খেতাম। তবে যৎসামান্য গোশত এসে যেত।’ (বুখারি, ৬৪৫৮)
- আরোগ্যের খাবার: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মদিনার আলিয়া (উঁচু ভূমির) অঞ্চলের আজওয়া খেজুরে শেফা (আরোগ্য) রয়েছে।’ (মুসলিম, ৫১৬৮)
- ইফতারে: আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তা হলে শুকনো খেজুর দিয়ে আর শুকনো খেজুরও না থাকলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন।’ (তিরমিজি, ৬৩২)
- সাহরিতে: আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহরির সময় আমাকে বললেন, ‘আমি রোজা রাখতে চাই, আমাকে কিছু আহার করাও। এরপর আমি খেজুর এবং পানি পরিবেশন করলাম।’ এ ছাড়া ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য সাহরির উত্তম খাবার হলো খেজুর।’ (আবু দাউদ, ২৩৪৩)
- ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে: আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন খেজুর না খেয়ে (নামাজের জন্য) বের হতেন না।’ (বুখারি, ৯৫৩)
- সদকাতুল ফিতর: আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে আমরা এক সা (তিন কেজি ৩০০ গ্রাম) খাদ্যবস্তু দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। তখন আমাদের খাবার ছিল—জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (বুখারি, ১৫০৩)
- তাহনিক: আবু মুসা (রা.) বলেন, ‘আমার একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করলে আমি তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি সন্তানের নাম রাখলেন ইবরাহিম। এরপর তিনি তাহনিক করালেন মানে খেজুর চিবিয়ে সন্তানের মুখে দিলেন।’ (বুখারি, ৫০৭১)
- পুষ্টিতে: আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার মা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সংসারে পাঠাতে চাইতেন বলে আমার দৈহিক পরিপুষ্টির জন্য চিকিৎসা করালেন, কিন্তু কোনো উপকার হলো না। অবশেষে আমি তাজা খেজুরের সঙ্গে শসা মিশিয়ে খেলাম এবং উত্তমভাবে দৈহিক পরিপুষ্টি লাভ করলাম।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৩২৪)
- অলিমায়: খায়বার থেকে ফিরে আসার সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) মধ্যবর্তী এক স্থানে তিনদিন অবস্থান করলেন। সেখানে সাফিয়া (রা.)-কে নিয়ে যাওয়া হলো। তাকে মুক্ত করে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বিবাহ করলেন। মোহর নির্ধারণ করা হলো তার মুক্তিপণ। আনাস (রা.) সবাইকে অলিমার দাওয়াত দিলেন। অলিমাতে রুটি বা গোশত কিছুই পরিবেশন করা হলো না। রাসুলুল্লাহ (সা.) চামড়ার দস্তরখান বিছানোর আদেশ দিলেন এবং তাতে খেজুর, পনির ও ঘি পরিবেশন করা হলো।’ (বুখারি, ৫১৬৯)
পনির
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘তাবুকের যুদ্ধকালে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কিছু পনির নিয়ে আসা হলো। তিনি বিসমিল্লাহ বলে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কেটে তা থেকে খেলেন।’ (আবু দাউদ, ৩৮১৯)
মাখন
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার ইবনাই বিস আল মুসলিমাইন নামক দুইজন সাহাবির ঘরে গেলেন। তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আপ্যায়নে মাখন ও খেজুর পরিবেশন করলেন। কারণ তারা জানত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মাখন ও খেজুর পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, ৫১১৫)
মধু ও মিষ্টি
রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টিজাতীয় খাবার পছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু খেতে পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, ৫১১৫)
ঘিয়ে ভাজা বা মাখা রুটি
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘উম্মে সুলাইম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য ঘি দিয়ে রুটি তৈরি করলেন। এরপর তাঁকে দাওয়াত দিলেন এবং তিনি এসে বললেন, তুমি যা তৈরি করেছ, তা নিয়ে এসো। ঘি দিয়ে তৈরি করা রুটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে দেওয়া হলে তিনিসহ সবাই তা খেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৩৪২)
দুধ
মিরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে জিবরাইল (রা.) তাঁর সামনে আলাদা দুটি পাত্রে শরাব ও দুধ পেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) দুধের পাত্রটি বেছে নিলেন। এটা দেখে জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস বেছে নিয়েছেন।’ (বুখারি, ৩১৬৪)
নাবিজ
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য মশকে কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো। (কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে রেখে যে পানীয় তৈরি করা হয়, তাকে নাবিজ বলা হয়)। তিনি সেই নাবিজ সেদিন, পরের দিন এবং তার পরের দিন মানে তৃতীয় দিন সন্ধ্যা বেলায়ও পান করতেন। এর পরও কিছু থেকে গেলে তা ঢেলে ফেলে দিতেন।’ (মুসলিম, ২০০৪) ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) লাউ বা মিষ্টি কুমড়ার খোসায় এবং আলকাতরা মাখানো পাত্রে নাবিজ তৈরি করতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি, ৫৫৮৭)
কালোজিরা
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করো বা খাও। কারণ এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক রয়েছে।’ (তিরমিজি, ২০৪৮)
সারিদ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষের মধ্যে অনেকেই কামালিয়াত অর্জন করেছে। কিন্তু নারীদের মধ্যে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া, ইমরানের কন্যার মরিয়ম ছাড়া কেউ কামালিয়াত অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তবে আয়েশার মর্যাদা রমণীদের মধ্যে তেমন, সব ধরনের খাদ্যের মধ্যে সারিদের (গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরো টুকরো রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্যকে সারিদ বলা হয়) মর্যাদা যেমন।’ (বুখারি, ৩১৭২)
তালবিনা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তালবিনা (জব পিষে বা গুঁড়া করে দুধ দিয়ে জ্বাল দিয়ে বা পাকিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে তৈরিকৃত এক প্রকার খাবারকে তালবিনা বলা হয়) শোকাতুর হৃদয়কে শান্ত করে এবং অসুস্থ হৃদয়কে সেভাবে পরিষ্কার করে, তোমরা মুখ থেকে নোংরা ধুয়ে ফেলো যেভাবে।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৪৪৫) এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তালবিনা রোগীর কলিজা মজবুত করে এবং নানাবিধ দুশ্চিন্তা দূর করে।’ (বুখারি, ৫৬৮৯)
সিরকা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিরকা (সিরকার ইংরেজি হলো ভিনেগার। আরবি শব্দ খললুন)। এটি একটি সুন্নতি খাবার। ভালো তরকারি। চমৎকার তরকারি সিরকা।’ (মুসলিম, ৫১৮০) তিনি আরও বলেছেন, ‘সিরকা খুব মজাদার সালুন বা তরকারি।’ (মুসলিম, ৫১৮২) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ঘরে সিরকা আছে, সে ঘর তরকারিশূন্য নয়।’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ, ২২২০)
লাউ বা মিষ্টি কুমড়া
একবার এক দর্জি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দাওয়াত করলেন। আনাস (রা.) সে দাওয়াতে অংশগ্রহণ করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে বার্লির রুটি, গোশতের টুকরা ও লাউ বা মিষ্টি কুমড়া মেশানো ঝোল পরিবেশন করা হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) পাত্র থেকে খুঁজে খুঁজে লাউ বা মিষ্টি কুমড়া খেলেন। এটা দেখে আনাস (রা.) লাউ বা মিষ্টি কুমড়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন।’ (বুখারি, ২০৯২)
জয়তুন
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জয়তুনের তেল দিয়ে রুটি খাও এবং তা দেহে মাখো। কারণ, তা বরকতপূর্ণ গাছ থেকে নির্গত হয়।’ (তিরমিজি, ১৮৫১) অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা জয়তুন খাও এবং এর তেল শরীরে মাখো।’ (ইবনে মাজাহ, ১০০৩)
মাশরুম
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাশরুম জান্নাতি এক প্রকার খাবার। এর রস চোখের জন্য নিরাময়।’ (বুখারি, ২২৯০)
টিড্ডি বা পঙ্গপাল
আবদুল্লাহ ইবনে আবু আউফা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে গিয়েছি এবং তাতে পঙ্গপাল খেয়েছি।’ (বুখারি, ৫৪৯৫) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের জন্য দুই প্রকার মৃত প্রাণীর গোশত এবং রক্ত খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রাণী দুটি হলো—মাছ ও পঙ্গপাল। রক্ত দুটি হলো—কলিজা ও হৃৎপিণ্ড।
সামুদ্রিক মাছ
আবু উবায়দা ইবনুল জাররা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সামুদ্রিক মাছ পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, ৪৩৬১) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়লা আদম সন্তানের জন্য সমুদ্রের সকল মাছ জবাই করে খাওয়াকে হালাল করে দিয়েছেন।’ (দারা কুতনি, ৪৭১০)
শসা
আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি তাজা খেজুরের সঙ্গে শসা খেতে দেখেছি।’ (মুসলিম, ৫১৫৭)
তরমুজ
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তরমুজের সঙ্গে রাতাব খেজুর খেতেন। তিনি বলতেন, এটার (তরমুজ) ঠান্ডা ওটার (খেজুর) গরম কমাবে এবং এটার (খেজুর) গরম ওটার (তরমুজ) ঠান্ডা কমিয়ে দেবে।’ (বুখারি, ৫১৩৪)
আঙুর
ফায়রুজ দায়লামি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কাছে অনেক আঙুর আছে। আমরা এগুলো কি করব? তিনি বললেন, তোমরা সেগুলোকে কিশমিশ বানাও। আমরা আবার জিজ্ঞাসা করলাম, কিশমিশ দিয়ে কি করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কিশমিশ দিয়ে নাবিজ তৈরি করবে। ভিজিয়ে রেখে বিকেলের আহারে পান করবে অথবা সন্ধ্যায় ভিজিয়ে রেখে সকালের খাবারের পর পান করবে। মাটির পাত্রে না রেখে মশকে রাখবে এবং বেশি দেরি হলে তা সিরকা হয়ে যাবে।’ (নাসায়ি, ৫৭৩৬)
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক