![শয়তানের বাক্স](uploads/2024/02/06/1707209890.ron.jpg)
গত শতাব্দীর শেষ দশক, তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। ফোন বলতে শুধু টেলিফোনকেই চিনতাম। যেটা থাকত উপজেলা সদরের এক্সচেঞ্জ অফিসে। টিভি বলতে শুধু বিটিভিকে চিনতাম। যেটাতে শুক্রবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি দেখানো হতো।
সেই সময় বাড়িতে সাদা-কালো টিভি থাকার জন্য অল্প বয়সে সিনেমাখোর হিসেবে এলাকায় বিস্তর সুনাম কুড়িয়ে ফেললাম। কয়েকবার সিনেমা হলে যাওয়ার অ্যাটেম্পট নিয়েও বাপের রাম পিটুনির ভয়ে পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হলাম।
ইতোমধ্যে কাজিন নাসির ভাই জানাল, পরবর্তী শুক্রবার তারা কয়েক বন্ধু মিলে বাড়িতে ভিসিআর প্লেয়ার এবং বারো ভোল্টের ব্যাটারি ভাড়া করে এনে সারা রাত সিনেমা দেখবেন। তাদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে হলে ভাড়ার টাকা শেয়ার করতে হবে। আমি টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ১০ টাকা নাসির ভাইয়ের হাতে তুলে দিলাম।
আমার ছোট বোনও কোথা থেকে যেন ২ টাকার একটা নোট জোগাড় করে এনে দিল। তার ভয়, টাকা না দিলে তাকে যদি ‘থিনেমা’ দেখতে দেওয়া না হয়। চাচিদের ভেতর কয়েকজন চাউল দিয়ে হেল্প করল এবং অবশ্যই সেটা চাচাদের থেকে লুকিয়ে। সব মিলিয়ে নাসির ভাইয়ের ব্যবসা খারাপ হলো না। নির্দিষ্ট দিনে সকাল থেকে বাড়িতে আসন্ন উৎসবের চাপা উত্তেজনা চলতে থাকলেও দুপুর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। দাদার কাচারি ঘরে একজন ফকির দাদু থাকত। নামাজ শেষে মুসল্লির দল নিয়ে আসল আমাদের বাড়িতে। সবাইকে শাসিয়ে গেল যেন বাড়িতে শয়তানের বাক্স আনা না হয়।
রাত একটু গভীর হতেই আমরা উঠানের এক কোণ মোটা কাঁথা টাঙিয়ে পার্সোনাল সিনেপ্লেক্স বানিয়ে ফেললাম। টিভির শব্দ যেন বাইরে না যায় সেদিকেও লক্ষ রাখা হলো। যথা সময়ে নিচু সাউন্ডে সালমান শাহের সিনেমা শুরু হলো। আমরা নিবিষ্ট মনে ২১ ইঞ্চি টিভির পর্দার চোখ সাঁটিয়ে রাখলাম। সিনেমার সাসপেন্স যখন মধ্যগগনে তখন পেছন দিকে হুড়মুড় করে একটা শব্দ হলো। আমরা সবাই চমকে পেছন ফিরলাম। দেখলাম পুরোনো চেয়ারের পা ভেঙে আগাগোড়া চাদরে আবৃত একটা অবয়ব মাটিতে লুটিয়ে আছে।
নাসির ভাই উঠে গিয়ে চাদর ধরে টান দিতেই ফকির দাদুর জীর্ণ মুখটা বেরিয়ে পড়ল। হাতের লাঠিটা সামলে উঠে দাঁড়ালেন বললেন, ‘শয়তানের বাক্স এই বাড়িতে...তোরা ধ্বংস হবি’। তারপর কী সব বিড় বিড় করতে করতে বেরিয়ে গেলেন।
কলি